2 0 0
                                    

#ছন্নছাড়া
#Ashlar_Anu
#পর্ব_৪

“আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে ম্যাম।”
“জ্বী!” (আয়েশা)
“আমি ঈফার মা নই।”
“তাহলে আপনি কে?” (আয়েশা)
“ম্যাম উনার নাম কুহেলী। তিনি আমার কাকী হন।” (ঈফা)
“আম্ এক্সট্রিমলি সরি কুহেলী। আমি ঈফার মা এবং আপনাকে গুলিয়ে ফেলেছিলাম।” (আয়েশা)
“ইটস্ ওকে ম্যাম।” (কুহেলী)
“ঈফা তার মায়ের জন্যে কান্না করছিলো। আপনি ঈফার জন্যে খাবার এনেছেন কিন্তু ঈফা ভেবেছিলো তার মা এসেছে।” (আয়েশা)
“ওহ্!” (কুহেলী)
“হুম।” (আয়েশা)
“মন খারাপ করেনা ঈফা। তোমার মাম্মাম্ খুব শীঘ্রই তোমার কাছে চলে আসবে।” (কুহেলী)
“ঈফার মা কি কোথাও গিয়েছেন?” (আয়েশা)
“হ্যাঁ। অরুনি তার মা, ঈফার নানুর কাছে গিয়েছে।” (কুহেলী)
“ওহ্। ঈফা তার মা অরুনিকে প্রচুর মিস্ করছিলো।” (আয়েশা)
“খাবারটা খেয়ে নাও ঈফা, টিফিন ব্রেক্ খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে।” (কুহেলী)
“আচ্ছা কাকি। ম্যাম জানেন কাকি আমাকে অনেক ভালোবাসে।” (ঈফা)
“বাহ্! বেশ ভালো।” (আয়েশা)
ঈফা তার ক্লাসরুমে চলে গেলো।
“ঈফা আপনাকে অনেক ভালোবাসে।” (আয়েশা)
“মেয়েটা খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নেয়।” (কুহেলী)
“ঈফার মতো এমন মিষ্টি মেয়েকে প্রথম দেখেই সবাই ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু ঈফার কষ্টের কথা শুনে অনেক দুঃখ পেলাম।” (আয়েশা)
“দোয়া করবেন ঈফা যেনো জীবনে সফল হয়।” (কুহেলী)
“অবশ্যই।” (আয়েশা)
“ঈফা ঠিকমতো পড়াশুনো করছে তো?” (কুহেলী)
“হ্যাঁ। ঈফা পড়াশুনোতে বেশ ভালো। সি ইজ্ এ ভেরি ব্রিলিয়ান্ট্ স্টুডেন্ট্।” (আয়েশা)
“ঈফা ছোট থেকেই অনেক ইনটেলিজেন্ট্ এন্ড্ ট্যালেন্টেড্।” (কুহেলী)
“যথাযথ সাপোর্ট্ পেলে ঈফা ভবিষ্যৎে সবার মুখ উজ্জ্বল করবে।” (আয়েশা)
“আল্লাহ্ ঈফাকে জীবনে ভালো মানুষ হয়ে উঠার তওফিক্ দান করুন।” (কুহেলী)
“ঈফা শুধু মেধাবী নয় তার ব্যবহারো যথেষ্ট মার্জিত।নম্র, ভদ্র এবং খুবি মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে ঈফা।” (আয়েশা)
“শুকরিয়া।” (কুহেলী)
কথোপকথন শেষে কুহেলী ঈফার স্কুল থেকে চলে এলো। আয়েশাও বিশ্রাম নিতে টিচার্স রুমে চলে গেলো, বিরতি শেষ হলে তাকে অন্যান্য ক্লাসের স্টুডেন্টদের আরো তিনটি ক্লাস নিতে হবে।
“তুমি কোথায় গিয়েছিলে ঈফা?” (মৌ)
“ভালো লাগছিলোনা তাই স্কুল মাঠ থেকে একটু ঘুরে এলাম।” (ঈফা)
“তোমার হাতে কী আছে?” (রিয়া)
“টিফিন্।” (ঈফা)
“আন্টি তোমার জন্যে টিফিন্ নিয়ে এসেছেন?” (রিয়া)
“নিশ্চয় আন্টি তোমাকে অনেক ভালোবাসেন।” (মৌ)
“নাহ্। মাম্মাম্ নয় কাকি খাবার এনেছেন।” (ঈফা)
“ওহ্।” (রিয়া)
স্কুল ছুটির পর ঈফা, রিয়া এবং মৌ একসাথে বাড়ি ফিরছে। তাদের বাড়ি একে অপরের কাছাকাছি। বাস থেকে নেমে রাস্তায় একসাথে একটু সামনে এগিয়ে তারপর তাদের বাড়িতে যাবার মোড় আলাদা হয়ে যায়। তাই যতটুকু পথ সম্ভব তারা একসাথেই চলাফেরা করছে।
“স্কুলের ট্যুর নিয়ে আমি খুব এক্সাইটেড।” (রিয়া)
“আমারো অনেক আনন্দ হচ্ছে।” (মৌ)
“ঈফা তোর মন খারাপ?” (রিয়া)
