এক মুঠো গোলাপ ১৮

3 1 0
                                    

এক মুঠো গোলাপ
১৮
____
(নিদ্র)
এলোমেলো পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে নিদ্র। উসকোখুসকো চুল, অবিন্যস্ত বসন;মলিন মুখ আর টকটকে লাল চোখে কি ভয়ানক দেখতে লাগছে তাকে। নিজের সর্বস্ব পুশ করে শরীরটাকে টেনে নিয়ে দাঁড় করালো আ্যাপার্টমেন্টের সামনে। 
কম্পিত হাতটা বাড়িয়ে দু'বার কলিংবেলে প্রেস করতেই "খট্" করে ছিটকিনি খোলার শব্দ পাওয়া গেলো। 
দরজার মুখে বিধস্ত অবস্থায় ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলেন অনিমা।  কণ্ঠে একরাশ উদ্বেগ ফুটিয়ে প্রশ্ন করলেন_
-- বাবা কি হয়েছে তোর?
নিদ্র কোনো জবাব না দিয়ে  নিজের ঘরে চলে গেলো ৷ ল্যাপটপের ব্যাগটা কোনো রকমে বিছানায় ছুঁড়ে মেরে কি যেন খুঁজতে শুরু করলো। পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা না পেয়ে চিৎকার করে উঠলো_
-- আমাকে না বলে আমার পারসোনাল জিনিসে হাত দেয়ার সাহস হয় কি করে?
অনিমা চৌকাঠে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলেন। নিদ্রকে ভায়োলেন্ট হতে দেখে ছুটে আসলেন ঘরের ভেতর। 
-- বাবা কি হয়েছে তোর? আমাকে বল,  রেগে যাচ্ছিস কেন এভাবে?
-- আমার ডায়েরি কোথায় মা?
-- ডায়েরি!
-- হ্যাঁ ডায়েরি ।  ওখানে আমার অর্পিতার ছবি আছে।  অর্পিতার শেষ স্মৃতি । 
-- শেষ স্মৃতি?
বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন অনিমা। 
অশ্রুসিক্ত নয়নে নিদ্র কিছু উত্তর দিবে তার পূর্বেই সেলফোন বেজে ওঠে। 
প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে এক হাতে চোখ মুছে রিসিভ করে। 
-- ওকে দেশে নিয়ে আসা হয়েছে তাওসিফ?
--.....
-- আমিও যাবো রাজশাহী ।
--....
-- আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা। 
--....
-- তুই আমারও টিকেট কাটবি। 
--....
-- ওকে ফাইন।  নিজের ব্যবস্থা নিজেই করতে পারবো আমি। 
ফোনটা কান থেকে নামিয়ে ছুঁড়ে মারলো নিদ্র। তৎক্ষণাৎ ওটা দেয়ালে বাড়ি খেয়ে ভেঙে চৌচির হয়ে গেলো। 
অনিমা আরো ঘাবড়ে গেলেন। ছুটে এসে ছেলের ডান বাহু টেনে ধরে ধমকের সুরে প্রশ্ন করলেন_
-- পাগলামি করছিস কেন? কি হয়েছে বলবি!
-- এখন শুনে কি করবা তুমি হ্যাঁহ? এখন শুনে কি করবা। 
পাল্টা চিৎকার দিলো নিদ্র।  অনিমা ভীষণ কষ্ট পেলেন ছেলের আচরণে। 
এদিকে ওদের চিল্লাচিল্লি শুনে ঘর ছেড়ে ছুটে এলো নুহা। 
অনিমাকে নিদ্রর সামনে থেকে টেনে নিয়ে এলো বাইরে এবং বেরুবার পূর্বে কড়া ভাবে বললো_
-- অমানুষের মত আচরণ বন্ধ কর নিদ্র।
নিদ্র প্রতুত্তরে জল ছলছল নয়নে প্রশ্ন করলো_
-- অমানুষ বানিয়েছিস তোরাই।  আচরণ সইতে এখন কষ্ট হয় কেন?
,
ড্রয়িংরুমে অনিমা কে বসিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে এলো নুহা।  অনিমার হাতে দিয়ে নরম সুরে  বললো_
--ফুপি পানিটা খাও। 
অনিমা পানির বোতল হাতে না নিয়ে আর্দ্র কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো_
-- অর্পিতার কি হয়েছে তুই কি কিছু জানিস?
এ কথা শুনে নুহা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।  হাঁটু মুড়ে বসে বিষণ্ণ হয়ে বলে_
-- অর্পিতা  কাল ভোরের দিকে মারা গেছে। 
-- কিইহ্
বজ্রাহত দৃষ্টিতে তাকায় অনিমা, নুহার দিকে।
নুহা মাথা নেড়ে হুম বলে। 
অনিমা সোফায় স্থির হয়ে বসে এবার।  যন্ত্রের মত জিজ্ঞেস করে_
-- কীভাবে মরে গেলো?
-- ব্রেইন টিউমার হয়েছিল।  অপারেশনের পর তা ক্যান্সারে রূপ নেয়।  বেশ কয়েকদিন যাবৎ অসুস্থ পড়ে ছিলো। গতকাল বাঁচা মরার লড়াইয়ে হেরে গেলো। 
-- নিদ্র এজন্য পাগলামি করছে?
-- হুম।  তাওসিফ একটু আগেই জানালো ওকে। 
-- নিদ্রকে কোনো ভাবেই রাজশাহীতে যেতে দেয়া যাবেনা নুহা।  অর্পিতার বাপ-ভাই ওরে মেরেই ফেলবে।  তুই আটকা আমার ছেলেটাকে।
-- কীভাবে আটকাবো ফুপি? কোন মুখে?
আমরা যা করেছি..
-- চুপ।  একটা কথাও না।  আমি যা করেছি আমার ছেলের ভালোর জন্য।  খবরদার এসব কাউকে বলবি না৷  কেউ কখনোই যেন জানতে না পারে অর্পিতার সাথে নিদ্রর বিচ্ছেদের পেছনে আমার হাত রয়েছে। 
চোখ গরম করে এক প্রকার শাঁসাল অনিমা,  নুহাকে। 
পুনরায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিদ্রর রুমের দিকে পা বাড়ালো নুহা।  তাদের চক্রান্তের  কারণেই একটা সুন্দর সম্পর্ক জঘন্যভাবে ভেঙে গিয়েছিল।  এই অপরাধবোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে নুহাকে,  প্রতিনিয়ত। 
কে জানে কবে এর থেকে মুক্তি মিলবে!

এক মুঠো গোলাপOnde histórias criam vida. Descubra agora