পার্ট - ১৯

516 19 0
                                    


*
যেতে চেয়েও মামুনের রুমে গেলাম না। কারন এই মুহুর্তে আমি খুব দুর্বল। সেটা ধরতে মামুনের এক সেকেন্ড ও লাগবেনা। একটা বকা দিবে আর বিয়ে টিয়ে সব ক্যানসেল। তো আমাকে খুব শক্ত ভাবে যেতে হবে। এর চেয়ে ভালো মারোয়ার কাছে যাই। সে কি করছে দেখি।
দেখলাম মারোয়া তার আঁকাআঁকি শেষ করেছে। 
...... বাহ!! খুব সুন্দর হয়ছে!!
...... সত্যি???
মারোয়া একটা লাজুক হাসি দিল।
.... হুম।। এখন চলো গোসল করে নাও মণি।। খাবে!!
...... হুম
মারোয়া নাচতে নাচতে বাথরুমে চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার মামুনের সাথে এই ব্যপারে কথা বলতে হবে।।
.
দুপুরে খাবার খাওয়ার পর ছোটরা বিশ্রাম করলেও বড়দের বিশ্রাম ছিলনা। কারন কালকে বিয়ে ছিল। হোক না সেটা ছোট। তার ও একটা প্রস্তুতি আছে। আমি মারোয়ার পাশে কিছুক্ষন বসে তাকে ঘুমাতে সাহায্য করলাম। তারপর শপিং এ যাবো। বৌ এর জন্য শপিং করতে হবে। বাহ! পৃথিবীতে আমি হয়ত প্রথম মহিলা হব যে নিজের হবু সতিনের জন্য বিয়ের শপিং করবে।। মনে মনে হাসলাম!! এত দূর্ভাগ্য যেন কারো না হয়।।
সাগর ভাইয়ের বৌ, মামি, আমি আর মুক্তা।। সাগর ভাইও চলল বডিগার্ড হিসেবে। 
তৈরি হচ্ছিলাম। তখন আচমকা দরজা খোলার শব্দে পিছনে তাকালাম। মামুন এসেছে। সে এসে গলা ফেটে বলতে লাগল
...... এইসব কি শুনছি?? কি হচ্ছে এগুলা??
...... শসসসসসহ!! আস্তে!! মারোয়া ঘুমাচ্ছে!! 
এই বলে তাকে রুম বের করে নিয়ে ওর রুম নিয়ে গেলাম। তারপর বললাম
..... এবার যত ইচ্ছা গলা ফাটাও
..... রেনুমা মাথা খারাপ করিও না। কি করছো তুমি এগুলা?? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে??
..... কি করছি আমি??
.... না জানার ভান করিও না। আমার আর সিয়ার বিয়ের কথা নাকি তুমি ফাইনাল করেছো?? তুমি নাকি ওদের বাড়ি গিয়েছো??
..... হ্যাঁ গিয়েছি। এবং বিয়ের কথাও ফাইনাল। কালকেই বিয়ে।।
....... ঠাসসসসসসস!!
এই কথায় মামুন আমাকে থাপ্পর দিল। তারপর বলল
....... লজ্জা করেনা তোমার?? কোন সাহসে তুমি এই কাজ করলে?? কে বলল আমি সিয়া কে বিয়ে করতে চাই?? বল!!
থাপ্পর টা চুপচাপ হজম করলাম। তারপর বললাম
...... অসুবিধে কোথায়?? সিয়া কে ভালোবাস তাই বিয়ে হচ্ছে। তাছাড়া কালকেই আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে। তো কোন সমস্যা নাই।
....... আচ্ছা কোন সমস্যা নেই তাই না?? 
...... হ্যাঁ
..... তুমি চলে গেলে মারোয়ার কি হবে?? সে কি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে??
..... অসম্ভব!! না মারোয়া আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না আমি মারোয়া কে ছাড়া থাকতে পারবো।
..... তাহলে কেন ডিভোর্স দিচ্ছ??
..... ডিভোর্স অবশ্যই হবে তবে আমাকে আমার মোহরানা হিসেবে মারোয়া কে দিতে হবে।
..... পাগল হয়েছো তুমি?? কি বলছো জেনে শুনে বলছো তো??
..... অবশ্যই না। যা বলছি বুঝে শুনছি।
..... তুমি ভাবলে কি করে যে এই বিয়েটা আমি করবো?? তুমি ভাবলে কি করে আমি ডিভোর্স পেপারে সই করবো?? তুমি ভাবলে কি করে যে মারোয়া কে আমি তোমার সাথে ছেড়ে দিবো??
...... ভাবছি না। এরকম তুমি করবে।
...... মানে
...... মানে খুব সহজ।। সিয়াকে তুমি বিয়ে করবে। আর আমিও কাল ডিভোর্স দিব। 
..... কেন করবো আমি???
..... কারন সিয়া কে তুমি ভালোবাস। খুব কম সৌভাগ্যবানরা তাদের ভালোবাসার মানুষ দের বিয়ে করতে পারে। তুমি তাদের একজন। নিশ্চয় এই সুযোগটা হারাতে চাইবে না তুমি!!
...... এখন বুঝেছি কেন তুমি এরকম করছো
..... কেন??
..... কারন টা ফারান তাই না!! তুমি ওর সাথে যেতে চাও ঠিক তো??
..... জেনে যখন গিয়েছো তখন লুকিয়ে আর লাভ কি?? হ্যাঁ আমি যেতে চায় ফারানের সাথে!
এই কথায় মামুন ডান হাতে আমার গলাটা দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। তারপর দাঁতে কিড়মিড় করতে করতে বলতে লাগল
..... যতটা সহজ ভাবছো সবকিছু ততটা সহজ না।। বিয়ে কাল হবে না আর আমাদের ডিভোর্স টাও না। দেখি কি করতে পারো তুমি??
