পার্ট - ৩০

544 18 0
                                    


রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে নক করলাম। কোনো সাড়া শব্দ নেই। আবার করলাম। এবারও তাই। দরজায় হাত দিয়ে দেখলাম দরজা খোলা। ভিতরে ঢুকলাম। ঢুকে দেখলাম ফারান জানালার দিকে মুখ করে পকেটে হাত দুটো ঢুকিয়ে দাড়িয়ে অাছে। 
.
আমি যেতেই আমার দিকে মুখ করে দাড়াল। আমি বললাম
..... কিছু বলবে??
ফারান আমাকে ধরল। তারপর গলায় সে দাগের জায়গায় হাত বুলিয়ে বলল
..... এখনো ব্যাথা করে এখানে?? 
..... একটু একটু
...... এটা চলে যাবে আজকের মধ্যে। চিন্তা করিওনা।
..... হুম
..... এটা কিভাবে আসছে জাননা??
.....জানি না।।
.
হঠাৎ দাগটার পিছে সবাই পড়ল কেন?? বুঝতে পারলাম না।

তারপর ফারান আমার গলায় হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বলল
..... এটা কে লাভ বাইট বলে।।
আমি ওর দিকে তাকালাম।। কি বলতে চাইছে ফারান সেটা বুঝতে চাইছিলাম।।
.
ও ধীরে ধীরে আমার অন্য ঘাড়ের দিকে এগিয়ে গেল।।
আমি পিছে হটে গেলাম কিন্তু ফারান ধরে থাকায় সুবিধা করতে পারলাম না। 
........ কি করছো??
........ শসসসসসসহ!!
.
ফারান প্রথমে চুমু দিতে লাগল ঘাড়ে। আমি তাকে ছাড়ানোর জন্য দু হাতে ধাক্কা দিচ্ছিলাম। কিন্তু সুবিধা করতে পারতেছিলাম না। এরপর সুক্ষ একটা ব্যাথা অনুভব করলাম ঘাড়ে।
...... আহ্ হ আ!! আমার ব্যাথা লাগছে
ফারান কিছু বলল না কিন্তু ছাড়লো না। মনে হল সে কামড় দিচ্ছে। 
.
এরপর ফারান ঝাপটিয়ে জড়িয়ে ধরল।। আমি কি করব?? সবকিছু স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল। সবকিছু স্বপ্ন দেখছি। ঘুম ভাঙলে স্বপ্নও ভেঙে যাবে।।
.
অবশেষে ফারান ছেড়ে দিল। আমি হাপাচ্ছিলাম খুব জোরে। ঘাড় ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল। সেখানে হাত বুলাচ্ছিলাম। পুরো ঘাড়ে ভেজা ভেজা।
.......ইয়াক্
.
.
ফারান ও হাফাচ্ছিল। তার ঠোট দুটো লাল হয়ে আছে। নিজের ঠোটদুটো মুছে আমাকে আয়নার সামনে দাড় করাল। অামি ঘাড় ঢলতে ঢলতে আয়নার সামনে দাড়ালাম। তারপর ফারান পিছন থেকে চুলগুলো সব এক পাশে করল। তারপর সে ঘাড়ের স্থান টুকু আয়নায় দেখিয়ে বলল
.... এখানে দেখো।।
.
আমি ওর কথা মত তাকালাম। দেখেই আমি আতকে উঠলাম। আমার পুরো ঘাড় গলা লাল হয়ে আছে। তার মাঝে ফারানের কামড়ের দাগ।। অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্যি আমার তখন কান্না আসছিল। 
.
তাহলে আগের দাগটা ও ফারানের কামড়ের!!! কিন্তু কখন দিসে সেটা?? টের তো পাই নি?? এটাকে লাভ বাইট বলে!! আশ্চর্য্য!! কাউকে কামড় দিয়ে দাগ বসিয়ে ফেলা কে লাভ বাইট বলে??
মুহুর্তে ফারানের চুমু দেওয়ার দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠল আবার।। কল্পনা করতেই আমার গাল লাল হয়ে গেল। গরম লাগতে লাগল। ফারান পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই হুশ আসল। সে বলল
...... কি ভাবছ??
..... হাঁ???
...... মোহিনী!!!
...... কিছু না।
...... তো এখন থেকে কাউকে এটা দেখালে সাবধানে দেখাবা। বুঝছো??
..... হুম।।
.....কিছু বলো
..... এই দাগটা তুমি কাল রাতে দিয়েছিলে?? 
.....হুম!!
..... কিন্তু আমি তো জানি না।।
..... কালকে তোমাকে যখন নিয়ে আসি তখন তুমি ঘুম ছিলে। আর ঘুমন্ত অবস্থায় আমার মোহিনী আরো মোহনীয় হয়ে উঠে।। তখন আমার খুব ভয় হয়।। লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছা করে যেখানে আর কেউ আসবেনা। যেখানে আমি ছাড়া আর মোহ হতে পারবেনা।। 
.
.
এতটুকু বলে একটু থামল। তারপর একটা বড় করে নিঃশ্বাস নিল ফারান। চোখ বন্ধ করল। তাও ৫ সেকেন্ডের জন্য।। এরপর আবার চোখ খুলে বলতে লাগল।।
