আর ফারান আমার দিকে এগিয়ে আসছিল। ফারানের এই দিকটা আমার খুবই ভয়ঙ্কর লাগে।। ভয়ে চোখ থেকে ঝর ঝর করে পানি পড়ছিল। পিছু হটতে হটতে বিছানার সাথে ধাক্কা খেয়ে বসে গেলাম। ফারান কাছাকাছি চলে আসল। এর পর একটা টুল বাম হাতে নিয়ে একবারে আমার সামনে বসল। আমি একবার ঢোক গিললাম। তারপর আমার হাত টা টেনে ধরল। হাতে বাধা রুমাল টা খুলে ফেলল। এখন রক্ত পড়া অনেকটা কমে গেছে। রুমালটা খুলে ওই রুমাল দিয়ে রক্ত সব মুছে নিল। তারপর জগ থেকে পরিস্কার পানি নিয়ে ভালোভাবে হাতটা পরিস্কার করে দিল। আমি শুধু চুপচাপ দেখছিলাম। ভয়ে কিছু বলছিলাম না। তারপর সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে দিল। আসলে আমার পোচ অত গভীর ভাবে লাগেনি। মানে শিরায় আঘাত লাগেনি। তাই বেচে গেলাম। ব্যান্ডেজ করা হলে ফারান আমার হাতটা দু হাতে ধরে চুপচাপ বসে রইল। জানিনা কি ভাবছিল।। তবে কয়েক মিনিট চুপচাপ বসে থাকার পর সে আমার দিকে তাকালো। তারপর ধীরে ধীরে আমার মুখের বাধন টা খুলে দিল। আমি চিৎকার করলাম না। এরপর আমাকে এক গ্লাস পানি এনে দিল। আমি পুরো গ্লাসের পানি এক নিঃশ্বাসে শেষ করলাম। আমার এতটাই পানির তৃষ্ণা ছিল তা খাওয়ার সময় অনুভব করলাম। খাওয়ার পর একটু শক্তি এলো শরীরে। তারপর আমি একটু করে চোখ বন্ধ করলাম। আর অনুভব করলাম ফারান আমার মুখে চলে আসা অবাধ্য চুল গুলো সরিয়ে দিচ্ছে। আমি চোখ খুললাম। ফারান আমার মুখে হাত বুলাচ্ছে। আমি ইগনোর করতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না। ফারান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করল
..... মোহিনী আমি"""""
ওর কথা আটকে গেল। আবার কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলতে লাগল
..... ও বলছিল তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে।। আমাকে ছেড়ে দিতে। তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো?? আম-মি মরে যাবো তোমাকে ছাড়া। দেখো আমি এখানে আর থাকতে চাইনা। ওরা না হলে কখন কি করে তোমাকে নিয়ে যাবে আমি বুঝতেই পারবোনা। আর আমি এই রিস্ক নিতে পারবোনা। আর রিফাত কখন তোমাকে অন্ধ করে দিবে আমি জানি না।
.
আমি ফারানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। তারপর ধীরে ধীরে বললাম
..... এই জন্য তুমি যে কারো জান নিয়ে নেবে??
..... মোহিনী আমি ইচ্ছা করে""""" ও তোমাকে বলছিল""""""
আমার প্রচুন্ড রাগ হল। রাগের চোটে এক ঝটকায় ফারানের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে দাড়িয়ে গেলাম। তারপর বললাম
...... ইচ্ছা করে করো নাই বিধায় এত মানুষের জীবন গেছে। আর যদি ইচ্ছা হত তাহলে কত মানুষের জান নিতে?? হা বল!!
