.... আমি জানি ও আস্ত খাটাশ।। কিন্তু কি করবো?? ওই খাটাশের বৌ আমি।।
.... হুম!!
রিফাত কে ছেড়ে দিলাম। মনে হচ্ছিল ও হাসছে। তারপরও মনে হল ওর চোখের কোনায় পানি দেখেছি।। বুক ছিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে গেল। সবাই আমাকে আর ফারান কে হাসি মুখে বিদায় জানালো।। আমি আর ফারান গাড়িতে উঠে বসলাম। আজ আর ফারানের চোখে মুখে কোন টেনশন, দুশ্চিন্তা, গাম্ভীর্য্য কোন কিছু নেই। চোখ মুখ বেয়ে খুশী ঠিকরিয়ে পড়ছে।। মনে মনে হাসলাম। কিছু বললাম না। যাওয়ার সময় যতক্ষণ ওদের দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ দেখছিলাম। এরপর রাস্তায় উঠতেই সামনে তাকালাম। ফারান আমার হাত ধরল। আমি ওর দিকে তাকাতেই ও মিষ্টি করে হাসল। তারপর হাত মুটোর ভিতর নিয়ে একটা চুমু খেয়ে গাড়ি চালানোর দিকে নজর দিল। আর আমি বাইরের সৌন্দর্য্যে নজর বুলাতে লাগলাম।
বাড়ি পৌছলাম অনেকক্ষণ পর। বাড়ি পৌছেই ফারান গোসল করে নিল। তার নাকি অফিসে জরুরি কাজ আছে। আমি মানা করলাম না। কিন্তু চাইছিলাম যে আজকের দিনটা বিশ্রাম নিক।। কিন্তু বললাম না। মনটা খারাপ হয়ে গেল। ফারান গোসল করার পর টাওয়েল টা আমার হাতে দিল। তারপর বলল
....মুছে দাও।।
এমনিতেই ফারান কে খালি গায়ে দেখলে আমার হাত পা কাপতে থাকে।। তার ওপর গোসল করে এসে আমার সামনে দাড়ানো অবস্থায়!! মনে হচ্ছে হার্ট এট্টাক করব। আমার অবস্থা দেখে ফারানের খুব হাসি পাচ্ছে। আমি একটু ঝাঝালো সুরেই বললাম
.... কি হলো এত হাসছো কেন??
ফারান মুচকি মুচকি শয়তানি হেসে বলল
...মোহিনী!!
...হুম
...আই এ্যাম টুউউ হট!! তাই না!!
আমার চোখ মাথার উপরে উঠে গেলো।। তারপর বললাম
..... কে বলছে!!
.... তুমি!!
.... আমি কোথায় বললাম??
.... বলো নি কিন্তু তুমি তো ঘামতেছো!!
আমি নিজের দিকে তাকালাম। সত্যি আমি ঘামতেছি। কপাল বেয়ে ঘাম ফোটা ফোটা পড়ছে। আমি বললাম
.... গরম লাগছে তাই।
.... এসি রুমে গরম নাকিইইই আমি টুউউ হট!!
.... যাহ্!! বেশি কথা বল তুমি!!
ফারান অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। হাসার কথা কি হল এখানে।। মাথা মোছা শেষ করে ওর দিকে ফিরে তাকালাম না। কাভার্ড থেকে কোট টাই শার্ট সকস সব বের করে রেডি করে দিলাম। আর আমি নিচে গিয়ে দেখতে লাগলাম খাবারের ব্যবস্থা কতদূর হল।। মেনবা আজকে আসে নি তাই আমাকে নজর দিতে হচ্ছে।। কিছুক্ষনেরর মধ্যেই ফারান নিচে নেমে আসল। সবসময়ের মত ফারান দারুন স্মার্ট লাগছে।। হা করে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।। কিন্তু ফারান এসে আবার এটা নিয়ে হাসতে লাগল। তাই চোখ নামিয়ে ফেললাম।
খাওয়া শেষে ফারান কে বিদায় জানাচ্ছিলাম।। কিন্তু ফারান ঘর থেকে দু কদম হেটে আবার ফিরে এলো। জিজ্ঞেস করলাম
.... কি হলো??
