৫ম পর্ব: ডাঃ ইলোরা জাহান

109 9 3
                                    

বৃহস্পতিবার। ঘড়িতে বেলা ৩ টা বেজে ৫০ মিনিট। রোদেলা রিসিপ্সনে বসে থাকা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলো,

"ইলোরা আপা কি ভেতরে আছেন?"

"জ্বি ভেতরে পেশেন্ট আছে। আপনি অপেক্ষা করুন আপু।"

"আচ্ছা।"

রোদেলা সোফায় বসে রইল। সামনে থাকা একটা ম্যাগাজিন নিয়ে পড়তে থাকল। রিসিপ্সনের ছেলেটা রোদেলাকে বলল,

"চা খাবেন আপু?"

"না ভাই ধন্যবাদ। চা খাবো না। আমাকে এক গ্লাস পানি দিলে ভালো হতো। আসলে আমার বোতলের পানি শেষ।"

ছেলেটা পানি আনার জন্য বলল। সাথে সাথে একজন এসে পানি দিয়ে গেল। ছেলেটা রোদেলাকে জিজ্ঞেস করলো,

"গত বৃহস্পতিবার আসেননি কেন আপু?"

"আমার মা একটু অসুস্থ ছিলেন।"

"ওহ আচ্ছা, এখন কেমন আছেন উনি?"

"ভালো আছেন।"

রিসিপ্সনের ছেলেটার নাম রবিউল। বয়স বেশি নয়। এইতো ১৮/১৯ বছর বয়সের তরুণ। প্রায় ৪ বছর আগে থেকে রোদেলার এখানে যাতায়াত তার ঠিক দুই বা আড়াই বছর পরেই রবিউল এখানে চাকরি নেয় রিসিপ্সনিস্ট হিসেবে। ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে দেখল ভেতর থেকে একটা ছেলে বের হলো। পেশেন্ট বোধয়। রবিউল বলল,

"আপু আপনি যান।"

রোদেলা ভেতরে গেল। কাঠের দরজা খুলে বিশাল ঘর। হরেক রকমের হ্যান্ডমেড জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো। ডানদিকের দেয়ালে অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি। সব ইলোরার নিজের হাতে আঁকা। দেখে বোঝা যায় না যে এটা কোনো চেম্বার।

ডাঃ ইলোরা জাহান। পেশায় একজন সাইক্রিয়াটিস্ট। বয়স ৩৪। ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে। ১২ বছর বয়সে নিজের চোখে বাবা মায়ের বিচ্ছেদ দেখেছেন। শুধু বিচ্ছেদই নয় বাবার ২য় বিয়ে দেখেছেন ১২ বছর বয়সেই। বাবা মা আলাদা হওয়ার পর আইন অনুযায়ী বাবার কাছেই থাকতেন তিনি। সৎ মা বাবার সামনে খুব ভালো ব্যবহার করলেও বাবার অনুপস্থিতিতে মোটেও সুভাষী ছিলেন না। তবে বাবার সামনেও যদি দুর্ব্যবহার করতেন তিনি খুব একটা আমলে নিতেন না। কয়েকটা দিন যাওয়ার পর বাবার সামনেই দুর্ব্যবহার শুরু করে দেন। ইলোরার বাবার যেন দেখেও না দেখার ভান। আইন অনুযায়ী ইলোরা বাবার কাছে থাকলেও মায়ের কাছে যাওয়ার অনুমতি ছিল মাসে দুই কি তিনবার। সেটাও কোর্ট নির্ধারিত। কিন্তু ইলোরা এর বেশি সময়ও জেতেন। এমনকি অনেক সময় থাকাও হতো। তাই মায়ের কাছে গিয়ে কষ্ট প্রকাশ করতেন। তার মনে হতো এই পৃথিবীতে হয়তো মায়ের বাড়িটাই বুঝি তার একমাত্র শান্তির আশ্রয়। কিন্তু কয়েক মাস পর সেই ধারণাও ভুল প্রমাণিত হলো। ইলোরার মাও ২য় বিয়ে করলেন। ইলোরার শেষ ভরসাটুকুও ভেঙে গেল। ইলোরার মায়ের সাথে দেখা করতে যাওয়াটা ভদ্রলোক মোটেই পছন্দ করতেন না। এই নিয়ে ইলোরার মায়ের সাথে ভদ্রলোকের কথা কাটাকাটি হলেও মায়ের হাবভাবে ইলোরা বুঝতেন মাও মনে মনে চান না ইলোরা এখানে আশুক। এরপর থেকে মায়ের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেন। এখন কষ্টগুলো ভাগ করার মতো আর কেউ রইলো না। মায়ের উপর খুব অভিমান হয়েছিল ইলোরার। নিজেকে যেন এক পায়রার খোয়ারে বন্দি করে ফেলেছিলেন তিনি। চরম হতাশায় ভুগছিলেন। এমনকি আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেন নি। নিজের মানসিক চাপে যখন কোণঠাসা হচ্ছিলেন তখনই ঠিক করে ফেলেছিলেন বড় হয়ে তিনি একজন মনোবিজ্ঞানী হবেন। আজ তিনি একজন সফল সাইক্রিয়াটিস্ট।

রোদেলার মেঘলা জীবন(সম্পুর্ণ)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora