টাইম ক্রাইম [পর্ব 7]

12 1 0
                                    

     পাখিদের কলরবে ঘুমটা গেল ভেঙে। সারা দেহ একটু ব্যথা ব্যথা করছে; মাথাটাও ঘুরছে। অ্যাঁ এ আমি কোথায়? চারিদিক গাছগাছালিতে ভর্তি, পায়ের উপরে একটা জোঁক বসে আনন্দ করে রক্ত খাচ্ছে কতক্ষণ ধরে কে জানে। ফুলে একেবারে ঢোল হয়ে গেছে। এ্যে এ্যে, ডান হাত দিয়ে অতি সন্তর্পনে তার চোষক টিকে পায়ের চামড়া থেকে বিচ্ছিন্ন করলাম ও দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। অমনি হঠাৎই গতরাত্রির সব কথা মনে পড়ে গেল। হ্যাঁ তাহলে কী এটা সত্যি? না স্বপ্ন? স্বপ্ন যদি হয় তাহলে আমি এখানে এলাম কীভাবে? কিছুই ভেবে উঠতে পারছিনা। বন থেকে বেরোলাম।

     ক্লান্তি ও মাথা ঘোরার দরূন একটু হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে। দূরে কিছু লোকের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। হ্যাঁ, লোকজনকেও দেখা যাচ্ছে। আগুন জ্বলছে, শ্মশানে মরা পোড়ানো হচ্ছে। আমি ঐদিকে উদ্দেশ্য করে পা চালালাম। ঠান্ডায় শরীরও কম কাঁপছিল না। গায়ে আগের দিনের সেই হাতাওয়ালা শার্টটা ব্যতীত আর কিছুই নেই। শ্মশানের কাছে গেলেই হয়তো একটু আরাম পাবো। গা টা একটু গরম হবে।

     কিছু লোকজন এই দিকেই তাকিয়ে ছিল– আমার দিকে। বন থেকে হঠাৎ বেরিয়ে আমায় টলমল ভাবে আসতে দেখে, আমাকে সাহায্য করা তো দূরের কথা সবাই তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে কোথায় যেন পালিয়ে গেল। শুধু শুনতে পেলাম ক্ষিন আওয়াজ "ভূত"। তবে কি ওরা আমায় ভূত ভেবেছে? না ওরাই কালকের সেই সব হত্যাকারী যারা অতীন্দ্রর সহযোগিতা করেছে। হয়তো আজ কালকের সেই হত্যা করা দেহটিকে এখন পড়াচ্ছে। ঐতো মরাটা এখনও পুড়ছে। আমায় দেখে তারা ভূতই ভেবেছে। আমি তো ওই মৃত দেহটার মতন একই রকম দেখতে; তাইতো এটাতো ভাববার বিষয়। কালকে ওটা কে ছিল যে আমার মতন পুরো নিখুঁত নকল?
     এক স্থানে মদ ও মদ খাওয়ার সরঞ্জাম রাখা ছিল। হ্যাঁ দাদা আছে, সাথে গামলা ভর্তি লেস ভাজা। আর এক লিটার বিসলারি বোতল। ওয়াহ্! আর কী চাই।
      একটা প্লাস্টিকের গ্লাসে একটু দাদা ঢেলে একটু বিসলারি মেশালাম, প্যাক রেডি। বাট যেইনা মুখে দিতে যাব কয়েকজন লোক ফিরে এলো, কয়েক জনের মুখে শোনা গেল, "নারে এত ভূত নয় রে, ভূত আবার মদ খায় নাকি? এ মানুষ।"
     তবুও অনেকে কাছে আসতে ভয় পেল। আমারও যে ভয় করেনে তা নয়। আমি পাচ্ছিলাম অন্য ভয়, যদি আমাকে তারা আবার হত্যা করতে আসে।
     একজন হনুমান চল্লিশা পড়তে পড়তে ভয়ে ভয়ে এল, বললো, "তুমি মানুষ না ভূত?" হায় ভগবান কিনা কিই ভেবেছিলাম।
     এরা নিশ্চয়ই সেই সব দুষ্ট লোকেরা হবে না (হ্যুঁ হ্যুঁ)। আমি বললাম, "না আমি জ্যান্ত মানুষ,
না হয় ছুঁয়ে দেখো।"
    একজন ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এলো ও দূর থেকে হাত বাড়িয়ে আমায় স্পর্শ করল আর বললো, "হ্যাঁ হ্যাঁ মানুষ।" সবার ভয় কেটে গেল।
     আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, "এটা কার মরা পোড়ানো হচ্ছে?" তারা বলল, "এটা খগেন খুড়োর মরা পোড়ানো হচ্ছে।" স্বস্তির এক নিঃশ্বাস ফেললাম। এক প্যাক পেটে পড়লো। একটু শরীরটা চাঙ্গা হল বই কি। কিছু লোককে জিজ্ঞাসা করলাম কালকের সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এরা হয়তো জেনে থাকবে কেননা এরা খুব সকালে শব দাহ করতে এসেছে। কিন্তু না কেউ কিছুই বলতে পারল না।
     কোন রক্তের দাগ হত্যার ক্লু কিছুই সেই স্থানে পাওয়া যায়নি। হঠাৎই একটা কথা মনে পড়তেই গাটা শিঁউরে উঠলো সেই স্যুটকেস; যার জন্য এত লড়াই, এই হত্যা।
     আমি উঠে দাঁড়ালাম,ও হন্তদন্ত হয়ে দৌড় দিলাম। লোকগুলো হয়তো এবারে পাগল ভেবেছে– হঠাৎ করে উঠে দৌড়। কিন্তু ওরা কি বুঝবে আমার এই পরিস্থিতির কথা (হ্যুঁ)।
...

টাইম ক্রাইমWhere stories live. Discover now