জবাব দিলনা। কিন্তু জবাবের বদলে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তারপর ফিসফিসিয়ে বলল
..... তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছেনা।।
..... আমারও তোমাকে যেতে দিতে ইচ্ছা করছেনা।। কিন্তু কি আর করা??
.... তাহলে না যায়!!
.... মানে??
.... মানে আজকে অফিস যাবো না।।
.... বললেনা ইম্পরটেন্ট কাজ আছে!!
.... সেটা আমার পিএ সামলাবে। তুমি আমাকে সামলাও।
এই বলে শয়তানি হাসি দিয়ে আমাকে চুমু দিতে যাচ্ছিল। কিন্তু আমি ধরে ফেললাম
.... অফিস যাও।। আগে কাজ পরে সব কিছু
.... মোহিনী??
এরপরে ওকে ধরে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসলাম। কি আশ্চর্য্য!! এতক্ষন যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল আর এখন বেকে বসেছে অফিস যাবে না।।
.
অনেক কষ্টে ফারান কে জোর করে অফিসে পাঠালাম। এরপর এসে নিজে গোসল করে তারপর দিলাম ঘুম। ঘুম থেকে উঠে দেখি ফারান চলে এসেছে।। জিজ্ঞেস করতেই বলল কাজ শেষ তাই চলে এসেছে।। আমি কিছুটা অবাক হলাম। কারন ফারান কখনো সন্ধার অাগে অফিস থেকে আসেনা। কিন্তু আজ কি হলো??
ফারান ঘুম থেকে টেনে তুলে দিল। অবশ্য উঠে যেতে হয়েছে ওর চুমুর কারনে। যতক্ষণ উঠছিলাম না ততক্ষণ চুমু দিচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়ে উঠে গেলাম। তৈরি হয়ে নিলাম। ফারান আমার জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছিল।। আমি যেতেই বলল
..... জলদি আস!!
আমি গাড়িতে বসে জিজ্ঞেস করলাম
..... কোথায় যাচ্ছি??
..... সারপ্রাইজ আছে!!
..... ওকে।।
আমি ভাবছিলাম কি হতে পারে সারপ্রাইজ টা।। কিন্তু কিছুক্ষন পর একটা বিশাল গেইট এর ভিতর দিয়ে গাড়ি ঢুকল। গেইটের উপর কিছু একটা লিখা ছিল। কিন্তু গাড়ি ঢুকে যাওয়ায় পড়তে পারলাম না। ভিতরে ঢুকে গাড়ি পার্কিং লটে থামল। আমি নামলাম। অনেক গুলো ছেলে মেয়ে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করঝে। কিছুটা চেনা চেনা লাগছে পরিবেশ। ফারান বেড়িয়ে অাসল। ও একটা কালো চশমা চোখে দেওয়ায় ফারান কে এত হ্যান্ডসাম লাগছিল যে আশে পাশে যে মেয়েটা যাচ্ছিল তারা একবার হলেও ফারানের দিকে তাকাচ্ছিল। আমার কিছুটা জ্বলুনি হচ্ছিল বটে তবে একটা কথা ভেবে ভালো লাগছিল যে সবাই শুধু ওকে দূর থেকে দেখবে কিন্তু ওকে পাবেনা। কারন ফারান শুধু আমার।
এতসব ভাবছিলাম। হঠাৎ করে ফারানের ডাকে হুশ ফিরল। আমরা একটা রুমে প্রবেশ করেছি।। রুমের ভিতর যে মধ্য বয়স্ক লোকটা বসে আছে উনি ফারান কে দেখে উঠে এলেন। উনার চেয়ার টেনে দিলেন। তবে ফারান ওখানে না বসে সোফায় বসল। তারপর বলল
...... আজকে থেকে আমার ওয়াইফ আপনার কলেজে পড়বে।। খেয়াল রাখবেন।।
আমি চমকে ফারানের দিকে তাকালাম। ফারান আমাকে কলেজে ভর্তি করাচ্ছে!! ভিসি মহোদয় বললেন
..... লজ্জা দিচ্ছেন স্যার!! আপনার কলেজ!! উনাকে আমরা দেখে রাখবো।।
..... ধন্যবাদ!!
