পার্ট - ১৫

521 20 1
                                    


নিজের শরীরে ঢোকার আগে বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল। আর বলছিল
..... আমাকে ছেড়ে যাবে না তো??
...... হ্যাঁ যাবো না।
..... সত্যি তো??
.... সত্যি!! এবার যাও
..... দেখো এবার ধোকা দিবে না।।
..... যাও না বাবা!!
আমার দিকে ফেল ফেল করে তাকাতে যাচ্ছিল। আমি ওকে ভরসা দেওয়ার জন্য একটু করে হাসলাম। ফারানও আমার দিকে তাকিয়ে নার্ভাস ভঙ্গিতে একটু করে হাসল। তারপর ধীরে ধীরে যেখানে নিজের শরীর পড়ে ছিল সেখানে গিয়ে সেই মত শুয়ে পড়ল। ঠিক যেভাবে ওর শরীর টা পড়ে আছে ঠিক সেভাবে। তারপর চোখ বন্ধ করল। চোখ বন্ধ করার পর পাঁচ মিনিট সময় অতিবাহিত হল। কিন্তু কিছুই হল না। আমি মারোয়ার কাছে গেলাম। ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। ছোট শরীরটা রক্তাক্ত হয়ে আছে। ওর মাথাটা ধীরে ধীরে কোলে তুলে নিলাম। আমার কান্না আসছিল। চেপে রাখতে পারলাম না। গাল বেয়ে পড়তে লাগল চোখের পানি। আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলাম
..... মারোয়া!! মারোয়া
কোন জবাব নেই। আমি পানির জগটা নিয়ে আসলাম। একটু করে পানি নিয়ে ওড়নার মাথা ভিজিয়ে চোখ মুখ মুছে দিলাম। তারপর একটু পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পানি গাল বেয়ে পড়ে গেল। মারোয়া পানি খেলো না। আমি এখন কি করবো?? কি করবো?? চারদিকে তাকালাম। সবাই মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমি এই মুহুর্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কি করা উচিত আমার জানা নেই। এই সব ভাবছিলাম। সেই মুহুর্তে মাথায় কেউ একজন হাত রাখল। আমি চমকে মাথা ফেরালাম। এটা ওঝা।। আমি উনাকে দেখে হাউমাউ কান্না করে বললাম
...... আমি এখন কি করবো?? কেউ তো উঠতেছেনা।।
.... ধীর হও। অধৈর্য্য হইও না। সবাই ভালো আছে। 
এরপর নিজের ঝুলি থেকে একটা শিশি দিয়ে বলল
.... এটা সবার মুখে একটু একটু করে ঢেলে দাও তাহলে সবাই উঠবে। আর সাবধান এটা যেন মাটিতে না পড়ে। সবাইকে দেওয়া শেষ হলে পানিতে ফেলে দিবে।
আমি হাত বাড়িয়ে শিশি টা নিলাম। তারপর চোখ মুছে বললাম
.....ঠিক আছে।
এরপর আমি শিশি টা খুলে মারোয়াকে কয়েক ফোটা খাইয়ে দিলাম। তারপর কিছু একটা মনে হতেই পিছনে ফিরলাম। কিন্তু ততক্ষণে ওঝা গায়েব। আমি অবাক হয়ে গেলাম। চোখের পাতা ফেলতে না ফেলতেই উনি কোথায় গায়েব হয়ে গেলেন?? এই সময়ের মধ্যে কোনো মানুষের দুই পা দূরে যাওয়া ও অসম্ভব ব্যপার।। এরই মধ্যে কেউ একজন আমার হাত চেপে ধরেছে। আমি নিচে দেখলাম মারোয়া পিট পিট করে আমার দিকে তাকাচ্ছে। তারপর হালকা স্বরে আমাকে ডাকল। আমি খুশিতে ওকে বুকে চেপে ধরলাম। সেও চুপচাপ আমার দেওয়া আদর গুলো গ্রহন করতে লাগল। তারপর বাড়ির অন্যান্য সদস্য দের এক ফোটা এক ফোটা করে মুখে ঢেলে দিলাম। ধীরে ধীরে সবাই উঠল। কিন্তু ফারান এখনো