......প্রথম শর্ত - তুমি আমার কাছ থেকে দূরে কোথাও যাবা না। যতই সমস্যা হোক আমার সাথে থাকবে, আমার সাথে যাবে।
দ্বিতীয় শর্ত - যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে আমরা সাথে সাথে চলে আসবো।
তৃতীয় শর্ত - আমার কোন কথা ফেলতে পারবেনা। যা বলবো তা শুনতে হবে।
চতুর্থ শর্ত - বার্ষিকী শেষ হলেই চলে আসবো
পঞ্চম শর্ত - উপরের একটা শর্ত ও যদি ভাঙ্গ তাহলে তুমি আমার সাথে চলে আসবে ওকে??
.
এতগুলো শর্ত শুনে আমার ভিরমি খাওয়ার মত অবস্থা হল। বাপের বাড়িতে যেতে কেউ এতগুলো শর্ত দেয় নাকি?? আমি বললাম
.... কিন্তু আম""""""
.... কোন কিন্তু না। মানতে পারলে যাবা। না হলে যাওয়ার দরকার নাই।
.... না না ঠিক আছে মানবো।। এখন চলো যাই।।
.... তার আগে খেয়ে নাও।।
.... হুম
.
এই বলে ফারান আমাকে খাইয়ে দিতে লাগল। আমি নিজের হাতে খেতে চাইলাম। কিন্তু ও দিল না। তারপর সে নিজে খেতে লাগল।
এভাবে খাওয়া শেষ হলে ফারান আগে গেল গোসল করতে তারপর আমি।। গোসল শেষে তৈরি হয়ে নিচে নামলাম। ফারান মেনবা কে বুঝিয়ে দিতে লাগল যে কি কি করতে হবে। আমি ফারানের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।। অত্যন্ত খুশি ছিলাম। এরপর ফারান এসে আমার হাত ধরল। তারপর আমরা একসাথে বের হলাম।
গাড়িতে স্টার্ট দেওয়ার পূর্বে ফারান আমার দিকে তাকিয়ে বলল
..... দেখো আমি ওখান কার কাউকে আমি বিশ্বাস করি না।। যদি ওই খানে গিয়ে তুমি বা ওরা উল্টা পাল্টা কিছু করে তাহলে ভালো হবে না। আগে থেকে ওয়ার্নিং দিলাম।
একটু ভয় পেলাম। কারন আগের বার কি হয়েছিল তা আমার জানা আছে। সুতরাং এবার সেরকম কিছু করার প্রশ্নই আসে না। তাই আমি বললাম
.... ঠিক আছে।।
.
এরপর গাড়ি চলতে লাগল। আমি অনেকটা খুশি হলেও ফারান কে মোটেও খুশি বলে মনে হচ্ছিল না। অত্যন্ত চিন্তিত এবং চোখে আগুনের ফুলকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। আমি কিছু বললাম না পাছে উল্টা পাল্টা কিছু করে।।
গাড়িতে বসলে আমার ঘুম আসে। কিন্তু আজকে আসছিল না। বাড়িতে যাব তাই একটা উত্তেজনা কাজ করছিল। তথাপি একটা ভয় ছিল বমি নিয়ে। আবার রাতের বেলা বমি কম হয় তাই একটু নিশ্চিন্ত ছিলাম। ফারানের দিকে আবার তাকালাম। তারপর বললাম
..... থ্যাংক ইয়ু!!
ফারান আমার দিকে তাকালো না। আমি বুঝতে পারলাম অনেক রেগে আছে আমার উপর।। আর কিছু বললাম না। ওর একটু কাছে আসলাম। তারপর ওর কাধে মাথা রাখলাম। আমি জানি এভাবে হলেও ও কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে গাড়ি চালাবে।। এভাবে মাথা রেখেছিলাম। ফারান কিছু বলেনি। হঠাৎ একটা মোড় আসতেই আমি পড়ে যেতে লাগলাম কিন্তু তার আগেই ফারান আমার মাথায় হাত দিয়ে ধরে ফেলল। আমি একটু চমকে গেলাম। আর ফারান গাড়ি থামিয়ে ফেলল। ফারান বলল
.... তুমি ঠিক আছো?? মাথায় ব্যাথা পেয়েছো?? আমাকে দেখতে দাও।।
....না না ঠিক আছে।। ব্যাথা লাগেনি।।
... ওকে।। আই অ্যাম স্যরি। এ বার খেয়াল রাখবো।।
... ইটস ওকে।
.
এবার ফারান নিজেই আমার মাথা ধরে নিজের কাধে রাখল। আর বাম হাত দিয়ে আমার হাত ধরে রাখল।। আমি কিছু বললাম না। গাড়ি এগিয়ে যেতে লাগলো তার গন্তব্যর দিকে।। আর ফারানের কাধে মাথা রেখে আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো।
কিছুক্ষন পরেই কিছু একটা অনুভব করলাম। মনে হল কিছু একটা ঠিক নেই। তাই ঘুম ভেঙে গেল। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম। গাড়ি ঠিকমত চলছে।। এবার ফারানের দিকে তাকালাম। ফারানও ঠিক আছে বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছিল না। এক হাতে মাথা চেপে বসে আছে। আরেক হাতে অস্বস্থি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম
.... কি হয়েছে??
.... হু!! না কিছু না। তুমি উঠে গেলে কেন??
.... আর ঘুম আসছেনা। কতক্ষণ লাগবে আর??
