এক মুঠো গোলাপ ১৬

6 1 0
                                    

এক মুঠো গোলাপ
১৬
___
(তৌহিদ-রাফনিদ)
খুব ভোরে উঠে ঘরের কাজে লেগে পড়েছে রাফনিদ। ক্লিনিং ডাস্টিং শেষে হট শাওয়ার নিয়ে এখন রান্নাঘরে ঢুকেছে। এক মাসের মত রংপুরে থাকবে সে।  তৌহিদ টাকে একাই থাকতে হবে এখানে। যদিও সে সাথে যাবে বলে তৈরি হতে নিচ্ছিলো কিন্তু রাফনিদ মানা করে দিয়েছে ।  এ নিয়ে এক পশলা ঝগড়া হয়েছে দু'জনার  মধ্যে  । বললেই তো আর আঁচলে বেঁধে  নিয়ে যাওয়া পসিবল না।  ওর ক্লাস আছে, এক্সামস আছে ইনফ্যাক্ট অফিসও আছে। 
শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবী চলে না। ফিউচারটাকে সিকিওর করতে হলে কত বিরহ সইতে হয়,  কত সুখের বিসর্জন দিতে হয়!
তাছাড়াও ওদের জীবনটা অতটাও সহজ স্বাভাবিক নয়। কিছু তিক্ত সত্যি,  কিছু অভিযোগের মধ্য দিয়ে তৈরি এ সম্পর্ক।  এখন পর্যন্ত রাফনিদের শ্বশুর মশাই তাকে মেনে নেন নি।  বরং চ্যালেঞ্জ করেছেন তৌহিদ কে,  এই মেয়েকে নিয়ে সে সুখী হয়ে দেখাক।  ভালো রেজাল্ট করে দেখাক, তার চাইতে বড় বিজনেসম্যান হয়ে দেখাক।  বিয়ের পর রাফনিদ বুঝতে পারছে সুখ প্রাপ্তি  সহজ নয়। কণ্টকাকীর্ণ  এক পথ মাড়ানোর পর এর দেখা মেলে। 
সবেমাত্র এই পথে যাত্রা শুরু।  জানা নেই কতটা হাঁটতে হবে,  কতটা সইতে হবে।  এও জানে না তৌহিদকে সব সময় পাশে পাবে নাকি যন্ত্রণা সইতে না পেরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে দুজনের পথ। 
,

