পার্ট - ২

1.1K 26 0
                                    


তাই মামুনের সাথে তেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। মামুন চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুইটা কারনে ভেস্তে গেল। এক মারোয়া দুই লজ্জা। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ না হলেও খারাপ ছিল না। বন্ধুত্ব পূর্ণ ছিল।
আমি পাশে গিয়ে দাড়ালাম। আমি ওখানে যেতেই মারোয়া উঠে দাড়ালো অপরাধীর মতন। তারপর ফোনটা আমার হাতে দিয়ে দিলো। তারপর আমার পিছনে গিয়ে দাড়ালো। আমি ফোনের এলার্ম ফুল লাউডে দিয়ে মামুনের কানের কাছে দিলাম আর মামুন লাফিয়ে উঠল। এটা দেখা মারোয়া পিছন থেকে খিক খিক করে হাসতে লাগল। এটা দেখে মামুন রেগে গিয়ে বলল
..... এটা কি হল??
..... কাজের সময় হয়েছে। উঠেন। নয়টা বাজে!!
এইটা বলে চলে আসলাম। কারন ও উঠে চলে আসবে। ওর ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুমায় না। আমাকে মনে মনে কতক্ষণ গালাগালি করে চলে আসবে।
প্রতিদিন কাজ করার ফলে গায়ের রং কিছুটা ম্লান হয়ে গেলেও মামুনের সৌন্দর্যে ভাটা পড়ে নি। তবে চেহেরাই কাঠিন্য ভাব বেড়ে গেছে। কিন্তু আগের চেয়ে ব্যবহার অনেক নম্র।
মামুন টেবিলে নাস্তা খেতে বসলে আমি আর মারোয়া স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিই। তৈরি হয়ে আসলে মামুন একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলল
...... একটা দাওয়াত আছে।।
...... কাদের দাওয়াত??? 
...... খুলে দেখো।
আমি খুলে দেখলাম। সিলেট থেকে আসা দাওয়াত পত্র। স্বপরিবার দাওয়াত। সিলেটে তো কেউ নেই আমার?? তাহলে!! আমার মনে পড়ল মামুনের মামা সিলেট থাকে। এই কথা মনে পড়তেই বিস্ফোরিত নেত্রে মামুনের দিকে তাকালাম। কারন আমাকে বিয়ে করাই সবাই মামুন কে ত্যাগ করেছিল। তাহলে দাওয়াতের মানে কি?? সে আমার দিকে না তাকিয়ে শার্টের বোতাম ঠিক করতে লাগল। আমি জিজ্ঞেস করলাম
..... কখন আসল???
..... কাল রাতে পেলাম।
..... আপনি যাবেন??
..... তুমি কি বলো??
...... আপনি যেটা বলবেন সেটা।
...... মেজ মামা আমাদের খুব ভালোবাসেন। তাছাড়া নানুর ফাতেহা।। আমি যেতে চাই।। কিন্তু মন সায় দিচ্ছে না।
...... আমারও!!
.... ঠিক আছে রাতে দেখা যাবে।
.... ফাতেহা কখন??
..... পরশু।
আর কথা হল না। মামুন গ্যারেজে চলে গেল। আমি আর মারোয়া স্কুলে। ঘরের চাবি তিনটা। একটা আমার কাছে থাকে, একটা মুক্তার কাছে আর একটা মামুনের কাছে। 
মারোয়া কে আগে স্কুলে পৌছে দিলাম। তারপর নিজের স্কুলে।। স্কুল টা ভালোই তবে আগেরটার মত আপন লাগে না। অনেকটা বোরিং।। এখানে কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলি না। পাছে অতীত যদি কেউ জানতে চাই তাই। কিন্তু তা করা অনেক কঠিন। কারন কয়েকটা মহিলা একসাথে হলেই গল্প শুরু হয়ে যাই সে শিক্ষক হোক বা গৃহিণী। চেষ্টা করি কেটে পড়তে। 
টিফিন ঘন্টায় মামুনের ডায়েরি টা নিই। এটা ওই খান থেকে চলে আসার সময় আমি নিয়েছিলাম। মামুন ফেলে দিয়েছিল পানিতে। আমি নিয়ে চুপিসারে শুকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু পড়ার সাহস হয়নি। তাছাড়া কারো ব্যক্তিগত ডায়েরী পড়া নৈতিকতায় পড়ে না। যদি এখানে তার কোন প্রেমিকার কথা লিখা থাকে?? এই ভয়ে আর খুলতাম না। নিয়ে রেখে দিতাম।
স্কুল ছুটির পরে আমি আর মারোয়া আসছিলাম। একটা ভিক্ষুক বসে ছিল বসেছিল রাস্তায়। অথচ রাস্তায় তেমন টাকা ভিক্ষা দেওয়ার মত কেউ নেই। লম্বা ময়লা আলকেল্লা পরিহিত লোক। মাথার চুল গুলো লম্বা হয়ে জট বেধে আছে। গোসল করেনি কয় দিন কে জানে। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে থালা সামনে রেখে বসে আছে। আমি দশ টাকা বের করে দিলাম। চলে আসার সাথে সাথে পিছন থেকে ফকির বলল
...... আজ অমাবস্যা। সাবধানে থাকিও। আমি চমকে পিছনে তাকিয়ে বললাম
..... মানে??
