ঠিক করলাম রিফাতের অজান্তে এই সব দিয়ে আসব। রিফাত এখনো জানাযা থেকে ফিরে নি। এটা মোক্ষম সুযোগ। গিফট প্যাকেট টা গিয়ে ওর রুমে দিয়ে আসব। তাহলে কে দিয়েছে বুঝতে পারবেনা। মনে করবে মামা মামি কেউ একজন দিয়েছে। এই চিন্তা করে রিফাতের রুমের দিকে এগুলাম। রিফাতের রুমে ঢুকে কোনায় রাখা টেবিলের ওপর রাখলাম। তারপর ফিরে আসতে যাব দেখি রিফাত দাড়িয়ে।। আমি কিছুটা চমকে গেলাম। সেই সাথে ভয়ও পেলাম।। রিফাত ঠান্ডা গলায় বলল
..... আমার রুমে কি করছো??
..... না। মানে এমনি এসেছি।।
এরপর টেবিলে রাখা প্যাকেট টার উপর নজর গেল। এগিয়ে গিয়ে প্যাকেট টা নিল। এদিকে ওকে প্যাকেট খুলতে দেখে আমার বুক ধুকপুক করতে লাগল। না জানি এখন কি হবে??
প্যাকেট খুলে শার্ট আর প্যান্ট দেখে ওগুলো আবার প্যাকেট ভর্তি করল। তারপর আমাকে দেখিয়ে বলল
..... এগুলা কি??
আমি ঢোক গিললাম। তারপর বললাম
..... এগুলা উমম এগুলা ও সসসবাইকে গিফট দিয়েছে।
..... ও টা কে??
..... ফা- ফারান।।
কয়েক সেকেন্ড এর জন্য সব কিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এমনকি বাইরের কোলাহল পর্যন্ত!! আমার খুব ভয় করতে লাগল। রিফাত প্যাকেট টার দিকে আরেক বার তাকালো। তারপর ওই প্যাকেট টা নিয়ে দেয়ালের দিকে গায়ের সব শক্তি দিয়ে ছুড়ে মারল। ভাগ্যিস কাচের কোন জিনিস ছিল না। না হলে আওয়াজের কারনে পুরো বাড়ি খবর হয়ে যেত।
এরপর রিফাত আমার দিকে তাকালো
..... তোর কি মনে হয়?? আমি কি এসব নিয়ে সবকিছু ভুলে যাব!! দামি কাপড়, টাকা পয়সার কাছে তুই বিক্রি হতে পারিস, টাকার বিনিময়ে পিতার খুনী কে বিয়ে করতে পারিস কিন্তু আমার দ্বারা কখনো সম্ভব না।
..... রিফাত!!
আমার খুব কষ্ট লাগল রিফাতের কথা শুনে। ও কে কি করে বুঝায় যে সবকিছুর জন্য পরিস্থিতি দায়ী। আমি কোন কিছুই ইচ্ছা করে করি নি। আমার কন্ঠ রোধ হয়ে আসতে লাগল। তারপরও বললাম
..... রিফাত মাফ করে দেনা। ইচ্ছা করে কোন কিছুই করি নি।।
..... আমার মাফ করার অধিকার আছে নাকি!!
বিদ্রুপ হাসি হেসে তারপর আবার বলল
...... তোর সাথে সম্পর্ক ওই দিনই শেষ হয়েছে যে দিন মামুন ভাই কে ডিভোর্স দিয়েছিলি।
...... যা হয়েছে ভুলে যা না। পুরোনো কথা ভেবে কি লাভ!
আমি কাদতে শুরু করলাম। কারন রিফাত যেভাবে আমার সাথে কথা বলছিল আগে কখনো ওভাবে কথা বলেনি। এমনকি রাগের মাথায় ও কখনো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনা। আর এভাবে কথা বলতে দেখে আমার খুব কষ্ট লাগছিল। চোখের পানি বাধ মানছিল না। কিন্তু রিফাত বলতে লাগল। মনে হল মনের মধ্যে জমে থাকা সমস্ত বিষ আমার উপর ঢেলে দিচ্ছিল।
......চাস না সব কিছু ভুলে যাই??
