#ছন্নছাড়া
#পর্ব_১১
#Ashlar_Anuস্কুল গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন রিয়ার মা সাবিহা আহমেদ, তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন মৌ-য়ের মা রিমি খান। রিয়া এবং মৌয়ের আসার অপেক্ষা করার পাশাপাশি তারা কিছু গল্প-গুজবও করছেন। সাবিহা বেশ গর্বের সহিত বললেন,
“আমি নিশ্চিত রিয়াই এবার ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে, তার প্রিপারেশন এবার অনেক ভালো ছিলো।”
“তাই! এটা তো খুবি আনন্দের খবর।”
“হুম। আমি রিয়ার কাছ থেকে ফলাফলটি জানার জন্য অপেক্ষায় আছি।”
“দেখা যাক।”
ঈফা, রিয়া এবং মৌ একসাথেই স্কুলে গেটের কাছে গেলো। বাহিরেই রিয়া এবং মৌয়ের মা দাঁড়িয়ে আছে। সবার মাঝে সেখানে অরুনিকে দেখতে না পেয়ে ঈফার মুখে থাকা প্রাণবন্ত মুচকি হাসিটাও মলিন প্রাণহীন হয়ে গেলো। ঈফা ভেবেছিলো আজকের দিনে হলেও অরুনি এখানে আসবে। কিন্তু তার আশাটি পুনরায় মিথ্যে প্রমাণিত হলো।
রিয়া এবং মৌ দৌড়ে তাদের মায়ের কাছে চলে গেলো। ঈফা ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে সামনে আগাতে শুরু করলো।
“মা!”
“ওহ্ মাই সুইটহার্ট!”
রিয়া দৌড়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। সাবিহা তার মেয়ে রিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
“রেজাল্ট কেমন হয়েছে রিয়া? আই নো এবার তুমিই ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছো। এম আই রাইট্ সুইটহার্ট?”
অপরদিকে মৌ ও তার মায়ের কাছে এসে দাঁড়ালো।
“কী হলো সুইটহার্ট কিছু বলছো না যে?” (সাবিহা)
“আসলে মা আমি প্রথম নয় দ্বিতীয় হয়েছি। এবারের এক্সামে ঈফা-ই প্রথম হয়েছে, সব সাবজেক্টেই সে হায়েস্ট্ মার্ক্ পেয়েছে।” (রিয়া)
সাবিহার মুখে এবার কিছুটা মলিনতার ছাপ ফুটে উঠলো। কিন্তু তা প্রকাশ না করে পরক্ষণেই তিনি বললেন,
“বাহ্ সুইটহার্ট তুমি খুব ভালো রেজাল্ট্ করেছো। তোমার জন্যে কিছু গিফট্ রয়েছে।” (সাবিহা)
“তাই!” (রিয়া)
গিফটের কথা শুনে রিয়ার মন ভালো হয়ে গেলো। রিমি তার মেয়ে মৌ-য়ের কাছে জানতে চাইলো,
“মৌ তুমি কত তম হয়েছো?” (রিমি)
“চতুর্থ।” (মৌ)
“মন খারাপ করো না মৌ পরের এক্সামে আরো ভালো করে প্রিপারেশন নিবে।” (রিমি)
“ওকে মম্।” (মৌ)
মৌয়ের মুখে এখন হাসি ফুটলো।
রিয়ার মা সাবিহা ঈফা, মৌ এবং তাদের কয়েকজন ফ্রেন্ড কে রিয়ার পক্ষ থেকে ট্রিট দিলো। ঈফা প্রথমে যেতে চায়নি কিন্তু তার বেস্টফ্রেন্ড্ রিয়ার কথায় সে না করতে পারলো না। মৌ-ও তার সকল ফ্রেন্ডদেরকে আইসক্রিম খাওয়ায়। অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার ফলে ঈফা এবার বাড়ি যেতে চাইলো।
“রিয়া, মৌ এবার আমি আসি।” (ঈফা)
“এখনি চলে যাবি?” (রিয়া)
“আরেকটু থাকনা আমাদের সাথে। আজ আমাদের কত আনন্দের দিন।” (মৌ)
“না রে! অলরেডি অনেক লেট্ হয়ে গিয়েছে, এবার আমায় যেতে হবে। নয়তো মাম্মাম্ আমাকে অনেক বকা দিবে।” (ঈফা)
“ওহ্।” (রিয়া)
“আজকে আমাদের ক্লাসে প্রায় সব স্টুডেন্ট্ এর মা অথবা বাবা এসেছেন। কিন্তু তোর মা আসেনি কেন? আংকেলও আসেনি!” (মৌ)
“পাপা এখন তার কাজে একটু বিজি থাকে তাই আসতে পারেনি। আর মাম্মাম্ হয়তো আজকের কথা ভুলে গিয়েছে।” (ঈফা)
“ওহ্।” (মৌ)
“আমি এবং মৌ দুজনেই আমাদের সবাইকে ট্রিট দিয়েছি। তুই আমাদের ট্রিট দিবি না?” (রিয়া)
________________________
অরুনি তার বোন আরোহির সাথে ফোনে কথা বলছে।
“কেমন আছিস?”
