নুপূর এসেছে অনেকক্ষণ হলো। রোদেলার ঘরের দরজা বন্ধ। অনেকবার ডাকাডাকি করার পরেও দরজা খোলে নি। দীপ্র আসার আগ পর্যন্ত দরজা খুলবে না। তাও হাল ছাড়ে নি নুপূর। বন্ধ দরজার ওপাশ থেকেই রোদেলাকে বোঝাতে লাগলো।
"রোদ তুই একবার ঠান্ডা মাথায় ভাব। এভাবে উত্তেজিত হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ না। প্লিজ একটু কথা শোন। এভাবে নিজের জীবন নষ্ট করে দিবি কেন?"
"জীবন নষ্ট করবো মানে? আমার সন্তানকে এই পৃথিবীতে আনলে, আমার কাছে রাখলে আমার জীবন নষ্ট হবে এই কথা তুমি বললে কিভাবে মণি?"
"দ্যাখ, আমি সেভাবে কিছু বলি নি। কিন্তু তোর সামনে খুব সুন্দর ভবিষ্যৎ। অনেক বড় একটা বিপদ গেছে তোর উপর দিয়ে। আমরা চাই না সেই বিপদের কোনো চিহ্ন তোর মধ্যে থাকুক।"
ওপাশ থেকে রোদেলার উত্তর নেই। সন্তানকে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় সে ক্রমাগত বিছানায় শুয়ে কাঁদছে। নুপূর আবার বললেন,
"এই বাচ্চাটা তোর কাছে থাকলে সেই ভয়াবহ রাত তোর বার বার মনে পড়বে। তুই কোনোভাবে পারবি না সেই রাত ভুলতে।"
কান্না মিশ্রিত কণ্ঠ নিয়ে রোদেলা থেমে থেমে বলল, "আমি তো এমনিতেও সেই রাতের যন্ত্রণা ভুলতে পারবো না মণি। কোনোদিনও পারবো না। আমার সন্তান আমার কাছে থাকলে সেই আনন্দে আমি কিছুটা হলেও শান্তি পাবো। তোমরা প্লিজ আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলো না, প্লিজ না। তোমরাও তো মা বলো। তোমাদের সন্তানকে কেউ এভাবে কেড়ে নিতে চাইলে কেমন লাগতো তোমাদের? আমি যদি সেই রাতে সেখানেই মরে যেতাম আমার মায়ের কেমন লাগতো?"
নায়লা এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন। মেয়ের এই কথায় নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না। নায়লা এবার কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
"চুপ কর তুই চুপ কর!"
ঐপাশ থেকে রোদেলার কান্নার বেগ বাড়লো। এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো ওর? কথা বলতে বলতে নুপূরেরও গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
"ঠিকাছে তোর কথাই মানলাম। কিন্তু বাচ্চাকে বড় করতে হলে বাবার পরিচয় তো লাগবে বল। ওর বাবার পরিচয় কে দিবে? দীপ্র? দীপ্রও যদি তোর সাথে একমত হয় তাহলে আমরা কিছু বলবো না। যেটাই হোক আমাদের একটাই চাওয়া। আমাদের ফার্স্ট প্রায়োরিটি তোর ভালো থাকাটা। তোর একটা সুন্দর জীবন, সুন্দর ভবিষ্যৎ। দীপ্র যদি তোর সাথে একমত হয় তাহলে আমরাও মেনে নিব। এখন তুই একটু শান্ত হ মা, প্লিজ শান্ত হ। সকাল থেকে কিছু খাস নি। এখন বাইরে আয়। কিছু খাবি চল।"
ESTÁS LEYENDO
রোদেলার মেঘলা জীবন(সম্পুর্ণ)
Romanceকিছু কিছু মানুষের জীবন তো পরিপুর্ণতায় ভরপুর থাকে। কিন্তু সব পুর্ণতার মাঝেও যেন এক অপূর্ণতা এসে গ্রাস করে। মানুষের জীবনে কখন কি আসে তা কেউ বলতে পারে না। তাই সবসময়ই প্রস্তুত থাকতে হয় যেকোনো ধাক্কাকে সামলানোর। কিন্তু ধাক্কা আসবে কোন দিক থেকে?