ফারান আমার আকস্মিক ভাবে দাড়িয়ে যাওয়ায় চমকে গিয়েছিল। কিন্তু নিজেকে দ্রুত সামলিয়ে নিল। এর পর আমার কথায় কিছুক্ষন চুপ থাকল। তারপর আমার হাত ধরে টেনে বিছানায় বসাল। তারপর ঠান্ডা অথচ গম্ভীর গলায় আমাকে বলল
...... সবকিছুই আমার অনিচ্ছা কৃত। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছা করে তোমাকে আমার কাছ থেকে দুই ইঞ্চি ও দূরে সরায় তাহলে কারোর জান নিতে আমার হাত কাপবে না। সে যে কেউই হোক।
আমি চমকে উঠলাম। আমার হাত পা কাপতে লাগল। ভয়ে আমার চোখের পানি চলে আসতে চাইল। আমি ফারানের চোখের দিকে তাকাতে পারলাম না। কিন্তু ফারানের দৃষ্টি শুধু আমার উপর নিবদ্ধ তা বুঝতে পারলাম। কারন তার প্রতিটা নিঃশ্বাস আমি অনুভব করছিলাম। তারপর আমি বললাম
...... আম ম মি রিফাতের কাছে যাবো!!
...... নাহ্!! আমরা বাড়ি যাচ্ছি।।
আমি তাড়াতাড়ি ফারানের হাত ধরলাম। তারপর বললাম
..... ও আমার ভাই।
.... তাতে কি?? ভাই কিন্তু তারপরও শত্রু।
.... মিথ্যা কথা!! ও আমার শত্রু না।
.... তাহলে কেন তোমার খুশী চাইল না??
আমি বলতে গিয়েও জবাব দিতে পারলাম না। কিছুক্ষন মৌন থেকে তারপর বললাম
..... প্লিজ রিফাতকে দেখতে দাও। এরপর ওয়াদা করছি তোমার সাথে বাড়িতে চলে যাব!!
..... ঠিক আছে।। তবে এক শর্তে!!
.... কি শর্ত?? আজ রাতে আমার সাথে থাকতে হবে।।
আমি খানিকটা ভড়কে গেলাম শর্ত শুনে। তারপর ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বললাম
.... ঠিক আছে।
.
রিফাত কে পাশের ক্লিনিকেই নেয়া হয়েছে। ওখানে সবাই আছে। মা, মামা, মামি, কাজিনরা সবাই, ক্লিনিকে পৌছে দেখলাম আম্মু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে আর বড় মামি সান্তনা দিচ্ছে। মামা ছোটাছুটি করছেন ক্লিনিকের বিভিন্ন কাজ নিয়ে। আমি গিয়ে আম্মুর পাশে বসলাম। ফারান একটু দূরে সোফায় বসে রইল। আমি আম্মুর পাশে বসতেই আম্মু হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে দিল। অথচ একবারও জিজ্ঞেস করল না রিফাতের এই অবস্থা কি করে হল?? এমন কি অন্য সবাই। খুব অাশ্চর্য্যের কথা।। নাকি তারা প্রথম থেকে আন্দাজ করে দিয়েছে?? এসব ভাবছিলাম হঠাৎ মামা এসে বলল ওর জন্য রক্ত লাগবে। সবাই ঘাবড়ে গেল। তবে মামা চিন্তা করতে মানা করলেন। রিফাতের গ্রুপ আর আমার গ্রুপ একই ও পজেটিভ। তাই আমি রিফাত কে রক্ত দেওয়ার কথা বললাম। আমার নানুর বাড়ির রক্তের সাথে রিফাতের রক্তের ম্যাচ হবে না সেটা আমার জানা। সুতরাং রক্ত আমি দিব। তাই উঠে দাড়ালাম। কিন্তু হঠাৎ ফারান এসে থামিয়ে দিল।
..... কোথায় যাচ্ছ??
..... উমম!! রি-রিফাতের রক্তের প্রয়োজন। আমার আর রিফাতের রক্তের গ্রুপ একই। তাই দিতে যাচ্ছি।
...... তোমার মাথায় বুদ্ধি শুদ্ধি নাই কেন??
..... মানে??
..... মানে তোমার হাত দেখেছো?? তোমার গায়ে রক্ত আছে?? যা ছিল সব তো ফেলে দিয়ে এলে। এখন কোথায় যাচ্ছো??
