পার্ট - ৩১

516 19 0
                                    


আম্মু!!!
.
এখন কি হবে?? আম্মু তো আমার জান নিয়ে নেবে।। 
.
আর কিছু ভাবলাম না। দৌড়ে দারোয়ান কে ইশারা করলাম ভিতরে আসতে দিতে। দারোয়ান চাইল না। কিন্তু আমি হুমকি দিতেই ভিতরে আসতে দিল। শুধু আম্মু না রিফাতও আসছে। সে গেইটের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করছে না।। বাইরে দাড়িয়ে আছে। এমনকি আমার দিকে তাকাচ্ছে ও না।
.
আম্মু ঢুকলো।। আমি সালাম করতে চাইলাম। কিন্তু দিল না। আমি একটু হেসে জিজ্ঞেস করলাম
...... কেমন আছো আম্মু??
অমনি ঠাস করে আম্মু আমাকে থাপ্পর লাগিয়ে দিল। আম্মু আগে ও আমাকে মারত তবে অত জোরে না।
.
কিন্তু আম্মুর চড় খেয়ে আমি টাল সামলাতে পারলাম না। পড়ে গেলাম। বাধানো পাথরে আমার হাত চাপ পড়ল। খুব ব্যাথা পেলাম। মনে হল মুচড়ে গেছে। কোন মতে ওখানে মাটিতে বসেই আম্মুর পা ধরলাম। ধরে বললাম
...... আম্মু আমার কথা শোন একবার।
আম্মু আমার কথা শুনল না। আমি আঘাত খাওয়া হাত দিয়ে আম্মুর পা ধরেছিলাম। আম্মু পা দিয়ে সে হাতে আবারও লাথি মারল।
ব্যাথায় কুকড়ে উঠলাম। মনে হল জান বেড়িয়ে যাচ্ছে।
.
আমাকে মারতে দেখে ফাতিমা আর দারোয়ান দৌড়ে এলো। আমি তাড়াতাড়ি মানা করলাম কিছু না বলতে। কিন্তু তারা আমার কথা না শুনে আম্মু কে ধরতে আসছিল। তাই না চাইতেও অনেক কষ্টে উঠে তাদের থামালাম। তারপর আবার আম্মুর পা ধরে বললাম
...... আম্মু মাফ করে দাও আমাকে।। আমাকে ভুল বোঝনা। 
এবার আম্মু নিচু হয়ে আমার চুলের মুটি ধরল। তারপর বলল
...... আফসোস!! যদি তোকে জন্মের পর নুন খাইয়ে দিতাম, তাহলে আজকে আর এ দিন দেখতে হত না।
...... আম্মু এরকম বলো না।। আমার কথা শোন!!
.
.
আমি আম্মুর কাছে কান্না করছিলাম, পা ধরে মাফ চাইছিলাম। কিন্তু আম্মু কোন ভাবে আমার কথা শুনতে নারাজ। উপরন্তু চড়, থাপ্পড়, লাথি যা পারছিল মারছিল। ফাতিমা, দারোয়ান, আকাশ ওরা দাড়িয়ে ছিল। আমার কড়া মানার কারনে ওরা এগুতে পারছিল না। 
.
কিন্তু ওখান থেকে অনুরোধ করছিল থামার জন্য।। ফাতিমা তো কান্না শুরু করে দিল। আর আকাশ প্রচুন্ড রেগে ছিল। নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছিল।। কিন্তু কারো কথায় আমার আম্মু প্রবোধ মানছিল না।
.
হঠাৎ আমার আম্মুর একটা কথায় অামার কন্ঠ রোধ হয়ে গেল। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আম্মু বলছিল
...... কিভাবে পারলি নিজের স্বামী কে ডিভোর্স দিয়ে বাপের খুনী কে বিয়ে করতে??? এতই শখ ছিল বিয়ে আরেকটা করার?? নাকি টাকা পয়সা দেখে সব ভুলে গেলি হাঁ!! আরে তোর চাইতে তো রাস্তার বেশ্যা অনেক ভালো।। গিয়ে ওদের খাতায় নাম লিখিয়ে আসিস।।
.
.
আমি স্তব্দ হয়ে মার কথা শুনছিলাম। কারন মা আমাকে খুব বেশি হলে একটা থাপ্পর মারতেন। আব্বু তো কখনো মারতেনই না। কিন্তু আম্মু আজ যা বলছে তা সীমার বাইরে। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার আম্মু আমাকে এরকম করে বলতে পারে।। 
.
.
আবার দুফোটা অশ্রু গাল বেয়ে পড়ল।। এরই মধ্যে মারোয়া চলে এলো।। আওয়াজ শোরগোলে নিশ্চয় তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। সে চোখ ঢলতে ঢলতে নিচে এসে আমাকে কাদতে দেখে দৌড়ে আসছিল। আমি ফাতিমা কে ইশারা করলাম মারোয়া কে দেখার জন্য। 
.
ফাতিমা মারোয়া কে ধরে ফেলল। কিন্তু মারোয়া অামার কাছে আসতে চাচ্ছিল।। মারোয়া কে দেখে আমার আম্মু দ্বিগুণ ভাবে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। তিনি বলতে লাগলেন
..... মারোয়া কে কি জন্য আনছিস?? তোর মত বানানোর জন্য?? ন্যাকামো দেখাচ্ছ কেন হাঁ?? আরেক জনের মেয়েকে নিয়ে আসতে লজ্জা করল না।।। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার??
.
.
