সেই রাতে ছাদে ঘুমিয়ে ছিলাম। শোয়ার আগে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আমার সাথে শুলে কোন অসুবিধা হবে কিনা?? জবাবে ফারান বলেছিল বিবির সাথে ঘুমাতে তো বাধা নেই।।
আমার খুব ভালো লেগেছিল।।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফারান আমাকে কোন কাজ করতে দিচ্ছিল না।। কোন রকম শুধু বাথরুম পর্যন্ত যেতে দিচ্ছিল।। রুম থেকে বের হতে দিচ্ছে না।। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম
..... রুমে বসে থাকতে আমার ভালো লাগতেছেনা।।
..... পেশেন্স মোহিনী!! মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর সুস্থ হয় যাবে।।
..... আমি তেমন অসুস্থ না যে হাটতে পারবনা।।
.... শসসসহ !! আর কোন কথা না। খেয়ে নাও।। আর রুম থেকে বের হবেনা।। টিভি এখানে লাগিয়ে দিচ্ছি, বই এনে দিচ্ছি।। আর পেইন কিলারও ওখানে রাখা আছে।। তারপরও কোন সমস্যা হলে এখানে ল্যান্ড লাইন লাগিয়েছি টেলিফোন করে দিবা আমি চলে আসবো।। বুঝছো??
....হুম
..... আর তোমার প্রয়োজনীয় সামগ্রী মানে""""" ওগুলো আমি কার্ভাডে এনে রেখেছি।।
..... হুম
..... আমি এখন যাচ্ছি। কোন রকম অবাধ্য হবে না।। আমি মেনবা কে বলে যাব।।। ঠিক আছে??
.... হুম
.
এই বলে ফারান আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে চলে গেল অফিসে।। আর একা একা আমি বসে রইলাম।। এতগুলো লেকচার দিয়ে গেল আমাকে!! সব গুলো মানতে হবে?? কি সব কাজ?? এ সময় এরকম বন্দি থাকতে হয় তা আমার জানা ছিলো না।। সব ওর কাছ থেকে শিখতে হবে যেন আমি কিছুই শিখে আসি নি, আমার মা কিছুটা শিখাই নি!!
বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।। টিভির রিমোট হাতে নিলাম। কিছুক্ষন দেখলাম। কিন্তু ভালো লাগল না। কিন্তু তারপর মনে হল আমি বাইরে যেতে পারি।। ফারান তো নেই। ওকি দেখবে আমি বাইরে গিয়েছি?? আর মেনবা যদি সমস্যা করে তাহলে একটা বকা দিবো ওকে!! ব্যস হয়ে গেল সমস্যার সমাধান।। এই ভেবে বেরুলাম।। ধীরে ধীরে নিচে নামলাম। নিচে নামতেই মেনবা কোথ থেকে দৌড়ে আসল।।
....ম্যাম আপনার কিছু দরকার??
....নাহ্ আমি একটু বাগানে যাব।।
.... ম্যাম আপনি যেতে পারবেন না।। স্যারের মানা আছে।।
.... আমি কারো মানা শুনি না।। সরো
.... ম্যাম যদি যান তাহলে আমাকে ফোন করতে হবে স্যারের কাছে!!
.
আমার রাগে হাত কাপতে লাগল।। মেনবা আমাকে ধমকি দিচ্ছে!! আমি হাসব না কাদব!! আমি বললাম
..... কর ফোন!!
.
এই বলে আবার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলাম। আমার কপালটাই খারাপ!! মেনবা ও আমার উপর খবরদারি করছে!! আগগগরররর্!!! উফ্!!
নিজে নিজেই কথা বলছিলাম পায়চারি করতে করতে।। তারপর হঠাৎ শেলফে নজর গেল।। এগিয়ে গেলাম ওই দিকে।। এক সময় প্রচুর বই পড়তাম।। দেখলাম অনেক গুলো বই সাজানো।। ফারান মিথ্যা বলেনি।। সে আমার জন্য বই রেখে গেছে।। আরেহ্!! এটা তো কপালকুন্ডলা!! আমি অনেক বার খুজেছি এই বই টা পড়ার জন্য।। এর ব্যতিক্রম নামটা আমাকে খুব আকর্ষন করত।। তন্ন তন্ন করে খুজেছিলাম। কিন্তু পাই নি।। তাহলে ফারান কিভাবে জানল যে এই বইটা আমার পড়ার ইচ্ছা??
থাক্!! জানছে হয়ত কোন রুপ।। আমি নিলাম বইটা।। পড়তে শুরু করলাম। কতক্ষণ পড়েছি জানিনা। এরই মধ্যে মেনবা দুবার ডেকে গেল খাওয়ার জন্য। আর ফারানের জন্য দুপুরের খাবার এখান থেকে পাঠানো হয়। সুতরাং টেনশনের কোন কিছু ছিল না। কিছুক্ষন পর মেনবা আবার এসে কিছু বলে গেল। শুনতে পেলাম না। বেশি বিরক্ত করছে মেনবা টা।। পড়তে দিচ্ছে না শান্তি মত।। আবার এলো কতক্ষণ পরে।। কিছু একটা অনুরোধ করছিল।। চোখ তুলে তাকালাম। মেনবার কাদো কাদো অবস্থা।।
.... কি হল??