..... এখন রিফাতের রক্তের প্রয়োজন। আর এসব কথার মানে হয় না। আমি পূর্ণ বয়স্ক মেয়ে। রক্ত দিলে ক্ষতি হবে না।
এই বলে পিছনে ফিরে যেতে লাগলাম।
..... স্টপ!!
আমি নিজেই চমকে উঠলাম। ও রেগে গিয়েছে।। আর যাই হোক এই মুহুর্তে ওর রাগাটা চলে না।। আমি একটু করে হেসে ওর দিকে ফিরলাম। ও এসে বলল
..... তোমার রক্ত দিতে হবে না। রক্তের অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে।
.... মানে??
..... মানে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্তের অর্ডার দিয়েছি। কিছুক্ষনের মধ্যে রক্ত চলে আসবে। এখন গিয়ে বস।।
আমি আর কোনো কথা বললাম না। গিয়ে চুপচাপ বসলাম। ফারানের দিকে তাকালাম। ও ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।। ওকে ও অনেক দুর্বল লাগছে। সম্পুর্ন অচেনা বলে মনে হয় ফারান কে। যেন চিনেও চিনি না। তার সবকিছুই অজানা।। যেন রহস্যর চাদরে মোড়া সে।। ওর হাতের দিকে তাকালাম। কিছুক্ষন পর পর হাত টা ঝাঁকাচ্ছে। হাতে নিশ্চয় কিছু হয়েছে। আমি এগিয়ে গেলাম। ও ফোনে কথা বলছিল। আমি ওর হাত ধরলাম। তারপর দেখতে লাগলাম। ফারান কিছুটা অবাক হলেও কিছু বলল না। সে দেখতে দিল। আমি দেখল ওর হাত বরাবর মাঝারি সাইজের একটা কাটা দাগ। এখনো কাচা। হয়ত রিফাত কে মারতে গিয়ে লেগেছিল। রক্তের দাগ শুকিয়ে হাতে বসে আছে।। আমি ওকে টেনে সোফায় বসিয়ে দিলাম। তারপর ক্লিনিক থেকেই সবকিছু নিলাম। তারপর হাত পরিস্কার করে হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলাম। ফারান ফোনে কথা বলা শেষে আমি কি করছি তা মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল। এরপর ব্যান্ডেজ শেষে ওখান থেকে উঠে যেতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না। ফারান আমার হাত ধরে রাখল। অগত্য আমি ফারানের পাশে বসলাম। কিছুক্ষন পরেই রিফাতের জন্য ব্লাড চলে এলো। কিন্তু এখনো রিফাতের সাথে দেখা করতে পারলাম না। আরো অপেক্ষা করতে হবে। প্রায় রাত হয়ে এসেছে। কেউ কোন নাস্তা করে নি। ফারান উঠে গেল। তারপর কিছুক্ষন পর আবার চলে এলো। সবার জন্য এক গাদা নাস্তা নিয়ে এলো। জুস, বার্গার, পিৎজা, চা, কফি, আপেল, কমলা ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। সবাই খুশি হয়ে গেল। সবার শেষে ফারান আমাকে একটা প্যাকেট দিল। খুলে দেখলাম নুডলস। রেডিমেড নুডলস আর বার্গার। আর সেই সাথে জুসের বোতল। আমি ফারান কে জিজ্ঞেস করলাম
..... তুমি খেয়েছো??
ফারান মাথা নাড়ল। ও খায়নি।
..... ঠিক আছে তাহলে এখান থেকে নাও।
ফারান দ্বিধা করল না। আর এই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। ও কোনো ভণিতা ছাড়া যা করার করবে। আমার মনটা কিছুটা হলেও হালকা হয়ে গেল।
.
(চলবে)
BẠN ĐANG ĐỌC
মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥
Lãng mạnপ্রেমের মানুষের জন্য দুনিয়া এক করে দেয়া এক পাগল প্রেমিকের গল্প... ♥