টাইম ক্রাইম [পর্ব 12]

10 1 0
                                    

ছুটতে থাকলাম, ছুটতে থাকলাম, সামনে গলি, গলি দিয়ে ছুটতে থাকলাম। অনেক গলি, যেন ভুলভুলাইয়ার মতন। তারাও গলিতে প্রবেশ করল। কতক্ষণ যে গলির মধ্যে ঘোরাঘুরি করলাম জানিনা, এক পথে বেরিয়ে এলাম। যে মুখে ঢুকে ছিলাম, সেই মুখেই বেরিয়ে এলাম।

এ তো বাড়ি মালিকের ঘরের সামনের সেই রাস্তা। এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। কই বাড়ি মালিকের দেহটা কই। আমায় দেখে কয়েকটা কুকুর চিৎকার করে উঠলো। আমি এগিয়ে গেলাম আবারো সেই ঘরে, সেই হত্যার ঘটনাস্থলে। না, নেই। শুধু পড়ে রয়েছে এক জায়গায় অনেকটা রক্ত। ব্যাপারটা কী হলো, উনি কোথায় গেলেন। সত্যিই তো, কী হলো? কুকুর টুকুর টেনে নিয়ে যায় নি তো? সামনের দিকে আলো ফেলতেই দেখলাম, ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ দরজার দিকে এগিয়ে গেছে। আমি এগিয়ে গেলাম দাগ অনুসরণ করে। দাগ ঘরের ভেতর ঢুকে গেছে, দাগ ধরে ধরে এসে দাড়ালাম বাড়ি মালিকের ঘরের সামনে।
অমনি থমকে দাঁড়ালাম। দেখি পড়ে রয়েছে মেঝেই বাড়ি মালিকের নিঃসাড় দেহ। তার পেট থেকে রক্ত বেরিয়ে চলছে। মেঝেতে রক্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে। লাল মেঝেকে যেন রক্ত গ্রাস করে আরও লাল করে দিতে চাই। তার নাড়ি দেখে বুঝলাম তিনি গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়েছেন। এইতো সবেমাত্র লোকটিকে জীবন্ত দেখলাম, একটুর জন্য পরলোক গমন করলেন।
যদি খুনি টার পেছনে ধাওয়া না করতাম, আর যদি এসব গুন্ডাদের হামলা না হত, তাহলে হয়তো তিনি বেঁচে যেতে পারতেন। আমার জন্যই এইসব হল। নিজেকে বড় পাপী মনে হচ্ছে। নিজেকেই খুনি মনে হচ্ছে। একি ক্ষতস্থানে রুমাল দেওয়া আছে যে। রক্তে ভেজা রুমাল লাল বর্ণ ধারণ করেছে। তাহলে তিনি নিজেই একাকী উঠে এসেছেন তার এই ঘরে। তারপর ক্ষতস্থানে রুমাল দিয়েছেন। কিন্তু বেঁচে থাকার শেষ রক্ষা আর হয়নি।

বাড়ি মালিকের ঘটনাটি কী? কে জানে?
আমার ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত ? হতে পারে আমার ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাহলে আর দেরি কেন ? না না এই ঘরে আর থাকা চলবে না, যেকোনো সময় তারা এখানে আসতে পারে, আমার খোজে, কিংবা অন্য কোনো কাজে।
তার ঘটনাটা আমার সঙ্গে সম্পর্কিত না হলেও, দুষ্কৃতীরা আমার ঠিকানা জানেনা এর গ্যারান্টি কী।

এক্ষুনি পলায়ন করতে হবে। ফোনও করা যাচ্ছে না, যে ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে সাহায্য চাইবো, একটুও টাওয়ার নেই। টাওয়ারের কী হল কী জানি? আর কাউকে জানিয়েও আসিনি, তাড়াতাড়ি এখানে আসতে হয়েছিল। শ্রুতি কেউ ফোন করে জানাতে পারেনি। এখন কী করি?

আমি পালিয়ে এলাম, সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়। এগোতে থাকলাম, এগোতে থাকলাম। প্রান ভয়ের চেয়ে সম্মান ক্ষয়ের ভয় বেশি ভয়ানক আমার কাছে, আত্মসম্মান ক্ষয়। এত মানুষের আশার আলোকে ধুলোয় মিশতে দিতে পারিনা। স্যুটকেসটার জন্য খুবই ভয় করে। শেষ রক্ষা করতে পারব তো? একি একজন লোক সামনে দাঁড়িয়ে মুত্র ত্যাগ করছে, সিস বাজাচ্ছে। একি তাদেরই একজন? না অন্য কেউ? না, অন্য কেউ না; এ তাদেরই একজন। কেননা ধারালো ছুরিটা দেয়ালের একপাশে হেলানো অবস্থায় রাখা আছে। সাবধান, সাবধানে এগোতে হবে, না হলে ধরা পড়ে যাব। আমি তার দিকে মুখ করে ধীরে ধীরে এগোতে থাকলাম। সে রাস্তার দিকে পিছন ফিরে রাস্তার এক ধারে মূত্র ত্যাগ করছে। খুব সাবধানে, ধীরে ধীরে এগোচ্ছি। শব্দহীন পদক্ষেপে ভালোই এগোচ্ছি। পায়ে এটা কী ঠেকলো নরম স্পঞ্জের মত? কী, বোঝার আগেই একটা আর্তনাদ শোনা গেল, "আউ, আউ আউ আউ," কুকুরের আর্তনাদ। কুকুরের লেজে পা দিয়ে দিয়েছি, আর রক্ষে নেই। হঠাৎই সে পেছন দিকে তাকালো, আর জোরে সিটি বাজালো এবং আমার পিছনে তাড়া করলো। তার সাথে যোগ দিল আরও কয়েকজন। আবারও দৌড় দৌড় দৌড়। কতক্ষণ দৌড়াচ্ছি জানিনা। কিন্তু না, সামনে অন্যান্যরা হঠাৎই উধাও হলো। শেষে ধরা পড়ে গেলাম।
...

টাইম ক্রাইমحيث تعيش القصص. اكتشف الآن