চোখ মেললো না। আমি গিয়ে এক ফোটা শিশির তরল বস্তু মুখে ঢেলে দিলাম। বিপত্তি বাধল মামি কে নিয়ে। তিনি ফারান কে বাড়ির চৌকাঠে আর জায়গা দেবেন না। ফারানের এখনো হুশ আসেনি অথচ চাকর দের নির্দেশ দিয়েছেন ফারান কে যেন বাইরে ফেলে দিয়ে আসা হয়। চাকর রা ভয় পাচ্ছিল তাই তারা ফারানের কাছে এগুলো না । মামা মামি কে বুঝাতে লাগলেন যে এখানে ফারানের কোন দোষ নেই। কিন্তু মামি কোন কিছু শুনছিল না। আমি মনে মনে হতাশ হলাম। কারন এ ঘরে ফারানের আর ঠাই হবেনা। যদিও মামা মামিকে বুঝাচ্ছিলেন কিন্তু তিনিও ফারান কে এ ঘরে জায়গা দেবেন না বুঝতে পেরেছিলাম। তথাপি মামি ওসি সাহেবের জন্য কিছু করতে পারলেন না। আমি মামি কে ধরে রুমে নিয়ে গেলাম। রুমে যখন শান্তিতে মামি কে বসালাম ঠিক তখন খুব চেঁচামেচির আওয়াজ আসছিল। আমি তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে এলাম। দেখলাম যা সন্দেহ হয়েছিল তাই। ফারানের হুশ ফিরেছে। হুশ আসার পর আমাকে খুজে না পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছিল। আর বাকিরা ওকে চেপে ধরেছিল। আমি সবাইকে ওকে ছাড়তে বললাম। একটু আশ্চর্য্য হলেও সবাই ওকে ছেড়ে দিল। ফারান কে ছেড়ে দিলে সে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তারপরও জিজ্ঞেস করলাম
..... কি হয়ছে??
..... তুমি কোথায় গিয়েছিলে?? 
.... এইতো মামিকে উপরে রাখতে। উনি অসুস্থ তাই।
.... আমি ভাবলাম তুমি আবার আমাকে ছেড়ে চলে গেছো।।
...... তাই নাকি!! তোমাকে ছেড়ে যাওয়া যায়!!!
.... যাওয়া যায় না।
এটা বলে একটা হাসি দিল ফারান। আমি ও দিলাম। এরপর চারদিকে তাকাতেই দেখলাম সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কি ব্যপার সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকায় আছে কেন??
ব্যাপরটা বুঝতে আমার বেশি সময় নিল না। ওরা আমাকে ফারানের সাথে এরকম অবস্থায় দেখে তাকিয়ে ছিল। তাছাড়া তখনো আমি মামুনের স্ত্রী ছিলাম। আর ফারান ছিল আমার জন্য পরপুরুষ। কিন্তু এই নিয়ে ফারান ভাবলেশহীন ছিল। সবাইকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে আমার সামনে দাড়িয়ে অামাকে আড়াল করে রাখল। প্রোটেকটিভ ভঙ্গিতে!!! মামুন আসতে চাইল আমার কাছে। কিন্তু তার আগে ফারান হুশিয়ারি দিল। এটা কিন্তু বেশ রকম বাড়াবাড়ি হচ্ছে। অন্তত আমি মনে করি। এরই মধ্যে মামার হুংকার শোনা গেল। তিনি বললেন যে পুলিশি ইনভেস্টিগেশন শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফারানও যেন এ ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এই কথা শুনে ফারান ও বলল
.... আমিও বের হয়ে যাব। তবে মোহিনী কে নিয়ে।
মামা রেগে ফেটে পড়লেন। তিনি রাগে গজগজ করতে করতে বললেন
..... মোহিনী কিরে!! ওর নাম রেনুমা!! ঠিক মত নামটাই তো বলতে পারিস না। আবার এত শখ কেন?? তুই ওর স্বামী নাকি?? কিসের অধিকারে তুই ওকে নিয়ে যাবি বলছিস??
