কিছুক্ষনের মধ্যে ডাক্তার চলে এলো। তবে ফারান ডাক্তার কে বিছানায় বসতে দিলেন না। আলাদা চেয়ার দিলেন।। ডাক্তার আমার চোখ, হাত, জিহ্বা দেখতে চাচ্ছিল। কিন্তু ফারান দিচ্ছিল না। তার বদলে সে নিজে চেক করছিল।
.
আমার শুধু এতটুকুই মনে আছে।। বাকিটা আর মনে নেই।। হয়ত জ্বরের কারনে হুশ চলে গিয়েছিল।
যখন হুশ এলো তখন প্রায় মধ্যরাত। কারন বাইরে অন্ধকার দেখা যাচ্ছে।। পানির পিপাসা পেয়েছে প্রচুর।। খিদাও লেগেছে।। মাথা ব্যাথা টা আর নেই।। চোখ খুললাম। পানি খাবো।। এদিক ওদিক তাকালাম। হাত নাড়াতেই হাতে ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। তবে অল্প।।
.
ওই তো ফারান।। সে বসে আছে। নাহ্!! বসে বসে ঘুমাচ্ছে!! আমার পাশে চেয়ারে বসে পা দুটো বিছানায় তুলে দিয়ে হাত দুটো বুকের সাথে মুড়ে মাথা নিচু করে ঘুমাচ্ছে।। এভাবে কেউ ঘুমাতে পারে?? নিশ্চয় ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে।।
.
জাগাতে চাইলাম।। কিন্তু ঘুম দেখে আর জাগালাম না। নিজে নিজে উঠার চেষ্টা করলাম। কিন্তু হাতের ব্যথার জন্য পারছিলাম না।। অনেক কষ্টে এক হাতে ভর দিয়ে উঠলাম। তারপর ধীরে ধীরে নামছিলাম। আবছা অন্ধকারে কিছু দেখছিলাম আবার কিছু দেখছিলাম না।। তার উপর ফ্লোরে পা রাখতেই মাথাটা ঝিমঝিমিয়ে উঠল।
.
টাল সামলাতে পারলাম না। পড়ে যেতে গিয়েও একহাতে টেবিল ধরে আবার বিছানায় বসে পড়লাম। কিন্তু হাত লেগে টেবিল থেকে গ্লাস পড়ে গেল। আর মুহুর্তের মধ্যে গ্লাস ভাঙার শব্দে পুরো বাড়ির নিস্তব্ধতা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
.
তাড়াতাড়ি পিছনে ফারানের দিকে তাকালাম। দোয়া করছিলাম ফারানের ঘুম যেন না ভাঙে। কিন্তু মিথ্যা প্রতিপন্ন হল। ফারান এক লাফে মোহিনী মোহিনী বলতে বলতে উঠে গেল। তারপর অন্ধকার কাটিয়ে চারদিকে আলো হয়ে গেল। আমি অসহায় চোখ ফারানের দিকে তাকিয়ে বললাম
...... ও ও পা পাননি খাবো তাই। স্যরি।। হাত লেগে ভেঙে গেল।।
.
আমি ঢোক নিলাম। আর ফারান আমার দিকে তাকিয়ে বড় একটা নিৎশ্বাস নিল। তারপর আমাকে ধরে সঠিক জায়গায় বসে বলল
..... আমাকে ডাকলেই পারতে।। আমি পাশেই ছিলাম।।
.
এই বলে সে আমাকে এক গ্লাস পানি এনে দিল। তারপর গ্লাসের ভাঙা অংশগুলো সে পরিষ্কার করতে লাগল। আর আমি নিরবে ফারানের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার কিছু করার ছিলনা।। মনে মনে একটা আশঙ্কা ছিল। তার জন্য ভয়ে বুক দুরু দুরু করছে।। নিজের হাতের দিকে তাকালাম। হাতের মধ্যে প্লাস্টার লাগানো।। তার মানে ও সব জেনে গেছে। আর এখন তার এই নিরব অবস্থায় তুফানের লক্ষন।
.
চুপচাপ বসে রইলাম। কিছুক্ষন পর ফারান এলো।। এসে আমার পাশে বসল।। তারপর আমার হাতটা আস্তে আস্তে নিজের হাতে নিয়ে দেখতে লাগল। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করল
...... ব্যাথা লাগছে??
