অসভ্য কোথাকার!!!
মনে মনে বললাম। মুখে বলার সাহস নেই।।
চেষ্টা করছিলাম প্রাণপনে হাত সরানোর।। কিন্তু পারছিলাম না। এত ভারি!!
..... ফারাআআআআন!! ছাড়ো।।
..... উহু
..... আমার গলা ব্যাথা করছে।।
.
এই কথায় ওর মাথা তুলল। সাথে সাথে মনে হল বুকের উপর থেকে ভারি কোন কিছু উঠিয়ে নেয়া হল। নিঃশ্বাস নিতে পারলাম। ফারান আমার গলায় হাত দিয়ে চেক করতে করতে বলল
..... কোথায় ব্যাথা করতেছে??
..... এখন চলে গেছে ব্যাথা।।
.... ঠিক আছে।
এই বলে ফারান আবার মাথা রাখার চেষ্টা করলে আমি তাড়াতাড়ি চিৎকার দিয়ে উঠলাম
...... আহ্ আ আ আ
..... কি হল??
..... আবার ব্যাথা করছে।।
..... ঠিক আছে।।
.
এই বার সম্পুর্ন রুপে ফারান সরে গেল। ড্রয়ারে কিছু একটা খুজছিল।
আমি ভাবছিলাম যে কিভাবে এখানে এলাম?? রাতে তো মারোয়ার সাথে শুয়েছিলাম। তাহলে???
.
ফারান একটা ড্রয়ার থেকে বাক্স নিয়ে এলো। আমি ততক্ষণে চুল ঠিক করতে করতে উঠে বসলাম। ফারান পাশে বসে বাক্স থেকে মলম বের করে আমার গলায় লাগিয়ে দিল।
লাগানোর সময় আমি খেয়াল করলাম ফারান আমার গলার দিকে তাকিয়ে আপন মনে হাসছে। আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম
....... কি হল??
...... হু??
...... হাসছ কেন??
...... এমনি।।
..... শুধু এমনিই কেউ হাসেনা??
..... আমার চিহ্ন দিয়ে দিয়েছি তোমাকে।।
..... কিসের চিহ্ন???
..... তুমি জাননা??
আমি মাথা নাড়ালাম। জানিনা।
...... সত্যি জাননা চিহ্ন দেওয়া মানে???
...... না।।
এই কথায় ফারান অট্টহাসিতে ভেঙে পড়ল। এত হাসির কি আছে?? ওতো আমাকে কাপড় ছাড়া কিছু দেয়নি। অন্তত কোন চিহ্ন বা চিহ্ন জাতীয় কিছু দেয়নি?? আর দিয়ে থাকলেও এত হাসির কি আছে??
.
.
ফারান হাসি থামাল অনেক ক্ষন পর। এরপর গাল দু হাতে টেনে দিয়ে বলল
...... ইউ আর সো ইননোসেন্ট!!!
আমি মাথা সরিয়ে ফেললাম। ও আমার গাল লাল করে দিচ্ছে টেনে টেনে। তারপর নিজের গালে হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করলাম
..... এখানে ইননোসেন্টের কি হল??
.
ফারান আরেকটু আমার কাছে আসল। তারপর আমার মাথার দুপাশে হাত দিয়ে ওর কাছে টেনে নিল। এরপর ছোট একটা চুমু খেল কপালে।
.
চুমু খেয়েই কানের কাছে বলতে লাগল
.... আমি তোমাকে মার্ক করেছি।।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.... মানে??
ও আমার গলা আর ঘাড়ে হাত বুলিয়ে ফিস ফিস করে বলল
..... মানে লাভ বাইট বেবি।।
বেবি শুনে ওর মুখ থেকে আমার শরীর কেপে উঠল।। শিহরন বয়ে গেল মেরুদণ্ড বেয়ে।।
.
টিভি সিনেমায় বেবি ডাক শুনলে হাসি আসত। কিন্তু ফারানের মুখে বেবি ডাক শুনে আমি গলে যাচ্ছিলাম।। কি করবো বুঝছিলাম না।
.
ফারান উঠে দাড়াল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি সেই সাথে চোখ টিপ মারল। তারপর রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে বলল গোসল করে যেন টেবিলে আসি। তারপর সে চলে গেল।
.
এদিকে হৃদপিন্ড দ্রুত লাফাতে লাগল। মুহুর্তে এসি রুমে প্রচুন্ড গরম লাগতে লাগল।। আর ভাবছিলাম
...... লাভ বাইট!!! ওটা আবার কি??
.
.
আমি গোসল করে বেরুলাম। একটা অফ হোয়াইট রঙের গাউন পড়েছি। তবে সুতির। বেশ আরামদায়ক। ফারান আমার জন্য সব গাউন এনেছে। গাউন তার এতই পছন্দ!!
.
