টাইম ক্রাইম [পর্ব 4]

28 1 0
                                    

হুকষ্টে অন্ধকারে হাতরে হাতরে সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলাম। একবার তো পড়েই যাচ্ছিলাম, রেলিংটা না ধরলে এতক্ষণে হয়তো হাত-পা ভেঙে বসে থাকতাম। একি বাড়ি মালিকের দরজাটাও খোলা যে? ঘরের সাদা আলো দরজার বাইরে অল্প বেরিয়ে এসেছে। কই ভেতরে তো কেউ নেই। সদর দরজাটাও খোলা আমি সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম, কী ওটা? কে যেন ওখানে পড়ে আছে মনে হচ্ছে। খুব চেনা চেনা লাগছে, আজকেই দেখা কোন ব্যক্তি হবে। কিন্তু কে? আমি এগিয়ে গেলাম, একি, আমি অবাক হয়ে গেলাম। বাইরের ল্যাম্পের হালকা হলুদাভ আলোয় একটা মুখ ফুটে উঠল। হ্যাঁ, চেনা মুখ। আজকেই দেখা, এক ভদ্রলোক। বাড়ি মালিক, সুদর্ষণ ভট্টাচার্য। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। এই হাল ওনার কী করে হলো? কেন? গায়ের যতগুলি লোম ছিল যেন সবগুলোই খাড়া হয়ে উঠল।

হ্যাঁ উনি এখনো বেঁচে আছেন। পেটের বাঁ দিক থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। গো গো আওয়াজ হচ্ছে।

"এমন কাজ কে করল?" আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

উনি বহুকষ্টে বললেন "আমায় ক্ষমা করে দাও, আমি বড় পাপ কাজ করে ফেলেছি।"

কিছু বুঝতে পারছিনা উনি কী বলছেন? ক্ষমা কী ক্ষমা? কেনই বা ক্ষমা?

কয়েকটা কুকুর এসে সামনে জটলা করে ডাকতে থাকল।

এখনই ওনাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ওনার শুশ্রূষা প্রয়োজন। এখনও প্রাণ আছে, ওনাকে বাঁচানো প্রয়োজন।
আর কুকুর যা ডাকছে, কান মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে। কখন না আবার এসে কামড়ে দেয়। হয়তো তারা আমাকেই তার খুনি ভাবছে।
এখনই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
আমি তাকে চাগিয়ে খুব সাবধানে তার রক্তাক্ত ক্ষতস্থানটিতে আমার রুমালটি দিয়ে চেপে তার ঘরে নিয়ে আসলাম। বিছানায় শোওয়ালাম না, বেকার বিছানাটা রক্ত মাখা হবে। তাই ঘরের মেঝেতে শুইয়ে দিলাম। বাড়ি মালিক গো গো করতে করতে বললেন, "আমায় ক্ষমা করে দাও। আমায় মরতে দাও। আমি বড় পাপ কাজ করে ফেলেছি। এটাই তার ফল, পাপের ফল। আমায় মরতে দাও।"

আমি : "না না আপনার কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো। ফোন ফোন ফোন, ফোনটা কোথায় গেল? হ্যাঁ ফোনটা তো চুরি গেছে। (চিস) এবার কী করি?"

বাড়ি মালিক আর নেই, শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। তার নাড়ি দেখে বুঝলাম কোন স্পন্দন নেই। আমার চোখের সামনে একটা নিরীহ মানুষকে মরতে দেখে নিজেকে বড় পাপী মনে হচ্ছে। বাঁচাতে পারলাম না(চিস), উঠে দাঁড়ালাম। আমাকে যে করেই হোক তার খুনিকে খুঁজে বার করতেই হবে। স্যুটকেসটার কথা মনে পড়তেই গাটা একটু শিঁউরে উঠলো। টেবিলে রাখা টর্চ লাইটটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম।
সদর দরজার বাইরে বেরিয়ে এলাম। সামনে আলো ফেলতেই দেখি, এক জায়গায় রক্ত একটু বেশিই পড়ে আছে। যেখানে উনি এতক্ষণ পড়েছিলেন। বাট সেখানেই শেষ নয়। ঘটনাস্থল থেকে রক্তের ফোটা যেন সামনের দিকে আরো এগিয়ে গেছে। পায়ের দাগ? না পা এর দাগ কিছুই বোঝা যায়নি। সামনে-পিছনে ইটের উপর সবকিছুই অস্পষ্ট, শুধু রক্তের বিন্দুগুলি স্পষ্ট হয়ে নতুন কিছুর ইঙ্গিত করছে। ফোঁটাগুলির পারস্পরিক দূরত্ব যেন খুবই বেশি মনে হচ্ছে। এটা কী চোরের কৃতকর্ম? না ডাকাতের? ওই লোকগুলো ডাকাত নয়তো? হয়তো এনার কাছ থেকে টাকা চেয়েছিল। দেয়নি বলে হত্যা করেছে। কিন্তু বাড়ির বাইরে কেন খুন করবে? টাকা কী বাইরে চেয়েছিল? না অন্যকিছু? ডাকাতেরা জানি জেনে শুনে তাদের অভিযান চালায়। হয়তো তারা কোন ভাবে খবর পেয়েছে যে এর কাছে অনেক টাকা আছে। আবার এর নিজের বলতে কেউ নেই অর্থাৎ একে উপরে পাঠানো খুব সহজ হবে। বাড়ি মালিককে তারা বাইরে কোন ছ্যূত ধরে ডেকে এনে বসিয়ে দেয় পেটে ধারালো অস্ত্র।
সেই সময়ই হত্যার আর্তনাদ শুনে অতীন্দ্রের ঘুম ভেঙে যায়। অতীন্দ্র চোরকে তাড়া করতে করতে ওখানে পৌঁছায়। চোর তীর বেগে দৌড় দেয়। তারই সাথে অতীন্দ্রের হাতে বন্দুক দেখে ডাকাতগুলোও পালাতে শুরু করে। আর তাদের হাতে থাকা রক্তমাখা ছুরিটা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে, যা ফোঁটা ফোঁটা হয়ে রাস্তায় যেন তাদেরকে খুঁজে পাওয়ার নিশান তৈরি করে। আনুমানিক ধারণা করলে এইরকমই দাঁড়ায়। রক্তের দাগ অনুসরণ করতে করতে বাড়ির পিছনেই ওই ল্যাম্পপোস্টের নীচেই চলে এলাম। হ্যাঁ, এখানেই আমি দেখেছিলাম অতীন্দ্রকে। চোরকে, আর ওই লোকগুলোকে, যারা ছুটন্ত অবস্থায় ছিল। আর রক্তের দাগ কোথায়? চারিদিকে আলো মেরে দেখলাম। কিন্তু কোথাও পেলাম না। মনেহয় ছুরিতে লেগে থাকা রক্তের পরিমাণ এতটাই কম ছিল যে এখানেই তার শেষ নিশান রেখে হারিয়ে গেছে অতল গভীরে।
...

টাইম ক্রাইমWhere stories live. Discover now