এই বলে আম্মু আমাকে আবার থাপ্পর মারল। এবারের থাপ্পরে আমার নাক বেয়ে রক্ত পড়তে লাগল। 
আমাকে মারতে দেখে মারোয়া কান্না শুরু করে দিল।। সব কিছু মিলিয়ে মনে হল কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে।।
.
অবশেষে মা থামলেন।। আমাকে অভিশাপ দিয়ে গেলেন যে আমি যা করেছি তার জন্য অবশ্যই ফল ভোগ করব।। আমি কিছু বলিনি উত্তরে। শুধু নিস্তব্ধ হয়ে আম্মুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
এদিকে মারোয়া কেদেই চলেছে। আমি ফাতিমাকে বললাম মারোয়া কে যেন আমার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।। ফাতিমা অল্পবয়স্ক মেয়েটি কে ডেকে মারোয়া কে নিয়ে যেতে বললেন। মেয়েটা তাই করল। 
.
.
আমাকে ফাতিমা আর আকাশ উঠতে সাহায্য করল। আমা ঘরে ঢোকার আগে ওদেরকে হুশিয়ারি দিলাম যে আজকে যা কিছু হল তা যেন কিছুতেই ফারানের কানে না উঠে।। 
এই কথায় আকাশ উসকুস করতে লাগল। আমি তাকে একটা ধমক দিলাম। প্রথম বার আমার ধমক খেয়ে আকাশ চুপ হয়ে গেল।
.
আমার হাতের আঘাতটা গুরুতর ছিল। আঘাতের কোন চিহ্ন না রাখার জন্য গোসল করে নিলাম। কিন্তু গোসল করে মনে হচ্ছে সব আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমার দু গালে পাচ আঙ্গুলের দাগ, একটু খানি ঠোট ফাটা, তাছাড়া হাতে কাটা চিহ্ন।।। এছাড়া দু একটা ছোট খাট কাটা ছেড়া।
.
.
হাত টা প্রচুন্ড যন্ত্রনা করছিল। নাড়াতে পারছিলাম না। ফাতিমা সেক দিচ্ছিল। ডাক্তার আনতে রাজি হইনি। কারন এতে ফারান জেনে যাবে। কিন্তু ব্যথার জন্য ট্যাবলেট খেলাম। 
মারোয়া কে আমার কাছে আনা হল। সে ফোপাচ্ছিল। আমি তাকে বুঝ দিলাম। পুরা না মানলেও কিছুটা মানল।
.
অত্যন্ত ক্লান্ত ছিলাম তাই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙল ফারানের ডাকে।। চোখ খুলতে পারছিলাম না। মাথায় আর হাতে প্রচুন্ড যন্ত্রনা ছিল। তার উপর হাত নাড়াতে পারছিলাম না। একটু একটু করে চোখ খুলে দেখলাম ফারান আমার পাশে বসা। 
.
বাইরে থেকে এসে সরাসরি নিশ্চয় আমার কাছে চলে এসেছে। কারন পরনের শার্ট টাও পাল্টায় নি।। কোর্ট টা অপর হাত ধরা।। সে আমার উৎসুক চোখে তাকায়ে আছে।। চোখ খুললে ফারান জিজ্ঞেস করল
...... ভালো আছো??
..... হুম
..... কিছু খাওনি কেন?? এত রাত হল।।
..... ইচ্ছা করছে না।।
..... শরীর খারাপ নাকি তোমার?? ডাক্তার ডাকি??
..... না তেমন কিছু না।।
.
.
হঠাৎ সন্দিগ্ধ চোখে ফারান আমার দিকে তাকাল। তারপর ধীরে ধীরে আমার কপালে হাত দিল। মুহুর্তে ফারানের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। আমি ঘোরের ভিতরেও কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। কপালে হাত দেওয়ার পর তাড়াতাড়ি ফারান আরো কাছে এসে আমার দু গালে হাত দিয়ে কিছু অনুভব করতে লাগল। 
.
চোখ মুখ প্রচুন্ড রকমের লাল হয়ে গেল ফারানের।।। সে জোরে জোরে ফাতিমা কে ডাকতে লাগল। তারপর আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
..... কিচ্ছু হবে না দেখো তোমার।। আমি আছি না।। 
.
আমার কি হয়েছে?? ফারান এরকম করছে কেন?? সে কি কিছু জানতে পেরেছে?? ওহ্ মাথায় অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে।। ওদিকে ফারান আবার চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলেছে।। পারলে ফাতিমা আর আকাশ কে এখনি ঘর থেকে বের করে দেয়।।
.
কতক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করছে কতক্ষণ আমার পাশে বসে সান্তনা দিচ্ছে।। 
কিছুক্ষন পর সে আমার মাথা ধরে একটু উচুতে বালিশ দিয়ে দিল। তারপর কোথাও ফোন করল। ফাতিমা আর আকাশ একপাশে চুপচাপ ভয়ে দাড়িয়ে ছিল। যেন তারা ফাসির আসামি।।
এরপর একটা থার্মোমিটার এনে ফারান আমার মুখে পুরে দিল। থার্মোমিটার দেওয়ায় আমি বুঝতে পারলাম আমার জ্বর চলে এসেছে। নিশ্চয় হাতের ব্যাথায়।। 
.
আপন মনে ফারান রাগে গজগজ করতে লাগল।। আমার ও মনে মনে ভয় লাগছিল। যদি ফারান কোন ভাবে আম্মু আসার কথা জেনে যায় তাহলে কি হবে??
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now