“ভালোই, তুই?”
“তোদের ছাড়া কীভাবে ভালো থাকি বল!”
“আমিও তোকে অনেক মিস করি।”
“মা কেমন আছে?”
“ভালো।”
“অনির কী খবর? আজকে তো অনির রেজাল্ট দেবার কথা!”
“অনি এবারো দু বিষয়ে এ মাইনাস্ পেয়েছে।”
“সে কী! অনি নিশ্চয়ই এখন মন খারাপ করে বসে আছে!”
“হুম।”
“অনিকে একটু ফোনটা দে, কথা বলি ওর সাথে।”
“অনি তো দরজা বন্ধ করে বসে আছে, কারো কথাই শুনছে না। দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে খাবারো খায়নি।”
“অনিকে বল আমি ফোন করেছি। দেখবি ঠিক দরজা খুলবে।”
অবশেষে আরোহি আবারো গিয়ে অনির দরজায় নক করতে শুরু করলো। কিন্তু ভেতর থেকে অনির কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। আরোহি পুনরায় অনিকে ডাক দিয়ে অরুনির কথা বললো। এবার অনির গলা শুনতে পাওয়া গেলো। প্রথমে অনি কথা বলতে চায়নি কিন্তু পরে ঠিকি দরজা খুললো। আরোহি অনির কাছে ফোন দিয়ে চলে গেলো। অরুনির কথায় অনি অনেকটাই শান্ত হলো। কিন্তু অনি এখনো অনেক রেগে আছে।
“অনি, এখনো মন খারাপ করে আছিস!”
“আমি আর তোমার সাথে কোনো কথাই বলবো না।”
“কেন?”
“তুমি তো আমাকে ভুলে গিয়েছো।”
“নাহ্ রে। আমি তোকে মোটেও ভুলিনি।”
“আমার পকেটমানি এখনো দাওনি কেন?”
“আগের বার তো তোকে ফোন কেনার জন্য অনেক টাকা দিয়েছিলাম। তার মাঝে অনেক টাকা বেঁচে গিয়েছিলো, সেগুলোও কি শেষ হয়ে গিয়েছে?”
“হুম অনেক আগেই।”
“এতগুলো টাকা এত তাড়াতাড়ি খরচ হয়ে গেলো!”
“আমার প্রতিদিনের স্কুল-প্রাইভেট এর বাস ভাড়া, পড়ালেখার খরচ আরো কত রকমের খরচে শেষ হয়ে গিয়েছে।”
“আচ্ছা আমি পরের বার এলে আবার তোকে হাত-খরচা দিয়ে আসবো।”
“না আমার এখনি লাগবে। বন্ধুদের অনেকদিন ট্রিট দেইনি, পরে তারা আমার সাথে আর কথা বলবে না।”
“আচ্ছা আমি কালকের মাঝেই পাঠিয়ে দেব।”
“আচ্ছা ঈফার পরীক্ষার রেজাল্ট কেমন হয়েছে?”
“ঈফা তো এবার....”
