টাইম ক্রাইম [পর্ব 2]

64 2 0
                                    

বৃষ্টিটা একেবারে থেমেই গেছে, চাঁদের আলোও জোরালো হয়েছে। হ্যাঁ কারেন্ট চলে এসেছে, বারান্দার লাইটটা জ্বলছে। (ঘেউ ঘেউ ঘেউ) যাই একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি। একটু বোরিং বোরিং লাগছে, কিরকম যেন একটা বদ্ধ পরিবেশের আছি। ছাদে গেলে আশা করি একটু আরাম পাবো।
হাতে টর্চের আলো নিয়ে আমি ছাদের দিকে এগোতে থাকলাম। সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকলাম। বাহ্! কী ঠান্ডা বাতাস, আহ্! মন যেন জুড়িয়ে যায়। এতক্ষণে যেন একটু স্বস্তি পেলাম। জ্যোৎস্নার জোরালো আলোয় ছাদের সব প্রান্তই প্রায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টিও থেমেছে। ছাদের সমতল পৃষ্ঠের ওপর কোথাও কোথাও ঠান্ডা জলের অল্প ছোঁয়া পায়ে লেগে এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন ছাদে রুপো ছড়িয়ে দিয়েছে। যাই ছাদের ওই দিকটা একটু যাই। ওটা কী? অ্যাঁ, হঠাৎ এক দৃশ্য দেখে আমার বুকের রক্ত যেন হিম হয়ে গেল, এক অজানা আতঙ্কে। গায়ের লোমগুলো খাড়া হয়ে গেল। কে যেন সাদা কাপড় পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। হ্যাঁ, সত্যিই দাঁড়িয়ে আছে, সাদা কাপড় পড়ে, স্থির ভাবে।
মন কে আর বলতে হলো না, হঠাৎ করে এরকম কিছু অস্বাভাবিক দেখলে তাদেরই কথা আগে মনে হয়। ভয়ে আমার হৃদস্পন্দন যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্থির হয়ে গেল। সবাই তাহলে ঠিকই বলতো বাস্তবে এদের অস্তিত্ব বিদ্যমান। কী করি? কী করি? ভূত! বাবারে বলেও চিৎকার করতে পারছি না। মুখ দিয়ে টু শব্দটুকুও করতে পারছি না, যেন আমি বোবা হয়ে গেছি। পাও যেন স্থির, সেখান থেকে সরছেনা। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি কতক্ষণ কে জানে। অমনি হঠাৎ সাদা কাপড় পরা মানুষটার মাথাটা যেন একটু নড়ে উঠলো। হ্যাঁ নড়ে উঠলো। আমার ভয় যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল। এবার কম্পন শুরু হল সারা শরীরে। কিন্তু স্থান পরিবর্তন? না, স্থান পরিবর্তন হলো না। সস্থানে অস্থির মনে ভয়ে আতঙ্কিত হতে থাকলাম। আমি কোথায়? কোনখানে? ভুলে যাচ্ছি ধীরে ধীরে সব স্মৃতি, হ্যাঁ আমি ভূত দেখছি, চোখের সামনে ওটা ভূত, সাদা কাপড় পড়ে ভূত। গলার মধ্যে যেন একটা চাপ অনুভব করছি, নিশ্বাস প্রশ্বাস ধীরে ধীরে কমে আসছে, কানও তালা হয়ে গেছে, মনে হচ্ছে কেউ যেন গলা চেপে ধরেছে, আমার গলা টিপছে, (অ্যা অ্যা অ্যাউল অ্যা।
তারপরেই হঠাৎ একটা ঝোড়ো বাতাস দিল। আহ্! বাঁচা গেল। এই বাতাসটার জন্যই আমি পুরো ব্যাপারটা বুঝে গেলাম। বাতাসটা না থাকলে যে কী হত, হয়তো হার্টফেল করেই পেতাম অক্কা। আপনারা হয়তো ভাবছেন কী ব্যাপার? কী বুঝলাম? আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে কী, যা দেখে আমি এতক্ষণ ভয় পাচ্ছিলাম সেটা কোন সাদা কাপড় পড়া ভূত নয়। আসলে সেটা একটা কলাগাছ, যা সাদা কাপড় জড়ানো। হয়েছিল কী, ঝোড়ো বাতাসের বেগে জড়ানো সাদা কাপড়টা কলা গাছ থেকে সরে গিয়েছিল। কলাগাছ, হয়তো কোন পুজোর কলাগাছ। কোন সদগতি না করে ছাদেই ফেলে রেখেছে নতুবা ছাদেই ফেলে রেখে সদগতি করেছে।
গলাটা যেন শুকিয়ে কাঠ। আমি যে কাজ করি তাতে ভয় ডর যেন হাড় ছাড়া লেগ পিসের মতন। কিন্তু আমি যে এভাবে ভয় পেলাম, আপনারা হয়তো আমাকে ভীতু বলে অভিহিত করবেন, তাই না? কী আর করা যায়। মানবচক্ষুর সামনে হঠাৎ করে কোন অবাঞ্চিত ঘটনা ঘটে গেলে সেই সময় অবাক আর ভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকেনা বললেই চলে। এমনিতেই ভয় টয় পেতাম না, যা সব অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে তাই ভয় টা একটু বেশিই পেয়ে গেলাম। এখন আমার খুব ভালো লাগছে যে ভূত-টুত বলে কিছু হয় না, সব গাঁজাখুরি গল্প।
...

টাইম ক্রাইমWhere stories live. Discover now