গাড়িতে গিয়ে দেখলাম মারোয়া গাড়ির বাইরে দাড়িয়ে কান্না করছে। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে মারোয়া কে ধরলাম।
..... কি হয়ছে মারোয়া??? কাদঁতেছো কেনো???
.... তুমি কোথায় ছিলে?? আমার একা ভয় লাগছিলো।।
..... এইতো এখানে ছিলাম।
এবার পিছন থেকে ফারান বলে উঠল
..... এত কান্না কাটির কি হয়ছে??? বাচ্চা নাকি তুমি।। ক্লাস সিক্সে পড়া মেয়ে তুমি।।
.
ধমকের সুরে বলল ফারান।। সাথে সাথে মারোয়ার কান্না থেমে গেল। আর ভয়ে আমাকে চেপে ধরল। আমি অনেক টা চোখ শক্ত করে ফারানের দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বলার সাহস হল না।
.
গন্তব্যে পৌছলাম কিছুক্ষন পরেই। এটা একটা সুদৃশ্য দোতলা বাড়ি। তার উপর ছাদ রয়েছে। বাড়ির গেইট বলতে গেলে দারুন। ভালো করে না দেখলে এর শৈল্পিক দিকটা বোঝা যাবেও না। পিওর সৌন্দর্য যেটাকে বলে।
নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে চারদিকে। শুধু বেলি ফুলের গন্ধ বয়ে বেড়াচ্ছে বাতাস।
.
আমি আর মারোয়া গাড়ি থেকে নামতেই ভেতর থেকে একটা পুরুষ অার মহিলা দৌড়ে এলো। তারপর ওরা গাড়ি দরজা খুলে দিল। এরপর বাইরে বেরুতেই সামনে দাড়িয়ে সালাম দিল। পোশাক আশাক তেমন খারাপ না। তবুও মনে হল এরা এই বাড়ির কেয়ার টেকার।
.
ওদের এসে দাড়াতে দেখে মারোয়া আমাকে শক্ত করে ধরল। এরপর ফারান কেয়ার টেকার দের দিকে তাকিয়ে বলল
...... আকাশ ফাতিমা!! এ তোমাদের ম্যাম।। উনাকে রুম দেখিয়ে দাও। আর ওদের যেন কোন কষ্ট না হয়। যদি হয় তাহলে কালকের টিকিট কেটে রাখবে তোমার বাড়ির।।
.
এই বলে ফারান আবার কার নিয়ে কোথাও চলে গেল।। আর আকাশ আর ফাতিমা এর চেহারা পাংশু হয়ে গেল। অত্যন্ত থমথমে গলায় বলল
..... চলুন ম্যাম
আমি কিছু বললাম না।
.
বাড়ির ভিতরে ডুকলাম। বাইরে থেকে অনেকটা ছোট মনে হলেও ভিতরটা দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না বাড়ি টা ছোট। বিশাল বাড়ি। আর এটাও একটা শৈল্পিক দিক। আমি হা করে দেখছিলাম। মারোয়াও অবাক হয়ে দেখছিল। মামাদের বাড়িটাও এতটা নিখুত ছিলনা।
.
এতটা মুগ্ধতা নিয়ে দেখছিলাম যে ফাতিমা ম্যাম ম্যাম করে ডাকছিলো আর আমি শুনতে পাচ্ছিলাম না।
এবার মারোয়ার ডাকে হুশ ফিরল। আমরা রুমের সামনে এসে পড়েছি। রুমে ঢুকলাম। মারোয়াও আমার পিছন পিছন ঢুকলো। কিন্তু বাধ সাধলো ফাতিমা।।
...... ম্যাম """""" এটা আপনার আর স্যারের!!! ছোট মনির রুম পাশের টা।।
এই কথায় মারোয়া আমার হাত তাড়াতাড়ি চেপে ধরে বলল
....... আমি এখানে থাকবো।। কোথাও যাবো না।
...... কিন্তু ছোট মনি""""""
আমি ফাতিমা কে কথা শেষ করতে দিলাম না।
...... তুমি যাও এখান থেকে। আমি দেখবো এটা।।
...... ম্যাম স্যার বলছে"""""
..... যাও বলছি!!!