তারপর মামুন আমার গলাটা ছেড়ে দিয়ে গটগট করে চলে গেল। আর যাওয়ার আগে দরজা টা এমন ভাবে লাগিয়ে গেল যেন সব দোষ দরজাটার।। আশ্চর্য্য!!!
.
আমি ওইখানে ফ্লোরে বসে গেলাম।। নিজের উপরই অবাক হলাম!! সত্যি এই কথাগুলো আমি বললাম!! আমি এতটা শক্ত কখন হলাম?? 
কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। সবকিছু ঠিক ভাবে করতে পারবো তো?? মামুন বিয়েটা করবে তো?? মারোয়া কে আমাকে দিবে তো?? 
আমি কখনোই এতসব ভাবি নি। কিন্তু যখন থেকে ফারান এসেছে তখন থেকে ভাবতে হয়েছে। ওর আক্রমণাত্নক রুপ আমাকে সবসময় ভাবিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে রাগের সময়ে নিজের কন্ট্রোল না থাকা কে। ওই সময় বলা যাই না কি করে বসে।। হতে পারে হাসপাতালের ঘটনা টা অনেকটা ড্রাগের কারনে হতে পারে। কারন সে সময়ে তাকে অতি উচ্চমাত্রার ড্রাগ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় করা কাজটা তার হুশের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু অন্যান্য সময় বলতে গেলে ব্ল্যাক ম্যাজিকের ঘটনায় ও তার হাত দেখি না। এই সব হয়েছিল তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। সেটা যাদুর প্রভাব ছিল। মামুনের মায়ের মৃত্যু আর আমাদের বিয়ে টা হচ্ছে অন্য বিষয়। এখানে সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। আমাদের বিয়ের সময়ে ফারান অসুস্থ ছিল। কেননা তখন সে হাসপাতাল থেকে পালানো পেশেন্ট ছিল। আর মামুনের মায়ের মৃত্যুর ব্যাপরটা আমার কাছে অনেকটা রহস্যর মত। কিভাবে মৃত্যু টা হয় আমি জানতে পারি নি বা জানার চেষ্টা ও করি নি। মামুনের মায়ের মৃত্যুতেও নিশ্চয় কোন রকমের কারন রয়েছে। না হলে সজ্ঞানে ফারান তার ফুপি কে মারতে পারেনা।
এই মৃত্যুর সিলসিলাটা আমার কারনে শুরু হয়েছিল। আমি চাই না এই টা নিয়মিত ভাবে হোক। সুতরাং সমাধান একটাই। ফারান কে কাছে টেনে মামুন কে দূরে সরিয়ে দেয়া। এই জন্য সবার কষ্ট হলেও সময়ে সব মিটে যাবে। নিরাপত্তা টাও হইল। মানে আমি যদি ফারানের সাথে চলে যাই তাহলে কারো ক্ষতির সম্ভবনা টা কমে যাবে। সুতরাং কোন দিক থেকে খারাপ সিগ্ধান্ত নিই নাই। সময় উপযোগি সিগ্ধান্ত এটা।
.
সাগর ভাইয়ের বৌ এর ডাকে হুশ ফিরল। শপিং এর দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি উঠে বের হয়ে গেলাম। 
শপিং করে আসতে আসতে প্রায় রাত হয়ে এলো। 
খুব খারাপ লাগছিল। তারপরও বৌ এর শাড়ি গহনা, মামুনের শেরওয়ানি, পাগড়ী কোন কিছু বাদ থাকলো না। 
এসে গোসল করে নিলাম। এর মধ্যে মামুনের দেখা পেলাম না। খাওয়ার জন্য টেবিলে ও এল না। আমি গেলাম খাবার নিয়ে ওর রুমে। দরজায় নক করে ভিতরে ঢুকলাম। দেখলাম ও জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি টেবিলে খাবরটা রাখলাম। শব্দ পেয়ে সে পিছনে ফিরল। আমি বললাম
..... খেয়ে নেন।
..... তোমার কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না।
..... না। কষ্ট কেন হবে?? ভেবে তো আনন্দ হচ্ছে দুজন প্রেমিক প্রেমিকা এর বিয়ে হচ্ছে। আর আমি ফারান কে পাব। এখানে কষ্ট কোথায়??
একটু নিঃশ্বাস ফেলে আবার বললাম
......... মনে আছে একবার বলেছিলে ফারান অনেক ধনী ঘরের ছেলে। আমার মত মেয়ে শুধু ওই ঘরের বউ না ড্রাইভারের বউ হওয়ার যোগ্যতা টা নেই আমার।
..... আমি তো শুধু'""""""""""
আমি থামিয়ে দিলাম। তারপর বললাম
..... আমি জানি যে এটা ইচ্ছা করে বলো নি। কিন্তু চরম সত্য বলেছিলে। আমি ওই কথা টা মিথ্যা করতে চাই। শুধু এইটুকুই না। এভাবে বেঁচে থেকে কি লাভ?? আমি কোন দিনও সিয়ার জায়গা নিতে পারবোনা। তারচেয়ে বরং যে আমাকে ভালোবাসে তার কাছে ফিরে যাই। তার পুরোটা অন্তর জুরে শুধু আমি থাকব।
যেখানে কোন সিয়ার প্রবেশ নেই।
.
কথাগুলো বলতে কষ্ট হচ্ছিল। তারপরও বলছিলাম
তোমার কাছে শুধু একটা জিনিস চাই। বল দেবে
......... কি???
...... আমার মোহরানা চাই।।
..... অসম্ভব। তা কখনো হবে না।
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now