পার্ট - ১৬

537 20 0
                                    


..... কিন্তু আজ আমাকে চরম ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে।।
..... কি বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতেছিনা।
..... কেন বোঝো না?? আমি তো তোমার বিয়ে করা স্বামী। সেটা যে করেই হোক। অথচ ওই কুকুর টা---------আমার সামনে--------- আমার কাছ থেকে----------- আমার স্ত্রী কে---------- আড়াল করে দাড়ায়--------- আমার নজর থেকে ------------- বাঁচার জন্য। ব্যাপারটা অদ্ভুদ বলবো নাকি অপমান বলবো বুঝতেছিনা। 
এই কথায় আমি নিরব থাকলাম। খাবার গুলো টেবিলে রাখলাম। এটা দেখে মামুন বলল
.... কি হল জবাব দিচ্ছো না যে??
..... আমি কি বলবো?? আমি তো কিছু করিনি।। তাছাড়া ফারান কেন এমন করল সেটা আমার জানার বিষয় না।
.... ওহ!! তাহলে এখন নাম ধরেও ডাকা হচ্ছে!!!
আমি কটমট করে মামুনের দিকে তাকালাম। তারপর বললাম
..... কি বলতে চাইছেন??
..... মানে সহজ!! তুমি কি ভবিষ্যত ওর সাথে দেখতে চাও নাকি??
..... আপনি যদি আপনার ভবিষ্যত সিয়ার সাথে দেখতে চান তাহলে আমি কেন অন্য কারো সাথে নিজের ভবিষ্যত দেখতে চাইবো না। নাকি আপনি চান আমি আমার ভবিষ্যত একা দেখি!!
....... ঠাসসসসসসস
এই কথায় মামুন আমাকে চড় মেরে দিল। তারপর রাগে হাপাতে হাপাতে বলল
...... খুব তো গাল পেকেছে দেখছি!!! মনে রেখ আমি সই না করলে এই ডিভোর্স হবে না। তাই আপাতত ওই কুকুরটার সাথে ভবিষ্যত দেখা বন্ধ রাখ।
...... আপনার কেন এত জ্বলুনি হচ্ছে?? আপনার তো খুশি হওয়ার কথা??
..... জ্বলুনি না আমার কষ্ট হচ্ছে।। 
...... আপনার কেন কষ্ট হবে?? আপনার পথের কাটা হবো না তা তো ভালো কথা!! এতে কষ্টের কি আছে??
...... কেন কষ্ট হচ্ছে দেখবে?? আসো দেখাচ্ছি।
এই বলে মামুন আমার হাত ধরে রুমের কিছু একটা দেখানোর জন্য নিয়ে এলো। প্রথমে আমার রুমে। যেখানে মারোয়া শুয়ে আছে। তারপর মারোয়া কে দেখিয়ে মামুন বলল
..... এর জন্য আমি হাজার টা সিয়া বাদ দিতে পারি। সিয়ার একে প্রয়োজন নেই বা মারোয়ার সিয়ার কোন দরকার নেই। কিন্তু ওই কুকুরটার জন্য তুমি মারোয়া কে বাদ দিলে সেটা যেমন মারোয়ার ও সহ্য হবে না তেমনি আমারও না। আমার নিষ্পাপ ছোট বোনটা তোমাকে তার মায়ের স্থান দিয়ে আছে। সেটার কি করবে তুমি??
একটু দম নিয়ে আবার মামুন বলল
.... আরো দেখবে চলো
এই বলে মামুন আমাকে আরেকটা রুমে নিয়ে গেল। সেটা মুক্তার রুম। রুমের দরজা একটু ফাক করে দেখাল আমাকে মামুন। সেখানে মুক্তা একটা ছবি ধরে কান্না করছে। ওর দিকে ইশারা দিয়ে মামুন বলল
..... জানো ত মুক্তা তোমাকে পছন্দ করে না। কিন্তু ফারানের সাথে তুমি চলে যাবে বুঝতে পেরে শুধুই কান্না করছে আমাদেরই বিয়ের ছবি ধরে।
এরপর আবার টেনে নিতে নিতে মামুন বলল
.... আরো আছে চল।
এবার মামুনের রুমে নিয়ে এলো। সেখানে সে একটা ছবি বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। ছবিটা হাতে নিয়ে দেখলাম। বেশ পুরোনো ছবি। একটা পরিবারের ছবি। আমার বুঝতে কষ্ট হল না এটা মামুনের বাবা মায়ের সবার সাথে এক সাথে তোলা একটা ছবি। মারোয়া খুবই ছোট। সে কোলে। মুক্তা একটা ফ্রক পড়ে আঙ্গুল মুখে চুষতে চুষতে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আর মামুন একটা থ্রী কোয়ার্টার জিন্স পড়ে বাবার হাত ধরে আছে। খুবিই সুন্দর একটি ফ্যামিলি ফটো। কিন্তু এটা আমাকে দেখানোর মানে টা কি?? আমি মামুনের দিকে তাকালাম। মামুন বলল
...... কিছু বুঝতে পারছো না?? আমার পরিবার এটা। শুধু আব্বু আম্মু নাই। বাকিরা আছে। মুক্তা, মারোয়া আর তুমি আমার পরিবার। তুমি চলে গেলে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে আমার পরিবার।মুক্তা আর আমার কথা বাদ দাও। আমরা যেভাবে সেভাবে থাকতে পারবো। কিন্তু মারোয়া?? সেতো তোমার নাম নেই উঠতে বসতে।। সে কিভাবে থাকবে তোমাকে ছাড়া??
.
