২৪তম পর্ব: ৫ বছর আগে(৩য় অংশ)

76 11 4
                                    

"এখন কেমন লাগছে তোমার রোদেলা?" ডাঃ তাজমিরা হোসেন রোদেলাকে জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে রোদেলা মুচকি হাসলো। যার অর্থ এই যে আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। ডাঃ তাজমিরা রোদেলাকে একটা ইঞ্জেকশন দিলেন। সকালের ইঞ্জেকশনটা তাজমিরা নিজেই এসে দেন। আর রাতেরটা যে নার্স ডিউটিতে থাকে সে দিয়ে যায়। ইঞ্জেকশন পুশ করা শেষে তাজমিরা রোদেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

"তুমি কিন্তু এই দুই দিনে অনেকটা রিকভার করেছো। স্টে ওয়েল মাই চাইল্ড।"

তাজমিরা রোদেলার মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "আপনি একটু প্লিজ বাইরে আসবেন কিছু কথা ছিল।"

"হ্যা হ্যা অবশ্যই, চলুন।" রোদেলার মা বাইরে চলে গেলেন ডাক্তারের সাথে কথা বলবেন বলে৷ কেবিনে রোদেলা একা সাথে একজন নার্স আছে। সেই ঘটনার আজ বারো দিন হলো। গুরুতর আহত অবস্থায় রোদেলাকে হাসপাতালে আনা হয়। অপারেশনের পর প্রায় দশ দিনের জন্য আইসিউতে ছিল রোদেলা। কি করে যে বেঁচে গেলো রোদেলা! প্রতিদিন রাতে ওকে তাড়া করে বেড়ায় সেই রাতের সেই ভয়ানক দূর্বিষহ স্মৃতি। আহা কি যন্ত্রণা! এতোদিন ধর্ষণের কথা শুধু লোকমুখে শুনেছিল। আর এখন নিজে সেই প্রমাণ পেল। আচ্ছা কেউ কি জানে না এই কথা? কারো মুখে তো বলতেও শুনছে না। তবে কি সবাই ভাবছে রোদেলার শুধু একটা এক্সিডেন্টই হয়েছে? আচ্ছা কি যেনো হয়েছিল সেদিন? একটা বাস ধাক্কা মারলো...তারপর? আর কিছু তো মনে নেই রোদেলার। এরপর তো হাসপাতালে আর জ্ঞান ফেরার পর শুনেছিল শফিক ভাই...

"আসবো?" দরজার একটা আলতো কড়া নাড়ার পাশাপাশি একটা চেনা স্বর শুনতে পেলো রোদেলা। রোদেলা মুচকি এসে হ্যা বোধক মাথা নাড়লো।

"এখন কেমন আছো তুমি রোদেলা?"

"ভালো আছি শফিক ভাই।"

"কালকেই খবর পেয়েছিলাম যে পরশু রাতে তোমার জ্ঞান ফিরেছিল। কিন্তু জানোই তো এডমিশনের সময়টায় কেমন অবস্থা হয় কোচিং স্টাফদের। তাই আসতে পারি নি বোন। আজকে তাই সকাল সকালই এসে পড়লাম।"

রোদেলা অনেক কিছু বলতে চাইছে শফিককে কিন্তু পারছে না। শরীরে শক্তি নেই। শফিকের প্রতি যেনো বার বার কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যাচ্ছে রোদেলার। শফিকের বাসা কাজলা। শফিক কোচিং শেষ হওয়ার পর বাসায় যাওয়ার পথে দেখতে পায় রোদেলার রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। শফিকের বাড়ির রাস্তাটা খুব নিরব। তেমন মানুষ আসা যাওয়া করে না বললেই চলে। শফিকই রোদেলাকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করে। শফিক না থাকলে রোদেলা হয়তো ওখানে পরে থেকেই মারা যেত। জ্ঞান ফেরার পর মায়ের কাছ থেকে রোদেলা এসবই শুনেছে। কিন্তু এই অবস্থাতেও রোদেলার মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। বাসটা কাজলার রুটে গেলো কিভাবে? রাস্তায় পুলিশ আটকালো না? বাসে তো একজন ভদ্রলোকের মুখোশধারী অমানুষও ছিল। হয়তো টাকা দিয়ে পুলিশকে কিনে নিয়েছে। আজকাল তো টাকা ছাড়লে কতো কিছুই হয়।

রোদেলার মা এসে কেবিনে ঢুকলেন। শফিক রোদেলার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, "আজ আসি আন্টি। আমি আবার আসবো রোদেলাকে দেখতে।" এই বলে শফিক বেরিয়ে গেলো। নায়লা কেমন যেনো গম্ভীর হয়ে আছেন। ডাক্তারের কথা শোনার পর থেকে খুব চিহ্নিত হয়ে পড়েছেন তিনি। কি বললেন ডাক্তার এটা! তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে একজন না চার চারটা জানোয়ার মিলে তার মেয়েটাকে....... আর বেশিদূর ভাবতে পারছেন না তিনি। মেয়েকে আবারো ফিরে পেয়েছেন এটাই অনেক। না জানি মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে। এখন আপাতত এসব নিয়ে ওর সামনে কথা না বলাই ভালো।

রোদেলা এখন ভাবছে অন্য কথা। কাল তো দীপ্র এসেছিল। সম্ভবত ঐ কথাটা দীপ্র জানে না। কথা বার্তায় তো তেমন আভাস পায় নি রোদেলা। ওকে তো জানানো উচিত। আবার আসলে রোদেলা ওকে সব বলবে। ওকেই সবার আগে বলবে। আচ্ছা এখন কি একটা কল দিবে? রোদেলা মায়ের কাছ থেকে ফোন নিয়ে দীপ্রর নাম্বারটা ডায়াল করে কল দিল। ওপাশ থেকে দীপ্রর কণ্ঠস্বর ভেসে আসতেই রোদেলা কথা বলতে চাইল। কিন্তু গলা দিয়ে হ্যাঁ না ছাড়া অন্য কোনো আওয়াজ যেনো বের হতে চাইল না। ওপাশ থেকে দীপ্র রোদেলার ফোন পেয়ে খুব অস্থির হয়ে গেছে। এটা সেটা জিজ্ঞেস করেই চলেছে। অনেক চেষ্টা করছে ভালো করে কথা বলানোর জন্য। রোদেলা তেমন ভাবে কিছুই বলছে না। ফোন রাখার আগে রোদেলা শুধু বলল,

"একবার আসবে? কালকে?"

দীপ্র বলল, "হ্যা হ্যা অবশ্যই আসবো। কাল কেনো আমি আজকেই আসছি।"

"নাহ্ কাল।"

"আচ্ছা ঠিকাছে। তুমি রেস্ট নাও। রাখছি এখন।"

"হুম।"

ফোন রাখার পর রোদেলার ভিতরটা ভারী হয়ে আসছে। দীপ্রকে না বলা পর্যন্ত শান্তি পাবে না কিছুতেই। দীপ্র তো শুধু ওর ভালোবাসার মানুষ নয়, ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। বয়সে সাত বছরের বড় হলেও ওদের মন মানসিকতার অনেক মিল। একেবারে বন্ধুর মতো। তাই সবার আগে ওকেই বলবে রোদেলা।

চলবে......

রোদেলার মেঘলা জীবন(সম্পুর্ণ)Where stories live. Discover now