আমি হা করে এতক্ষন শুনছিলাম। এরপর ফারান আমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসল। আমি বি.এ কমপ্লিট করতে পারিনি ফারানের কারনে। কিন্তু এখন সুযোগ এসেছে সেটা করার।। আমি ফারান কে জিজ্ঞেস করলাম
..... ফারান
..... বল
..... এটা তোমার কলেজ??
.... হ্যা!! বলতে গেলে কিছু দিন আগেই এই কলেজের সাথে যুক্ত হয়েছি।
..... কেন করলে এটা??
.... কোনটা??
..... এই যে আমাকে এখানে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে এলে
ফারান একটু করে হাসল। তারপর বলল
.... আমার কারনে তোমার পড়ালেখা থেমে গিয়েছিল। আমি চাই না ওটা থেমে থাকুক। তুমি এখন আমার স্ত্রী, মিসেস ফারান।। ওই যোগ্যতা নিতে হবে।। আমার সাথে সমান তালে দাড়াতে হবে।।
এই কথা শুনে আমি থমকে দাড়িয়ে গেলাম। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি।। ফারান কিছু দূর গিয়ে থেমে গেল। তারপর পিছন ফিরে দেখল যে আমি দাড়িয়ে অাছি।। তখন সে বলল
..... কি হলো??
আমি কিছু বললাম না। শুধু দৌড়ে গিয়ে ফারান কে জাপটে জড়িয়ে ধরলাম।। আমার কান্না আসছিল।। কিন্তু কিছুই বললাম না।। ফারানও আমাকে শক্ত করে ধরল।। বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে।। আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে বললাম
.... কিছু না।।
তারপর খেয়াল করলাম আমরা এখনো ভার্সিটিতে আছি এবং সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমি অত্যন্ত লজ্জা পেলাম। দ্রুত কেটে পড়তে চাইলাম ওই খান থেকে।। ফারান আমার অবস্থা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।।
গাড়ির সামনে এসে ফারান আমার হাতে একটা প্যাকেট দিল।। আমি জিজ্ঞেস করলাম
.... কি এটা??
.... খুলে দেখ।।
আমি খুলে দেখলাম।
....... আইফোন!!
আমি শুধু অন্যদের
আইফোন টা দেখতাম। নিজের সাধ জাগতো একটা আইফোনের জন্য।। আমি খুশি হয়ে গেলাম।।
..... পছন্দ হয়েছে??
..... অনেক!!
.... তাহলে আমার গিফট??
.... হু??
.... আমাকে কিছু দেবেনা??
আমি কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লাম।
...... কি দিব?? আমি তো কিছু নিই নি!!
.... তুমি দিতে পারো অনেক কিছু।।
ফারান এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল
প্রথমে না বুঝলেও পড়ে বুঝলাম ফারান কিসের কথা বলতেছে।। আমি এগিয়ে গেলাম ওর দিকে তারপর ওর গলায় হাত দুটো ঝুলিয়ে একটা চুমু দিলাম ওর গালে। ফারান বলল
..... হয়নি
আরেকটা দিলাম অপর গালে।। সে বলল
.... হয়নি
আরেকটা দিলাম কপালে
..... হয়নি
আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম তাহলে কখন হবে?? ফারান এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল
.... আরো বাকি আছে চেয়ে দেখতে পারো।
আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম ফারানের ঠোটে চুমু দেওয়ার জন্য। ফারান চোখ বন্ধ করে ফেলল।। আমি কাছে গিয়ে একটু করে স্পর্শ করে আবার সরে আসতে গিয়ে ফারান ধরে ফেলল।। তারপর বলল
.... এটা কি হল??
