4 0 0
                                    

#ছন্নছাড়া
#Ashlar_Anu
#পর্ব_২ (রিপোস্ট)

প্রচন্ড রেগে গিয়ে অরুনির আসার অপেক্ষা না করে দীপ নিজেই উপরে অরুনির ঘরে চলে গেলো। কিন্তু উপরে গিয়ে দীপ আরো অবাক হয়ে যায়। অরুনি তার রুমের সাথে সংযুক্ত বারান্দায় বসে নিশ্চিন্ত মনে গুন গুন করে গান গাচ্ছে। বাড়ির কোনো খোঁজখবর রাখার প্রয়োজন বোধ করে না সে। দীপ কে দেখে অরুনি বারান্দা থেকে ঘরে ফিরে এলো।
“দীপ কিছু বলবে?”
“হ্যাঁ।”
“বেশ বলো।”
“প্রিন্সেসের গায়ে হাত তোলা উচিত হয়নি তোমার।”
“মা হিসেবে আমার ঈফাকে শাসন করার অধিকার আমার আছে।”
“প্রিন্সেস্ ট্যুরে যেতে পারমিশন চেয়েছিলো অরুনি, গায়ে হাত তুলে শাসন করার মতো কোনো অন্যায় সে করেনি।”
“আমি ঈফাকে ট্যুরে যেতে বারণ করেছি।”
“আমি যখন বলেছি তখন প্রিন্সেস্ অবশ্যই ট্যুরে যাবে।”
“ঈফা কীভাবে ট্যুরে যায় আমিও দেখবো।”
উপরোক্ত কথা বলে অরুনি নিচে চলে গেলো। দীপ এখনো প্রচণ্ড রেগে আছে, ঈফাকে অরুনি মেরেছে তা কিছুতেই মানতে পারছেনা দীপ। অরুনি ঈফাকে আদর না করলেও দীপ তার প্রিন্সেসকে প্রচুর ভালোবাসে। নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দীপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।অরুনি নিচে নেমে রান্নাঘরে গেলো, কুহেলী রাতের খাবার তৈরি করছে আর মিনু কুহেলীকে সহায়তা করছে। অরুনিকে দেখে কুহেলী এবং মিনু উভয়েই বেশ অবাক হলো।
“অরুনি তুমি এখানে!”
“কেনো আমি কিচেনে আসতে পারিনা?”
“ঠিক তা নয়। তোমার কিছু লাগবে?”
“প্রয়োজন না হলে আমি কিচেনেও আসতে পারবোনা!”
“অবশ্যই পারো। ত্বকের ক্ষতি হবে বলে যে চুলার ধারে কাছে যায়নি, সেই তুমি সেচ্ছায় এখানে এসেছো তাই অবাক হয়েছি।”
“বেশ আমি চলে যাচ্ছি।”
অরুনি রাগান্বিত হয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। কুহেলী বুঝতে পেরেছে অরুনি কোনো কারণে রেগে আছে। আসলে দীপের সাথে কথা কাটাকাটি হওয়ার অরুনি বেশ রেগে ছিলো ফলে এখানে কিচেনে এসেছে সে। কিন্তু কুহেলী ইচ্ছে করেই অরুনির সাথে এমন আচরণ করলো, অরুনি ঈফাকে মেরেছে শুনে কুহেলীও অনেক কষ্ট পেয়েছে।
অনেক বোঝানোর পর আর্শি ঈফাকে ঘরে নিয়ে এলো। ঈফা তার নিজের ঘরের বিছানায় বসে আছে।
“কাকির উপর আর রেগে থাকিস না।”
“আমি রাগ করিনি।”
“মায়েরা একটু শাসন করেই মন খারাপ করিসনা।”
“সব মায়েরাই শাসনের পাশাপাশি তাদের সন্তানদের ভালোবাসে শুধু মাম্মাম আমাকে ভালোবাসে না।”
ঈফার গলা বেঁধে আসলো কথাটি বলতে গিয়ে। ঈফার কষ্ট দেখে আর্শির চোখেও অশ্রুরা ভীর করছে। আর্শি তার চোখের জলগুলো ঈফার আড়ালে মুছে নিলো।
“মায়েরা কখনোই সন্তানকে না ভালোবেসে থাকতে পারেনা, কাকিও তোকে অনেক ভালোবাসে ঈফা।”
“না মাম্মাম্ আমাকে ভালোবাসেনা।”
