জ্যোৎস্নার আলোয় চারিদিক ভালোই দেখা যাচ্ছে। জ্যোৎস্নার আলোয় সহায়। তবুও গাছ-গাছালির নীচের অন্ধকার তো দূর হয়নি। যদি সাপ বেরিয়ে ছোবল মারে, বলা যায় না।
আমি এগোতে থাকলাম মৃত্যু ভয় কে উপেক্ষা করে। আবারও চিৎকার শোনা গেল। কে যেন বলল, "চোপ শালা, ইয়ার্কি পেয়েছ। খুবতো কসরত করিয়েছ চাঁদু। এবার ভালোই ভালোই স্যুটকেসটা দিয়ে দাও।" তারই সাথে কতকগুলো লোকের হাসির আওয়াজ কানে ভেসে এলো। মনে হয় সেই চোরটার কাছ থেকে প্রতিবেশীরা আমার স্যুটকেশটা উদ্ধার করছে। হয়তো তারা চোরটাকে পাকড়াও করে ফেলেছে। তাহলে তারা প্রতিবেশীই হবে, আর আমি কি না কিই ভাবছিলাম। তাহলে খুন? হ্যাঁ ব্যাপারটা তাহলে এরকম দাঁড়াতে পারে। উপরে এসে সে আমার জিনিসপত্রগুলো চুরি করে পালানোর সময় অতীন্দ্র তাকে তাড়া করে। নীচে নামবার সময় বাড়ি মালিকের কাছে ধরা পড়ে যেতেই সে আত্মরক্ষার জন্য বাড়ি মালিক কে খুন করে। আর রক্ত বিন্দু গুলি তার খুন করা ছুরিটা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া প্রতিবেশীদেরও কিছু হয়তো সে চুরি করেছে, নতুবা তাদেরও কাউকে হত্যা করেছে অথবা বাড়ি মালিকের হত্যার কথা জেনে তারাও দলে দলে যোগ দিয়েছে অতিন্দ্রের সাথে।
ওই তো অতীন্দ্রও ওদের সাথে আছে। হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক ঠিক। কিনা কিই ভেবেছিলাম। ওই চোর ব্যাটাই খুনটা করেছে। ব্যাটার উপযুক্ত শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত মনটা শান্তি পাচ্ছে না। এইতো চোরটাকে পাকড়াও করেছে, যাই ছুটি।
ছুটতে থাকলাম, হালকা অস্পষ্ট কথা শোনা যাচ্ছে, একসময় আর ছুটতেও পারছি না। তলপেটের বাঁ দিকটাই লাগছে। আজ যেন একটু তাড়াতাড়িই হাপিয়ে গেলাম। আমরা যে কাজ করি একথা শুনলে যে কেউ হাসবে। কী জানি, হয়তো এই সব অদ্ভুতুড়ে ঘটনাগুলির জন্যই আজ এরকম মনে হচ্ছে। তা এখন ছুটে আর কী হবে? সবাই তো ধরেই ফেলেছে। ছোটা আর কি হাঁটতেও পারছিনা। আমি মাটির উপরে হাঁটু গেড়ে বসে গেলাম। যা ছুটেছি একটু বিশ্রাম না ছাড়া কোন উপায় নেই। অতীন্দ্র তো আছে সব ব্যাপারটা দেখে নেবে।ঘটনাস্থল থেকে আমি বহু দূরে বসে আছি। বহু দূর থেকেই ঘটতে থাকা ঘটনার অনুমান করছি মাত্র।
একি তাইতো, অতীন্দ্র ওটা কী বার করছে? তার পকেট থেকে ছুরি।(হ্যুঁ হ্যুঁ হ্যুঁ)ছুরি নিয়ে করবেটা কী? হত্যা। ঠিক তখনই এই কথাগুলো আমার কানে ভেসে এলো। অতীন্দ্রের গলায়, "আহারে! কত করে বলা হলো নেওয়া দেওয়া কর, (চিস) মানলি না। যেন মানুষকে বাঁচাবার হুচুক উঠে গেছে। একটুর জন্য আগে বেঁচে গেলি। আগেই খেল খতম হয়ে যেত। সব প্ল্যান রেডি ছিল। বাট পাখি কিভাবে ফুরুৎ। বোকা ছেলে, স্যুটকেসটা তো আমি পেয়ে যাব, বাট তোকে না মারলে আমার মরন নিশ্চিত। এবার তেরা ক্যা হোগা কালিয়া (হি হা হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ)।"
সত্যিই অতীন্দ্রের কথার কোন মাথামুণ্ডু বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ তখনই আরেকটা আওয়াজ আমার কানে ভেসে এলো।
"না আমায় মেরো না। তুমি এত নীচে নামতে পারলে অতীন্দ্র। সেই সব গরীব মানুষদের কথা, তাদের সাথে ঘটা সব মর্মান্তিক দৃশ্য, মনে পড়ে। না অর্থের লোভে এ সব তোমার কাছে তুচ্ছ, অর্থহীন। ভাবতে অবাক লাগছে। তুমি পারলে এসব।" আওয়াজটা আমার খুব চেনা চেনা লাগছে। খুবই চেনা। অনেকবার শুনেছি,কিন্তু মনে করতে পারছিনা। কার আওয়াজ? কার কার ? হ্যাঁ এতো আমারি মতন আওয়াজ। তাইতো, আমারই মতন। যায় ব্যাপারটা কী আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখি। সামনে গাছ, এখান থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব প্রায় হাত দশেক। অতীন্দ্রের গলায় "এই বিশ্বজগতে টাকায় সব। টাকার জন্য সবকিছু করতে রাজি আছি। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও (হি হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ)। বিদায় বন্ধু।"চাঁদের আলো অতটা ম্লান বলা চলে না, একটু জোরালো। এই জোড়ালো আলোয় এক দৃশ্য দেখে আমি সত্যিই অবাক। দেখি আমার সেই ডোরাকাটা নীল কোর্ট পড়ে মাটিতে বসানো, হাত পা চেপে ধরে রাখা অবস্থায় থাকা মানুষটি আর কেউ নয়। স্বয়ং আমি। আমারই মতন একই মুখশ্রী, একই কণ্ঠস্বর। হঠাৎই না- না- না- অ্যাঁ- অ্যা- আ...
( হি হা হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ)
...
ESTÁS LEYENDO
টাইম ক্রাইম
Misterio / Suspensoঅতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, যদি কোন ভাবে তুমি ভবিষ্যতে পৌঁছে যাও। নিজের মৃত্যুর নিজের চোখে দেখতে পাও। ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি আগেভাগে জেনে যাও। তাহলে তুমি কী করবে? পরিবর্তন কী কিছু হবে? না অপরিবর্তিত থাকবে সবকিছু। না শুধু মনেরই পরিবর্তন ঘটবে। গল্পের কথক ও তা...