3 0 0
                                    

#ছন্নছাড়া
#পর্ব_৩ (রিপোস্ট)
#Ashlar_Anu

অরুনিকে দেখামাত্র ছুটে বাড়ির বাহিরে অরুনির কাছে চলে এলেন আফসানা। অনেক কাল পরে নিজের প্রাণপ্রিয় স্নেহের কন্যার দেখা পেয়ে আফসানার চোখে অশ্রুরা এসে ভীর জমালো। এতদিন পর মাকে কাছে পেয়ে অরুনিও আবেগপ্রবণ হয়ে যায়, কথা বলার সময় গলা ভেঙ্গে আসতে লাগে অরুনির।
“কেমন আছো মা?”
“সন্তানকে ছাড়া মায়েরা কখনো ভালো থাকেনা।”
“জানো মা, আমার খুব কষ্ট হয় তোমাদের ছাড়া থাকতে।”
“অরুনি এটিই মেয়েদের জীবন। সব মেয়েদের আপনজনদের ছেড়ে একদিন পরের বাড়িতে চলে যেতে হয়।”
“আমার তোমাকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হয়।”
“কষ্ট পেয়ো না। তোমার শশুড়বাড়ির সবাই কেমন আছে?”
“ভালো আছে।”
“দীপ এবং ঈফা কেমন আছে?”
“ভালো।”
“ঈফা আসেনি?”
“নাহ্।”
“কেনো?”
“ঈফা তার পাপা এবং আর্শিকে ছাড়া থাকতে পারেনা।”
“ওহ্।”
“বাদ দাও। অরোহী আর অনি কোথায়?”
“অনি কিছুক্ষণ আগে স্কুল থেকে ফিরেছে। আর আরোহী এখনো কলেজে।”
“আচ্ছা।”
ঈফা, রিয়া এবং মৌ শ্রেণীকক্ষে একসাথে বসে ক্লাস করছে। এতটুকু সময়েই রিয়া এবং মৌ ঈফাকে অনেক আপন করে নিয়েছে। তাদের গভীর বন্ধুত্ব দেখে আয়েশা সহ ক্লাসের সবাই অনেক মুগ্ধ এবং বিস্মিত। ক্লাসের নির্ধারিত সময় শেষ হলে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দিয়ে আয়েশা চলে গেলেন। শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাস শুরু হবার আগ পর্যন্ত গল্প করতে শুরু করে। এভাবে পর পর তিনটি ক্লাস সম্পন্ন হবার পর শিক্ষার্থীদের টিফিন ব্রেক্ দেয়া হলো।
“আজ টিফিনে তোমরা কী এনেছো?” (রিয়া)
“নুডুলস্। তুমি?” (মৌ)
“স্যান্ডউইচ্।” (রিয়া)
“ঈফা তুমি কিছু আনোনি?” (মৌ)
“নাহ্।” (ঈফা)
“কেন?” (মৌ)
“তাড়াহুড়ো করে আসার সময় বাড়িতে ফেলে এসেছি।” (ঈফা)
“ওহ্।” (মৌ)
“আচ্ছা চলো আমরা টিফিন শেয়ার করি।” (রিয়া)
“ওকে। জানো মম্ খুব সুস্বাদু নুডুলস্ বানায়।” (মৌ)
“আমার মা অনেক টেস্টি এন্ড হেলদি খাবার তৈরি করে।” (রিয়া)
“তাই?” (মৌ)
“হ্যাঁ। মা আমাকে অনেক ভালোবাসে।” (রিয়া)
“আমাকেও মম্ অনেক ভালোবাসে।” (মৌ)
“ঈফা তুমি কিছু বলো।” (রিয়া)
“আমি!” (ঈফা)
“তোমার মা তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই না?” (মৌ)
“কোথায় যাচ্ছো ঈফা?” (রিয়া)
“আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি।” (ঈফা)
“আচ্ছা।” (মৌ)
রিয়া আর মৌয়ের কথোপকথন ঈফার ভালো লাগছিলো না। ঈফা ভুল করে টিফিন বাড়িতে ফেলে আসেনি। ঈফা রিয়াদের মিথ্যে কথা বলেছে, অরুনি তো তার জন্যে টিফিন তৈরিই করেনি। মৌ আর রিয়াদের মায়েরা তাদের কত ভালোবাসে আর অরুনি ঈফার কথা ভাবে পর্যন্ত না। ঈফার কান্না পাচ্ছিলো এসব কথা ভেবে। তাই নিজের কান্নাকে আড়াল করতেই স্কুলের মাঠের এক কোণায় চুপটি করে বসে আছে ঈফা।
স্কুল থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে সবে মাত্র বসেছে অনি, তখন পেছন থেকে আলতো হাতে অরুনি তার চোখদুটো ঢেকে ফেললো। হঠাৎ চোখে পেছন থেকে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে অনি প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও এই হাতযুগল কার তা বুঝতে অনির বেশি বেগ পেতে হলো না।
“অরুনি আপি তুমি!”
