টাইম ক্রাইম [পর্ব 19]

25 2 2
                                    

কটু বিরতি, বৃদ্ধ একটু থেমে জল খায়, তারপর আবার বলতে লাগলো, "অনেকে বলে যে লালু ওই কলাগাছটার মধ্যেই ভূত হয়ে আশ্রয় নিয়েছে, তাকে কেউ কেউ ওই বাড়ির ছাদে রাত্তিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে; সাদা কাপড় পড়ে। কেউ দেখেছে সাদা কাপড় পড়া শুকনো কলা গাছকে। আবার অনেকে বলে বিজ্ঞানী মরেনি হয়তো কোন সুদূর ভবিষ্যৎ বা অতীতে এখনো বেঁচে আছেন। আবার কেউ কেউ বলে বিজ্ঞানী মারা গেছেন তার দেহ উধাও হয়ে গেছে কিন্তু তার আত্মা উধাও হতে পারিনি এই বাড়িতেই রয়ে গেছে। আবার কেউ বলে তিনি তার দেহ খোঁজার জন্য, মুক্তির জন্য প্রতিদিন এই ঘরে আসেন ও সময় যাত্রা করে বিভিন্ন সময়ে গিয়ে তার দেহকে খুঁজতে থাকেন।"

আমি : "তাহলে আপনি এত সব কিভাবে জানতে পারলেন?"

বৃদ্ধ : "আমিই তো তার নিয়োগ করা নতুন চাকর ছিলাম।"

আমি : "তাহলে, আপনি কীভাবে বেঁচে গেলেন?"

বৃদ্ধ : "তারা প্রথমে আমার পেটে ছুরি বসিয়ে ছিল, কিন্তু আমি মরিনি, আদমরা ছিলাম। সব ঘটনার সাক্ষী ছিলাম। আর বাকি ঘটনা কিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে অনুমান করেছি মাত্র। তারপর সকালে অন্যরা এসে আমায় উদ্ধার করে। বাকিদের কোন চিহ্নই পাওয়া যায়নি। আর আমি ওমুখো হয়নি।
তারপর বাড়িটা ওই লালুর ভাই দেখাশোনা করতে শুরু করে। সেই এতদিন দেখাশোনা করে আসছে, বহুদিন বন্ধ ছিল বাড়িটা। লোভ আর স্বার্থের বশে, ওইসব ঘটনা, ভুতুড়ে বাড়ির গুজবে কান না দিয়ে সে বাড়িটা দখল করে ও নিজের নামে করে নেয়। যাতে কেউ পরে দখল করতে না পারে। ভুতুড়ে বাড়ি বলে কেউ তার একাজে প্রতিবাদ করেনি। আর এই কদিন হলো তো সে মারা গেল।
সে বাড়ি ভাড়া দিতে শুরু করে গেস্টদের জন্য। ন মাসে ছ মাসে গেস্ট আর কই হত।
একদিন একজন ডাক্তার ওই গেস্ট হাউসে ছিলেন তারপর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একদিন এক সাহিত্যিক কলকাতা থেকে এসেছিলেন শহরের জনবহুল পরিবেশের আওয়াজ থেকে একটু মুক্তি পাওয়ার জন্য, ছুটি কাটানোর জন্য- শান্তিতে একটু লেখালেখির জন্য ওই ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, কিন্তু সেও উধাও হয়ে গেল। তাকেও অনেক খোঁজা হল, পাওয়া গেল না, কিছুদিন পর পাওয়া গেল, তাও আবার পাগল অবস্থায়।
তারপর থেকে লোক আসে না বলবো না। আসে, কেউ না জেনে আসে। কেউ আবার জেনে আসে- যাদের সাহস বেশি।"

এই ছিল আসল ব্যাপারটা। তাহলে সত্যিই ধন্যবাদ জানাতে হয় সেই বিজ্ঞানী কে যার কীর্তির জন্য আমি ভবিষ্যতে পৌঁছায়, যার জন্য স্যুটকেসটা বেঁচে যাই। যার জন্য সকলের মনে আশার আলো জ্বালাতে সক্ষম হই। এমনকি নিজেও বেঁচে যায়।

ঘটনাটা জানালাম শ্রুতিকে। সে তো যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেল, ব্যাকুল হয়ে উঠলো।

প্রথমে আমি ভেবেছিলাম, আর যাব না কিন্তু ভেবে দেখলাম না আর একবার গিয়ে ঘুরেই আসি না, রহস্যের সামনাসামনি হব। আর তাছাড়া আমাদের বিয়েও হয়ে গেছে। হানিমুনের প্লানিং চলছিল, ওখানেই তাহলে হানিমুনটা সেরে নেব ক্ষন।

শ্রুতিও রাজি, সে বলল, "এই রকম ভৌতিক বাড়িতে হানিমুন কাটানোর মজাই আলাদা।"

রিমঝিম নয় ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে। ফিকে জ্যোৎস্নায় প্রকৃতির শোভা যেন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বদ্ধ ঘরে দুই স্বামী স্ত্রী কাঁচের এপার থেকে সেই রূপময় দৃশ্য উপভোগ করছে। সময় রাত দুটো, ঘুম নেই কারো চোখে। চোখে শুধু প্রেমেরই ছোঁয়া। শ্রুতি আমার কাঁধে মাথা রেখে শান্তির সমুদ্রে ভেসে চলেছে।
তারপর সে আর আমি মুখোমুখি কতক্ষণ তাকিয়ে জানিনা। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল। দূর তেরি ভাললাগে এসব। তোমায় কী সুন্দর দেখছিলাম।

এইতো মোমবাতি তো এখানে, দেশলাইটা কোথায় গেল। রঘু তো সকালেই দিয়ে গিয়েছিল কোথায় আবার রাখলাম, ডয়ারে? নাকি তাক টাই? নাকি আবার ঝুড়ি টাই? কোথায়.. কোথায়? হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে ওই তাক টাই রেখেছিলাম। এইতো, দুটো আছে।

(খস খস খস খস) জ্বলনারে (ফর ফর ফর)

একি শ্রুতি তোমার পাশে ওটা কী? মোমবাতির হলদে আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে একটা কঙ্কাল পড়ে আছে মেঝেতে।

তারপর দরজায় আওয়াজ, ঠক ঠক ঠক।

টাইম ক্রাইমDonde viven las historias. Descúbrelo ahora