পর্ব-১৬

434 6 1
                                    

আগামী পর্বের পর...

বাইরে থেকে নিজেকে শান্ত দেখানোর চেষ্টা করলেও ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে আছে ও। তখন মাথা গরম করে হঠকারিতায় কথার গায়ে হাত তুলে একদম ঠীক করেনি। কথা যে ওর ওপর খুব অভিমান করে আছে তা ও ইভেন্টের সময়ই বুঝেছে। ও সেইসময় বারবার কথার দিকে চাইলেও কথা একবারও ওর দিকে  তাকায়নি। ও ইভেন্ট শেষেই কথার কাছে নিজের মিসবিহেবের জন্য অ্যাপোলজি  চাইতো কিন্তু এইসময় ইনভেস্টাররা ওর সাথে একটা কনফারেন্স করতে চাইলে মন না মানলেও ওকে রাজি হতে হয়। মিটিংয়ে থাকলেও ওর মন কথার দিকেই পড়ে আছে তাই মিটিং শেষ হওয়ার পরেই ও কথাকে খুঁজতে শুরু করে।
.
.
.
বেশ কিছুক্ষন ধরে কথাকে খুঁজে চলেছে অরণ্য। ও প্রায় পুরো রিসর্টটা দেখে নিয়েছে কিন্তু কথার দেখা পায়নি।
শেষ পর্যন্ত রিসর্টের সামনের দিকে কোথাও কথাকে খুঁজে না পেয়ে পিছনের লনের দিকে এলো ও।
রিসর্টটা যেহেতু হালফিলেই তৈরি হয়েছে তাই কিছু কিছু জায়গার কাজ সম্পূর্ণ করতে এখনো বাকি আছে যেমন এই পিছনের দিকের লনটা। সামনের দিকের লনে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও এখানে সেটা করা হয়নি তাই সন্ধ্যের পর এদিকটায় তেমন কেউ আসেনা। তাই অরণ্যের মনে হয়েছিল কথা যখন রিসর্টে কোথাও নেই তাহলে বোধহয় মনখারাপ করে এখানে বসে থাকতে পারে কিছুটা একা থাকার জন্য, যেটা ও বেশিরভাগ সময়ই করে থাকে। কিন্তু এখানেও কথাকে খুঁজে না পেয়ে কটেজের দিকে ফিরে যাচ্ছিলো অরণ্য এইসময় লনের বাউন্ডারীর কাছে থাকা ঝাউ গাছটার আড়াল থেকে একজন পুরুষ কণ্ঠের উত্তপ্ত আওয়াজ কানে আসায় কৌতূহল বশত সেদিকে এগিয়ে গেলো ও।

"ম্যাম আমি তো আপনার কথা মতোই কাজ করেছিলাম কিন্তু ওই যে রূপকথা ম্যাডাম আছেন না যিনি এ. বি স্যারের অ্যাসিস্ট্যান্ট উনিই তো লাস্ট মোমেন্টে সবটা ঠীক করে দেন। এতে আমার কী দোষ আছে বলুনতো।"

কথার নামটা কানে আসতেই সতর্ক হয়ে গেলো অরণ্য। নিজের চলার গতি কমিয়ে সন্তর্পনে সামনের গাছটার দিকে এগোতে থাকলো যাতে সামনের মানুষটা ওর উপস্থিতি টের না পায়।