“যাক চিনেছিস তাহলে।”
“তোমার দুষ্টুমিগুলো আর কখনো গেলো না।”
“কেমন আছিস বল।”
“ভালো না।”
“কেনো?”
অনি ভালো নেই শুনে অরুনি বেশ কষ্ট পেলো। অনির মন খারাপ কেনো তা জানতে অরুনি আরো উদগ্রীব হয়ে উঠলো। অরুনিরা চার বোন এবং তাদের মাঝে অনি সবার ছোট। ছোট থেকেই অরুনিসহ সবাই অনিকে অনেক ভালোবাসে। কোনো পরিস্থিতিতেই অনির কোনো আবদার তারা কখনো অপূর্ণ রাখেনি।
“কী হলো বল?”
“তুমি না বলেছিলে আমাকে নতুন ফোন কিনে দিবে?”
“ভুলে গিয়েছিলাম রে। সরি।”
“আমি বাদে আমার সব বন্ধুদের কাছে ফোন আছে।”
“মন খারাপ করিস না।”
“কথা বলবোনা তোমার সাথে।”
“আচ্ছা এইনে এটা ধর।”
“কী এটা?”
“এখানে কিছু টাকা আছে, টাকাগুলো দিয়ে তোর পছন্দমতো ফোন কিনে নিস।”
“লাভ ইউ অরুনি আপি। তুমি সত্যিই আমাকে অনেক ভালোবাসো।”
“এবার খুশিতো?”
“অনেক।”
অনি অরুনিকে জড়িয়ে ধরলো।
আয়েশা ঈফাকে দূর থেকে লক্ষ্য করছে, আয়েশা বুঝতে পেরেছে কোনো কারণে ঈফার মন খারাপ। ঈফা বেশ অনেকক্ষণ ধরেই মুখ গোমড়া করে বসে আছে। সবসময় হাসিখুশি থাকা মেয়েটির মুখে মলিনতা নেমে আসলে কারোরই ভালো লাগবেনা। ঈফাকে এভাবে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে আয়েশার একটুও ভালো লাগছে না। অবশেষে ঈফার পাশে গিয়ে বসলো আয়েশা।
“কী হয়েছে ঈফা?”
“না কিছুনা।”
“তোমার কি মন খারাপ?”
“নাহ্।”
“মিথ্যা বলা পাপ।”
“সরি ম্যাম্।”
“ইটস্ ওকে। এবার বলো কী হয়েছে।”
“আসলে...!”