অরুনিকে বলতে না দিয়েই অনি বলতে শুরু করলো।
“ঈফা এবার ফেল করেছে তাইনা! থাক ওকে আর বেশি মারিস না।”
“আরে না! ঈফার ক্লাসটিচার ফোন করেছিলো। আয়েশা বললেন...”
“স্টুডেন্ট্ ফেল করলে টিচার তো ফোন করবেই! শোন ঈফার জন্য মন খারাপ করিস না।”
“আরে ঈফা ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে!”
“হুয়্যাট! ইটস্ ইম্পসিবল!”
“মানে? অসম্ভব কেন হবে?”
“না কিছুনা।”
অনি ফোন রেখে দিলো। আজ ঈফার প্রতি অনেক হিংসা হচ্ছে তার। ঈফা অনির থেকে মাত্র কয়েক বছরের ছোট, দুজনেই প্রায় সমবয়সী। ঈফা অনিকে যথাযথ সম্মান শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসলেও অনি সর্বদা ঈফাকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। ঈফাকে কষ্ট দেয়াই তার প্রধান উদ্দেশ্য। এতেই যেনো এক পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করে অনি। সেকারণেই ঈফা কখনোই অনিদের বাড়ি যেতে চায়না। অনির আজ ঈফার প্রতি অনেক রাগ হচ্ছে, তার মনে হচ্ছে ঈফার কাছে সে হেরে যাচ্ছে।
_______________________________
ঈফা আজ বেশ ফুরফুরে মনে হাসিমুখেই বাড়ি ফিরছে। ঈফা মনে মনে নানা রকম কল্পনা করছে। আজ নিশ্চয়-ই অরুনি তাকে আর দূরে দূরে রাখবে না। আজ নিশ্চয়-ই অরুনি তাকে অনেক আদর করবে। ঈফাকে তার প্রিয় খাবার গুলো রান্না করে খাওয়াবে যেমন ভাবে রিয়া এবং মো-কে তাদের মায়েরা খাইয়েছে! আর বকবে না, মারবে না তাকে- ভাবতেই তার মন আরো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছে। ঈফা তো এতদিন ধরে এটাই চেয়েছিলো। আজ যেনো তার এতদিনের দেখা স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। ঈফা বেশ দ্রত পা চালাতে শুরু করলো- বাড়ি ফেরার পথটা আজ যেনো তার কাছে বেশ দীর্ঘ মনে হচ্ছে, কিছুতেই যেনো শেষ হচ্ছেনা।
ঈফা হাঁটতে হাঁটতে কল্পনায় অনেক কিছু ভেবে হাসতে শুরু করলো। অনেকদিন পর তার মুখে সেই প্রাণোচ্ছল হাসিটি দেখা যাচ্ছে। আর্শি চলে যাবার পর থেকে ঈফা তেমন একটা হাসেনি- বেশ মনমরা ভাব বিরাজ করতো তার মাঝে। আজ অনেকদিন পর ঈফা প্রাণভরে হাসলো।
ঈফা প্রায় দৌড়ে বাড়ি চলে এলো, সে আর অপেক্ষা করতে পারছেনা। বাড়ি এসেই অরুনিকে খোঁজতে শুরু করে ঈফা। ঈফা অরুনিকে রান্নাঘরে দেখতে পায় এবং সেখানেই ছুটে চলে যায়।
“মাম্মাম্ জানো আমি ক্লাসে প্রথম হয়েছি!” (ঈফা)
হঠাৎ অরুনি ঈফার হাতে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করলো। ঘটনার আকস্মিকতায় ঈফা প্রথমে বুঝতে পারেনি ঠিক কী হয়েছে। বুঝতে পারার সাথে সাথে ঈফা চিৎকার করে উঠলো। পুরো হাতে লাল দাগ পড়ে গেছে ঈফার।চলবে...
YOU ARE READING
ছন্নছাড়া
Teen Fictionমায়ের অবহেলা, হিংস্রতার স্বীকার এক মেয়ের জীবনে ঘটে গিয়েছে একের পর এক ভয়ংকর, বর্বর, নিষ্ঠুরতা, সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প।