আমি নীচে নেমে এলাম। কী ব্যাপার ঘরের লাইটটা বন্ধ কেন? কারেন্ট তো অনেকক্ষণ চলে এসেছে। আমি তো বন্ধ করিনি, তাইতো। না এই মুহূর্তে কারেন্টটা চলে গেল? কিন্তু সুইচটা তো বন্ধ। সুইচটা টিপে আলো জ্বালালাম (খট)। তাহলে কেউ কী ঘরে এসেছিলো? অমনি সেই সময় কাচের জানলা দিয়ে আমার দৃষ্টি বাইরের ল্যাম্পপোস্টের দিকে পড়ল, আর কয়েক মুহূর্তের জন্য আমার হৃদস্পন্দন যেন আবারও স্থির হয়ে গেল। একটা অজানা আতঙ্ক আমায় পেয়ে বসলো। আমি কী করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। কী করবো? কী করবো? দেখি আমার কোর্টটা ওখানে আছে তো? না... নেই। কোর্ট নেই ওখানে। হ্যাঁ, সত্যিই আমি ঠিকই ভেবেছিলাম। আমার সন্দেহ ঠিকই, সত্যিই চোর এসেছিল। যে আমার ডোরাকাটা নীল বর্ণের কোর্টটা নিয়ে বেমালুম চম্পট দিয়েছে। আমার কত স্বাদের কোর্ট ছিল। কী করতে যে দরজাটা খোলা রেখে ছিলাম। নিজের এই কৃতকর্মের জন্য নিজের প্রতি বিশাল রাগ ধরছে। হঠাৎ একটা কথা ভেবে উঠতেই আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল। হ্যাঁ লোকটার হাতে, কী যেন একটা ঝুলছিল? স্যুটকে... তারপর আমার মনের বাক যেন স্থির হয়ে গেল, হৃদস্পন্দনও যেন থেমে গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য। হ্যাঁ হ্যাঁ স্যুটকেস।কোর্টটার থেকে স্যুটকেসটা আগে। দেখি দেখি আলমারিতে। অ্যাঁ... আলমারিটা খোলা, আর স্যুটকেসটা ভ্যানিস। অমনি আমার মুখ থেকে একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এল। আবারও নিজের অজান্তেই জানলার দিকে চোখ চলে গেল। আর আমি আবারও চমকে উঠলাম। দেখি কয়েকজন লোক যেন হন্তদন্ত হয়ে সেই দিকেই দৌড়ালো, হাতে কী যেন নিয়ে। তারপর আবারও চমকে উঠলাম। শুধু চমকের ওপর চমক। দেখি বন্ধু অতীন্দ্র তাদের পিছনে। তাহলে কি অতীন্দ্রের কোনো বিপদ হয়েছে? ওই লোকগুলোই বা কে? চোর কি তাদেরও কিছু চুরি করে পালাচ্ছে? না তারা চোরের সঙ্গিনী? অতীন্দ্র মনে হয় তাদেরকেই তাড়া করছে। কিন্তু অতীন্দ্রতো ঘুমকাতুরে লোক, সে তো বলে যে সে রাতে কখনো উঠে না। হয়তো আজ উঠে গিয়েছিলো বাথরুমে। টার্গেট খোলা, আর সেই ফাঁকেই ঘরে চোর ঢুকে চুরি করে ফুড়ুৎ। কিন্তু কিছু হলে আমি তো বুঝতে পারতাম। কোন পায়ের আওয়াজতো পেতাম, কেননা আমি তো ঘুমোইনি। পাশাপাশি ঘর সে আমাকেও জানাতে পারতো। মনে হচ্ছে আমি যেই সময় ছাদে ছিলাম, সেই সময়ই এত কাণ্ড ঘটে গেছে। হয়তো সে আমাকে ডেকেছিলো। কিন্তু কোন ফিডব্যাক না পেয়ে চোরের পিছনে একাই বেরিয়ে গেছে। আর ওই ঠক ঠক আওয়াজটা। মনে হচ্ছে চোর কিছু একটা দিয়ে আমার দরজার লক খোলার চেষ্টা করছিল, তখনই ওই ঠক ঠক আওয়াজটা হচ্ছিল। আর হয়তো সেই কারণেই দরজাটা আটকে গিয়েছিল খুলছিল না। আর আমি দরজার কাছে আসতেই বোধ হয় সে আমার আওয়াজ শুনে কেটে পড়েছে। হয়তো এটাও হতে পারে যে, আমার আওয়াজ শুনে সে নিজেকে লুকাবার জন্য এই উল্টো দিকটাই গা আড়াল করতে এসেছিল। আর এই দিক থেকেই আমায় বেরোতে দেখে তার কাজটা আরও সহজ হয়ে গেল। তারপর আমার ঘর থেকে চুরি করে যখন বেরহচ্ছিল তখন হয়তো অতীন্দ্র বাইরে বেরিয়ে ছিল। আর চোরের কাছ থেকে সে গুলি উদ্ধার করতে, চোরের পিছনে এখন দৌড়াচ্ছে।
কী করতে যে ছাদে উঠলাম। তা এখনও আমি এ ঘরে কী করছি, বন্ধু অতীন্দ্র একাই লড়তে বেরিয়ে গেছে। সত্যিই ওই লোক গুলো যদি চোরের সঙ্গিনী হয়, তাহলে ভাবতেই ভয় করছে। অতীন্দ্র একা, সেকি পারবে? তার সাহায্য দরকার। তাছাড়া আমারও তো ওই স্যুটকেসটা উদ্ধার করা দরকার, অনেক মূল্যবান জিনিস রয়েছে। অসংখ্য মানুষের ভবিষ্যৎ রয়েছে, আমাকে যে করেই হোক স্যুটকেসটা উদ্ধার করতে হবেই। তাড়াতাড়ি, সঙ্গে ফোনটা নিয়ে নিই। আরে, ফোনটা কোথায়? এখানে তো চার্জে দেওয়া ছিল। চার্জারের পিনতো একাকী ঝুলছে। চোরটা তাহলে ফোনটা নিয়েও পালিয়েছে। কী যে করি? লাইট, আমি লাইট নিলাম কিন্তু লাইট জ্বলছে না। তো কি আর করা যায়, বিনা আলোয় আমি বেরিয়ে পড়লাম উদ্ধারকার্যে।
...
YOU ARE READING
টাইম ক্রাইম
Mystery / Thrillerঅতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, যদি কোন ভাবে তুমি ভবিষ্যতে পৌঁছে যাও। নিজের মৃত্যুর নিজের চোখে দেখতে পাও। ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি আগেভাগে জেনে যাও। তাহলে তুমি কী করবে? পরিবর্তন কী কিছু হবে? না অপরিবর্তিত থাকবে সবকিছু। না শুধু মনেরই পরিবর্তন ঘটবে। গল্পের কথক ও তা...