এক মুঠো গোলাপ ১৫

9 1 2
                                    

এক মুঠো গোলাপ
১৫
___
 
সময়টা শেষ বিকেল।  সূর্যের নরম রোদ জানালার কাচ ভেদ করে আলতো করে ছুঁয়ে যাচ্ছে আদুরে মুখে। 
জানালার কার্নিশে মাথা ঠেকিয়ে আলোর ছটাগুলো হাতের মুঠোয় আগলে নেবার চেষ্টা করছি, কখনোবা  ফিসফিসিয়ে  আহ্লাদী গল্প জুড়ে দিচ্ছি তাদের সাথে । পাগলামি হলেও কাজটা আনন্দ দিচ্ছে বেশ। 
পশ্চিম আকাশ লাল আবিরে ছেয়ে গেছে। দলবেঁধে কিছু শঙ্খচিল মনের সুখে উড়ো উড়ি করছে আকাশের বুকে।  অস্তমিত টুকটুকে সূর্যটাকে তারা এমনভাবে ঘিরে রেখেছে যে দূর থেকে মনে হচ্ছে যুবতীর গলায় সূর্যমুখী লকেট। 
,
এমনই কোনো এক বিকেলে নিদ্রর সাথে ওদের বাসার ছাদে বসে গল্প করছিলাম। 
আকাশের বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেঘ গুলোর দিকে ইশারা করে ও বলেছিল,
-- সুপ্ত ঐ দেখো আকাশজুড়ে তোমার পোট্রেট। 
-- আমার পোট্রেট! কই?
-- দেখো আমার চোখ দিয়ে দেখো,  ভালোবাসার দৃষ্টি মেলে দেখো। বিশাল আকাশে তোমার আদুরে  মুখটা ভাসে। ঐ যে শঙ্খচিলটা উড়ে যায় ও হলো তোমার চিবুকের  তিল। 
ওর কথা শুনে আমি ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিলাম, সাথে আনন্দও লাগছিল ।  এমন ভালোবাসাময় বাক্য ওর মুখ থেকে কদাচিৎ বেরোয়। 
আজ প্রায় দেড়মাস হলো আমাদের দেখা নেই। ক্যারিয়ার সাজাতে মানুষটা কি ভীষণ নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছে। 
কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে, নেটে পাওয়া যায় না।  এখন আবার ফোন কানে নিলেই পড়ার গান।  "সুপ্ত কয়টা বই কমপ্লিট করলে? কতবার রিভাইজ দিলে,  কনফিডেন্স তৈরি হয়েছে তো? এ প্লাস আসবে না!"
এমন কত কত প্রশ্ন, সব পড়াশোনা নিয়ে। মাঝেমধ্যে মনে হয় একটা রাগী টিচারের সাথে পড়ার সাজেশন নিতে ফোন দিয়েছি। 
নিদ্রর কথা মনে পড়তেই মনটা আনচান করতে শুরু করলো। 
সেই মুহুর্তেই কর্ণকুহরে একটা বিরহী গানের কয়েকটা লাইন ভেসে আসলো,
"রঙ্গিলা রঙ্গিলা,  রঙ্গিলা রে
আমারে ছাড়িয়াড়ে বন্ধু কই গেলা রে"
ভ্রু কুঁচকে  আমি ছুটে গেলাম ব্যালকনিতে। 
গলির মোড়ের চায়ের দোকাটায় কয়েকটা ছোকরা সাউন্ডবক্সে গানটা বাজাচ্ছে । 
মাই গড,  হোয়াট আ টাইমিং!
দারুণ বিস্মিত হয়ে গেলাম আমি।
"তোর বিরহের খবর পুরো শহরে ছড়িয়ে গেলো নাকি সুপ্ত!"
বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরুলো,  এ ছাড়া আর কিছুই তো করার নেই। 
___
রবী ঠাকুরের "শেষের কবিতা" বইটা হাতে নিয়েছিলাম পড়তে। কিন্তু আমার চোখ ইদানীং কোনো প্রকার বই ই সহ্য করতে পারেনা। কোনো বইয়েরই এক পাতা কোনো  শেষ করামাত্র জোঁকের মত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে  ঘুম। চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। অজান্তেই ঘুমের সাগরে তলিয়ে যাই। 
আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেড় ঘন্টার গভীর ঘুমটা ভেঙে যায় ফোনের ভয়ানক শব্দে। 
ধড়ফড় করে উঠে আগে ঘরের লাইটটা জ্বালাই। এত বিলম্বের পরেও ফোনটা বাজা বন্ধ হয়না। ডেস্ক টেবিলের ওপর থেকে ফোন হাতে নিতেই স্ক্রিনে আভার নামটা ভেসে ওঠে।  বিরক্তি যেন আরো বেড়ে যায়।  অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিসিভ করে ধমকের সুরে বলি_
-- কি হয়েছে এমন ননস্টপ কল করে যাচ্ছিস কেন অসময়ে?
-- ধমকা ধমকি ছাড় আগে বল তো মিষ্টি কবে খাওয়াবি?
-- মানেহ?
-- এখন মানে মানে করে লাভ নেই চান্দু। আমার ভাইকে দিওয়ানা আশিক বানিয়ে ছেড়েছো, সে তো তোমায় ছাড়া কিছু বোঝেই না।  রিলেশনে গেলা ট্রিট অবধি পাইনি।  এখন শুনছি ভাই তোদের রিলেশানের ব্যাপারটাও ফ্যামিলিতে জানাবে। 
মামণিকে অলরেডি বলেছে।  তাহলে মিষ্টি তো আমার প্রাপ্য তাই না?
-- মানে যা-তা। তোদের ভাই বোন দুটোকে স্রেফ কঞ্চির বাড়ি দেয়া উচিৎ ।  ওটাই ডিজার্ভ করিস তোরা।  একজন আমাকে ইগনোর করে,   ফ্যামিলির সামনে কনফেস করছে।  আরেকজন আসছে মিষ্টি চাইতে।  মাইর চিনিস?
-- এই এই খবরদার আমার ভাইয়ের নামে মিথ্যাচার করবি না।  ইগনোর করলে এত রোম্যান্টিক স্ট্যাটাস দিতো বুঝি!
-- রোম্যান্টিক স্ট্যাটাস! কোথায়?
-- আ্যাক্টিং হচ্ছে না! কিছুই জানো না তুমি। 
-- আমি আসলেই জানিনা। অনেকদিন থেকে নেটে যাচ্ছি না তো। 
-- বলিস কি! তাহলে তো সারপ্রাইজ নষ্ট করে দিলাম আমি। 
-- সারপ্রাইজ!
-- হুম।  তুই  নেটে আয় নিজেই দেখে নে। 
-- তুই বল না?
-- না বাবা আমি বলে আরেক অপরাধ করতে পারবো না। 
আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই কল ডিসকানেক্ট দিলো আভা।
মুখ বাঁকিয়ে দু চারটে গালি দিয়ে ডাটা অন করলাম।  আমারও তো দেখা উচিৎ রাগী টিচার টা কি সারপ্রাইজ রেডি রেখেছে আমার জন্য। 
,

এক মুঠো গোলাপDonde viven las historias. Descúbrelo ahora