পার্ট - ১

3.2K 50 3
                                    

আমি এক সবুজ প্রান্তরে দাড়িয়ে। কোথাও কোন কিছুর দেখা নেই। এমনকি কোন পাখিরও। শুধুই প্রান্তর। উৎসুক চোখে সামনে এগিয়ে গেলাম। কলকল একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে। পানির শব্দ!! আরো এগিয়ে গেলাম। একটা পুকুর দেখতে পেলাম। কিন্তু এটা পুকুর না দীঘি। সেখানে নীল পদ্ম ফুটে আছে। নীল পদ্ম কেমন হয় জানি না। তবুও মনে হল এটা নীল পদ্ম। দীঘির পানি গুলো টলটলে। পা ভিজিয়ে দীঘিতে নামতে লাগলাম। প্রথমে হাটু পানি, তারপর কোমর পানি, তারপর গলা পানি। এরপর আমি ডুবতে লাগলাম। এতক্ষন বাচার চেষ্টা করিনি। এখন হাত পা ঝাপটাতে লাগলাম। নাকে মুখে পানি ঢুকছিল। আমি সাতার জানতাম। তাই তীরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। তীরে যাওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই কেউ যেন নীচে থেকে টান দিলো। আমার পা ধরে কেউ একজন টানছে নিশ্চয়। আমি ডুবে যাচ্ছিলাম। এরপর এক হেচকা টানে দীঘির তলদেশে পৌছুলাম। আমি নিঃশ্বাস নিতে পার ছিলাম না। শুধু হাত বাড়িয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করছিলাম। তারপর কেউ যেন আমার দু হাত ধরে দাড় করিয়ে বলল
...... আমার দিকে তাকাও
আমি তাকালাম। খুবই উজ্জল চেহরার কেউ। চেনা চেনা মনে হচ্ছে তবুও চিনতে পারছি না। সে আমার দিকে তাকিয়ে একট উষ্ম হাসি দিলো আর আমি নিঃশ্বাস নেওয়ার কথা ভুলে গেলাম। সে আমাকে বলল
...... আমার সাথে আসো।
বলেই আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো সামনের দিকে। কিছুক্ষন হাটার পর একটা গাছের কাছে এসে দাড়ালাম। কি মিষ্টি সুগন্ধ!! মন প্রান সব জুড়িয়ে যাই। গন্ধ টা খুব চেনা চেনা!! এটাতো বেলি ফুলের গন্ধ!! গাছটা বেলি ফুলের গাছ। সাদা বেলি ফুলে ছেয়ে পুরা গাছ টা। সেই জন্যই এত মিষ্টি গন্ধ। ওই লোকটা বেলি ফুল দিয়ে একটা মুকুট তৈরি করল। তারপর ধীরে ধীরে ওটা আমার মাথায় পড়িয়ে দিল। তখন সে বলল
...... বাহ তোমাকে তো হুর পরীর মত লাগছে!!
আমি মিষ্টি করে হাসি দিলাম। আর ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিলো।
.
এমন সময় আমার কানে তীক্ষ্ণ শব্দ আসতে লাগতে। আমার মাথা ধরে যাচ্ছে। আওয়াজ টা বন্ধ হচ্ছে না। উহ!! আমি মাথা চেপে ধরলাম।
ক্রিং ক্রিং ক্রিইইইইই....... ঠাস করে এলার্ম টা বন্ধ করে দিলাম। প্রতিদিন এই এলার্ম টা আমার ঘুমের চৌদ্দটা বাজায় দিলো। অসহ্য কর এলার্ম!! আজ এই ঘর থেকে এলার্ম টাকে বের করে দিবো। নয় আমি থাকবো না হলে এই এলার্ম টাকে ঘর ছাড়া করবো!!! আমার এত সুন্দর স্বপ্ন টা দেখতে দেয় না ভালো করে।
চোখ রগড়াতে রগড়াতে ঘুম থেকে উঠতে গেলাম। মারোয়া তার সব হাত পা মাথা ব্যবহার করে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। এই জট টা ছুটাতে হবে। মারোয়ার হাত পা ছাড়িয়ে উঠে গেলাম। ভোরের আলো ফুটেছে। তাই নামাজ টা আগে সেরে নিয়ে গোসল করে নিলাম। মাথায় টাওয়েল পেঁচাতে পেঁচাতে রান্নাঘরে আসলাম। চুলায় চা দিয়ে নাস্তা তৈরি করতে লাগলাম আর স্বপ্নের কথা ভাবতে লাগলাম। এই স্বপ্ন টা গত ছয় মাস থেকে আমি নিয়মিত প্রতিদিন ভোরে দেখি। কেন জানি না। আমার আর মামুনের বিয়ের বয়সও ছয় মাস। সেই সাথে ফারানের মৃত্যুরও। এখন আর তেমন ফারানের কথা মনে না পড়লেও মাঝে মাঝে গভীর শূন্যতা অনুভব হয়।
নাস্তা বানানো প্রায় রেডি। মুক্তার জন্য গ্রীন টি, মারোয়ার জন্য দুধ চা, মামুনের জন্য কফি। অবশ্য আমি দুধ চা খাই বলে মারোয়াও দুধ চা খাই। পাগল মেয়ে!! হঠাৎ কেউ পিছন থেকে কোমর ধরে জড়িয়ে ধরল। আমি জানি এটা মারোয়া। আমি ঘুম থেকে উঠে গেলে ও আর বিছানায় থাকেনা। গড়িমসি করে উঠে সোজা কিচেনে আমার কাছে চলে আসে। ঘুম চোখে নিয়ে ততক্ষণ আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখবে যতক্ষণ না আমি ওকে কপালে চুমু দিয়ে বলব যাও ব্রাশ করে আস। এবারও ব্যতিক্রম না।
........ মারোয়া!!