.... এইতো এসে গেছি।। আর পাঁচ মিনিট।
আমার কিছুটা সন্দেহ হল। কিন্তু ধরতে পারছিলাম না কি সেটা।
.
কিছুক্ষনেরর মধ্যে আমাদের বাড়ির উঠানে প্রবেশ করলাম। এটা আমাদের পুরানো ভাড়া বাড়িটা না। আব্বুর মৃত্যুর পর যখন আমার বিয়ে মামুনের সাথে হয় তখন আম্মুরা এখানে চলে আসে।। বলতে গেলে এটা আমার নানুর রেখে যাওয়া ঘর।
কিছুটা ভয়, শঙ্কা, উদ্ধেগ নিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম।। ফারান এসে আমার পাশে দাড়ালো। এখনো খানিকটা অস্বস্থিতে লাগছে তাকে। যেন তার কিছু একটা হয়েছে। না হলে গাড়ি থেকে নেমে আগে আমার হাত ধরত। কিন্তু এখন যেন সেটা ভুলে গেছে। আমি ধরলাম তার হাত। ও মনে হয় কিছুটা চমকে উঠল। তারপর আমার দিকে তাকালো। আমি নার্ভাস ভাবে একটু হাসলাম। ফারানও একটা হাসি দিল। তারপর আমার হাত শক্ত করে ধরে ভিতরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। রাত প্রায় সাড়ে আট টা। ঘরে গিয়ে প্রথমে ঠোকা দিলাম। কেউ শুনল না। দুই/তিন বার দিতেই দরজা খুলল কেউ। আমার মেজো মামী। ওরাও এখানে থাকে। সবার ঘর এক সাথে। হয়ত কোন কারনে আমাদের ঘরে এসেছে। আমাদের দেখেই মামী হাসি দিল। আমি পা ধরে সালাম করলাম। ফারান প্রথমে আমি কি করছিলাম ওটার দিকে তাকালো। তারপর নিজে সালাম করতে গেল। কিন্তু মামি ফারান কে সালাম করতে দিলেন না। জামাই বাবা বলে টেনে নিয়ে গেল। খানিকটা উল্লাসে মেতে।
.
আমি একটু অবাক হলাম। ফারান আমাকে ছেড়ে যেতে চাইছিলো না। তথাপি মামি ওকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছিল। আর ফারান আমার দিকে তাকাচ্ছিল। আমি নির্ভয়তা সূচক হাসি দিয়ে পিছন পিছন আসতে লাগলাম। মামির চিৎকারে আসে পাশের সব মামা মামি, কাজিনরা একত্র হয়ে গেল। সবাই ফারান কে সোফায় বসিয়ে ঘিরে ধরেছে। আর ফারান কুলকুল করে ঘামছে আর আমার দিকে অসহায় চোখে তাকাচ্ছে। আমি সাহস দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমি আম্মু আর রিফাতের খোজ করছিলাম। কিন্তু দেখছিলাম না। ছোট মামি কে জিজ্ঞেস করলাম মা কোথায়।। মামি বলল রুমে আছে। অসুস্থ তাই উঠতে পারছেনা। আর রিফাত এখনো আসেনি। এজন্য মেজো মামি এসে রান্না বান্না করে দিচ্ছিল। আমি ফারানের কাছে গিয়ে বললাম
..... আমি মার সাথে দেখা করে আসি।। তুমি থাক।।
.... নাহ্
এই বলে ও আমার হাত ধরে ফেলল। তারপর বলল
..... আমিও যাব।।
এই বলে সোফা থেকে উঠে দাড়ালো। ইতিমধ্যে আমার মামাতো বোনেরা যেভাবে ফারান কে ঘিরে রেখেছে সেটা আমার মোটেও ভালো লাগছিল না। তাই কিছু বললাম না। আমি আর ফারান যেতে লাগলাম আম্মুর কাছে। যাওয়ার আগে বলতে লাগল
..... সবাই এত শাউট করছে কেন??
.... তোমাকে পেয়ে খুশি হয়েছে সবাই তাই।
.... সত্যি!!
.... হুম
.... রিফাত আর তোমার মা।।
.... জানিনা এখনো ওদের কথা।।
... ওহ্!!
.
প্রথমে দরজা নক করলাম। কোন সাড়া শব্দ নেই। তারপর আবার করলাম। দরজা খুলে গেল। লক করা ছিলনা। ভিতরে আবছা অন্ধকার। তাই লাইট দিলাম। দেখলাম আম্মু বিছানায় শুয়ে আছে। মনে হল ঘুমিয়ে অাছে। পাশে গিয়ে ডাকলাম
..... আম্মু
কোন সাড়া শব্দ নাই। আমি আবার ডাক দিলাম।এবার সাড়া দিয়ে চোখ খুললো। তারপর আমাকে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করল। আমি তাড়াতাড়ি ধরে বসালাম। আম্মু বসতেই ফারান অবাক করে দিয়ে আম্মু কে সালাম করল পা ধরে। আমি কিছুটা চমকে উঠেছিলাম। তারপর আমিও সালাম করলাম। এরপর আম্মুর পাশে বসলাম। আম্মুর পাশে বসতেই আম্মু হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে দিল। আমি বুঝতে পারলাম না কান্নার কি হল। ফারানও থমথম খেয়ে গেছে আম্মুর কান্না দেখে।
.
(চলবে)
ESTÁS LEYENDO
মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥
Romanceপ্রেমের মানুষের জন্য দুনিয়া এক করে দেয়া এক পাগল প্রেমিকের গল্প... ♥