টাইম ক্রাইম [পর্ব 18]

10 2 0
                                    

বারও গেলাম সেই এলাকায়, সেই গ্রামে। অনেকে অনেক কিছু বললো। ঠিকমতো ভাবে পুরো ঘটনাটা কেউ বলতে পারলো না, শুধু একজন বৃদ্ধ ছাড়া। বৃদ্ধ মানুষের কাছ থেকে জানতে পারলাম পুরো ঘটনাটা, আসল ব্যাপারটা।

বৃদ্ধ : "বহুদিন আগে এই বাড়িটা একজন বিজ্ঞানী বানিয়েছিল, নিরিবিলি স্থানে ভালোভাবে গবেষণা চালানোর জন্য। তিনি সারা দিনরাত এই বাড়িতেই গবেষণা করতেন। বাড়ি থেকে কম বের হতেন। তার একটা চাকর ছিল, নাম ছিল লালু। সেই তার সব যাবতীয় কাজকর্ম করে দিত। রান্নাবাড়া, বাজার করা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সে খুব ধূর্ত ছিল। বিজ্ঞানীর চোখের আড়ালে সে অনেক কুকর্ম করত। তার বাড়ি থেকে অনেক দামি-দামি জিনিস চুরি করে তা বিক্রি করতো।
একদিন একটা খবর চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়েছিল যে বিজ্ঞানী প্রতিদিন রাতে উধাও হয়ে যেত। চলে যেত নাকি বহু যুগ আগে, বহুযুগ পেছনে, ভবিষ্যতে, অতীতে। সেও নাকি গিয়েছিল বিজ্ঞানীর সাথে। বিজ্ঞানী ওকে নিয়ে গিয়েছিল। তার কথা প্রথমে কেউ বিশ্বাস করেনি। তারপর একে একে লোক বিশ্বাস করতে লাগলো। লালু তাদেরকে বিজ্ঞানীর বাড়িতে নিয়ে এসে লুকিয়ে বিজ্ঞানীর ভ্যানিশ হয়ে যাওয়া দেখাতো। তারা দেখে অবাক হয়ে যেত ও তার কথা বিশ্বাস করে নিত। তারপর ঘটলো এক ঘটনা। চাকরটা তাকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে মারার চেষ্টা করল, তার সম্পত্তি পাওয়ার জন্য। যতটা জানতাম বিজ্ঞানীর সাতকুলে কেউ ছিলনা, হয়তো বিজ্ঞানীর পর সে এই সম্পত্তিই পেত। কিন্তু না বাবুর ধৈর্য নেই, উনি সব আগে চান। এ হয়েছে সেই সোনার ডিমের মতন, প্রতিদিন মুরগি সোনার ডিম দিচ্ছে। মুরগি মালিকের হচ্ছে না, উনি মুরগিটা মেরেই আগেভাগে সব ডিম পেতে চান। অপেক্ষা করতে পারবেন না। বিশেষ করে তার ওই টাইম মেশিন যন্ত্র। কিন্তু বৃথা চেষ্টা। তার বিষে কোন কাজই হলনা। হয়তো বিজ্ঞানীর কাছে এমন কোন ঔষুধ ছিল যা সর্ব বিষনাশক। তা খেয়েই সে বেঁচে গিয়েছিল। বিজ্ঞানী জানতে পেরে গিয়েছিল যে এ কার কাজ। তারপর সে লালুকে তাড়িয়ে দিয়েছিল এবং নতুন চাকর নিয়োগ করেছিল।
একদিন হল আর এক ঘটনা। বিষের ঘটনার তিন দিন পর লালু ডাকাতদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অভিযান চালালো বিজ্ঞানীর বাড়ি। উদ্দেশ্য বিজ্ঞানী কে হত্যা করে তার সম্পত্তিগুলো হাতানো। বিজ্ঞানীর বাড়ি থেকে ডাকাতদের নেওয়ার মতন কিছুই ছিল না। তারা কী নেবে, রাসায়নিক দ্রব্য, কেমিক্যাল তা তাদের কী কাজে আসবে, তারা তো কিছুই জানেনা।
বিজ্ঞানী কে মারার, ডাকাতদের কোন অভিসন্ধিই ছিল না। ডাকাতদের চাকরটা টাইম মেশিনের লোভ দেখিয়ে ছিল। তারাও লোকমুখে শুনে ছিল এই বিজ্ঞানীর কথা, তার উধাও হয়ে যাওয়ার কথা। তাই ভবিষ্যৎ দেখবার লোভ সামলাতে না পেরে তারা লালুর নির্দেশ মেনে চলতে শুরু করল। লালুর প্রথম নির্দেশ ছিল যে আগেভাগেই বিজ্ঞানী কে হত্যা করা। কারণ বিজ্ঞানী তাকে অপমান করেছিল তাকে দূর করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে। তাই বিজ্ঞানী কে হত্যা করে সে প্রতিশোধ নিতে চাই, মনের জ্বালা মেটাতে চাই। তারপর অন্য কথা। কিন্তু সে এ ভাবেনি যে, যদি বিজ্ঞানীকেই কে মেরে দিই, তাহলে ডাকাতদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কী হবে। তারা কিভাবে ভবিষ্যৎ দেখতে পাবে, ভবিষ্যতে যাবে।