“নাহ্। আসলে মাম্মাম্ বলেছে আমাকে ট্যুরে যেতে দিবে না।” (ঈফা)
“ওহ্।” (রিয়া)
“আচ্ছা মন খারাপ করিস না।” (মৌ)
“হুম।” (ঈফা)
ঈফা বাড়িতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলো। তারপর আর্শির রুমে চলে এলো।
“আজ স্কুলে কেমন লাগলো।”
“ভালো।”
“তাহলে তোর মন খারাপ কেন?”
“আমার ফ্রেন্ডরা ট্যুরে যাবে বলে অনেক আনন্দ করছে। কিন্তু মাম্মাম্ আমাকে সেখানে যাবার অনুমতিই দিলোনা। আমার কিছু ভালো লাগছে না।”
“কাকা বলেছে তোকে ট্যুরে যেতে দিবে।”
“সত্যি!”
“হুম।”
“কিন্তু মাম্মাম্ যে আমাকে যেতে বারণ করলো!”
“কাকা যখন অনুমতি দিয়েছে মনে হয় না কাকি তোকে আর বারণ করবে।”
“তাহলে তো আমিও যেতে পারবো।”
“হ্যাঁ।”
“ইয়েহ্।”
“আর মন খারাপ করে থাকিস না।”
“আচ্ছা।”
কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরে নিজ রুমে চলে আসে আরোহী। কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তাকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে তাই আজ সে অনেক ক্লান্ত। একজন এসে আরোহীকে শরবত এগিয়ে দিলো। আরোহী শরবতটা খেয়ে নিলো। শরবতের স্বাদটা একটু অন্যরকম মনে হলো তার কাছে। অতঃপর অরুনিকে এখানে দেখে আরোহী বিস্মিত হয়ে গেলো।
“শরবতে অন্যরকম টেস্ট্ পেয়েই বুঝেছি এটা তোর হাতের বানানো।”
“কেমন আছিস?”
“ভালো। তুই কেমন আছিস?”
“ভালো।”
“জিজু আর ঈফা কেমন আছে?”
“সবাই ভালো আছে।”
“খেয়েছিস?”
“নাহ্।”
“কেনো?”
“তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
“ওহ্।”
“হ্যাঁ। চল খাবি।”
“আচ্ছা। তুই খাবার পরিবেশন কর আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
“ঠিক আছে।”
ফ্রেশ হয়ে এসে আরোহীরা একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো। খাবার পর তিন বোন মিলে গল্পে মেতে উঠলো।
“অনেকদিন পর আমরা একসাথে হয়েছি।” (আরোহী)
“হুম।” (অরুনি)
“আমার খুব ভালো লাগছে।” (অনি)
“আরিফা আপু থাকলে আরো ভালো হতো।” (আরোহী)
“আপুর সাথে দেখা হয়নি অনেকদিন হলো।” (অরুনি)
“হুম।” (আরোহী)
গল্প করতে করতে কখন রাত হয়ে এলো তারা বুঝতে পারলো না। সবাই মিলে একসাথে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। অপরদিকে আর্শি ঈফাকে আদর করে খাইয়ে দিলো।
“আর্শি আপু!”
“হুম।”
“আমার খুব ভয় করছে।”
“কেনো?”
“বাড়িটা খুব নিরব হয়ে আছে।”
“ভয় পাস না ঈফা।”
“মাম্মাম্ বাড়িতে নেই আর পাপা কাজে আটকে গিয়েছে। কুহেলী কাকিও দুপুরে বেরোলো।”
“দাদুর শরীর আরো খারাপ হয়ে গেছে। বাবা একা হাতে সবকিছু সামলে উঠতে পারছিলোনা। তাই মা দাদুর কাছে ঢাকায় গিয়েছে।”
“ওহ্।”
“হুম।”
“চিন্তা করিস না কাকি কালকে চলে আসবে।”
“আমার ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।”
“ভয় পাস না ঈফা। আমি আছি তো।”
“তবুও আমার আজ অনেক ভয় করছে। আমি আগে কখনো একা থাকিনি। সবসময় মাম্মাম্ বা পাপা নয়তো কাকি কেউ একজন বাড়িতে থাকতো। আজকে কেউ বাড়িতে নেই, শুধু আমি আর তুই।”
“আজকে তুই আমার সাথে ঘুমাস। তাহলে ভয় লাগবেনা।”
“আচ্ছা আর্শি আপু।”
ঈফা আর্শিকে জড়িয়ে ধরলো। দুই বোন একে অপরকে অনেক ভালোবাসে। রাতে ঈফা আর্শির সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে।