...... ঠিক আছে।
.
.
ফাতিমা মাথা নিচু করে চলে গেল। আর আমি মারোয়ার দিকে তাকালাম। মারোয়া আমার দিকে তাকিয়ে প্রচুন্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল
...... আমি তোমার সাথে থাকবো। আর কোথাও যাবোনা।
..... ঠিক আছে বাবা। আমরা এক সাথেই থাকবো।। তবে একটা কথা।।
..... কি??
..... দেখ এটা আমাদের ঘর না। আরেকজনের ঘর।। তাই ওদের কথা মতো তো চলতে হবে তাই না। আমি বলে দেখবো কি তোমাকে আমার সাথে রাখতে পারি কিনা??
..... হুম
..... যদি না দেয় তাহলে তুমি রাগ করিও না ঠিক আছে???
..... এটা আরেকজনের ঘর তাই না???
..... হ্যাঁ!!
.... তাহলে আমাদের ঘর ছেড়ে এলে কেনো??? ওখানে তো ভালোই ছিলাম।।
.
.
আমার মুখের কথা মুখে থেমে গেলো। এক মিনিটের জন্য মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিল।
কি বলছে মারোয়া!!!!
আমি কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে জবাব দিলাম।
...... মারোয়া ওই খানে কেউ চাই ছিলো না আমি থাকি।।
..... কই নাতো। আমি চাইছি, আপু ভাইয়া ওরা তো চেয়েছে তুমি থাকো।।
..... মুখে বললে কি হয় মারোয়া?? অন্তর থেকে বলতে হয়।।
তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বললাম
...... তুমি বুঝবানা মারোয়া।। আমার সাথে রাখতে পেরেছি এটাই বড় কথা।।।
...... হুম।।
.
.
এই নিয়ে আমাদের মধ্যে আর কথা হল না।
.
.
গোসল করতে চেয়েছিলাম কিন্তু কাপড় চোপড় না থাকায় করতে পারলাম না। মারোয়াও করতে পারল না। কিন্তু ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম।
আমরা ফারানের অপেক্ষা করছিলাম।।
.
ফারান এলো অনেক পরে। মারোয়া ক্ষুধায় থাকতে না পেরে নিচে টেবিলে বসল। তারপর আমি নিজেই কিছু বানাতে চাইলাম। কিন্তু ফাতিমা দিল না। সে আমাকে বলল টেবিলে যেতে। ও নিয়ে আসবে। হলো ও তাই। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফাতিমা খাবার নিয়ে এলো। আমি খেলাম না। কারন ফারান এখনো কিছু খায় নি। এটা দেখতে অশোভন লাগে।
.
.
মারোয়া খাচ্ছিল তাই আমি ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। এমন সময়ে কলিংবেলের আওয়াজ হল। নিশ্চয় ফারান এসেছে।ফাতিমা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল।
আমার অনুমান সঠিক ছিল। ফারানই এসেছে। কিন্তু হাতে এতগুলো ব্যাগ কেন???
.
শপিং!!!
.
ফারান নিশ্চয় শপিং করে নিয়ে আসছে। কারন এখানে আসার সময়ে একদম খালি হাতে এসেছিলাম। শপিং সব গুলো নিয়ে ফাতিমার হাতে দিয়ে ফারান কিছু একটা বলল। দূর থাকায় আমি বুঝলাম না। ফাতিমা জবাবে আমার দিকে দেখিয়ে দিল। আমি বুঝলাম ফারান আমাকে খুজছিল।
.
.
ফাতিমার ইশারায় আমার দিকে তাকিয়ে একটু করে হাসি দিল ফারান। আমি ও জবাবে আমিও হাসলাম একটু করে।। সাথে সাথে ফারান উঠে এলো উপরে।। তারপর বলল
..... স্যরি তোমাদের জন্য কাপড় চোপড় কিনতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই কিনতে গিয়েছিলাম এখন।
..... ঠিক আছে!!!