ভিক্ষুক আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলল
...... ১১ বছর আগে দেওয়া তোকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ এখনো আছে তোর সাথে!! 
...... আমি বুঝতেছি না আপনার কথা???
...... তোর বোঝার ক্ষমতা হয়নি। তবে এটা শুনে রাখ সবকিছু নিয়তির খেলা। মরো না হলে জিতো।। পালিয়ে যাওয়া চলবেনা।
লোকটার উদ্ভট কথায় আমার ভয় লাগছিল। তাই তাড়াতাড়ি চলে আসলাম বাড়িতে। 
বাড়িতে আসার পর থেকে ভিক্ষুকের কথা গুলো মাথায় ঘুরছিল। এমন কেন বলল লোকটা?? উহ!! পাগল হয়ে যাব আমি।। নিজে নিজে স্বগতোক্তি করলাম।। 
এদিকে মামুন ও আসে নি দুপুরে।। মামুন কাজ থাকলে আসেনা। লোক পাঠায় টিফিনের জন্য। মুক্তাও চলে আসে কোচিং না থাকলে। আমি আর মারোয়া টেবিলে বসলাম দুপুরের খাবার খেতে। মনে হয় মুক্তা এসেছে। আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দিন কেমন গেল জিজ্ঞেস করলে উত্তরে মুক্তা গটগট করে তার রুমে চলে গেল। কিছুক্ষন বাদে মুক্তা এসে খেতে বসল। ও খেতে বসলে সামনে আমি সামনে সব এগিয়ে দিতে গেলাম। অমনি মুক্তা চিৎকার দিয়ে বলে উঠল
...... এত দরদ দেখাতে হবে না। যাও আমার চোখের সামনে থেকে।।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। জানি না কেন মুক্তার সামনে আসলে আমার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। এদিকে আমার সাথে চিৎকার করায় মারোয়া মুক্তা ঝগড়া বেধে গেল। আমি জোর করে মারোয়া কে থামিয়ে দিলাম। আমি বকা দেওয়ায় মারোয়া ফোঁপাতে ফোঁপাতে রুমে চলে গেল। আমারও কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু এটা এখন গা সওয়া ব্যাপার। এটা শুধু মুক্তার রাগের বহিঃপ্রকাশ। এমনে সে খারাপ না। 
বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজে লেগে গেলাম। মারোয়া ফোপাতে ফোপাতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। মুক্তা পড়া পড়ছিল। মামুন দুপুরে খেতে আসেনি। হয়তো কোন কাজ পড়ে গিয়েছিল। ঘরের কাজ শেষ হয়ে আসলে উঠানে গেলাম। ওখানে একটু জায়গা আছে যেখানে আমি সবজি চারা রোপন করেছি। নিয়মিত ওখানে সকাল সন্ধা পানি দিতে হয়। পাশেই জঙ্গল ধরনের জায়গা। ঠিক জঙ্গল বলা যাবেনা। কিন্তু গাছপালা রয়েছে যথেষ্ট। ওই দিকে আমি কখনো পা বাড়াই নি। কারন ওইটা আমাদের বাড়ির মালিকের না। ওইটা আরেক মালিকের। মালিক বিদেশে থাকে তাই জায়গার এই অবস্থা। পানি দেওয়া শেষ হতেই মামুন এসে ঢুকলো। ঘেমে নেয়ে একাকার। তার উপর গ্যারেজের কালি। হাতে কি সব যন্ত্রপাতি। আমি ওর কাছে যেতেই ও আমাকে যন্ত্রপাতি গুলো ধরাই দিলো। বাপরে কি ভারি এগুলো!! আরেকটু হলেই ফেলেই দিতাম। অনেক কষ্টে টেনে তুললাম। কিন্তু মামুন আবার পিছন ফিরে এসে তুমি পারবেনা বলে আমার হাত থেকে ব্যাগ টা নিয়ে নিল। আমি কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হলেও কিছু বললাম না। 
গোসল করার জন্য বাথরুমে ঢুকে রেনুমা রেনুমা বলে চিল্লাতে লাগল। এইটা মামুনের একটা বদঅভ্যাস। যখন গোসলের জন্য বাথরুমে ঢুকবে তখন কোনো না কোন কারনে চিল্লাবে। আমি দৌড়ে গেলাম। তখন মামুন বলল
...... আমার পানি কই??