পিছন ফিরে মারোয়ার কপালে একটা চুমু দিলাম আর বললাম
..... দ্রুত ব্রাশ করে আস।।
ও চলে গেল মাথা নেড়ে। আমার কিউট ছাত্রীটা এখন আমার কিউট ননদ।
ও চলে গেলে নাস্তা টেবিলে সাজায়। সবার আগে আসে মুক্তা। তার কলেজের কোচিং আছে। সে জন্য সে জলদি উঠে। আর সকালে পড়ালেখাও করে সে। সে অনেক মেধাবী। লেইট কোম্পানি হচ্ছে মামুন। সে ঘুম থেকে উঠবে নয়টায়। যদি না জাগায় তাহলে বারোটায়ও ঘুম থেকে উঠেনা।
মুক্তা এসে নাস্তা খেতে লাগল চুপচাপ। আসলে ওর মায়ের মৃত্যুর পর থেকে সে আমার সাথে কথা বলে না। তার মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী করে। আমিও কিছু বলিনা। মারোয়া ও চলে আসল। এখানে এসে একটা জিনিস পরিবর্তন হয়নি। সেটা হচ্ছে মারোয়া। মারোয়া খেতে বসেও বকবক করে। মুক্তা বিরক্তি প্রকাশ করলেও মারোয়া থামেনা। এরপর মুক্তা উঠে চলে যাই। আর আমি ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকি। মারোয়া ও আমার সাথে কাজ করার চেষ্টা করে তবে আমি করতে দিইনা। মামুন কে ঘুম থেকে জাগানোর দায়িত্ব দিই। দুপুরের জন্য রান্না করতে হবে। না হলে আমি স্কুল থেকে এসে দ্রুত রান্না করতেও পারিনা।
এখানে একটা বেসরকারি স্কুলে চাকরি পেয়েছি। ওইটাই করি। পাশেই মারোয়ার স্কুল। তাই আমি আর মারোয়া এক সাথে স্কুলে যাই। আসার সময়ও একসাথে আসি।
আট টা বেজে গেছে। মামুনের কাজের সময় হয়ে যাচ্ছে। ওকে উঠাতে হবে। মামুনের রুমে গিয়ে দেখলাম মামুন উল্টা হয়ে শুয়ে আছে।
আর মামুনের পিঠে মাথা রেখে মোবাইলে গেইম খেলছে মারোয়া।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। মামুন আবারও মারোয়া কে ঘুষ দিয়েছে। আর তাই মামুন কে বিরক্ত না করে চুপচাপ ফোনে গেইম খেলছে। ওদের দিকে তাকাতেই আমার বুকে একটা শান্তির নিঃশ্বাস বয়ে গেল। মামুনের সাথে ওই রাতে বিয়ে হয়ছিল। শুধু মোনাজাত সম্পুর্ন হয়নি। মামুনের চাচা, দাদারা আমাকে মেনে নেয় নি। তাই মামুন আমাকে, মুক্তা, মারোয়া কে নিয়ে এখানে চলে আসে। মারোয়া আমার সাথে আসবে এটা সন্দেহ নেই। কিন্তু মুক্তা ও থাকল না। সেও মামুনের সাথে চলে আসল। এতদিন যে জায়গা জমির জন্য তার চাচারা যুদ্ধ করছিল সেটা বিনা যুদ্ধে পেয়েও গেল। এখানে এসেই অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। মামুন কোনো দিন কাজ করে নি। তাই সে কাজ জানত না। শুধু মোটর সাইকেল ঠিক করার কাজ জানত। একটা দোকান ভাড়া নিয়ে মামুন গ্যারেজ দিল। আর আমিও একটা বেসরকারি স্কুলে চাকরি নিলাম। অভিজ্ঞতা ছিল তাই সমস্যা হয় নি। খারাপ দিন কাটছেনা। ভালই কাটতেছে।
মামুনের সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি এক বিছানাই শোয়া পযর্ন্ত হয়নি। এটার জন্য মামুনের দোষ দেওয়া যায় না। সে একবার বলেছিল যে মারোয়া কে মুক্তার সাথে শোয়ার জন্য। মারোয়া মানে নি। তাই আর লজ্জায় আর কোন কিছু বলে না। তার উপর কোন অভিভাবক নেই। যে বুঝিয়ে দেবে সবকিছু। আমার মা ছিল। তবে আম্মু এত বেশি কিছু জানত না।
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now