ঘড়িতে দেখলাম সাতটা বাজে।। মারোয়ার উঠার সময় হয়ে গেছে।। আমি তাড়াতাড়ি করতে লাগলাম।
চুল আচরানোর সময় খেয়াল করলাম আমার গলা আর ঘাড়ের মাঝ বরাবর একটা দাগ।। যেন কেউ খাবলে দিয়েছে। লাল হয়ে আছে ওটা। ভাবছিলাম কিসের দাগ ওটা।।
.
বেশিক্ষন ভাবতে পারলাম না। মারোয়া এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। বোঝায় যাচ্ছে সরাসরি ঘুম থেকে উঠে এসেছে। আমি ওকে ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম
...... চল গোসল করবে।।
.
মারোয়া চুপচাপ আমার কথামত চলল। ওকে গোসল করিয়ে নিয়ে টেবিলে বসালাম। ফারান আমাদের আগে টেবিলে বসে আছে। গোসল করেছে বোঝাই যাচ্ছে। সাদা শার্ট পড়া। হাতে ব্ল্যাক রিস্টওয়াচ। চুল পরিপাটি করে আচড়ানো। তথাপি গোসলের কারনে কপাল একটু একটু ভেজা। আর পেছনের চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।।
.
গলা খাকরি দিয়ে উঠল ফারান।।
....... এভাবে তাকাবা না বলতেছি!!
আমি চমকে উঠলাম। আমাকে বলতেছে নাকি?? কিন্তু ও তো আমার দিকে তাকায় নি। তাহলে কিভাবে জানে যে আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি??
..... মোহিনী!!
..... স্যরি!!
.
আমি তাড়াতাড়ি উঠে কিচেনে গেলাম। দেখতে নাস্তার আর কতদূর দেরি। কিচেনে গিয়ে দাড়াতেই ফাতিমা হুড়মুড় করে আমার কাছে এসে বলল
.... ম্যাম আপনি এখানে এসেছেন কেন?? এক্ষুনি নাস্তা নিয়ে আসছি আপনার কাছে।।
..... ও ওহ তো ঠিক আছে।।
.
আমি যাওয়ার জন্য পিছনে ফিরলাম। কিন্তু মনে হল কারো হাসির শব্দ পেলাম। চাপা হাসির।। একটু করে তাকাতেই দেখলাম অল্পবয়স্কা মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছে আর ফাতিমা তাকে না হাসার জন্য ধমক দিচ্ছে।।
.
আমি কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম?? ওই মেয়েটা হাসল কেন??
নাহ্ আর চিন্তা করবনা। বেশি চিন্তা করলে পাগল হয়ে যাব।। চিন্তা বাদ দিয়ে খেতে শুরু করলাম। ফারান কথা শুরু করল
...... আজ আমার আসতে একটু দেরি হবে। তাই বাইরে কোথাও যাবা না। ঠিক আছে??
.... ঠিক আছে।
.
সবাই নিঃশব্দে খাচ্ছিল আর ফাতিমা সবাই কে খাবার বেড়ে দিচ্ছিল। কিন্তু খেয়াল করলাম কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।
মাথা ঘুড়িয়ে দেখলাম
মারোয়া!!
...... কি হল মারোয়া??
.... তোমার এখানে কি হইছে??
..... কোথায়??
মারোয়া আঙ্গুল দিয়ে দেখালো।। আমি জায়গাটাই হাত দিয়ে দেখলাম। এটা সকালে আয়নায় দেখেছিলাম সেটা।
বললাম
...... আমি জানি না।
...... তোমাকে কেউ কামড় দিছে??
.
এই কথা শুনে ফাতিমার হাত থেকে চামচ সহ খালি বাটি পড়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি মাফ চেয়ে রান্নাঘরে চলে গেল।
আর ফারানের এই কথায় হেচকি উঠে গেল। পানি খেতে গিয়ে গ্লাস সহ ফেলে দিল।
.
আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম সবাই এত নার্ভাস কেন হয়ে গেল??
মারোয়া কে বললাম
...... না কেউ কামড় দেয়নি।।
..... তাহলে এটা কিসের দাগ??
..... আমি জানিনা।।
এবার ফারান উঠে গিয়ে দাড়াল। তারপর উপরে উঠে যেতে যেতে বলল
..... মোহিনী!! একটু করে উপরে আস।। তোমার সাথে কথা আছে।।
এই বলে ফারান চলে গেল।
.
আমি হা করে বসে রইলাম। কি হল ঠিকমত বুঝতে পারলাম না। তথাপি মারোয়া কে খেতে বলে আমি উপরে গেলাম।
.
(চলবে)
YOU ARE READING
মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥
Romanceপ্রেমের মানুষের জন্য দুনিয়া এক করে দেয়া এক পাগল প্রেমিকের গল্প... ♥