“কাকি হয়তো কোনো কারণে তোর সাথে রেগে আছে। রাগ কমলে দেখবি তোকে আদর করবে।”
“মাম্মাম্ কখনোই আসবে না।”
“দুপুর থেকে কিছুই খাসনি আমি তোর জন্যে খাবার নিয়ে আসছি।”
“আমি খাবো না।”
“খাবারের উপর রাগ করতে নেই ঈফা না খেলে তোর শরীর খারাপ করবে।”
“না খেলে আমার কিছু হবে না।”
“আমি তোকে খাইয়ে দিবো প্লিজ্ আর না বলিস না!”
ঈফা প্রতিউত্তরে আর কিছুই বললো না। আর্শি ঈফার জন্য খাবার আনতে আর্শির মা কুহেলীর কাছে গেলো। আর্শির ঘর থেকে বের হবার সাথে সাথেই সেখানে অরুনি প্রবেশ করলো। অরুনি ঈফাকে অকারণে বকাবকি শুরু করে দিলো। এতে ঈফা আরো অনেক কষ্ট পেলো কিন্তু প্রকাশ করলোনা। অরুনির ঘর থেকে চলে যাবার পর ঈফা অভিমান করে না খেয়ে শুয়ে পড়লো।
“প্রিন্সেস্ কিছু খেয়েছে?”
“না কাকু।”
“ওহ্।”
“কাকু তুমি বেরোনোর পর কাকি আবারো ঈফাকে বকেছে।”
“প্রিন্সেস্ এখন কোথায়?”
“কাকির উপর অভিমান করে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে।”
“জানতাম প্রিন্সেস্ এমনটাই করবে।”
“না খেয়ে থাকলে ঈফা যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কাকু!”
“তুমি প্রিন্সেসের জন্যে খাবার নিয়ে এসো আমি তার কাছে যাচ্ছি।”
বাড়ি ফেরার পর দীপ জানতে পারে ঈফা অভিমান করে কিছু খায়নি। অরুনি ঈফাকে কষ্ট দিলে ঈফা এভাবেই অভিমান করে থাকে আর দীপ ছাড়া কেউ তার প্রিন্সেসের অভিমান ভাঙ্গাতে পারেনা।
সকল দুঃখ-কষ্ট-অভিমান ভুলে নিশ্চিত মনে ঘুমোচ্ছে ঈফা। দীপ ঈফার ঘরে প্রবেশ করলো। ঈফার মুখশ্রীতে এক আলাদা ধরণের মায়া লেগে থাকে যার ফলে কেউ ঈফাকে না ভালোবেসে থাকতে পারে না। চাঁদের আলোতে ঈফাকে আরো মায়াবী লাগছে, ঠিক যেনো ছোট্ট অরুনি। ঈফা হুবহু অরুনির মতোন দেখতে কিন্তু তার স্বভাব সম্পূর্ণ অরুনির বিপরীত। ঈফা হাসতে ভালোবাসে, আপন ভেবে সকলের সাথে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসে অপরদিকে অরুনি শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্ককে প্রাধান্য দেয়। ঈফার মাঝে দীপ তার মাকে দেখতে পায় তাইতো ঈফা দীপের চোখের মণি। অরুনি ঈফাকে না ভালোবাসলেও দীপ ঈফাকে প্রচুর ভালোবাসে। ঈফা দীপের প্রিন্সেস, দীপের কলিজার টুকরো তাই ঈফা কষ্ট পেলে দীপ অনেক কষ্ট পায়। দীপ বুঝতে পারেনা এত মিষ্টি স্বভাবের অধিকারী ঈফাকে অরুনি কীভাবে দূরে দূরে রাখে, কীভাবে অরুনি তার প্রিন্সেসকে এত কষ্ট দেয়। দীপ তার চোখের কোটরে জড়ো হওয়া পানিগুলোকে মুছে নিলো। অতঃপর আলতো করে ঈফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো। মাথায় বাবার হাতের স্পর্শ পেয়ে ঈফা ঘুম থেকে জেগে উঠলো।
“পাপা তুমি এসেছো?”
“হ্যাঁ, প্রিন্সেস্।”
“আমি জানতাম পাপা আসবে।”
“পাপা কিন্তু প্রিন্সেস্ এর উপর রাগ করেছি।”
