এক মুঠো গোলাপ ২

16 1 3
                                    

এক মুঠো গোলাপ

___
আমাদের সারপ্রাইজিং প্রোগ্রাম শেষ হলো সন্ধ্যার একটু পর । সাকসেসফুলী আভাকে সারপ্রাইজড করতে পেরেছি আমরা । সবচাইতে বেশি অবাক হয়েছে সাজিদ কে প্রপোজ করতে দেখে । সাজিদ আর আভা মূলত দু'জন দু'জন কে পছন্দ করতো সেই স্কুল লাইফ থেকে কিন্তু বন্ধুত্ব ভেঙে যাবে এই ভয়ে কেউ আগায়নি । ব্যাপারটা প্রথমে আমার চোখে পড়েছিল , জেরিনের সাথে ডিসকাস করে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে  সেটিং করিয়ে দিলাম ওদের । কেউ তো ভালোবাসা টা পাক!
সবাই তৈরি হয়েছে চলে যাবে বলে কিন্তু আভা আমাকে  কিছুতেই ছাড়লো না , রাত্রিবেলাটা তার বাসায় থাকতেই হবে ।
কি আর করার , থেকে গেলাম ।
সবাইকে বিদায় দিয়ে ভাবলাম বাপিকে কল করে জানিয়ে দেয়া উচিৎ , আভাদের বাসায় নেটওয়ার্ক খারাপ । গেইটের কাছটায় একটুখানি সিগন্যাল পাওয়া যায় তাই ফোন নিয়ে ওখানেই হাঁটাহাঁটি করছি আর বাপিকে কল দিচ্ছি  কিন্তু ফোন তো অফ। সম্ভবত নামাজে গিয়েছে , একটু বিরক্ত লাগলো । মায়ের সাথে আমার ঝগড়া চলছে তাই তাকে তো কল করে জানাতে পারবো না আর আপুও নেটওয়ার্কের বাইরে । তার মানে একটা রাত বাইরে কাটাবো পরিবারের মানুষকে না জানিয়ে । ইন্টারেস্টিং!
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাসার ভেতরে পা বাড়ালাম । সিঁড়ি ঘরের কাছটায় আসতেই নিদ্র সাহেবের সাথে দেখা , তর্জনীতে চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে সিঁড়ি দিয়ে নামছে । তাকে দেখে একটু সাইড হয়ে দাঁড়ালাম , ছেলেটা চোখের সামনে আসলেই এক মুহুর্ত নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে থাকে কেন আজব!
সে আমাকে পাশ কাটিয়ে নেমে যেতে যেতে আবার ফিরে তাকালো ।
-- এক্সকিউজ মি?
-- হু
-- তোমার নাম কি?
-- সুপ্ত । শুচিস্মিতা কবির সুপ্ত ।
-- কিসে পড়ো?
-- ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ।
-- এখনো ইন্টার'ই দাওনি তাতেই প্রেম-ভালোবাসার দিকে এত ঝোঁক?
-- স্যরি । বুঝলাম না
আমার কথায় বক্র হাসি ফুটিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে সামনে ধরলো সে । স্ক্রিনে একটা ভিডিও প্লে হচ্ছে , চোখ ছোট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার আত্মার পানি শুকিয়ে গেলো । মিনমিনে স্বরে প্রশ্ন করলাম_
-- এটা ভিডিও করেছেন কেন ভাইয়া?
-- তুমি যেচে পড়ে আমার বোনের লাইফ নষ্ট করছো আমি সেটার প্রুফ রাখবো না?
-- লাইফ নষ্ট করছি!
-- এত কম বয়সে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া মানেই তো লাইফ নষ্ট । দু'দিন বাদে আভার যদি সম্পর্ক ভেঙে যায় ও যদি সুইসাইড করতে যায় তা'হলে আমি তোমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবো।
-- প্রেমের সম্পর্কে জড়ালে লাইফ নষ্ট হবে কেন? লাভ ইজ প্যারাডাইস৷
ভ্রু কুঁচকে বললাম আমি।
-- তাই নাকি?  এই  বয়সে ভালোবাসা'র এত জ্ঞান!