.... দিলাম তো!!
ফারানের নাক ফুলে যাচ্ছে এই কথায়।। তারপর আমার মাথার পিছনে হাত দিয়ে আমাকে কাছে টেনে আমার ঠোটে চুমু খেল।। ব্যস্ত থাকার মাঝখানে ফোনটা বেজে উঠল। আমি চমকে উঠলাম। নতুন আইফোন টা বাজছে।। মানে কি?? হাতে নিয়ে দেখলাম স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠেছে
"My love"
মাই লাভ কে আবার?? ফারানের দিকে তাকিয়েই দেখলাম ফারান মুচকি মুচকি হাসছে।। তার এক হাত পিছনে মোড়ানো। তার মানে!! অামি নকল রাগে ফারান কে বুকে পেটে মারতে লাগলাম আর ফারান হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল।
.
(সমাপ্ত)
.
পরিশিষ্ট : --------এক বছর পর--------
.
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।। কিন্তু ফারানের কষ্ট দেখে আমার কষ্ট উবে গেল। সে আমার হাত ধরে বসে আছে। তার চেহারা ভয়ে শুকিয়ে পাংশু বর্ণ ধারন করছে। এমন অবস্থা হয়েছে যেন বাচ্চা আমি না ফারান জন্ম দিবে।। আমাকে শুধু অভয় দিতে লাগল কোন কষ্ট হবেনা ভয় নেই।
একটা পুরুষ ডাক্তার পর্যন্ত আমার আশে পাশে আসতে দেয়নি। সব লেডি ডক্টর। আর ওর দুশ্চিন্তা দেখে ডাক্তার রা ওকে বের করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু ফারান নাছোড়বান্দা। সে আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।। কিছু ক্ষন পর আমার প্রসব বেদনা বেড়ে গেল। আমার আর ফারানের সন্তান দুনিয়ায় আসছিল। কিন্তু কষ্ট পেয়ে আমি কান্না করছিলাম আর ফারান আমাকে ওয়াদা করছিল যে জীবনেও আর কখনো বাচ্চা নিবেনা। সেখানেই কসম খেল। ওর কসম শুনে ডাক্তার রা সব ভিরমি খেল। আর আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।
জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম ফারান টুলে বসে আমার বেডে মাথা রেখে ঝিমাচ্ছে। উসকো খুসকো চুল, থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে সে আমাকে নিয়ে মধ্যরাতে হাসপাতালে চলে এসেছিল প্রসব বেদনার কারনে।। এখন আমার হাত শক্ত ধরে আছে আর অপর হাত দোলনা দোলাচ্ছে। ওই তো আমার সন্তান!! নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে!! আমার মনটা খুশিতে ভরে উঠল। চোখের কোন বেয়ে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আল্লাহকে শুকরিয়া জানালাম এত সুখ দেওয়ার জন্য। সত্যি আমি বড় ভাগ্যবতী!!
.
.
বি:দ্র- গল্পটা এখানেই শেষ। কেমন লাগল সিজন ২ মোহিনী টা অবশ্যই জানাবেন সবাই। সাইলেন্ট এবং ভায়োলেন্ট রিডার্স উভয়। আমি জানতে চাই সিজন ১ ও ২ কেমন হল?? আশা করি সবাই বলবেন। আল্লাহ হাফেজ। ভালো থাকবেন।।
VOCÊ ESTÁ LENDO
মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥
Romanceপ্রেমের মানুষের জন্য দুনিয়া এক করে দেয়া এক পাগল প্রেমিকের গল্প... ♥