এক মুঠো গোলাপ
১০
___
সেদিন বাসায় আসার পর পুরো এক সপ্তাহ আমি নিদ্রর সাথে কোনো প্রকার কথাবার্তা বলিনি। না অনলাইনে আর না ক্লাসে।
ইনফ্যাক্ট টিউশন ক্লাসই মিস দিয়েছি তীব্র অভিমানে। পুরো একটা সপ্তাহ পড়তে না যাওয়ায় নিদ্র বাপির কাছে কল করেছিলো । উইকেন্ডে ডিনার শেষ করে বাপি আমায় তার ঘরে ডেকে পাঠালেন। পড়া ফাঁকি দেয়াটা একদমই পছন্দ না বাপির।
গম্ভীর ডাক শুনেই আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেলাম। মাথায় ওড়না চাপিয়ে ভদ্র সেজে গেলাম বাপির সামনে।
বিছানায় আধ শোয়া হয়ে বসে বাপি তখন "ব্লাডলাইন" বইটা পড়ছেন।
আমি চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আস্তে করে ডাকলাম_
-- বাপি?
দু মিনিট নিশ্চুপ থাকলেন তিনি। এরপর বইটা বন্ধ করে চোখ থেকে রিডিং গ্লাস খুলে মাথা তুলে তাকালেন আমার দিকে। গাম্ভীর্য্যতা বজায় রেখেই বললেন_
-- ভেতরে এসো।
আমি হালকা ভয়ে ঘামছি তখন, আর চোরা চোখে মা কে খুঁজছি; কিন্তু মা তো ঘরে নেই।
-- কি ব্যাপার এত লেইট হচ্ছে কেন?
-- না.. আসছিই!
গুটি গুটি পায়ে ভেতরে গিয়ে বিছানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। বাপি সরাসরিই প্রশ্ন করলেন_
-- তুমি নাকি পড়া মিস দিচ্ছ ইদানীং?
-- ক..কই। না তো..
-- আমার জানা মতে তোমার প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় আইসিটি প্রাইভেট । অথচ পুরো সপ্তাহটা তুমি বাসায় বসেই কাটালে।
-- স..স্যার ঢাকায় গিয়েছে।
-- মিথ্যে কথা। তোমার স্যারের সাথে প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলার দিকে সামহাউ দেখা হয়ে যায় আমার। সে যদি ঢাকায় থাকতো তাহলে রংপুরে কি তার ডাবল পার্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে?
ধমকের সুরে বললেন বাপি। হুট করে ধমক খেয়ে কেঁপে উঠলাম আমি। মিনমিন করে বললাম_
-- স্যারি বাপি আর হবে না।
-- হোয়াট স্যরি? গুণে গুণে আর তিনমাস পর তোমার বোর্ড এক্সাম আর তুমি লাস্ট মোমেন্টে এসে উদাসীন হয়ে যাচ্ছ!
হোয়াটস রঙ উইথ ইউ সুপ্ত?
-- আ্যাকচুয়ালি আমিও বুঝতে পারছি না বাপি আমার পড়তে ইচ্ছে করছে না। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না, পড়াশোনায় কন্সান্ট্রেট করতে পারছি না।
-- পারছি বললে কি হবে? তুমি যদি ইচ্ছাপোষণ না করো, চাহিদা না থাকে তাহলে তো উদাসীনতা আসবেই।
তোমার কি একা থাকতে কষ্ট হচ্ছে? রাফনিদ কে ডাকবো?
-- ডাকো বাপি। একমাত্র সে আমার মনটা ভালো করে দিতে পারবে।
-- ওকে আমি এখনই কল দিচ্ছি রাফনিদ কে। তুমি মন খারাপ করবে না। যাও পড়তে বসো। নিদ আসুক তারপর ওর সাথে একবেলা বাইরে থেকে ঘুরে এসো। তোমার যেভাবে মন ভালো হয় আমরা সেটাই করবো বাট পড়াশোনায় যাতে কমতি না হয়।
-- থ্যাংকিউ সো মাচ্ বাপি এন্ড আই আ্যাম রিআ্যালি স্যরি।
মাথা নিচু করে চোখের পানি লুকোনোর চেষ্টা করলাম আমি। কিন্তু বাপি ঠিকই বুঝে গেলেন।
উঠে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন পরম স্নেহে।
বাপির স্নেহে আমার কান্না বেড়ে গেলো, আমি বিড়বিড় করে স্যরি, স্যরি বলতেই থাকলাম।
এত ভালো বাবা কারো হয় বুঝি!
____
বাপির ইমার্জেন্সি কল পেয়ে পরদিনই আপু হাজির। চোখে মুখে উদ্বিগ্নতা ফুটিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করে,"কি হয়েছে?"
এতদিনে আমি আমার সিক্রেট বক্সকে সামনে পেয়েছি, মনের ভেতর আর কথা চেপে রাখার মানে হয়!
ব্যাস গড় গড় করে সবটা বলে দিলাম তাকে।
নিঃশব্দে সবটা শোনার পর আপু আমায় বললো_
-- নিদ্রর দিক থেকে কিন্তু সবটাই ধোঁয়াশা। আপাতত তোকে ভাবতে হবে তোর ব্যাপারটা সম্পূর্ণই ওয়ান সাইডেড লাভ ওকে? ওয়ান সাইডেড লাভে বেশ কয়েকটা রুলস আছে। তার মধ্যে একটা হলো রাগ-অভিমান থাকা যাবেনা। তোর অনুরাগ বোঝার মত মন মানসিকতা যদি সামনের মানুষটার তৈরি না হয়ে থাকে তাহলে অযথা তুই তার কোনো আচরণে রাগ কিংবা অভিমান করবি কেন?