-- জ্ঞান নয় । সবাই জানে এই পৃথিবীতে ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু জয় করা সম্ভব ।
-- ভালোবাসা বলে কিছু নেই । জীবনটাকে তোমরা যতটা সহজ ভাবো ততটাও সহজ নয় । যাক গে তুমি ছোট , তোমার সাথে এসব ডিসকাশন মানায় না । তবে তুমি যা করেছো তা ঠিক করোনি । আভার কোনো ক্ষতি হলে আমি ভাই হিসেবে তোমায় ছেড়ে কথা বলবো না ।
-- আমিও আভার ফ্রেন্ড । নিশ্চয়ই জেনে বুঝে ওর ক্ষতি আমি করবো না, তাছাড়াও দে লাভ ইচ আদার । বিষয়টা এত কমপ্লিকেটেড করার তো কারণ দেখছি না ।
-- এখন তো কিছুই বুঝবে না । সময় আসুক বুঝে যাবে
ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বেরিয়ে গেলো নিদ্র । মেজাজ চটাং করে খারাপ হয়ে গেলো আমার । অসভ্য ছেলে কোথাকার , আমাকে বলে আমি আভার লাইফ নষ্ট করছি! অদ্ভুত
___
ড্রেসিং টেবিলের সামনে কাঠের টুল টায় বসে চুল আঁচড়াচ্ছে আভা তার সাথে গুনগুন করে গান গাইছে, "বন্দে মায়া লাগাইছে ,পিরিতি শিখাইছে
দেওয়ানা বানাইছে রে.."
-- আচ্ছা সুপ্ত আমি কি দেখতে খুব সুন্দর? আবারো অর্ধেক গান রেখে আমার দিকে ঘুরে বসলো  । ওর প্রশ্নের ধরণে এবার ভীষণ বিরক্ত হলাম আমি । আমাদের ব্যাচে সবচাইতে সুন্দরী মেয়েটা আভা , এটা সে নিজেও জানে তবুও বারবার জিজ্ঞেস করার মানে কি!
বিরক্তমাখা গলায় আমি খসখস করে বললাম_
-- নাহ্ , পৃথিবীর সবচাইতে কুৎসিত মেয়েটা হলো তুই । হইছে?
-- তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি?
-- এই পর্যন্ত ৩৬ বার জিজ্ঞেস করেছিস একই কথা তা'হলে আর কীভাবে বলা উচিৎ আমার?
-- রেগে যাচ্ছিস কেন? আচ্ছা রাগ রাগ সমস্যা নেই । রাগলে তোর গাল আর নাক টুকটুকে লাল হয়ে যায় তখন তোকে আরো সেক্সি লাগে ।
-- চুপ কর অসভ্য মেয়ে ।
-- চুপ করবো কেন , সত্যি কথা বলতে দোষ কোথায় ।
-- তোর এসব অসভ্য মার্কা সত্যি কথা আমার সামনে বলতে আসবি না ।
-- তা'হলে কার সামনে বলবো? সাজিদের সামনে , ও তো একটা কলাগাছ । ওর সাথে এসব রসের আলাপ জমবে না ।
-- জমবে না তো প্রপোজাল আ্যাকসেপ্ট করলি কেন?
-- কি জানি , ভীমরতিতে ধরেছিল বোধহয় ।
-- তা'হলে ব্রেকাপ করে দে ।
-- বালাইষাট , কি সব বলছিস!
-- যার সাথে রসের আলাপ জমবে না তার সাথে সম্পর্ক রাখবি কেনো?
-- আরেহ্ মানে... আচ্ছা আমার কথা ছাড় তোর কথা বল । আমরা তো সব পটাপট মিঙ্গেল হয়ে যাচ্ছি তুই কবে হবি হুমম!
-- আমার কপাল অতটাও ভালো নয় রে ।
জোরপূর্বক হাসি টেনে বললাম আমি । আভাও এবার সিরিয়াস হলো । আমার হাত ওর দু হাতের মুঠোয় নিয়ে আশ্বাস দেবার ভঙ্গিতে বলল_
-- আর কতদিন খুঁজবি তাকে বল তো?
