পার্ট - ২৮

527 17 0
                                    


আমি চোখ বন্ধ করে আয়তুল কুরসি পড়ছি।।। ফারানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। এত শক্তি কেন???
পা গুলো পযর্ন্ত নিজের পা দিয়ে ফারান চেপে রাখল।। 
.
একটা অসহায় মুহুর্ত।। ও ধীরে ধীরে মাথা নিচু করছিল। আমার বুকের উপর ওর নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসাতে আমি বুঝতে পারছিলাম।।
.
আরো জোরে চোখ বন্ধ করলাম। ঠিক সেই মুহুর্তে দরজায় নক হল। আমি ঝট করে চোখ খুললাম। আমার জানে পানি এলো।। একবার দরজার দিকে তাকিয়ে ফারানের দিকে তাকালাম। ওর কোন ভাবান্তর দেখলাম না। 
.
আমি বলে উঠলাম
..... কেউ আসছে!!!
এতক্ষনে ফারান কথা বলল
..... আসুক।।
.... প্লিজ!!!
.
ফারান অামার কথা শুনল না। এদিকে আবার নক পাওয়া গেল। এবার গলার আওয়াজও পাওয়া গেল। এটা মারোয়া!!!
ও আমাকে ডাকছে বাইরে।।
.
.... মারোয়া আমাকে ডাকছে!!!
ফারান কর্ণপাত করল না।। সে এগিয়ে এলো। আমি আবারো চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কি হতে যাচ্ছে ভাবতেই গা শিউরে উঠছিল। এমন সময় অাবারো নক করার শব্দ পাওয়া গেল। 
.
এবার ফারান মুখ তুলে দরজার দিকে তাকালো। চোখে মুখে প্রচুন্ড রাগের আভাস পেলাম।। দাঁত কিড়মিড় করছিল সে। কারনটাও যথেষ্ট ছিল। কেননা এবার নকের শব্দ টা যথেষ্ট বড় এবং জোড়ালো ছিল।
.
ওর অজান্তে হাতের বাধন হালকা হয়ে এলো।। আমি আস্তে করে এক হাত দিয়ে টাওয়েল টা শক্ত করে ধরে অপর হাতে ফারান কে ধাক্কা দিলাম। আমার দিকে নজর না থাকায় ও হতচকিত হয়ে গেলো।
..... মোহিনী!!!
.
সে আমাকে ডাক দিল রাগত স্বরে। কিন্তু ততক্ষণে আমি বিছানা থেকে নেমে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেছি।
আমাকে পালাতে দেখে ও তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে এলো আমাকে ধরার জন্য। 
.
বাথরুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলাম। অল্পের জন্য বেচে গেলাম। দরজার ওপাশ থেকে ফারান চাপা গর্জন করছিল। তবে বেশিক্ষন না।। দরজা খোলার শব্দ এলো।। 
.
আমি কান পেতে শোনার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু কিছু শুনতে পেলাম না। প্রায় ১৫/২০ মিনিট পর বাথরুমের দরজা খুলে উকি দিলাম। নাহ্ কেউ নেই।। তবে দরজা খোলা। তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা বন্ধ করলাম। এরপর দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলাম। আহ্!! এখন কত শান্তি!!!
.
এতক্ষন মনে হচ্ছিল নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম না ঠিকমত।।। নিচের দিকে তাকাতেই নিজের খালি বিভৎস পা দেখে আতকে উঠলাম। আমি এখনো টাওয়েলে আছি!! পরক্ষনে শান্তি পেলাম। ফারান কাপড় রেখে গেছে।। 
.
তাড়াতাড়ি কাপড় পড়ে বাইরে বেরুলাম।
বাইরে বেড়িয়ে নিচে আসলাম। ফারান কে দেখলাম না। মারোয়া কে ও দেখা যাচ্ছে না। কোথায় গেল ও?? এখানেই তো থাকার কথা!!! আবার উপরে গেলাম যতটুকু চিনি সব রুম চেক করলাম। নাহ্ কোথায় গেলো???
.
নিচে এসে ফাতিমা কে ডাক দিতে চাইলাম।। কিন্তু ফাতিমা কে কি বলে ডাকবো? ফারান তো নাম ধরে ডাকে।। তাহলে আমিও নাম ধরে ডাকবো?? 
না না!! ফাতিমা যতই কাজের লোক হোক সে তো বয়সে আমার বড় হবে। কিভাবে নাম ধরে ডাক দেবো?? তাহলে???
.
আর কিছু ভাবলাম না। কিচেনে গেলাম। সেখানে ফাতিমা কে দেখলাম। কিন্তু আরো একজন কে কাজ করতে দেখলাম। সেও অল্প বয়সী মেয়ে।। কাজের লোক হতে পারে।। মাথা থেকে বাদ দিলাম।
.
...... আপনি মারোয়া কে দেখেছেন??
কথা শুনে ঝট করে ফাতিমা পিছনে ফিরল। তারপর তোতলিয়ে বলল
..... ম্যাম..... ছোট মনি বাগানে!!! ডেকে নিয়ে আসবো??