......হুম
আমি মাথা নাড়লাম।।
......ঠিক আছে ভুলে যাব। তবে এক শর্তে।।
......কি শর্ত বল। সব শর্ত মেনে নিব।।
.....ওই খুনি টাকে ছেড়ে দিয়ে চলে আয়।।
......রিফাত!!
আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যেতে লাগল। হাত পা কাপতে লাগল। মনে হতে লাগল চারদিকে ভূমিকম্প হতে লাগল। আমি তোতলাতে লাগলাম।
.....রিফ-ফাআত আ-আমি""
......কি হলো ছেড়ে দিবে???
আমি হা বলবো কি না বলবো?? কারন ছেড়ে দেওয়া সহজ ছিলনা। এই কথা ফারান শুনলে আরো কয়েকজনের জান যাবে। এমনি তে কম জান যায় নি। এসব ভাবছিলাম ঠিক সেই মুহুর্তে পিছন থেকে কেউ একজন যেন ঝড়ের গতিতে পাশ কাটিয়ে গেল। আমি বুঝে উঠতে না উঠতে ফারান কখন পিছন থেকে এসে রিফাতের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে। এবং শুধু তাই না রিফাত কে চোখে মুখে ঘুষি মারা শুরু করে দিয়েছে। আমি হঠাৎ করে হওয়ায় বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছিল। হুশ ফিরতেই দেখলাম ফারান অবিরত রিফাত কে মেরে চলেছে। এভাবে মারতে থাকলে নিশ্চিত মিনিট পাচেঁকের মধ্যে রিফাত মারা যাবে। আমি চিৎকার করে গিয়ে ফারান কে ছাড়াতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু ফারান ছাড়ছিলনা। রিফাতের নাক মুখ বেয়ে রক্ত বেয়ে পড়তে লাগল। আমি ভয়ে কান্না করতে লাগলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।। ঠিক এমন মুহুর্তে এক বছর আগে আমি ফারান কে মাথায় আঘাত করেছিলাম। শুধু মাত্র রিফাত কে ছাড়ছিলনা তাই। আবার চেষ্টা করলাম। ফারানের সামনে গিয়ে রিফাত কে ছাড়াতে চাইলাম। কিন্তু ফারান এখন লাগাম হীন। তার চোখ দুটো দিয়ে যেন ঠিকরে আগুন বেরুচ্ছে। মনে হল কোন হুশ জ্ঞান ছাড়া ও। আমি কি করে থামাবো?? কিছু একটা করতে হবে।। আমি চার দিকে তাকাতে লাগলাম। দেখলাম কোনায় একটা ছুরি রাখা। তাড়াতাড়ি ওই ছুরিটা নিলাম। মনে মনে যা ভাবছি তা করলে আজকে একজনের জীবন যাবে। মনে মনে সাহস সঞ্চার করলাম। তারপর ফারানের দিকে তাকালাম। আমার হাত কাপঁছিল।। তারপর চিৎকার করে ফারান কে ডাকলাম
..... ফারান!!
ও তাকালো না। আমি আবার ডাকলাম
..... ফারান আমার দিকে তাকাও।।
এবারও তাকালো না। ফারান অনেক উন্মত্ত অবস্থায়।। আর রিফাত কেও কেমন নিস্তব্ধ মনে হচ্ছে। আমার প্রাণ টা ডুকরে কেদে উঠল। আমি আবার চিৎকার করে ডাকলাম
.....ফারান এবার তুমি যদি না থাম তাহলে তোমার সাথে এটা আমার শেষ দেখা।। আমি আত্মহত্যা করবো।
এই কথায় আমার হাত পা সব কাঁপতে লাগল। কারন আমি কখনো আত্মহত্যার পক্ষপাতি না। কিন্তু আজ যদি সত্যি সত্যি করতে হয় তাহলে দ্বিধা বোধ করবনা।
আমার এই কথায় ও ফারান থামল না। আমি হাতের শিরার উপর ছুরি টা ধরে পোচ করে টান মারলাম।
আর সাথে সাথে গলগলিয়ে রক্ত পড়তে লাগল। আমি ব্যাথায় কুকড়ে উঠলাম। এবার মনে হয় ফারান কিছুটা বুঝতে পারল। কারন সে থেমে গেলে। লাল হয়ে যাওয়া চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি আরেকটা পোচ মারলাম প্রথম টার একটু ওপরে করে। এবার ফারানের দিকে তাকিয়ে। ফারান চিৎকার করে ডাক দিল
...... মোহিনী!!