“কেনো পাপা?”
“প্রিন্সেসকে আমি না খেয়ে থাকতে বারণ করেছিলাম কিন্তু প্রিন্সেস পাপার কথা শুনেনি।”
“আচ্ছা পাপা আর কখনো এমন করবো না।”
“প্রমিস্?”
“প্রমিস্।”
মিষ্টি করে হেসে উঠে ঈফা, দীপ ঈফার হাসিতে তার মায়ের হাসি খুঁজে পেলো। আর্শি খাবার নিয়ে আসলে দীপ নিজের হাতে ঈফাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। অতঃপর আর্শিকেও ঘুমোতে বললো। আর্শি ঘুমোতে যাবার পর দীপ অরুনির ঘরে গেলো। খুব সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে অরুনি। অরুনির মুখ অনেক নিষ্পাপ এবং মায়াতে ভরা। অন্যায় করলেও দীপ কখনো অরুনির সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেনি, অরুনিকে ভীষণ ভালোবাসে দীপ। অরুনি কখনোই পরিবারের প্রতি তার দায়িত্বটি ঠিকভাবে পালন করেনি। দীপ এবং সংসারের প্রতি অরুনি বেশ উদাসীন। নিজের মেয়ে ঈফার খোঁজখবর রাখার যে প্রয়োজন করেনা তার কাছ থেকে একটু ভালোবাসা আশা করা বোকামী বলে মনে করে দীপ। তবে অন্য সময় হতাশ হলেও দীপ এবার কোনো অনুভূতিই প্রকাশ করলো না। একনজর অরুনিকে দেখে নিয়ে দীপ নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো। দীপের ঘুমোনের পর ঘুমের অভিনয় থেকে উঠে পড়লো অরুনি। অতিসাবধানে কোনো শব্দ না করে আলমিরা থেকে কিছু জিনিস বের করে নিলো অরুনি, তারপর আলমিরাটি বন্ধ করে আলমিরার চাবি সঠিক স্থানে রেখে দিলো।
সকালবেলা ঈফা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে এসে স্কুলের জন্যে প্রস্তুত হয়ে নিচে নামলো। সকলে মিলে ব্রেকফাস্ট করতে শুরু করে হঠাৎ সেখানে অরুনি আসে। অরুনিকে এভাবে দেখে প্রত্যেকেই অবাক হলো।
“কোথায় যাচ্ছো অরুনি?” [কুহেলী]
“আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।” [অরুনি]
“কেনো?” [দীপ]
“আমার ইচ্ছে।” [অরুনি]
“এতো সকালে!” [দীপ]
“আমি আর কোনো কিছু শুনতে চাচ্ছি না।” [অরুনি]
অরুনি সেখান থেকে চলে গেলো, দীপ আর অরুনিকে কিছু বললো না। ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট হলে দীপ ঈফাকে তার স্কুল বাসে পৌঁছে দিয়ে এলো। ঈফা স্কুলে যাবার পর এসেম্বলি এটেন্ড করলো। ক্লাসে যাবার পর ঈফা তার নিজস্ব সিটে গিয়ে বসলো। তারপর রিয়া এবং মৌ ঈফার সাথে দেখা করতে আসে। ক্লাসে বন্ধুদের সাথে কথা বলে ঈফার মন অনেকটাই ভালো হয়ে গেলো।
অরুনি তার মায়ের কাছে এসেছে। অরুনির বেশ ভালো লাগছে অনেকদিন পর নিজের মা আর বোনদের সাথে দেখা করতে পেরে।

চলবে...

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। কিছু সমস্যার কারণে গল্পটি একদিন পর পর দিবো। গতকাল গল্প না দেয়ার জন্য দুঃখিত।)

ছন্নছাড়া Место, где живут истории. Откройте их для себя