এত কিছু আমি ভাবি নি। আসলে সত্যি!! মারোয়া আমাকে ছাড়া থাকবে কি করে?? মারোয়া কে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো?? বলে তো ফেলসি যে আমি চলে যাবো, মামুন কে ডিভোর্স দেব। কিন্তু এই পরিবার টা তো আমি সাজিয়ে ছিলাম। আমার সাজানো বাগান ওটা!! ওটা কে ছেড়ে আমি কিভাবো থাকবো। আমি হতবম্ভ চোখে মামুনের দিকে তাকিয়ে বললাম
...... আমি এখন কি করতে পারি?? কিছুই করার নেই আমার।।
..... করতে পারো
..... কি??
.... কাম ব্যাক টু মি, কাম ব্যাক টু মাই ফ্যামিলি।।
...... অসম্ভব। ফারান কখনোই তা হতে দিবেনা।
..... ফারান কে ছেড়ে দাও। ও মরে যাক। ওর পিছুটান নেই। আমার পরিবার আছে।। আমার পরিবার কে কাছে টেনে নাও।
...... কিভাবে বলতে পারেন এই কথা?? মানুষ মরে যাওয়া সহজ কথা না। আর ফারান মৃত্যুঞ্জয়ী।। মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ফেরা মানুষ। তাকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
..... তাহলে এটা তোমার শেষ কথা!!! তুমি আসতে চাও না??
..... আমি বলি নি এটা শেষ কথা। কিংবা আমি আসতে চাই না। 
...... তাহলে কি করতে চাও তুমি??
...... আমার না তোমার টা বলো!! সিয়ার কি হবে?? 
..... সিয়া চলে যেতে চাই। তার বাবা নাকি সুস্থ হয়ে গেছে। 
..... মানে?? ওর বাবা নাকি বাচবেনা?? এখন সুস্থ হল কিভাবে?? 
...... আমি জানি না। কিছুক্ষন আগেই বলল হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছে তার বাবা নাকি সুস্থ সুস্থ হয়ে উঠেছে। এটা একটা মিরাকেল!! এভাবে বাঁচার কোন চান্স থাকেনা। 
...... ওহ!! এখন বুঝেছি!! সিয়া চলে যাবে তাই তুমি আমাকে আটকাতে চাইছো??
..... মোটেও না। যেদিন মামাকে ডিভোর্সের কথা জানিয়েছিলাম সেদিন মুক্তা এসেছিল। তার কান্নায় ভেঙে পড়া মুখটা আমার এখনো চোখে ভাসছে। সে আমার কাছে তোমাকে চেয়েছিলো। আমি মানা করতে পারিনি। সেদিনই সিয়া কে মানা করে দিয়েছিলাম। তোমাকে বলার সুযোগ টা হয়নি।
আমি অবিশ্বাস্য চোখে মামুনের দিকে তাকালাম। এখন আমি কি করবো। 
.
মামুন কে খেতে বলে আমি চলে এলাম রুমে। খুবই চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলাম। বলতে গেলে আবার ফাটা বাশের মধ্যে পড়লাম।। কি করবো আমি?? আর মুক্তা?? সে আমাকে আবার কোন বাধনে বাধতে লাগল?? সেতো আমাকে পছন্দ করত না। কিন্তু আমার জন্য সে মামুনের কাছে ডিভোর্স না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল??
ওদের না হয় এড়িয়ে চলতে পারবো। কিন্তু মারোয়া কে ছাড়া আমার হবে কিভাব??? ভাবছিলাম আর মারোয়ার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলাম। এত সমস্যা কেন আমার জীবনে?? সমস্যা দাও তাও কোন সমস্যা না। কিন্তু ওই সমস্যারর সমাধান না দেওয়া বিরাট বড় সমস্যা। আল্লাহ আমি কি করবো এখন। আমাকে পথ দেখাও। এই বলে আমি চোখ বন্ধ করলাম। আর দুচোখ বেয়ে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। 
চোখ বন্ধ করেই ছিলাম। কিন্তু খুট একটা শব্দে চোখ খুলে গেল। লাইট অন করলাম। দেড়টা বাজে। রুমে চোখ বুলিয়ে চেক করতে লাগলাম। শব্দ টা কোথ থেকে এলো। দেখলাম জায়নামাজ আর তসবি ছড়াটা পড়ে আছে ফ্লোরে। এগুলো ভাজ অবস্থায় আলমারির উপড়ে রাখা ছিল। পড়ল কিভাবে নিচে?? হয়তো ইদুর করেছে।। এই ভেবেই জায়নামাজ তুলতে গেলাম। তারপর মনে হল অনেক দিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া হয় না। এই সময় আল্লাহ বান্দার নিকটে থাকেন খুব। প্রাথর্নার উপযুক্ত সময়। দু বার ভাবলাম না। অযু করে তাহাজ্জুদ পড়তে দাড়িয়ে গেলাম। তাহাজ্জুদ শেষ করে সালাম ফিরানোর সময় মনে হল কেউ একজন রুমে আছে। আমি নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসা অবস্থায় পিছনে তাকালাম। আমার পিছনে বসে ফারান মৃদু ভাবে হাসছে। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
..... তুমি??
..... বলেছিলাম না কাছাকাছি থাকবো। এখন বলো আল্লাহর কাছে কি চাইলে?/
..... মারোয়া কে।
এই কথায় ফারান খানিকটা চমকালো। সে বুঝতে পারলো না। ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল
..... মানে??
..... মানে খুব সহজ। আর যায় হোক মারোয়া কে ছাড়া আমার চলবেনা।
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now