পর্ব-৩

1K 7 0
                                    

আগের পর্বের পর..

কেটে গেছে অনেকগুলো দিন অনেকগুলো মাস, এইভাবেই কেটে গেছে দশটি বছর। সময় নিজ স্রোতে বয়ে গেছে। তার আবহমানতায় কত সম্পর্ক গড়েছে কত ভেঙেছে, বদলে গেছে কত জীবন। এই দশ বছরে রূপকথার জীবনেও এসেছে অনেক বদল যা ওকে সেই তেরো বছরের শিশুসুলভ কিশোরী থেকে রূপান্তরিত করেছে তেইশ বছরের বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন কথাতে। সেই তেরো বছরের শিশুসুলভ কথা আর আজকের নোবোযৌবোনা রূপকথার মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকলেও মিল শুধু একটাই,,,,ওর রণদা তথা অরণ্যের প্রতি যে টান সেই কিশোরবেলায় অনুভব করেছিল আজও তা সমানভাবে ওর মনে বিরাজমান। সেদিন ওই আদিম বনানী কিশোরী কথার মননে অরণ্যের প্রতি যে পূর্বরাগ তৈরি করেছিল,,,, সেই অনুভূতিকে কথার হৃদয় সযত্নে লালন করে যুবতী কথার মনে অরণ্যের প্রতি অনুরাগের সূচনা করেছে।

এই দশ বছরে অরণ্য ওকে মনে রেখেছে কিনা তা কথার জানা নেই। কিন্তু এই দশ বছরের প্রতিটা দিনই  কথা অরণ্যের সাথে কাটানো ওই চারটে সুখময় দিনের স্মৃতি অন্তত একমুহূর্তের জন্য হলেও রোমন্থন করেছে। অরণ্যর যত্ন, স্নেহের পরশ তার উষ্ণ শরীরি আহ্বান আজও কথার মনে শিহরণ জাগায়। অরণ্যের বক্ষলগ্না হয়ে কাটানোর রাতগুলো মনে করলে ওর গালে অজান্তেই লজ্জার রক্তিমআভা খেলে যায়। এক কথায় বলতে গেলে সেই কিশোরীবেলা থেকে আজ পর্যন্ত অরণ্যই ওর স্বপ্নপুরুষ।
.
.
.
এ বি ইন্ডাস্ট্রিসের মেইন অফিসের সামনে অটোটা এসে থামতে ভাড়া মিটিয়ে নেমে এলো কথা। একবার সুউচ্চ বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে ইস্টদেবতাকে স্মরণ করে নিলো যাতে ইন্টারভিউটা ভালো করে দিতে পারে। রিসেপশনের দিকে এগিয়ে গিয়ে ইন্টারভিউ কোথায় হচ্ছে জিজ্ঞাসা করলো ও
-এক্সকিউজ মি ম্যাডাম এক্সেকিউটিভ পিএ-এর জন্য ইন্টারভিউটা কোথায় হচ্ছে।
-জাস্ট গিভ মি ওয়ান মিনিট।
-সিওর।
-থার্ড ফ্লোর সেকেন্ড রুমে গিয়ে সিভি জমা করুন। সামনে লবির লেফ্ট সাইডে লিফ্ট আছে ঐদিকে চলে যান।
-থ্যাংক ইউ।
লিফটে করে থার্ড ফ্লোরে সেকেন্ড রুমে এসে নিজের সিভি জমা করে লবিতে এসে বাকি ক্যান্ডিডেটদের সাথে বসলো কথা। এরপরে নম্বর অনুযায়ী একেকজন ক্যান্ডিডেটকে সিইও-র কেবিনে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে।
ও লবিতে আসার পর থেকে যে বেশ কয়েকজনের তাচ্ছিল্য ভরা দৃষ্টি ওকে মেপে চলেছে তা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে কথা। যেখানে অন্য ক্যান্ডিডেটরা দামি অফিস ওয়ার আর পরিমিত মেকআপে অনন্যা হয়ে এসেছে সেখানে সাধারণ কুর্তি জিন্স পড়া কথার দিকে যে এরকম কয়েকটা তাচ্ছিল্যপূর্ণ  দৃষ্টি পড়বে তা কথার খুব ভালোভাবেই জানা আছে। এটা ঠিক যে কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে গুনের সাথে সাথে প্রেসেন্টেবল লুক থাকাটাও দরকার সেটা কথা খুব ভালো করেই জানে । কিন্তু যেখানে পরিমিত পয়সায় খুব হিসাব করে সংসার চালাতে হয় সেখানে ইন্টারভিউয়ের জন্য দামি পোশাক কেনার অর্থ ওই মাসের ঘর খরচের ব্যালেন্স পুরো বিগড়ে যাওয়া যা সামাল দিতে পরবর্তী এক দুটো মাসও ওকে সাফার করতে হবে।
তাছাড়া আট বছর আগে ওর বাবার মৃত্যুর পর যখন ওদের আর্থিক সমস্যা দেখা দিলো তখন থেকেই এইসকল তাচ্ছিল্য আর করুণাভরা দৃষ্টি ওর কাছে খুবই পরিচিত। আগে কষ্ট হলেও এখন আর এতে ওর বিশেষ কিছু যায় আসেনা। বাবা মারা যাওয়ার পর ওর মাই তো সেলসের কাজটা করে এতদিন সংসারটা সামলেছেন। কিন্তু দেড় বছর হলো মা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর কথা আর তাকে কাজ করতে দেয়নি। নিজের মাস্টার ডিগ্রীর পড়া মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে সংসারের দায়িভার স্বেচ্ছায় নিজহাতে তুলে নিয়েছে ও। তাই এই ইন্টারভিউটা ক্র্যাক করার ওপর ওর এবং ওর পরিবারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আছে। জবটা হয়ে গেলে একটা স্বচ্ছন্দের জীবন পাবে ওরা।
.
.
.
-রূপকথা সেন.. রূপকথা সেন।
-আ.. আমি।
-নাউ ইটস ইওর টার্ন। রাইট সাইডে লবি দিয়ে গিয়ে দশ নম্বর রুম এ. বি স্যারের অফিস।

