অধ্যায়-১৩

94 3 0
                                    

ঘন্টা তিনেক রিমির ঘর সার্চ করা এবং জিজ্ঞাসাবাদ করার পর রিমিকে ছাড়া হলো। রিমি রাগে গজগজ করতে করতে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বসলো।

রিমি নিজেই বলতে লাগল : নিক ! তোমার সাথে আমার অনেক দিনের হিসেব মেলানো বাকি। কিন্তু আজকের এই হ্যারেসমেন্টের জন্য ইউ হ্যাভ টু পে ফর দিস টু !

রিমির কাছে আরো একটা ব্লু প্রিন্ট আছে। তবে সেটা ওর কম্পিউটারে , সেটা ওপেন করে একটা মেইলে পাঠালো এবং মেইল হিস্টোরি থেকে ডিলিট করে দিল। কোনো প্রমাণ রাখা ঠিক হবে না ভাবতে ভাবতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ওর হাতের কব্জির নিচে একটা চিপ আছে ,যেটা চামড়ার ভেতরে লাগানো। প্রফেসর নিকেরও এখানে চিপ আছে যেটা ভি আর এর মতো ব্যবহার করা যাবে। এমনকি কথা বলার সময় দুজনই দুজনের কৃত্রিম অবয়ব সামনে দেখতে পারবে , একে অপরকে ছুঁতেও পারবে।

রিমি মনে মনে ভাবছে আজকে একবার নিকের সঙ্গে কথা বলবে।
 
.................

ভুলটাও আমার আর দোষটাও , যে কোনো শাস্তি পেতে আমি তৈরি । এই কথাটা বার ইরিনের কানে বেজে চলেছে। সে সব স্বীকার করে নিয়েছে। প্রফেসর সব জানে আগে থেকেই। কিন্তু এত ওর সাথে খেলে গেছেন। কেন কে জানে ?

প্রফেসর একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বললেন : হুমহ্ শাস্তি ? (হঠাৎ করেই প্রফেসরের কন্ঠে কেমন রাগ আর ক্ষোভ দেখা গেল) আপনি যে আমাকে এখানে বন্দি করে শাস্তি দিচ্ছেন তা কি আপনি জানেন ? অনেক দিন পর , অনেকগুলো বছর অপেক্ষার পর সুন্দর একটা গোছানো জীবন পেতে যাচ্ছিলাম আপনি কি তা জানেন ? আপনি কিচ্ছু জানেন না । শুধু মাত্র আপনি নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করতে না পেরে আমার সাথে এত বড় অন্যায় করলেন ? কিভাবে পারলেন ? এটাকে কেউ ভালোবাসা বলে ? এভাবে কাউকে বন্দি করে আটকে রেখে ভালোবাসা পেতে পারে ? আপনি আশাই বা কেমন করে করেন ?  আপনি আমার জীবনের কোনো কিছু না জেনে না শুনে কিভাবে আমাকে এখানে আনতে পারলেন ? আর আপনি বলবেন কারণ আপনি আমাকে ভালোবাসেন ? চেনন কয়দিন আপনি আমাকে ? কি জানেন আপনি আমার ব্যাপারে ?

কথাগুলো ইরিনের ভেতরে বিষাক্ত কাঁটার মতো বিঁধে যাচ্ছে , ওর সমস্ত হৃদয় ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। একদৃষ্টিতে সে প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে আছে। এরকম রাগ , ঘৃণা কখনো সে তার মধ্যে দেখেনি। এরকম ভাবে সব কিছু বদলে যাবে সে কল্পনাও করেনি। তার ডিভাইসটা তো অন্যভাবে সেট করা ছিল। তার মানে প্রফেসর একদম প্রথম থেকে অর্থাৎ ডিভাইস তৈরির সময় থেকেই সব জানতেন।

ইরিনের কথা বলার মতো শক্তি নেই। তারপরেও ভাঙা ভাঙা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো : সবই যখন জানতেন তখন এলেন কেন?

প্রফেসর : এলাম আপনি আর কতটা স্টুপিড হতে পারেন সেটা দেখার জন্য ? এখানে আর কি কি স্টুপিডিটি অপেক্ষা করছে সেটা দেখার জন্য । এই কয়েকদিন আপনি আর কতটা দূর যেতে পারেন তা পরীক্ষা করার জন্য আমি এতদিন কিচ্ছু বলিনি। কিন্তু আপনি তো এসেছেন আমাকে সবার চাইতে দূরে সরিয়ে আমার সাথে রোমান্টিক লাইফ লিড করতে ! তাহলে আমি কাছে এলে সরে যাওয়ার ড্রামা করেন কেন ? টেক এডভান্টেজ ! আর এই পৃথিবীর সবাই এসেও যদি বলে আপনি আমাকে ভালোবাসেন আমি বিশ্বাস করব না। কারণ ভালোবাসলে এভাবে আমাকে আটকে রাখতেন না। ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া , কিভাবে ভালোবাসতে হয় ? আমি জানি কারণ আমি যাকে ভালোবাসি তার জন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছি । তাকে মুক্তি দিয়েছি ! এমনকি অন্যের হতেও বাঁধা দেই নি। আপনার মতো স্টুপিড কোনো কাজ করে তার জীবন নষ্ট করে দেই নি। আর আপনি যা করেছেন তারপর আর কখনো কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা আপনি রাখেন না। আর আমার তো কখনোই না। আমি আপনাকে ঘৃণা করি কিন্তু আফসোস আমার কাছে কোনো মেশিন নেই যে এর পরিমাণ ঠিক কতটা , তাহলেও যদি আপনি বুঝতে পারতেন !

প্রফেসর বাড়ির দিকে রওনা হলেন। ইরিনের গাল বেয়ে পানি পড়তেই সে চমকে ওঠে। সে কাঁদছে ! তার মধ্যে এখন কোনো বোধ শক্তি কাজ করছে না। সারা শরীর কাঁপতে কাঁপতে সে বালুর ওপর শুয়ে পড়ল । সমুদ্রের বিশাল গর্জন মনে হচ্ছে তার হৃদয়ে হাতুড়ির মতো আঘাত করছে। গোঙানির মতো শব্দ করে কাঁদছে ইরিন। কষ্টটা মনে হলেও শরীর যেন এই মনকে সঙ্গ দিয়েছে ।

অন্ধকার কালো রাতে মিট মিট করে তারা জ্বলছে। একপাশে সমুদ্র গর্জন করে বালুতীরে ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ছে। আর একপাশে ইরিন ! তার আকাশ বাতাস এক করে ফেলা আর্তনাদ এরাই চুপ করে শুনছে। এই মানবশূণ্য দ্বীপে কেউ নেই যে ইরিনকে একটু শান্তনা দেবে ওর চোখ মুছে দিবে , উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করবে , ঘরে নিয়ে যাবে। পৃথিবীতে তার চেয়ে বেশি অসহায় হয়তো এই মূহুর্তে কেউ নেই।

ইরিনের সিক্রেট সোসাইটি Donde viven las historias. Descúbrelo ahora