ঈফা এবং আর্শি দুজনেই গভীর ঘুমে মগ্ন। হঠাৎ এক অদ্ভুদ আওয়াজ শুনে ঈফার ঘুম ভাঙ্গলো। ঈফা বুঝতে পারছেনা এটা কীসের আওয়াজ। ঈফা সিউর সে কিছু একটার শব্দ সে শুনেছে। বাড়িতে ঈফা এবং আর্শি ব্যতীত আর কেউ নেই আর আর্শি ঈফার পাশেই ঘুমিয়ে আছে। ঈফার ঘুম বেশ গাঢ় এত সহজে ঈফার ঘুম ভাঙ্গে না। শব্দটা অনেক জোরেই হয়েছে নয়তো ঈফার ঘুম ভাঙ্গতো না। ইঁদুর কিংবা অন্যান্য পোকামাকড় এত জোরে কোনো শব্দ করতে পারবেনা। কিন্তু অবাক করার বিষয় আর্শি এখনো ঘুমিয়ে আছে। আর্শির ঘুম অনেক হালকা, এতোক্ষণে আর্শির ঘুম থেকে উঠে পড়ার কথা। ঈফার সিক্স সেন্স বলছে তাদের বাড়িতে অন্য কেউ প্রবেশ করেছে। ঈফা প্রচুর ভয় পেতে শুরু করলো। ভয়ে ভয়ে আর্শিকে ডাকতে থাকে কিন্তু আর্শির কোনো রেসপন্স নেই। ঈফার গলা আটকে আসছে, অতিরিক্ত ভয়ে কথা বলতে পারছেনা। অনেক কষ্টে নিজের মাঝে সাহস সঞ্চয় করলো ঈফা, খাট থেকে নেমে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো। প্রথমে ঘরের আলো জ্বালাতে গেলো কিন্তু তারপর সে আরো আবাক হয়ে যায়, বাড়িতে কারেন্ট নেই! কিন্তু ঈফাদের বাড়িতে সবসময় বিদ্যুৎ থাকে। ঈফা এবার আরো চিন্তায় পড়ে গেলো। অবশেষে পুনরায় আর্শিকে ডাকতে গেলো ঈফা। কিন্তু হঠাৎ কেউ ঈফার মুখ চেপে ধরলো। ঈফা প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগলো নিজেকে মুক্ত করার কিন্তু কিছুতেই পারছিলো না। চেষ্টার এক পর্যায়ে ঈফা তাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আনতে সফল হলো। ঈফা এবার জোরে জোরে আর্শিকে ডাকতে শুরু করলো। ঈফা দেখতে পেলো আর্শির পাশে বিছানার নিচে একটি ইনজেকশন্ সিরিঞ্জ পড়ে আছে, তার মানে আর্শিকে ঘুমের ওষুধ ইনজেক্ট করা হয়েছে। ঈফা আর্শিকে জোরে জোরে ডাকতে শুরু করে, যেভাবেই হোক আর্শিকে ঘুম থেকে তুলতে হবে। আগন্তুক লোকগুলো আবার ঈফাকে ধরে একমুহূর্ত দেরি না করে ঈফার মুখে ক্লোরোফার্ম স্প্রে করলো। অচেতন হতে হতে শেষবারের জন্য ঈফা অনেক জোরে আর্শিকে ডাক দিলো। এবার ঈফার ডাকে আর্শির চোখের পাতা কিঞ্চিত নড়ে উঠলো। ঈফা তা দেখতে পেলো তারপর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

চলবে...

ছন্নছাড়া Where stories live. Discover now