......তুমি কালকে আমার পাশে শুয়েছিলে। অনেকদিন পর আমি শান্তি তে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার তোমার পাশে শুয়ে মনে হয়েছিল তোমাকে কখনো যেতে দিতে পারি না। আর কেউ যেন আমার মহামুল্যবান সম্পদে নজর না দেয় তাই আমি চিহ্নিত করেছিলাম। যাতে করে কেউ তোমাকে নজর দেবার আগে এটা জানতে পারে যে তুমি শুধু আমার।
.
এই বলে এক মুহুর্তের জন্য আমার চোখের দিকে তাকাল। তারপর বলল
.
.......... তোমাকে দেখার পর থেকে আমি এক মুহুর্তের জন্য আমি শান্তি তে ঘুমাতে পারিনি। বিশ্বাস কর মোহিনী শুধু লড়াই করে গেছি তোমাকে নিজের করে পেতে। 
তোমাকে পেয়েছি আমি। এবার সবকিছু সার্থক।। 
.
.
এই বলে আমার হাত দুটো তে চুমু দিয়ে আমার কপালে চুমু খেল। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। 
এতক্ষন ফারানের কথা মন্ত্রমুগ্ধার মত শুনছিলাম। আসলেই ফারান আমাকে এতটাই ভালোবাসে?? তার ভালোবাসাটা আমার জন্য সৌভাগ্য নাকি দূর্ভাগ্য??? 
.
চোখ মুদে এলো। ফারানের বাহু ডোরে গভীর উষ্ণতায় ভরে গেল। এভাবে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে রাখল। তারপর ফারান বলতে লাগল
...... মোহিনী!! আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো পুরো দিন???
.
.
তারপর আমি নিজে থেকে ছেড়ে দিয়ে বললাম
..... দেরি হয়ে যাচ্ছে।
..... হুম
.
.
ফারান চলে বিরাট দামী গাড়ি হাকিয়ে।। মারোয়া আমি বিদায় জানালাম। মারোয়ার সাথে ফারানের সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। যাওয়ার আগে দুজনে খুনসুটিতে মেতে ছিলো।। মারোয়া আবদার জানিয়েছে ফারানের কাছে।। আসার সময় যেন তার জন্য গিফট নিয়ে আসে।।
.
.
ফারান চলে গেলে বিশেষত আমার আর কোন কাজ নাই। বাড়ির কাজের জন্য ফাতিমা আছে। সে কিচেনে ঢুকতেই দিচ্ছে না। বাইরে যেতে চাইলাম। দারোয়ান যেতে দিচ্ছে না। ফারানের বারন আছে। আমাকে কোথাও না যেতে দেওয়ার।।
.
সুতরাং কি আর করা।। মারোয়া কেও স্কুলে দেওয়া হয় নি।। বাইরে বাগানে কিছুক্ষন হাটলাম।। তারপর ভালো লাগছিল না। টিভি দেখলাম। ঘরটাও ঘোরা শেষ।। সবকিছু বোরিং!! মারোয়া আর অল্পবয়স্কা মেয়েটা দুজনে মিলে কি সব জানি করছে। আমি বাধা দিই নি। কারন মারোয়া খুশি ছিল।।
.
সোফায় বসে বসে ঝিমুচ্ছিলাম।। তন্দ্রা এসেছিল একটু করে। কিন্তু আচমকা কারো চিৎকার চেঁচামেচি তে তন্দ্রা ছুটে গেল। 
আওয়াজ আসছে কোথ থেকে???
মারোয়া কোথায়?? মারোয়ার কথা মনে পড়তেই ঝট করে উঠে দাড়ালাম। তারপর দৌড়ে মারোয়া কে খুজতে লাগলাম। কিন্তু খুজে পাচ্ছি লাম না। মারোয়া কোথায়?? 
.
আমার বুক ভয়ে ঢিপ ঢিপ করছিল। ফাতিমা কে পেলাম।। সে ঘর পরিষ্কার করছিল। তাকে পেতেই জিজ্ঞেস করলাম
...... মারোয়া কে দেখেছো?? মারোয়া কোথায়??
ফাতিমা খানিকটা অবাক হয়ে গেল।। সে আঙ্গুল দিয়ে উপরে ইশারা করল।
আমি ইশারা অনুযায়ী উপরে গেলাম।। মারোয়ার রুমে গিয়ে দেখলাম মারোয়া ঘুমাচ্ছে আর ওই মেয়েটা তার রুম টা গুছিয়ে দিচ্ছে। যাক্!! আমার কলিজায় পানি এলো।। মারোয়া ঘুমাচ্ছে তাই ডিস্টার্ব করলাম না।
.
.
নিচে নেমে এলাম। মারোয়া তো ঠিক আছে তাহলে?? আবার শোনা গেল আওয়াজ টা।। এবার কিছুটা বুঝতে পারলাম আওয়াজ টা বাইরে থেকে আসছে।। আমি উৎসুক হয়ে বাইরে গেলাম দেখতে। বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম দূরে দারোয়ান এর সাথে কারো কথা কাটা কাটি হচ্ছে।। কালো পোশাক পড়া কেউ।।
.
আমি এগিয়ে গেলাম সামনে। আওয়াজ টা পরিচিত মনে হচ্ছিল তাই।। একজন না দুই জন।। আমি কাছাকাছি যেতেই আমি চিনতে পারলাম।
নিজে নিজে স্বগতোক্তি করলাম।
.
আম্মু্!!!
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Dove le storie prendono vita. Scoprilo ora