আজ অনেকদিন পর রোদেলা ভার্সিটি এলো। গেটের বাইরেই ভার্সিটির এক দাড়োয়ান কাশেম আলী দাঁড়িয়ে। রোদেলার সঙ্গে বেশ ভাব তার। রোদেলার মতো তারও একটা মেয়ে ছিল। মেয়েটা ১৫ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে মারা যায়। এরপর থেকেই তিনি আর তার স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। উনার গ্রামের বাড়ি যশোর। আগে ওখানেই থাকতেন। রোদেলা তাকে দেখতেই দূর থেকে হাসি দিয়ে আসতে লাগল। তিনিও রোদেলাকে দেখে ভীষণ খুশি হলেন। এমনভাবে হাসি দিলেন যেন বহুদিন পর তার নিজের মেয়েকেই দেখলেন। ঠিক যেমন তার মেয়ে স্কুল থেকে ফিরলে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাসতেন। পরক্ষণেই তার চোখে পানি চলে এলো। রোদেলাকে কেন যে তার এতো আপন মনে হয়। মেয়ে হারানো বাবাই হয়তো এমন। মেয়ের মতো কাউকে দেখলে ভেতরে থাকা কষ্টটা জেগে উঠে। যেন কেউ তাকে ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে
"বাবা বাবা! তুমি আমায় দেখতে পাচ্ছো না? এইযে আমি এখানে। আমাকে দেখি ভুলেই গেছো। আমার কথা মনে পড়েনা তোমার।দেখো আমি তোমার কাছে এসেছি। তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও না বাবা।"
এসব কথা ভাবলেই তার বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠে। এটা যে এক অসহনীয় ব্যথা। যা সন্তান হারানো বাবাই বুঝতে পারেন। বাবার কাধে সন্তানের লাশ যখন বহন করতে হয় এর থেকে কষ্টের আর কিই বা থাকতে পারে। যখন তাকে প্রকৃতি জানান দেয় তুমি যে আজ থেকে নিঃসন্তান। আর কখনো শুনতে পাবে না বাবা ডাক, তোমার সন্তানের কণ্ঠস্বর, দেখতে পাবে না তার মায়াবী মুখ, তার জলজলে চোখ, তার হাসি। বুকের ভেতরটা আজ থেকে ফাকা। কেউ এসে তোমায় জড়িয়ে ধরে বলবে না,
"বাবা আজকে স্কুলে কি হয়েছে জানো?"
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই কেঁদে ফেললেন কাশেম সাহেব। কিন্তু খুব গোপনে কাঁদলেন যেন চোখের জলটা রোদেলা দেখতে না পায়। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি হাসলেন। রোদেলা এসেই সালাম দিল,
"আসসালামু আলাইকুম চাচা, কেমন আছো তুমি?"
" আলহামদুলিল্লাহ মা, তুমি কেমন আছো? কতদিন পর আমার মেয়েটাকে দেখলাম।"
"আমিও ভালো আছি চাচা। তোমার শরীর ভালো আছে? নীরার কাছে শুনেছিলাম তোমার নাকি জ্বর হয়েছিল? তাই নাকি দুদিন আসতে পারোনি?"
ESTÁS LEYENDO
রোদেলার মেঘলা জীবন(সম্পুর্ণ)
Romanceকিছু কিছু মানুষের জীবন তো পরিপুর্ণতায় ভরপুর থাকে। কিন্তু সব পুর্ণতার মাঝেও যেন এক অপূর্ণতা এসে গ্রাস করে। মানুষের জীবনে কখন কি আসে তা কেউ বলতে পারে না। তাই সবসময়ই প্রস্তুত থাকতে হয় যেকোনো ধাক্কাকে সামলানোর। কিন্তু ধাক্কা আসবে কোন দিক থেকে?