ঠান্ডা অথচ নির্লিপ্ত গলায় ফারান জবাব দিল
..... আমার কাছে মোহিনীই থাকবে। ওর জন্য আমার কোন অধিকার লাগবেনা। তাছাড়া মামুনের সাথে ওর ডিভোর্স হয়েই যাচ্ছে। তালাক টা হয়ে গেলে আমাদের বিয়েটাও হয়ে যাবে।
এবার মামা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলেন না। ঝাপিয়ে পড়লেন মামুনের উপর। কিন্তু সবার জন্য পারলেন না। সবাই উনাকে ধরে রাখলেন। উনি কাপতে কাপতে বললেন
....... আমি যেন তোর চেহেরা আর কখনো না দেখি। বেড়িয়ে যা আমার ঘর থেকে। 
মামাকে তার ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। আমি কোনায় দাড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছিলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। মামুন এগিয়ে এসে আমাকে বলল
..... তুমি রুমে যাও। ঐখানে কথা হবে।
আমি সায় দিয়ে রুমে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু ফারান হাত ধরে বলল
.... ও কোথাও যাবে না। আমার সাথে যাবে।
মামুন কিছু বলল না। শুধু অগ্নিচোখে আমার দিকে তাকালো।
আমি তাড়াতাড়ি ফারানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওকে বললাম
..... আমি চলে আসবো। তুমি যাও।
..... না
.... যাও না। এখনো ডিভোর্স হয় নি আমাদের। হলেই চলে আসবো।
.... না।
..... তুমি বুঝো না কেন। এখন অনেক সমস্যা হবে। মামা অসুস্থ। এভাবে গেলে কেউ মেনে নিবে না। আর আমি সকলের দোয়া নিয়ে যেতে চাই।
.... আমার কারো দোয়া লাগবেনা।
..... কিন্তু আমার লাগবে।
.... মোহিনী"""""
.... আমার কসম লাগে!! আর কোন কথা না!!
এই কথায় ফারান রাগে ফুসতে ফুসতে বলল
... দেখ আমি যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছিও না। আমি আশে পাশেই থাকবো।।
এই বলে গটগট করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল ফারান। আর আমি হাফ ছেড়ে বাচঁলাম। 
.
ওসি এতসব কিছুর প্রতক্ষ্যদর্শী ছিল। তাই এই কেইস টাকে তিনি ধামা চাপা দিলেন। ফারানের মায়ের মৃত্যু কে সুইসাইড বলে চালিয়ে দিলেন। তারপর তিনি চলে গেলেন।
রুমে গিয়ে এতসব ধকল মেটানোর জন্য ভালো করে গোসল করে নিলাম। আসল এত কিছুর চক্করে নাওয়া খাওয়া কিছুই ঠিক মত হচ্ছিল না। গোসল করে আসলাম সেই সাথে মারোয়া কেও করিয়ে আনলাম। সে আমার সাথে কথা বলছিল না। গোমড়া মুখ ছিল তার। বারবার জিজ্ঞেস করার পরও কিছু বলছিল না। তাই জোর করলাম না। নিজেই কিচেন থেকে রান্না করলাম। কারন এই সব কারনে রান্না হয়নি। সবার ঘরে খাবার দিয়ে আসলাম। এমনকি মুক্তার ও। দিলাম না শুধু মামুন কে। ওকে পড়ে দিবো। তার আগে মারোয়া খাওয়া শেষ করে তাকে শুইয়ে দিলাম। ওকে ঘুমাতে বলে আমি মামুনের ঘরে খাবার নিয়ে গেলাম। 
রুমে ঢোকার আগে নক করলাম। ও ভিতরে আসতে বলল। আমি দরজার ঠেলে গেলাম। সাথে সাথে ও বলে উঠল
...... আমি কখনো এত বেশি অপমানিত হয় নি!!
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now