“কষ্ট কখনো নিজের মাঝে চেপে রাখতে নেই এতে কষ্ট বাড়ে। বন্ধুদের সাথে তাষভাগ করে নিলে মনের মাঝে সৃষ্ট দমবন্ধকর অনুভূতি অনেকটাই কমে আসে।”
ঈফা এতক্ষণে ফুঁপাতে শুরু করেছে।
“বন্ধু ভেবে আমার সাথে সবকিছু শেয়ার করতে পারো ঈফা, এতে তোমার কষ্ট কিছুটা হালকা হবে।”
আয়েশা ঈফার মাথায় হাত বুলিয়ে উপরোক্ত কথাটি বললেন। আয়েশা একজন বন্ধুসুলভ মানুষ, শিক্ষার্থীদের সাথে সর্বদা বন্ধুর মতো আচরণ করার চেষ্টা করেন। শিক্ষক হবার আগে শিক্ষার্থীদের সাথে তিনি একজন ভালো বন্ধু হয়ে মিশতে চান।
মানুষ তার দুঃখের সময়ে যারা তার সাথে সহানুভূতি প্রকাশ করে তাদেরকে মন উজার করে সব দুঃখের কথা বলে মনের ভার হালকা করে। ঈফার মন খারাপে আয়েশার বন্ধুসুলভ কথায় আবেগপ্রবণ হয়ে ঈফা আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে তার সকল দুঃখের কথা বলতে শুরু করে। ঈফার কাছ থেকে সবকিছু শুনে আয়েশা অনেক ব্যথিত হলেন কিন্তু তা প্রকাশ করলেন না। এতে ঈফা আরো ভেঙ্গে পড়বে। আয়েশা ধৈর্য সহকারে ঈফাকে বুঝিয়ে শান্ত করতে লাগলেন।
“মা শব্দটা ছোট হলেও তার ব্যাখ্যা অনেক বড় ঈফা। মায়েরা সবসময় তাদের সন্তানদের ভালো চায়, সন্তানদের ভালোবাসে। এই স্বার্থপর দুনিয়া থেকে মায়েরা আমাদের আগলে রাখে। বাঁচিয়ে রাখে সকল বিপদ আপদ থেকে। মায়েদের এই ভালোবাসা কখনো লোক দেখানো হয়না, তাদের ভালোবাসা অনুভব করতে হয়। বড় হবার পর ধীরে ধীরে মায়ের ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে পারবে তুমি কিন্তু তখন মাকে ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে তোমাকে চলে যেতে হবে অন্য গন্তব্যে।”
আয়েশার কথা শুনে ঈফা অনেকটাই শান্ত হলো। হঠাৎ তখন এক পিয়ন এসে ঈফার হাতে একটি বাক্স দিলো, এতে ঈফা এবং আয়েশা দুজনেই অনেক অবাক হলো।
“এক ভদ্রমহিলা ঈফাকে এটি দিতে বললেন। তিনি ঈফার জন্যে স্কুল গেটের বাহিরে অপেক্ষা করছেন।”
উপরের কথাটি বলে পিয়নটি সেখান থেকে চলে গেলো।
“আমার জন্যে কে খাবার পাঠিয়েছে?”
ঈফা কিছুটা চিন্তিত স্বরে কথাটি বলে উঠলো। কেননা ঈফার মা অরুনির তো এখানে আসার কথা নয়। তাহলে সেই ভদ্রমহিলা কে?
“ভদ্রমহিলা আর কেউ নয় তোমার মা হবে হয়তো ঈফা। মায়েরা কখনো সন্তানদের ভুলে থাকতে পারেনা ঈফা। তাইতো তোমার মা তোমার জন্যে খাবার নিয়ে এসেছেন। আর মন খারাপ করো না এবার খেয়ে নাও। তার আগে যাও মায়ের সাথে দেখা করে এসো।” (আয়েশা)
আয়েশার কথা শুনে ঈফার মুখে হাসি ফুটে উঠে। তাহলে কী সত্যিই ঈফার মা এসেছে ঈফার সাথে দেখা করতে? অরুনিও কী অন্য মায়েদের মতোন ঈফাকে অনেক ভালোবাসে? ঈফার মলিন মুখে এবার উচ্ছাসের আভা দেখা যাচ্ছে। ঈফা ছুটে একপ্রকার দৌড়ে স্কুল গেটের কাছে চলে এলো। কিন্তু তারপর ঈফা সত্যি অনেক অবাক হয়ে গেলো।
“তুমি!”
অবাকের সহিত সামনে দন্ডায়মান ব্যাক্তিটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ঈফা। ঈফার পেছনে আয়েশাও এসে দাঁড়ালেন।
“উনি কি তোমার মা ঈফা?”
ঈফা কিছু বললো না কারণ ঈফার বিস্ময় এখনো কাটেনি। ঈফাকে চুপ থাকতে দেখে আয়েশা বলে উঠলেন,
“আপনার মেয়ে আপনার জন্যে এতক্ষণ কাঁদছিলো। আপনি এসেছেন শুনে ছুটে চলে এসেছে ঈফা।”

চলবে....

ছন্নছাড়া Where stories live. Discover now