রাগ-অভিমান এইসব অনুভূতি তখনই শোভা পাবে যখন এগুলো সামলানোর মানুষ থাকবে। তুই যাকে ভালোবাসিস তার ফিলিংসই তো জানিস না তাহলে বোকার মত পরিস্থিতি ট্যাকেল না দিয়ে জীবন ধারণ করা ছেড়ে দিচ্ছিস কেন?
-- তাহলে আমি কি করবো?
-- কি করবি মানে! এতদিন যেভাবে জীবন ধারণ করছিলি ওভাবেই করবি। তার মধ্যে এটাও চেষ্টা করবি মানুষটাকে তোর ফিলিংস বোঝানোর।
বুঝলে তো ভালো কথা। আর না বুঝলে..
-- না বুঝলে?
-- না বুঝলে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
-- কি ব্যবস্থা?
-- সেটা পরে হবে। ঐসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করিস না। আমি দেখবো ব্যাপারটা। এখন তুই স্বাভাবিক হয়ে যা৷ স্বাভাবিক এবং নিউট্রাল।
আপুর কথামত আমি একদম স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। ডেইলি টিউশন, এক্সামে আ্যাটেন্ড করতে শুরু করলাম। তার সাথে নিদ্রর ঐ হবু বউয়ের খোঁজও লাগাতে শুরু করলাম। মেয়েটার সাথে সরাসরি কথা বলা প্রয়োজন আমার।
,
সব স্বাভাবিকভাবে চললেও মনের ভেতরটা কিছুতেই শান্ত হতে পারছিল না। আমার অস্থিরতার পারদ ফাটতো নিদ্রর সামনে গেলেই। তাকাবো না তাকাবো না করেও তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম, আগের মতই চিরকুটে হাবিজাবি কথাবার্তা লিখে দিতাম।
তবে নিদ্রর তরফ থেকে কোনো ইঙ্গিত না আসলেও মাঝেমধ্যে লক্ষ্য করতাম সেও দু একবার করে আমার দিকে তাকায়। কখনো সরাসরি কখনো চোরাই চোখে।
আমি ব্যাপারটা নরমাল ধরে নিতে গিয়েও দুবার ভাবতাম। আসলেই নরমাল নাকি সেও...
মানুষের জীবনটা আসলে তার চিন্তা ভাবনার ওপর নির্ভরশীল। আমি যেই মুহুর্তে নিজের মস্তিষ্ক টাকে একটা নির্দিষ্ট চিন্তার মাঝে সীমাবদ্ধ করে নিলাম। মনকে মানিয়ে নিলাম "এভ্রিথিং উইল বি ওকে"
বাক্যের মধ্যে, ঠিক ঐ মুহুর্ত থেকে আমার জীবনটা পূর্বের মত হয়ে গেলো।
এর মধ্যে হুট করে একটা গুড নিউজ।
আমার মেজো খালামণির একমাত্র মেয়ে শিউলি আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো৷
এক সপ্তাহ আগেই আমাদের যেতে হবে।
বাপি তো রেগে আগুন। এমন উল্টোপাল্টা মুহুর্তে ফ্যামিলি ফাংশানের কোনো মানে হয়!
বাপির কথা উনি কিছুতেই যাবেন না। মেজো খালামণিরা পড়লেন বিপাকে। এদিকে আমি ফাংশানে আ্যাটেন্ড করবো বলে এক পায়ে রাজি। কদাচিৎ এরকম ফ্যামিলি ফাংশানের দেখা পাওয়া যায়। আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট থিংক নিদ্র শিউলি আপুর ফ্রেন্ড। নিদ্রও নিশ্চয়ই বিয়েটা আ্যাটেন্ড করবে?
ও থাকলে আমি অবশ্যই যাবো।
কিন্তু বাপিকে রাজি করাবো কি করে!
অনেক চিন্তাভাবনা করে মনে হলো শিউলি আপু যদি বাপিকে কল দিয়ে একটু কান্নাকাটি করে তাহলে কিছু হতে পারে!
বাপি আমাদের কাজিনদের মধ্যে শিউলি আপুকে খুব পছন্দ করেন। আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত্রিবেলা শিউলি আপু বাপিকে কল দিয়ে সে কি কান্না!
তার কথা বাপি উপস্থিত না থাকলে বিয়েই ক্যান্সেল। শেষে ওর কান্নাকাটি দেখে বাপিকে রাজি হতেই হলো।
বাপি জানালেন পরদিন সকালেই আমরা রওয়ানা হয়ে যাবো ওদের বাসার উদ্দেশ্যে ।
শপিংসহ যাবতীয় সব ওখানে গিয়েই হবে।
এক্সাইটমেন্টে ফের ঘুম উড়ে গেলো আমার।
সারারাত আভা আর জেরিনের সাথে প্রোগ্রাম নিয়ে ডিসকাশন করেই কাটলো।
চলবে,
sinin tasnim sara
KAMU SEDANG MEMBACA
এক মুঠো গোলাপ
Misteri / Thrillerশুচিস্মিতা কবির সুপ্ত। সর্বদা নিজ জীবন চক্রকে জটিল ভেবে এসেছে। এক সময় তার জীবন সম্পর্কে জটিল ধারণাগুলোকে ভুল প্রমাণ করে জীবনের মানে শেখাতে এসেছিল একজন। জীবন নামক বর্ণহীন আকাশে হুট করে শত রঙের প্রজাপতি ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছিল। সকল জড়তা কাটিয়ে বর্ণ...