.... ম্যাম খেয়ে নেন। না হলে স্যার আমাদের বের করে দিবে।।
.... খাবো বলছি তো কিছুক্ষন পরে।। এখন যাও।।
.... ম্যাম স্যার আসার সময় হয়ছে। দয়া করে খেয়ে নেন।।
.
এই কথায় তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম।।
.... কিহ্!! কয়টা বাজে??
.... চারটা।
.... চারটা বেজে গেছে!! অথচ বই হাতে নিয়েছিলাম দশটাই।।
তাড়াতাড়ি নেমে খেতে চলে গেলাম। কারন আমি নিজেই এর পরিণাম জানি।। যদি শুনে যে আমি কিছু খাই নি তাহলে তুলকালাম কান্ড বাধাবে।
.
খেয়ে দেয়ে উপরে উঠে এলাম। ফারান এখনো আসে নি।। বই টা শেষ করব। কিন্তু তার আগে একটু বাথরুমে যেতে হবে।
কাভার্ড খুললাম। একটা গিফট পেপার মোড়ানো বড় প্যাকেট দেখলাম। লেভেল লাগানো আছে। সেটা তে লেখা "তোমার জন্য"
ফারানের লেখা। খুললাম প্যাকেট টা। প্যাকেট খুলে দেখে আমার লজ্জায় মাথা নুয়ে এলো।। সবগুলো ফ্রিডম এর প্যাকেট।। পাচ/ছয় প্যাকেট!! এতগুলো প্যাকেট ফারান কখন আনল?? আমি নজর মেলাবো কি করে?? মনে পড়ল ফারান আজকে সকালে এটার কথা বলেছিল।।
আমার গরম লাগছিল।। এসিতেও ঘামছিলাম।। এত পাগল কেন ফারান টা?? কোন হাসবেন্ড তার স্ত্রীর জন্য এরকম কোন কিছুর ব্যবস্থা করে?? আবার এই সময়ে বাড়তি যত্ন টাও নেয়?? আবার এই সময়ে স্ত্রী কে ঘৃনা করে দূরে না থেকে পাশে টেনে নেই!! অনেকে তো নাপাক বলে স্পর্শ ও করে না!! কিন্তু ফারান এসবই পাত্তাও দেয় না!!
আসলেই আমি কি এতই ভাগ্যবতী??
আমার মন ভালো হয়ে গেল।। ফারান আমাকে অন্ধ ভাবে ভালোবাসে।।
.
প্যাকেট টা আবার রাখতে গিয়ে কিছু ফাইল চোখে পড়ল।। ফাইলটার উপরে ইন কানাডা লেখা।। সচরাচর আমি ফারানের ফাইল পত্র ধরি না। কিন্তু এক অদৃশ্য কারনে ফাইলটা হাতে নিলাম। ফাইলটা হাতে নিতেই কিছু একটা নিচে পড়ল। তাকিয়ে দেখলাম ভিসা।। একটা না দুইটা।। ভিসা দুইটা হাতে নিলাম। উল্টিয়ে দেখলাম একটা ভিসা ফারানের অপরটা আমার।। আমার!!!
আমার ভিসা কেন?? আমি তো বিদেশ যাচ্ছি না। তাহলে??
আবার চেক করলাম। এটা কানাডা যাওয়ার ভিসা।। ইস্যু ডেট দু/তিন দিন আগের।।
কানাডার ভিসা কি জন্য?? আমি যাবো না কানাডা।
এদিকে গাড়ির হর্ণের আওয়াজ এলো।। ফারান এসেছে!! আমি তাড়াতাড়ি ফাইলের ভিতর ভিসা রেখে দিলাম। তারপর আবার কপালকুন্ডলা কে হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম। কিছুক্ষন পরেই ফারান উপরে উঠে এলো।। আমি মনযোগ দিয়ে পড়ছিলাম। ফারান এসে পাশে বসেই জিজ্ঞেস করল
..... কেমন আছো? ভালো আছো তো?? বেশি পেইন তো হই নি না!!
.... নাহ্
ফারান একটা মৃদু হাসি দিয়ে আমার কপাল ধরে একটা চুমু দিল।। আর আমি নাক ধরে ইয়াক্ বলে পেছনে সরে গেলাম। ফারান একটু অবাক হল। তারপর বলল
.... কি হল??
.... আগে গোসল করে আস।। ঘামের গন্ধ অাসতেছে।।
একথায় ফারান নিজেই নিজেকে শুকে দেখল।। তারপর আমার নাকটা টেনে দিয়ে অট্টহাসি তে ফেটে পড়ল।।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
.... কি হল?? হাসছ কেন??
.... নাথিং!! আমি আসছি শাওয়ার নিয়ে।।
এই বলে ফারান উঠে বাথরুমে চলে গেল। আর আমি ভাবতে লাগলাম এখানে হাসির কি হল??
.
(চলবে)
YOU ARE READING
মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥
Romanceপ্রেমের মানুষের জন্য দুনিয়া এক করে দেয়া এক পাগল প্রেমিকের গল্প... ♥