-- কই খুঁজি না তো ।
-- দ্যাখ আমরা তোর ফ্রেন্ড । আমরা কিন্তু বুঝি সব ।
-- সে এরকম টা না করলেও পারতো রে ।
কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে গলায় আটকে রইলো আমার , আর কিছু বলতেই পারলাম না । আভা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল_
-- শোন সে চলে গিয়েছে ভালোই হয়েছে সবচাইতে বেশি ভালো কি হয়েছে জানিস? তোদের সম্পর্কটা শুরুই হয়নি তার পূর্বেই বিচ্ছেদ হয়েছে । সম্পর্ক রানিং অবস্থায় যদি এই সত্যিগুলো সামনে আসতো তখন হয়তো ঝামেলা বেশি হয়ে যেত । আর তুই তো ওকে ভালোও বাসিস না ।
-- হুম কিন্তু ও আমার অভ্যেসে পরিণত হয়েছিল এজন্য ভুলতে পারিনা । হয়তোবা সময়ের সাথে সাথে ভুলে যাবো কিন্তু এখন যেই কষ্টটা হয় এটা কাউকে বোঝানোর মত না ।
-- এভাবে ভেঙে পড়িস না স্যুপ । উই উইল অলওয়েজ দেয়ার ফর ইউ
আমার গলা জড়িয়ে ধরলো আভা । ওর কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে পুরাতন স্মৃতিতে অবগাহন করলাম ।
যার কথা বলা হচ্ছে সে হলো প্রিয়। সত্যিকার অর্থেই আমার প্রিয় মানুষ।
আমাদের ক্যামেস্ট্রি স্যারের একমাত্র ছেলে । এসএসসি পরীক্ষা শেষে অবসর দু মাসের গ্যাপে বন্ধুদের সাথে ফিজিক্স ক্যামেস্ট্রি শুরু করেছিলাম সরকারি কলেজের দুজন টিচারের কাছে । তাদের মধ্যে ক্যামেস্ট্রি স্যারের নাম পরিতোষ ।  কলেজের পাশেই একটা দোতলা বাসায় উনি ভাড়া থাকেন । বন্ধুরা প্রাইভেট শুরু করবার দু সপ্তাহ পেরিয়ে আমি যোগ হই যার ফলে স্যারের নাম অবধি জানা ছিলো না আমার । পড়াশোনার ব্যাপারে উদাসীনতার কারণে আগ্রহ ভরে জিজ্ঞেসও করিনি একটাদিন ।
যাহোক সপ্তাহে তিনদিন সকাল সাড়ে সাতটায় স্যার পড়াতেন । অত সকালে আমার ঘুমই ভাঙতো না । মায়ের বকুনি খেয়ে অর্ধেক টাইম পেরিয়ে ঢুলুঢুলু অবস্থায় পৌঁছুতাম স্যারের বাসায় ।
কয়েকদিন যেতেই আমার মনে হতে লাগলো কেউ আমাকে ফলো করে, কিন্তু ধরতে পারিনা, কে।
বন্ধুদের সাথে ডিসকাস করি কিন্তু তারা এমন কিছু লক্ষ্য করেনি বলে গায়েই মাখেনা । এদিকে আমার মস্তিষ্কে বসে যায় ব্যাপারটা । আমি বেশ সতর্ক হয়ে চলাফেরা শুরু করি । আমার সতর্ক হবার পরপরই মানুষটা গা ছাড়া স্বভাবের হয়ে যায় , যেচে পড়ে ধরা দিতে আসে ।
তাকে হাতে নাতে ধরার পরেও বন্ধুরা বিশ্বাস করতে চায়না কারণ আমি মুসলিম সে হিন্দু । সে জেনেবুঝে একটা মুসলিম মেয়েকে কেন পছন্দ করবে? বলা বাহুল্য আমিও সেদিনই জানতে পারি আমি যার কাছে নিয়মিত পড়তে আসি উনি সনাতন ধর্মাবলম্বী বিলং করেন । এটা জানার পর প্রিয়'র ওপর রাগ হয় , না জেনে সে কেন আমার পিছু নেয় । তার কিছু আচরণ যে আমাকেও মুগ্ধ করে ফেলেছে অলরেডি । এই ব্যাপারটাই মানতে নারাজ ছিলাম আমি ।
একদিন সরাসরিই তাকে জিজ্ঞেস করি সে কেন আমার পিছু করে?
সে মাথা নিচু করে বলে , আই থিংক আই আ্যাম ইন লাভ উইথ ইউ ।
তার উত্তরে আমি অবাক হইনা কারণ একটা ছেলে নিশ্চয়ই  অযথা আমার পিছু করবে না ।
আমি স্বাভাবিক কণ্ঠেই পাল্টা প্রশ্ন করি_
-- আপনি কি জানেন আমি একজন মুসলিমা ।
সেও বিশেষ অবাক হয়না ।
-- আমি জানতাম ।
-- আপনি জেনে বুঝে আমাকে ভালোবাসেন?
