২৯তম পর্ব: ৫ বছর আগে(৮ম অংশ)

79 7 6
                                    

বারান্দার দোলনায় চুপচাপ বসে আছে রোদেলা। চেহারায় সেই লাবণ্যতার ছাপ নেই বরং রুক্ষতা এসে ভর করেছে। চোখের দৃষ্টিতে কোনো মায়া নেই, ঠোঁটে নেই এক বিন্দু হাসিও। হঠাৎ হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখজোড়া বন্ধ করে রাখে কিছুক্ষণ। আবার চোখ মেলে তাকায়। বিছানার উপর তার ছোট্ট পরীটার জামা কাপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। কত ধরণের জামা। মায়ের সাথে গিয়ে দুই বছর বয়স পর্যন্ত জামা কিনে এনেছিল। কিন্তু এখন এগুলো কে পড়বে? কার গায়েই বা উঠবে? সেই ছোট্ট পরীটাই তো নেই। ছোট্ট পরীটাই তো তার মাকে ফেলে রেখে চলে গেলো। আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রোদেলা। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায় তা চিৎকারে পরিণত হলো। দোলনা থেকে পড়ে গিয়ে মেঝেতে শুয়েই পাগলের মতো চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো রোদেলা।

নায়লা ড্রয়িং রুম থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়ে ছুটে এলেন মেয়ের ঘরে। কিছুক্ষণ আগেই মেয়েকে রেখে দরজাটা লাগাতে এসেছিলেন তিনি। রায়হান সাহেব যাওয়ার পর থেকে অনেকক্ষণ ধরে দরজাটা খোলা। হাসপাতাল থেকে আসার পর থেকে মেয়েকে এক মুহুর্তের জন্যও একা ছাড়েন নি তিনি। একা হলেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে ওঠে। কখনো সামলাতে পারেন, কখনো পারেন না। কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে রোদেলা। ঘরে ঢুকে বারান্দায় গিয়েই মেয়েকে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন নায়লা। মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,

"কাঁদিস না মা, কাঁদিস না। আমিও তো মা। সন্তান হারানোয় যে কি কষ্ট তা বুঝতে পারি মা।"

রোদেলার কোনো উত্তর নেই। সে চিৎকার করে কেঁদেই চলেছে। নায়লা রোদেলাকে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। রোদেলা তখনও কাঁদছে। এই কয় দিনে মেয়েকে হাজার রকম কথা বলে সান্তনা দিলেও নিজের বুকটাও কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। একটা রাতের মধ্যে মেয়েটার জীবন এভাবে ছাড় খার হয়ে গেলো? এতো আশা ছিল মেয়েটার মা ডাক শুনবে বলে। সেই আসা কেনো সৃষ্টিকর্তা সারাজীবনের জন্য কেড়ে নিলেন? কেনো তার এতো সুন্দর ফুটফুটে মেয়েটার থেকে মা হওয়ার ক্ষমতাটাই কেড়ে নিলেন? চোখ মুছে রোদেলার দিকে তাকাতেই দেখলেন মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে। রোদেলার ফোন বাজতেই ফোনটা নিয়ে আলো নিভিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন নায়লা। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসছে। নায়লা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,

রোদেলার মেঘলা জীবন(সম্পুর্ণ)Where stories live. Discover now