  কিছুক্ষণ পর পর খুট খাট,  টুং টাং শব্দে ঘুমটা হালকা হয়ে এলো তৌহিদের। বিরক্তিতে "চ-কারান্ত" একটা শব্দ মুখ থেকে বের করে বালিশের নিচে ঢুকে গেলো,  যদি এই ভয়ানক শব্দদূষণের হাত থেকে একটু রেহাই পাওয়া যায়!
কিন্তু এ অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া ভারী দুষ্কর।  বেগম সাহেবা যেন আজ পণ করেছেন শান্তির ঘুম  তার কপালে নেই। 
ভাবনার মাঝেই পুরো বাসা কাঁপিয়ে  প্রেসার কুকারের সিটি বেঁজে ওঠে।  সাথে সাথে তৌহিদও লাফ দিয়ে উঠে বসে। হার্ট খুব জোরে বিট করতে শুরু করে ,  মাথা চেপে ধরে চোখ বড় বড় করে বসে থাকে সে।  মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গিয়েছে একদম। 
কিছুটা সময় নিজেকে ধাতস্থ করে ধপাধপ্ পা ফেলে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। 
রাগে সমস্ত গা রি রি করছে তার।  রাফনিদকে তুলে আছাড় না দিয়ে থামবে না আজ। 
রান্নাঘরের চৌকাঠে পা রাখতেই ভয়ানক রাগটা  ফুসস করে উড়ে যায়৷ দরজায় হেলান দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকে ভেতরটায়। 
তার বউ কি সুন্দর  ছুটোছুটি করে রান্না করছে। 
পরনের বেগুনি শাড়িটার আঁচল কোমরে গুঁজে রেখেছে সে।
অবহেলিত ভাবে কাঁধের দিকটায় খোঁপার মত পেঁচিয়ে ফেলে রাখা সপসপে ভেজা চুলগুলো দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ে ভিজে যাচ্ছে সুতির বেগুনি ব্লাউজ।
এদিকে তার খেয়াল নেই। সে তো এক মনে কড়াইয়ে চামচ নাড়াতে ব্যস্ত। 
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় ভেতরে প্রবেশ করে তৌহিদ ।  সোজা রাফনিদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। 
দু হাত বাড়িয়ে ওর কোমর আঁকড়ে ধরে চিবুকটা কাঁধে রেখে জিজ্ঞেস করে_
-- কি হচ্ছে এসব সক্কাল সক্কাল। 
হুট করে জড়িয়ে ধরায় ভয় পেয়ে যায় রাফনিদ। চমকে উঠে বলে-
-- এভাবে কেউ আসে?
-- কীভাবে আসতে হয় তাহলে?
কাঁধে নাক ঘষতে ঘষতে প্রশ্ন করে তৌহিদ । শিরশিরে অনুভূতি হতেই ছাড়া পাওয়ার জন্য ছুটোছুটি করতে শুরু করে রাফনিদ ।  তৌহিদ ভারী বিরক্ত গলায় বলে_
-- ডিস্টার্ব করো কেন?
-- আমি ডিস্টার্ব করছি নাকি তুই ডিস্টার্ব করছিস? ফ্রেশ ট্রেশ হওয়া নেই, এভাবেই আমাকে জাপটে ধরেছিস।  ছাড়,  ছাড়
-- আবার তুই তোকারি শুরু!কামড়ে দিবো একদম। 
কাঁধে আলতো করে কামড় বসিয়ে বললো তৌহিদ। মৃদু চিৎকার দিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে সরাবার চেষ্টা করলো রাফনিদ, কিন্তু বিশেষ সুবিধা করতে পারলো না।
তৌহিদ দুষ্টু হেসে রাফনিদের বা হাত চেপে ধরে নিজের এক হাত শাড়ির আঁচল গলিয়ে ওর পেট খামচে ধরলো। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ধমকে উঠলো রাফনিদ_
-- কি হচ্ছে কি তৌহিদ
-- রোম্যান্স হচ্ছে । তুমি এত সফট কেন নিদ? মনে হচ্ছে এক তাল মাখনের মধ্যে হাত ডুবে গেলো আমার। 
-- ফাইজলামির জায়গা পাও না তাইনা? ভালোভাবে বলছি সরো নইলে খুন্তি পেটা করবো বলে দিলাম৷ 
-- আমিও দেখি তুমি কি করে আমায় পেটাও। 
এক ঝটকায় নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো রাফনিদকে।  ত্রস্তে সরে যাবার চেষ্টা করে রাফনিদ বললো_
-- করো কি,  করো কি। রান্না চাপিয়েছি না আমি?
-- কেন চাপিয়েছ । 
-- প্লিজ তৌহিদ সরো।  এখন এসব করার সময় না,  আমার অনেক কাজ আছে। 
-- কাজ টাজ গোল্লায় যাক।  এখন আমরা প্রেম করবো। 
রাফনিদের নিষেধ সত্বেও ওকে কোলে তুলে নিলো তৌহিদ । 
রাফনিদ অনুনয়ের সুরে বললো_
-- আমার তরকারি পুড়ে যাবে তৌহিদ । 
-- হাত বাড়িয়ে গ্যাস স্টোভ টা অফ করে দাও। 
-- নাহ্ প্লিইজ। 
-- কিচ্ছু শুনিনা আমি, কানে তালা লাগিয়েছি। 
-- তোরে কিন্তু খুন করবো আমি। 
-- করিস।  আগে একটু সোহাগ করতে দে। 
______
(নিদ্র)