এতক্ষন বাদে মনে হল ফারানের হুশ এসেছে।। সে রিফাত কে ছেড়ে দৌড়ে আমাকে ধরতে এলো।। আমি পিছু হটে গেলাম। বললাম
..... আমায় ধরবেনা!!
.... মোহিনী!!
আমি ফারানকে পিছনে রেখে রিফাতের দিকে দৌড়ে গেলাম। রিফাত সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে।। রিফাত কে ডাকলাম। ওর মাথাটা কোলে তুলে কান্না করতে লাগলাম। ফারান এসে আমার পাশে বসল। আমার হাত ধরতে চাইল। ও বলল
.... মোহিনী তোমার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে। দাও বেধে দিই। না হলে ক্ষতি হবে।।
আমি এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলাম। ফারান কে উদভ্রান্তের মত লাগছিল। কিছুটা পাগল প্রায় হয়ে আমাকে বোঝাতে চাইল
..... মোহিনী আমি - আমি রিফাত"""""
আমি তার কথা পুরো শুনলাম না। তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে মামা মামি সবাই কে ডেকে নিয়ে আসলাম। মুহুর্তে হই হই রই রই অবস্থা হয়ে গেল। কান্না কাটিতে সত্যিকারের মৃতের বাড়ির মত হয়ে গেল। তবে কেউ বুঝতে পারলো না আসলে রিফাতের কি হয়েছিল।। সবাই মিলে রিফাত কে ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি ও পিছু পিছু যাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ একজন হাত ধরে টান দিল। আমি পিছনে তাকালাম। ফারান আরেক ঝটকা টান দিয়ে তার কাছে নিয়ে আসল। আমি চিৎকার দিতে যাব ঠিক সে মুহুর্তে ফারান আমার মুখে হাত চাপা দিয়ে ধরল। ওর চোখ মুখে অদৃশ্য উত্তেজনা কাজ করছিল তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ফারান এক হাতে আমার মুখ চেপে ধরে অপর হাতে কোমর পেচিয়ে ধরে এক কোনায় নিয়ে আসল। ফলে সবার চোখের আড়ালে পড়ে গেলাম। কেউ আমাকে খেয়াল করল না।। আমি দুহাত দিয়ে ফারানের হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। তার উপর আমি শাড়ি পড়েছিলাম। তাই সুবিধা করে উঠতে পারছিলাম না।। ফারান পিছনে রিফাতের আলনা থেকে এক হাতে গামছা টা নিয়ে আমার মুখটা বেধে ফেলল। তারপর আমার হাত বাধল তার রুমাল দিয়ে।। রুমাল রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। কারন তখনও আমার হাত থেবে রক্ত ঝড়ছিল।। এরপর ফারান গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। আমি কোনরুপ শব্দ করতে পারছিলাম না। শুধু গো গো শব্দ বের হচ্ছিল।। ফারান দরজা বন্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আমি খুব ভয় পেলাম। ভয়ে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। হাত পা কাপতে লাগল। এক পা এক পা করে পিছু হঠছিলাম।
.
(চলবে)
YOU ARE READING
মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥
Romanceপ্রেমের মানুষের জন্য দুনিয়া এক করে দেয়া এক পাগল প্রেমিকের গল্প... ♥