..... না।।
তারপর মাথা নিচু করে হাত দেখতে দেখতে বলল
...... আই অ্যাম স্যরি
..... হু???
...... স্যরি।। তোমার কষ্টের সময়ে আমি ছিলাম না। কিন্তু আমি ওয়াদা করছি আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না। সবসময় পাশে থাকবো।।
.
...... আ আ আমমি ঠিক আছি।।
..... আমি জানি। আচ্ছা বলো কি খাবে??
...... তোমার যেটা ইচ্ছা।।
..... ওকে!! তাহলে তুমি অপেক্ষা কর।। আমি নিয়ে আসছি।
..... হুম।।
.
ফারান চলে গেল কিছুক্ষন হচ্ছে। কিন্তু সে এখনো আসছে না। কি হল?? ফারানের তো রান্নার কথা না। রান্না করবে ফাতিমা। তাহলে??
উঠে গেলাম ধীরে ধীরে। উঠে চেক করতে লাগলাম। রান্নাঘর থেকে ঠুংঠাং শব্দ আসছিল। ওদিকে গেলাম না। মারোয়া কে দেখতে গেলাম। অনেকক্ষণ হল মারোয়া কে দেখিনি।
.
ওর রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। মারোয়া কম্বল মুড়ে শুয়ে আছে। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। তারপর চলে এলাম নিচে।। কিচেনে গেলাম। কিচেনে গিয়ে মাথার উপর চোখ উঠে গেল।
একি অবস্থা!!!
অার ফারান কি করছে এসব??? ফাতিমা কোথায়???
.
.
চারদিকে সব ছড়ানো ছিটানো।। আর ফারান এপ্রোন পড়ে গ্লাস দিয়ে কিছু একটা পেষার চেষ্টা করছে।। তবে সেটে ঘন জাতীয় কিছু।। কাছে গিয়ে বললাম
.... কি করছ এটা??
..... তুমি উঠে এলে কেন?? আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।।
..... কি নিয়ে আসবা?? ফাতিমা কই??
তারপর চারদিকে তাকিয়ে ডাকতে লাগলাম
.
..... ফাতিমা বু...... ফাতিমা বু!!!!
..... ফাতিমা নাই।।
...... কোথায় গেছে?? আর এখানে এসেছো কেন??
...... বের করে দিসি ওদের!!
......কেন??
..... ওদের কে রেখেছিলাম তোমার দেখার শুনার জন্য। যদি ওরা তোমার খেয়াল রাখতে না পারে তাহলে এ ঘরে ওদের জায়গা নাই।।
..... কি বল এসব?? ওদের কোন দোষ""""""
..... শসসসসসহ!!
.
ফারান আমাকে থামিয়ে দিল।।
....... এখন ওদের কথা বলে লাভ নেই। যা হওয়ার হয়ে গেছে।।
....... কিন্তু ফারান""""""
....... কোন কিন্তু না।।
.
আমি আর কথা বললাম না। ফারান খুব মনযোগ দিয়ে কিছু একটা বানাচ্ছে।। কিন্তু কি বানাচ্ছে সেটে বুঝতে পারছি না।। কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম
...... কি বানাচ্ছো??
..... রুটি!! দেখছোনা??
ফারান পাশে রাখা ফোন টা দেখিয়ে দিল। ওই খানে ইউটিউবে রুটি বানানোর কৌশল দেখাচ্ছে।।
.
...... তাহলে বেলন কই?? গ্লাস দিয়ে কেউ রুটি বানায়???
...... বেলন পাচ্ছি না খুজে।।
.
আমি আর হাসি থামতে পারছিলাম না।
হা.......হা......হা......হা
গ্লাস দিয়ে রুটি বানাচ্ছে ফারান!!
হা.....হা ......হা......হা
.
আমার এ আনন্দ ঘন মুহুর্তে হঠাৎ করে আমার মুখে কিছু একটা চাপা পড়ল। চোখ বন্ধ করে হাসছিলাম। চোখ খুলে দেখি ফারান।। বড় বড় চোখ করে আমার দিকে!!!
ফারান আমাকে চুমু দিচ্ছে ঠোটে!!