-- হু । ধর্ম কি ভালোবাসা আটকাতে পারে!
-- সমাজ আটকাতে পারে । আমরা চাইলেই যাকে তাকে ভালোবাসতে পারিনা । আমাদের মধ্যেকার এই ব্যবধানটা অন্য এক পর্যায়ের ।
-- তুমি শুধু একবার বলো সুপ্ত । আমি লড়বো সবার বিরুদ্ধে ।
-- বিষয়টা এতটাও সহজ নয় প্রিয় দা ।
-- প্লিজ সুপ্ত এভাবে বোলো না ।
-- থিংক প্রাক্টিক্যালি । এভাবে হয়না আসলে ।
এরপর আমাদের অনেক বাকবিতণ্ডা হয় । পরিশেষে হার মানতে হয় তাকে । আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কম্পিত কণ্ঠে সে প্রশ্ন করে_
-- তুমি তা'হলে আমার হবেই না?
তার টলমল চোখ দেখে আমার ভেতরটা ভেঙে আসতে চায় । কান্না আটকে শুকনো একটা ঢোক গিলে বলি "উঁহু । যা হবার নয় তা নিয়ে.."
আমায় কথা শেষ করতে না দিয়েই সে পিছু ঘুরে যায় । নাক টেনে গলার স্বরটা গম্ভীর করার চেষ্টা করে বলে,
--" ভালোবাসা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে হয়না সুপ্ত । তুমি চাইলেই আমাদের পথটা এক হতে পারতো।  যাকগে...
তবে মনে রেখো এই প্রিয় আজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে , আজীবন"
আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না প্রিয় । আমার মনটা ব্যাকুল হয়ে যায় তাকে একটাবার জড়িয়ে ধরবার জন্য, কিন্তু এ যে অসম্ভব ।
এরপর থেকে আজ অবধি প্রিয়'র ছায়াটাও দেখিনি আমি । মাঝেমধ্যে নিজেকে খুব অসহায় লাগে , প্রিয়কে এক পলক দেখার জন্য চোখে তৃষ্ণা জাগে কিন্তু পারিনা । সেই পথ যে নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছি যে । হয়তোবা তাকে এক পলক দেখার আশা আর কোনোদিন পূরণ হবে না , কোনোদিন না ।
-- কি রে কোন খেয়ালে হারালি?
আভার ডাকে হুঁশ ফেরে আমার । চোখের কোলে আসা পানিটা তর্জনী চেপে মুছে মাথা নেড়ে বলি _
-- কিছু না ।
আভা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে_
-- কাঁদিস না । ভুলে যা এসব ।
-- হু ।
-- আচ্ছা মা বললো তুই নাকি নিদ্র ভাইয়ার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছিলি তাকে । কেনো রে আমার ভাই কে বুঝি পছন্দ হয়ে গেলো হুউউ..
-- ধুরর কি যা-তা বলিস । ঐ আ্যারোগেন্ট , অসভ্য ছেলেকে আমি পছন্দ করবো ছ্যাহ ।
-- হায় হায় আমার অত্ত সুন্দর ভাইটা কে তুই অসভ্য বানিয়ে দিলি!
-- তা নয় তো কি । জানিস সে কি করেছে?
-- কি করেছে?