বেলা বারোটা। সারারাত প্রেমালাপ শেষে ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে নিদ্র।  ভাগ্যিস আজ অফিস নেই, কাজই তো করতে পারতো না সে। 
নুহা কখন থেকে দরজা ধাক্কাছে আর ডাকাডাকি করছে ।  সে ডাক কর্ণকুহরে পৌঁছুচ্ছেই না,  এত গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে নিদ্র। 
একসময় বিরক্ত হয়ে ডাকাডাকি বন্ধ করে দিলো নুহা।  খাবারের ট্রে টা দুম করে ডাইনিং টেবিলের ওপর রেখে বিড়বিড় করে নিদ্রকে গালাগাল করতে লাগলো। 
অনিমা বসে বসে পেপার পড়ছিলেন।  নুহাকে রাগতে দেখে পেপার সরিয়ে ওর দিকে তাকালেন।  ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন_
-- কি হয়েছে? 
নুহা যেন এরই অপেক্ষা করছিলো।  সে চোখ ছোটো ছোটো করে ফুপিকে পাল্টা প্রশ্ন করলো_
-- তোমার ছেলেটা এমন অবাধ্য কেন বলতে পারো ফুপি?
নুহার বলার ভঙ্গিতে অনিমা হেসে ফেললেন।  হাসিটা ধরে রেখেই জিজ্ঞেস করলেন_
-- এবার কি করলো আমার ছেলে?
-- হাসবে না তুমি ফুপি।  সেই কখন থেকে ডাকছি আমি তাকে,  সাঁড়াই দিচ্ছে না। 
-- ঘুমুচ্ছে হয়তো। কাল তো সারারাত জেগে কাজ করছিল, দেখলাম ঘরের লাইট জ্বালানো। 
-- রাত জেগে কাজ তাকে কে করতে বলে? বাপি এত করে বললো অফিসে জয়েন কর অফিসে জয়েন কর। নাহ্ তার তো অন্যের আন্ডারে জব করতে ভালো লাগে। 
-- ওর এই ডিসিশান টাকে কিন্তু আমি সম্মান করি।  এত কষ্ট করে ছেলেকে পড়ালাম সে যদি এখন নিজের যোগ্যতায় জব না পেয়ে মা, মামার ব্যবসায় বসে তাহলে লোকে নানা কথা বলবে।
-- কে কি বলবে তা ধরে আমাদের লাভ কি? আমরা সবাই জানি নিদ এ ওয়ান স্টুডেন্ট ।  ওর মত ব্রিলিয়ান্ট আর হয়না৷ 
-- থাক মা এসব নিয়ে কথা বলার দরকার নেই।  জানিস তো ও এসব প্রসঙ্গ সবসময় এড়িয়ে যায়।  টানাটানি করলে আবার হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।  আমি চাইনা ঘর ছেড়ে যাযাবরের মত জীবনধারণ করুক ও আবার। 
-- হ্যাঁ তাই তো।  তাকে তো আবার কিছু বলা যায়না।  করো তোমাদের যা মন চায় করো আমি কিচ্ছু বলবো না। 
-- ও কি কই যাস?
-- তাওসিফের সাথে দেখা করতে যাবো।  তোমার ছেলে তো আমায় পাত্তাই দিলো না।  রিজেক্টেড মানুষটাকে একজন করুণা করে কাছে টেনে নেবার আগ্রহ প্রকাশ করলো ।  কৃতজ্ঞতা স্বরূপ  তাকে খানিক সময় তো দিতেই হবে। 
হাসতে হাসতে কথাটা বললেও হাসির আড়ালে ওর বুক ভাঙা কষ্টটা ঠিকই দৃষ্টিগোচর হলো অনিমার। 
ওর যাবার পানে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন কেবল। তার নিজের দোষেই হয়তোবা মেয়েটা এত কষ্ট পেলো।
নুহার আকৈশোর নিদ্রকে পাবার স্বপ্নটা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিলে এই বিশ্রী ঘটনাটা আজ ঘটতো না।  এখন তো জোর করে বিয়ে করানোও সম্ভব নয়। জোর করে যে সংসার হয়না এ কথা অনিমার চাইতে ভালো আর কে ই বা জানে?
চলবে,
sinin tasnim sara

এক মুঠো গোলাপWhere stories live. Discover now