ইন্টারকমে থাকা ছেলেটির নির্দেশেনুসারে সিইও-র কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালো কথা। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে ভিতরে যাওয়ার দরজাটা খুললো।
-মে আই কামইন স্যার?
-ইয়েস।
সামনের ব্যাক্তিটি এতক্ষন কাঁচের দেওয়ালের ওপারে দেখা যাওয়া শহরের দৃশ্যপটের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কথা প্রবেশ করতে উনি রিভোলভিং চেয়ারটা ঘুরিয়ে কথার মুখোমুখি হলেন।
”রণদা" নিজের অস্ফুটে উচ্চারণ করলো কথা।
'রণদা কী আমাকে চিনতে পেরেছে!!' নিজের মনে মনে ভাবলো ও।
অরণ্য সামনের টেবিলে রাখা ফাইলটায় একবার চোখ বুলিয়ে ওর মুখোমুখি একটা চেয়ার দেখিয়ে বললো
'মিস রূপকথা সেন প্লিস বি সিটেড।'
অরণ্যের কথায় রূপকথার ভাবনার অবসান হলো। ও রণকে মনে রাখলেও সে যে ওকে মনে রাখেনি তা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলো, তাই অহেতুক চিন্তা বাদ দিয়ে ইন্টারভিউয়ের ওপর ফোকাস করলো।
প্রায় কুড়ি মিনিটের প্রশ্নোত্তর পালা শেষ করে থামলো অরণ্য।
-ওকে মিস রূপকথা আই এম রিয়েলি ইম্প্রেসড বাই ইওর আনসারস। আমাকে এবার নিজের বোর্ড মেম্বার্সদের সাথে ডিসকাস করতে হবে দেন ইফ ইউ গেট সিলেক্টেড তাহলে কয়েকদিনের মধ্যেই তোমার কাছে কোম্পানির তরফ থেকে মেইল যাবে। হ্যাভ আ নাইস ডে। ইউ ক্যান গো নাউ।

রণর কেবিন থেকে বেরিয়ে তাচ্ছিলের হাসি খেলে গেলো কথার মুখে। এতো বড়ো কোম্পানির সিইও যে ওকে মনে রাখবেনা সেটাই স্বাভাবিক।
.
.
.
❤️ক্রমশ❤️
নেক্সট এপিসোডে থাকছে একটা বড়ো চমক।

লাভ মি লাইক ইউ ডু 🔞Where stories live. Discover now