.... কিছু খেয়েছো???
জবাবে মাথা নাড়লাম। মানে না।।
আমার জবাব শুনে এক চিৎকার দিয়ে ফারান ফাতিমাকে ডাক দিতে লাগল। আমি পিলে চমকে গেলাম হঠাৎ ফারানের চিৎকার শুনে।। ভালোই তো ছিল। হঠাৎ কি হল যে এত রেগে গেলো???
.
.
ফাতিমা এক দৌড়ে রান্নাঘর থেকে চলে এলো। এসেই মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করল
..... স্যার ডেকেছেন???
..... বসে বসে ঘাস খাওয়ার জন্য স্যালারি নাও নাকি??
.... স্যার """""
..... মোহিনী এখনো কিছু খায়নি কেন??
.... স্যরি স্যার।। আমি এক্ষুনি দিচ্ছি।।
এই বলে ফাতিমা এক দৌড়ে ওই খান থেকে চলে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। কারন এখানে ফাতিমার কোন দোষ ছিল না। আমি নিজেই বলি নি। কেননা একে তো গোসল করি নি তার উপর কাউকে উপোস রেখে নিজে একা খেয়ে ফেলা আমার পছন্দ ছিল না।
.
.
আমার দিকে ফিরে ফারান বলল
..... স্যরি মোহিনী!!! এক্ষুনি খাবে চলো।।
..... আমি গোসল করি নি।
..... ওহ!! ঠিক আছে তাহলে। তুমি আস আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
...... হুম
.
.
আমি রুমে গিয়ে শাওয়ার অন করলাম। শাওয়ারের পানি খুব ঠান্ডা। খুব ভালো লাগছিল। মনে হচ্ছিল সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে পানির স্পর্শে। এর পর শরীর মুছে কাপড় খুজতে লাগলাম। খুজতে গিয়ে আমি নিজের বেকুবির জন্য নিজেই ধরা খেলাম। আমি কাপড় বলতে কিছু আনি নি। মূলত ফারান শপিং করে এনেছিল। কাপড় হয়ত ওখানে আছে। এখন বাথরুমে থেকে এভাবে বেরুতে হবে!! ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। কারন এই অবস্থায় তো আমি আমার মায়ের সামনেও সহজে পড়ি নি। বাথরুম থেকে কাপড় পড়ে বের হতাম। এখন এখানে টাওয়েল পড়ে!!! টাওয়েল টা হাটু পর্যন্ত যাবে কিনা সন্দেহ।।
.
.
কি আর করা। দেরি করলে ফারান চলে আসবে। মারোয়া ফাতিমা সবাই নিচে। অগত্য টাওয়েল টা নিলাম। ক্রিম রংয়ের টাওয়েল। দেখতে বেশ। হালকা সুগন্ধি যুক্ত। এটা নিয়ে নিজের সাথে পেচিয়ে ফেললাম। আমার ধারনা ঠিক ছিল। এটা হাটু পযর্ন্ত গেল না। আমার মাঝ রান পযর্ন্ত এসে থেমে গেল। নিচের দিকে টানতে গেলে উপরে খুলে যাচ্ছে। কি যে সমস্যা!!!
.
.
তার উপর মাথার চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আরেকটা টাওয়েল নিয়ে চুল পেচিয়ে ফেললাম। এবার বেরুতে যাব। কিন্তু তার আগে বাথরুমে রাখা বড় আয়না তে চোখ পড়ল। নিজের পুরো শরীর দেখা যাচ্ছে। কেমন বিতিকিচ্ছিরি লাগছে নিজেকে। আয়না থেকে চোখ সরিয়ে ফেললাম। নিজেরই লজ্জা লাগছে।
.
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাপড় নিতে হবে।
.
.
(চলবে)
.
ESTÁS LEYENDO
মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥
Romanceপ্রেমের মানুষের জন্য দুনিয়া এক করে দেয়া এক পাগল প্রেমিকের গল্প... ♥