...... দরকার নাই।। আপনি কাজ করেন। আমি খুজে নেব।।
এরপর এক দৃষ্টি অল্প বয়স্কা মেয়েটার দিকে ফেললাম। ওই মেয়ে মোটেও ফাতিমার মত না। তীক্ষ্ণ ভাবে আমাকে দেখছে।। চোখে মুখে অন্য কিছুর আভাস। বুঝতে পারলাম না কি সেটা?? 
.
মাত্রই তো এসেছি।। কারো সাথে শত্রুতা নেই। তাহলে এমন করে দেখার কি আছে??
.
ভাবতে ভাবতে বাইরে এলাম। পাথরের তৈরি টুল জাতীয় বসার স্থানে মারোয়া বসে আপন মনে খেলছে। আমি ডাক দিলাম।
...... মারোয়া!!
মারোয়া এক দৌড়ে চলে আসল!!
...... কোথায় ছিলে তুমি?? তোমাকে খুজতেছিলাম।।
.... ও ও ও ও আমি গোসল করতেছিলাম।। থাক এইসব।। চল।। গোসল করে ঘুমাতে যাবে।।
মারোয়া কে নিয়ে যাব কিন্তু মারোয়া হাত ধরে শক্ত করে দাড়িয়ে রইল। বাধা পেয়ে পিছনে তাকালাম।
.... কি হল মারোয়া??
.... ফারান ভাইয়া একদম ভালো না।।
এই কথায় অবাক হলাম।। তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলাম
.... কেন?? তোমাকে কি কিছু বলছে??
.... না।।
.... তাহলে??
মারোয়া নিশ্চুপ। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল
.... আমাকে বকা দিসে ফারান ভাইয়া।।
আমার খুব রাগ হল। কিন্তু প্রকাশ করলাম না।
.... কেন দিসে??
..... তোমাকে খুজছিলাম তাই।
.... ওহ!! তোমার ফারান ভাই এরকমই!! কিছু মনে করো না।। ও আসলে আমি ওকে বকে দিব।। ঠিক আছে।।
..... হুম।
একটা হাসি দিয়ে বলল। 
.
.
তারপর ঘরে গিয়ে মারোয়া কে গোসল করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে আসলাম। তবে ফারানের রুমে ঘুমাতে দিলাম না। ও এসে আবার কোন নতুন সমস্যা করবে।। 
আমার মাথায় নতুন সমস্যা ভর করল। ফারান আর মারোয়ার সম্পর্ক নিয়ে। ভাবছিলাম ফারান কেন মারোয়া কে বকা দিবে??
কিন্তু বেশিক্ষন ভাবতে পারলাম না। ঘুম চলে এলো।।
.
কতক্ষণ লাগল জানিনা।। তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এলো।। মনে হলো স্বপ্ন দেখছি।। আবার মনে হল জেগে আছি।। দেখলাম ফারান উপুর হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। এরপর সে আমাকে ধীরে ধীরে কোলে তুলে নিল। আমার মোটেও খারাপ লাগছিল না। খুব ভালো লাগছিল।
.
মনে হল হাওয়ায় ভাসছি।। আর আমি ফারানের দিকে তাকিয়ে আছি।। ও আমার দিকে একটুও তাকাচ্ছে না।। ও কেন তাকাচ্ছে না আমার দিকে?? আমার মোটেও ভালো লাগলো না। হাত দিয়ে ওর মুখটাকে আমার দিকে ফেরালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে অল্প হাসল। 
.
তারপর কোথাও যেন শুইয়ে দিল। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
..... ঘুমাও!!
.
আমি ওর কথা শুনলাম। চোখ বন্ধ করলাম। পরম আবেশে আমার ঘুম বেশি করে আসতে লাগল। একটা ভালো লাগার মত উষ্ণতা আমায় চারদিক থেকে ঘিরে রাখল। মনে হল এমন উষ্ণতা আমি কখনো পাইনি।। 
.
.
সকালে যখন ঘুম ভাঙল তখন আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছে ভারি কিছু আমার গলার উপর চেপে আছে। দেখার জন্য হাত নাড়াতে চাইলাম। পারলাম না। পা নাড়াতে চাইলাম। তাও পারলাম না। 
.
এর মধ্যে কিছু চুল এসে আমার নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছিল। এই জন্য আমার হাচি আসছিল। কিন্তু খুব কষ্ট করে তা চেপে রাখছিলাম। 
অবশেষে চোখ খুললাম। কিন্তু চোখ খুলে আমার ভিরমি খাওয়ার মত অবস্থা। 
.
...... ফাফফারররান!!!
.
ফারানের মাথাটা আমার গলার মধ্যে। হাত পেটের উপর দিয়ে গিয়ে আমার হাত চেপে ধরেছে।। আর পা তো বলা বাহুল্যে। এত ভারি পা টা আমার গায়ের উপর তুলে দিয়েছে।। এজন্য আমি হাত পা নাড়াতে পারছিলাম না।
..... অসভ্য কোথাকার!!!
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now