এই টা কি হল!! ওই অবস্থায় আমার কোমড় দু হাতে ধরে টেবিলে বসিয়ে দিল।।
.
তারপর ছেড়ে দিল।। আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। এরপর আমার পাশে টেবিলে দাড়িয়ে রুটি বানাতে বানাতে বলল
...... ফারানের আর কোন কাজে মজা নিও।। তারপর দেখবে পানিশমেন্ট!!
.
আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম। কোন কথা বলার সাহস রইল না। যা সাহস ছিল তা এখন ফারানের পেটে চলে গেছে। অতএব চুপচাপ থাকা ভালো। না হলে হিতে বিপরীত হবে।
.
চুপচাপ বসে ছিলাম। কিভাবে, কিভাবে কি তৈরি করে ফেলল বুঝতে পারলাম না।
প্লেটে সাজিয়ে আমাকে টেবিল থেকে নামতে সাহায্য করল। জানি না কি খাওয়াই দিবে আজকে।। খাওয়ার আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে নিলাম।। তারপর চেয়ারে বসলাম। যেহেতু আমার হাতের অবস্থা ভালো না তাই ফারান খাইয়ে দিবে।।
.
কালো কালো রুটি নামক বস্তু থেকে খানিকটা ছিড়ে ভাজি নামক তরল পদার্থে চুবিয়ে আমাকে খেতে দিল।। আমি একটা ঢোক গিললাম। তারপর মুখে পুরলাম। কিন্তু চাবাতে পারছিলাম না ভয়ে।
ফারান আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমার এক্সপ্রেশন দেখার জন্য গভীর উৎসাহ নিয়ে।।
.
আমি অত্যন্ত নার্ভাস ভাবে হাসলাম। তারপর ওই বস্তু গুলো চিবিয়ে খেলাম। খারাপ হয়নি। তবে রুটিতে লবন হয়নি আর পোড়া। তাই তিতা লাগছিল। আর ভাজি যেটা করল সেটা খুব মিষ্টি।। যেন লবনের বদলে চিনি ঢেলে দিল। কিন্তু এসব কিছু বললাম না।।
ফারান খুবই উৎসাহের সাথে জিজ্ঞেস করল
...... কেমন হল??
আমি চোখ বড় বড় করে খুব একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম
..... আরে বাহ্!!! এত ভালো রান্না আমি কখনো খাইনি!!! খুব টেষ্টি হয়ছে।।।
ফারান মাথা নিচু করে ফেলল লজ্জায়!! ওর নাকের মাথাটা লাল হয়ে গিয়েছে।। একটা লাজুক হাসি দিয়ে বলল
..... তেমন কিছু করি নাই আসলে। দেখে দেখে কুক করেছি মাত্র!!!
.
.
আসলে এই মুহুর্তটা আমার ক্যামরা বন্দি করার দরকার ছিল!!! ফারান লজ্জা পাচ্ছে বাচ্চাদের মত!! আসলেই অনেক কিউট একটা দৃশ্য!! এই কিউট দৃশ্যটা দেখার জন্য আমি ওর সব জঘন্য রান্না খেতে প্রস্তুত।।
বাকি গুলো সব আমিই খেলাম। ওকে খেতে বললাম না কারন ও খেলে বুঝে যাবে আসলে ওর রান্না ভালো হয়নি।।
.
খাওয়ার শেষে কিছুটা লাল,হলুদ, আর সবুজ রঙের তরল পদার্থ বাটিতে করে নিয়ে আসল। আমি জিজ্ঞেস করলাম
..... কি এটা??
..... ভেজিটেবল স্যুপ।। আমি যখন অসুস্থ হতাম তখন মা বানাতো।।
স্যুপটা নিয়ে কতক্ষণ চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করলাম। তারপর ফারানের দিকে তাকালাম। ফারান একটা মিষ্টি হাসি দিল।।
তারপর স্যুপ টা মুখে দিলাম। কিছুটা নোনতা, আবার পানসা পানসা!! এটা কোন ধরনের স্যুপ???
.
ওহ্ হ্যাঁ...... ফারান স্পেশাল স্যুপ!!!
.
(চলবে)
.
YOU ARE READING
মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥
Romanceপ্রেমের মানুষের জন্য দুনিয়া এক করে দেয়া এক পাগল প্রেমিকের গল্প... ♥