...... ওইতো বালতিতে।
দাত কিড়মিড় করতে করতে মামুন বলল
..... গরম পানি!!
..... ওহ আমি ভুলে গিয়েছিলাম। এক্ষুনি নিয়ে আসছি।
...... লাগবেনা।
..... না না আমি এক্ষুনি আনছি।।
এই বলে দরজার দিকে পা বাড়াতেই মামুন ডাক দিল
....... রেহনুমা!!
আমি পিছন ফিরে বললাম
...... ঠিক আছে।।
.
স্কুলের কাজ সেরে টেবিলে রাতের খাবার দিলাম। সবাই খেতে বসল। কিন্তু মারোয়া খাচ্ছিল না তো মামুন জিজ্ঞেস করল
..... কি হয়ছে মারোয়া? খাচ্ছোনা কেন?
জবাবে মারোয়া শুধু ফোস ফোস করে নাক টানল। এটা দেখে মামুন আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম
..... আমি বকা দিসি তাই।।
এই কথায় মামুন উঠে গিয়ে মারোয়া কে চিবুক ধরে উপরে তুলে বলল
..... মারোয়া তোমার নাকে ওটা কি??
.... কই??
..... এইযে।। একরাশ গোসসা।
এবার মারোয়া হেসে দিল। মামুনের সাথে খাবারে যোগ দিল। সবাই খাচ্ছে দেখে আমার বুকটা শান্তিতে ভরে গেল। আমি এখন সুখি। কোন জাঁকজমক নেই। সবই প্রশান্তি। আমি আমার নরমাল জীবন খুজে পেয়েছি। আমি এই জীবন টা হারাতে চাইনা, কখনোই না। মনে মনে হাসছিলাম আর ভাবছিলাম এইসব ভেবে। হঠাৎ দড়াম শব্দে চমকে উঠলাম। এটা জানালা খোলার শব্দ। কিন্তু জানালা তো বন্ধ ছিল। আমি নিজেই বন্ধ করেছিলাম। সবাই কে আমি দেখছি বলে উঠে গেলাম। জানালার কাছে গিয়ে বাইরে তাকালাম। এখন কোনো বর্ষাকাল না। দমকা বাতাস আসার কথা না। কিন্তু জানালা বাতাসেই খুলছে। কারন ফিনফিনে বাতাস আসছিল। জানালাই হাত দিতেই আরেকটা দমকা বাতাস মুখে ধাক্কা মারল। আর সাথে সাথে আমার মাথার খোপা খুলে গেল। চুল গুলো সব বাতাসে এলোমেলো হয়ে উড়তে লাগল। এবার ঠান্ডা বাতাস আসতে লাগল। এই অসময়ে ঠান্ডা বাতাস!! আমার কাপুনি ছুটে গেল। তাড়াতাড়ি চুল বাধতে লাগলাম। চুল বাধতে বাধতে খেয়াল করলাম জানালা দিয়ে বাতাসের সাথে একটা অতি পরিচিত মিষ্টি গন্ধ আসছে। এটা বেলি ফুলের গন্ধ!!! আমি বুক ভরে গন্ধ নিলাম। আবার অবাক হলাম এই ভেবে যে এখানে তো কোনো বেলি ফুলের গাছ নেই। তাহলে গন্ধ টা আসছে কোথ থেকে?? এরপর আমার চোখের পাতাটা অসম্ভব ভাবে নড়তে লাগল। আমার বুকটা ধক করে উঠল। আমি তাড়াতাড়ি চোখ হাত দিয়ে চেপে ধরলাম। অজানা আশঙ্কায় আমার বুক কেপে উঠল। 
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now