সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, ভালোবাসার মানুষটার এভাবে ছেড়ে চলে যাওয়াটা খুব বেশি দাগ কাটতে পারে নি রোদেলার মনে। মা হওয়ার খুশিতে সে আত্মহারা। বাড়ির সবাই শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেলো বাচ্চটাকে রাখার জন্য। রোদেলাও যেনো সব দুঃখ কষ্ট নিমিষেই ভুলে গেলো। সেই রাতের ঘটনা, দীপ্রর এভাবে আঘাত দেওয়া সব কিছুই একেবারে তুচ্ছ রোদেলার কাছে। কে দীপ্র? দীপ্রর থেকেও আপন ওর সন্তান। মা হয়ে প্রেমিকের জন্য সন্তান হত্যা করতে পারবে না। তাই সেই প্রেমিককেই চলে যেতে দিল। সন্তান নিয়েই বাঁচবে। আর কিছু চাই না জীবনে।
প্রেগ্ন্যাসির দুই মাস চলছে। রোদেলা খাওয়া দাওয়া করতে পারে না তেমন। সব খাবারেই অরুচি ধরে গেছে। তাও বাচ্চার কথা ভেবে কষ্ট করে হলেও অল্প স্বল্প খায়। রায়হান সাহেবও যেনো মেয়ের সাথে সাথে সব ভুলে গিয়েছেন। তার নাতি নাতনি আসবে এই খুশিতে এখন থেকেই খেলনা নিয়ে আসছেন। ছোট একটা দোলনাও এনেছেন। রোদেলাও খুব খুশি। এতো সুন্দর সময় যেনো তার জীবনে আগে কখনো আসে নি। মা হওয়ার আগের মুহুর্তগুলোর অনুভুতি যে এতো সুন্দর তা জানা ছিল না। আগে ভাবতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভুতি প্রেমের পড়ার সময়। কিন্তু নাহ, সেই ধারণা একেবারে ভুল। সন্তানের কাছে এসব প্রেম ভালোবাসাও হার মানে।
স্বামী আর মেয়ের খুশিতে খুশি হওয়ার পরেও মানুষের কটুক্তিতে হতাশ হয়ে যান নায়লা। মানুষের চিন্তাভাবনা যে এতোটা নিচ হতে পারে তা কখনো ভাবেন নি তিনি। এইতো গতকালই পাশের ফ্ল্যাটের নার্গিস আপা রোদেলাকে দেখতে আসার বাহানায় কটাক্ষ করে অনেক কথাই শুনিয়ে দিলেন। বার বার হেয়ালি করে এক কথাই বলে যাচ্ছিলেন তিনি। তার মেয়ে জারজ সন্তান গর্ভে ধরেছে। বাচ্চার আসল বাবা কে সেটা জানতে পেরেছে কিনা? ডিএনএ টেস্ট করায় নি কেনো? এভাবে ভবিষ্যৎ নষ্ট করা পাগলামি। রোদেলা অবশ্য এসব কথা কানে তোলে নি। সন্তানের স্বপ্নে এতোটাই বিভোর যে এতোকিছু শোনার পরও কোনো কষ্ট আক্ষেপ কিছুই অনুভব করতে পারছে না সে। নীরা ছাড়া আর কোনো বন্ধুই রোদেলার সাথে কথা বলে না। দীপ্র চলে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর থেকে কয়েকবার কল করলেও রোদেলা ধরে নি। শেষে নাম্বারটাই ব্লাক লিস্টে ফেলে রেখেছে। এরপরে দীপ্র আর অন্য নাম্বার থেকেও কল করে নি। রোদেলার কষ্টও হয় নি একটুও। যে ওর সন্তানকে জারজ বলে সন্তান হত্যা করতে বলে তার সাথে কোনো কথাই বলতে চায় না রোদেলা।
ESTÁS LEYENDO
রোদেলার মেঘলা জীবন(সম্পুর্ণ)
Romanceকিছু কিছু মানুষের জীবন তো পরিপুর্ণতায় ভরপুর থাকে। কিন্তু সব পুর্ণতার মাঝেও যেন এক অপূর্ণতা এসে গ্রাস করে। মানুষের জীবনে কখন কি আসে তা কেউ বলতে পারে না। তাই সবসময়ই প্রস্তুত থাকতে হয় যেকোনো ধাক্কাকে সামলানোর। কিন্তু ধাক্কা আসবে কোন দিক থেকে?