-- সে তো.. এতটুকু বলে থেমে গেলাম আমি । নাহ্ আভাকে বলা যাবেনা পরে ফ্যামিলির ভয়ে রিলেশন ভেঙে দিতে পারে ।
কথা কাটিয়ে বললাম_
-- অনেক অসভ্যতামী করেছে । আমাকে ইগনোরও করেছে জানিস! তখন প্রোগ্রামে আমি একবার কেকের বাটি নিয়ে গেলাম অথচ সে নিলোই না আমার থেকে , জুস এগিয়ে দিলাম তাও নিলো না । আকড়ু ছেলে কোথাকার ।
-- আয়হায় বলিস কি । আমাদের ডালিমকুমারী কে এভাবে ইগনোর করলো সে । নাহ্ একদমই ভালো করেনি ।
-- হুহ্ ঢং ।
মুখ বাঁকিয়ে বললাম আমি । আমার মুখ বাঁকানো দেখে হা হা করে হেসে উঠলো আভা ।
-- তুই আসা মাত্রই ঝগড়া! ইন্টারেস্টিং তো । এটা জানিস ঝগড়া কিন্তু প্রেমের সূচনা ।
-- ঐ গোমড়ামুখোর সাথে কে প্রেম করবে ছিঃ ছিঃ ।
-- তোদের কিন্তু মানাবে বেশ ।
-- চুপ অসভ্য । হাসবি না একদম , দাঁত ভেঙে দিবো কিন্তু ।
-- আচ্ছা আচ্ছা হাসবো না ।
হাসবো না বলেও মুখে হাত দিয়ে গা দুলিয়ে হাসছে আভা । এবার বিরক্ত লাগছে আমার । চোখ গরম করে ওকে থামাতে চেষ্টা করছি , এতে ওর হাসি আরো বাড়ছে ।
আসলে পাগল হয়ে গিয়েছে মেয়েটা । ওকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে ফোনটা হাতে করে ব্যালকোনিতে চলে আসলাম । আমি বেরিয়ে আসার পর ওর হাসির আওয়াজ আরো বেড়ে গেলো । আশ্চর্য্য একটা মেয়ে এত হাসে কীভাবে!
আর ভাবতে ইচ্ছে করলো না এসব নিয়ে । সব উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে গ্রীলের ফাঁক দিয়ে সুবিশাল আকাশটার দিকে তাকালাম । আজ আকাশে কোনো চাঁদ নেই কেবল ছোট ছোট তারা ।
দু'টো তারা একটু বেশীই জ্বলজ্বল করছে মনে হচ্ছে । তারা দু'টোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার মনে হলো এখন বড় আপু আমাকে কল করবে । হয়তোবা পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ।
ভাবনাচিন্তা সুদূরপ্রসারী হবার পূর্বেই হাতে থাকা ফোনটা বেঁজে উঠল । একগাল হেসে রিসিভ করলাম আমি । ওপাশ থেকে আপু মিষ্টি গলায় প্রশ্ন করলো_
-- হাসছিস কেন?
-- কে বললো আমি হাসছি ।
-- অবশ্যই হাসছিস তুই । বারোটা দাঁত বের করে হাসছিস ।
-- তাই নাকি? কে বললো তোকে যে আমি হাসলে বারোটা দাঁত দেখা যায় ।
-- কাউকে বলতে হবেনা । আমি গুণে দেখেছি । তুই সবসময় হি করে হাসিস যার ফলে তোর দু পাটি দাঁতের মধ্যে সামনের ৬ টা করে দাঁত স্পষ্ট দেখা যায় ।
-- আচ্ছা তাই!
-- জ্বী তাই । আচ্ছা এখন হাসি থামা । বল কেমন আছিস?
-- ভালোই আছি । তোর কি খবর!
-- আমি বিরিশিরি এসেছি এবার । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনমুগ্ধকর।
-- তার মানে তোর মন ভালো আছে?
-- একদম।
-- কবে আসবি?
-- জানিনা । হুট করে চলে আসবো ।
-- এবার কার সাথে গিয়েছিস রে?
-- তৌহিদের সাথে ।
-- তৌহিদ ভাই কই?
-- ঘুমায় ।
-- এই অসময়ে ঘুম ।
আমার প্রশ্নের জবাব দিলো না আপু । কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল_
-- একটা ভয়ংকর সংবাদ জানাবো তোকে ।
ওর কথা শুনে ফোনটা কেটে দিলাম । আমি জানি কি সংবাদ শোনাতে চায় ও । শী ইজ নট ভার্জিন এনিমোর ।
খারাপ লাগছে আমার । তৌহিদ ভাইয়ের সাথে ব্রেকাপ করে দিবে এবার । তৌহিদ ভাই ভালো মানুষ , আপুকে ভীষণ ভালোবাসে । আমি জানি আপুও তাকে ভীষণ ভালোবাসে কিন্তু আফসোস তারা এক হতে পারবে না ।
ব্যালকনির ডিভানে গা এলিয়ে দিলাম আমি ।
আচ্ছা এই সমাজের ভয়ে কতগুলো জুটি এভাবে ভেঙে গেলো?
আমরা দু বোন কি কখনোই ভালোবাসাটাকে আপন করে পাবো না? আমাদের ভাগ্য এত খারাপ কেন?
চলবে
sinin tasnim sar

এক মুঠো গোলাপМесто, где живут истории. Откройте их для себя