ডাকাতরা বিজ্ঞানীকে শোবার ঘরে হত্যা করে, সেই ঘরেই টাইম মেশিন ছিল। সেই ঘর থেকেই বিজ্ঞানী উধাও হয়ে যেত সময়ে যাত্রা করতো। লালুর আশা পূরণ হয় প্রতিশোধ নেওয়া সার্থক হয়।
কিন্তু সে এ আশা করেনি যে তার জন্যও বিপদ অপেক্ষা করছে। যখন সে ব্যাপারটা জানতে পারল, তখন তার কিছু করার উপায় ছিল না। সে ভয়ে কাঁপতে থাকলো, এখন কী করা যায়? কী করবে এখন সে? সেতো টাইম মেশিন চালাতে জানেনা। ডাকাতেরা এবার টাইম মেশিনে করে ভবিষ্যতে যেতে চায়। কিন্তু কীভাবে লালু তাদের ভবিষ্যতে পাঠাবে। সে তো কিছুই জানে না। তখন সে ডাকাতদের মেশিনটার কয়েকটা সুইচটি টিপতে বলে, যা টিপলে কী হবে তা সেও জানেনা। তারপর সে ঘরের বাইরে বেরিয়ে ঘরের দরজা লক করে দেয়। ডাকাতেরা তার দেখানো সুইচগুলো টিপে, কিন্তু কিছুই হয়না।
তারা লালুকে ডাকে, লালু উত্তর দেয় না। তারা বুঝে যায় লালুর অভিসন্ধি, যে লালু তাদের ঠকিয়েছে। গেটও খুলছে না, বাইরে থেকে লক করা আছে। মজবুত দরজা, কিছুতেই ভাঙছে না। তারা রেগে যাই ও রাগে টাইম মেশিন কেই ভাঙতে শুরু করে। ভাঙতে ভাঙতে মেশিনের মধ্যে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয় ও মেশিন বাস্ট করে। মেশিন সমেত তারাও উধাও হয়ে যায় সাথে কারেন্টও চলে যায়।
এদিকে ডাকাতদের দরজা বন্ধ করে লালু বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা ল্যাবটিতে পৌঁছায়। সে ভেবেছিল ডাকাতরা একবার ঘর থেকে বেরোতে পারলে তাকে মেরেই ফেলবে। দরকার নেই সম্পত্তি, প্রাণ আগে। এখন যা পাই নিয়ে পলায়ন করি।
সে জানতো ওখানে একটা দামি জিনিস আছে। একটা কলাগাছ একটা শুকনো গাছ যা নাকি অমর। বিজ্ঞানীরই আবিষ্কার।
কিন্তু একটা অসুবিধা হলো গাছটা জলের সংস্পর্শে আসলে পচে যেতে শুরু করে। তার অমরত্ব আর থাকেনা, আয়ু কমতে থাকে। তাই গাছটার ওপরে একটা সাদা চাদর জড়ানো আছে যা গাছটিকে জল ও আগুন এর হাত থেকে রক্ষা করে।
সেই ওই গাছটার সম্পর্কে বিজ্ঞানীর কাছ থেকেই জানতে পেরেছিল। বিজ্ঞানী যখন সারাদিন ল্যাবে ব্যস্ত থাকতেন, তখন তার খাবার দিতে আসত সে। আর বিজ্ঞানীর কাছ থেকেই এই সব জিনিস গুলো সম্পর্কে জানতে পারত, আর অবাক হত। সে জানতো এইসব জিনিসের মূল্য কী হতে পারে। সে অতি সন্তর্পনে কাপড় জড়ানো কলাগাছটাকে নিয়ে নিজের বগলে চেপে ধরলো। তারপর তাড়াতাড়ি ল্যাব থেকে বেরোতে গেল ডাকাতদের হাতে ধরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে। হঠাৎই কারেন্ট চলে গেল আর অন্ধকারে আসতে গিয়েই হল দুর্ঘটনা। ধাক্কা খেয়ে কাঁচের কেমিক্যালের শিশি গুলি নীচে পড়ে ভাঙতে শুরু করে ও তাদের বিক্রিয়ায় বিস্ফোরণ ঘটে- তার মৃত্যু হয়। সে আগুনে পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে যায়; তার কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। শুধু সাদা কাপড় জড়ানো শুকনো একটা কলা গাছ পাওয়া যায়।"
...

টাইম ক্রাইমDonde viven las historias. Descúbrelo ahora