" আপনি কিন্তু এখন যেটা করছেন ঠীক করছেননা। আর আপনারও কুড়িহাজার দেওয়ার কথা ছিল এই কাজের জন্য অথচ আপনি মাত্র দশ হাজার পাঠিয়েছেন।আপনার কথায় রিস্ক নিয়ে আমি ড্রেসটা খারাপ করেছিলাম কিন্তু রূপকথা ম্যাডাম যদি শেষমুহূর্তে সব ঠীক করে দেয় তাতে তো আমার কিছু করার নেই। আমার কিন্তু পুরো টাকাটা চাই নাহলে... "
নিজের কথাটা শেষ করতে পারলোনা লোকটা তার আগেই কেউ ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে সজোরে ঘুষি মারলো ওর মুখে। মাটিতে ছিটকে পড়লো ও।
"কে বে শালা.."
বলতে গিয়েও মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো। হালকা চাঁদের আলোয় দেখতে পেলো যে ওকে মেরেছে সেই ব্যক্তিটি আর কেউ নয় স্বয়ং অরণ্য বিশ্বাস। অরণ্যর রাগী জ্বলন্ত চোখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে হাতপা কাঁপতে লাগলো লোকটার।
লোকটা অরণ্যর দিকে মুখ তুলে তাকাতে ওকে চিনতে পারলো অরণ্য, এই রিসর্টের হাউস কিপার রমেশ মাঝি।
"রমেশ তুমি......
ওহঃ শিট আমার তখন এটা মাথায় আসেনি কেন যে গেস্টদেরকে নিজের রুমের চাবি দেওয়া হলেও একস্ট্রা চাবি হাউসকিপিংয়ের জন্য থাকা স্টাফেদের কাছেও থাকে।"
শেষের কথাগুলো নিজের মনে মনেই বললো অরণ্য। নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ হলো অরণ্যের।
যে অরণ্য বিশ্বাস কখনো নিজের স্টাফেদের সাথে খারাপ ব্যবহার পর্যন্ত করেনি সে কিনা এদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেই মানুষটার ওপর হাত তুললো যাকে কিনা ও সবসময় আগলে রাখতে চায়। যেই কথাকে ও সব আঘাত থেকে রক্ষা করতে চায় আজ নিজেই তাকে আঘাত দিয়ে ফেলল।
রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো অরণ্যের। মাটিতে বসে থাকা ভীত রমেশের দিকে একপা একপা করে এগিয়ে গেলো অরণ্য। তারপর ওর কলার ধরে টেনে তুললো রমেশকে তারপর এলোপাথারি ঘুষি চালাতে থাকলো ওর মুখ করে।
"অরণ্য বিশ্বাসের সাথে গেম খেলার চেষ্টা করছিলিস তো, এবার দেখে তোর কী হাল করি। বল কে তোকে এই কাজটা করতে বলেছিলো। তোর পিছনে থাকা আসল মাথাটার নাম বল নাহলে আজ তোকে শেষ করে ফেলবো।"
কথাগুলো বলে অরণ্য রমেশের মুখ লক্ষ্য করে আর একটা ঘুষি চালাতে যাচ্ছিলো এইসময় দুটি কোমল হাত ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি গলায় শান্ত হতে বললে ওর চণ্ডাল রাগটা কিছুটা স্তিমিত হলো। ওকে বাহুবেষ্টনে বেঁধে রাখা কথার কোমল হাতগুলোর নিজের হাতটা রেখে পিছনে ঘুরে তাকালো অরণ্য। ওকে জড়িয়ে থাকা কথার উদ্বিগ্ন মিষ্টি মুখটা দেখে এতক্ষন ধরে মনের মধ্যে থাকা রাগ আর চিন্তাটা শান্ত হলো ওর।
কথাকে সামনের দিকে টেনে এনে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো অরণ্য।
-কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি সেই মিটিংয়ের পর থেকে তোমাকে খুঁজে যাচ্ছি।
-আসলে আপনার মিটিং শেষ হতে দেরি ছিল বলে আমরা তিনজনে মিলে একটু মার্কেটের দিকে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি বলুন তো আপনি ওকে ওইভাবে মারছিলেন কেন।
অরণ্য কিছু বলবে তার আগেই রমেশ ওর পা ধরে বলতে লাগলো
-স্যার প্লিজ আর মারবেননা। আমি ইচ্ছা করে কিছু করিনি ওই শালিনী ম্যামই আমাকে বলেছিলো এই কাজটা করতে। আর তার বদলে কুড়ি হাজার দেবে বলেছিলো।
-শালিনী বললো বলেই তোকে করতে হবে। ওই শালিনীকে তো আমি ফিরে গিয়ে দেখে নেবো। তার আগে তোর ব্যবস্থা করছি। তোদের জন্য আমি রূপকথার গায়ে হাত তুলেছি তোকে তো...
কথাগুলো বলে অরণ্য আবার রমেশকে মারতে গেলে রোশনি পিছন থেকে বললো
-শালিনী যদি ষড়যন্ত্র করে থাকে তাহলে তুইও ওর শয়তান প্ল্যানে পরোক্ষভাবে সাথ দিয়েছিস।
-মানে!! তুই কী বলতে চাইছিস ঠীক করে বল।
- ঠিকই তো বলছি আসলে তোর মনেই কথার প্রতি অবিশ্বাস ছিল রোশনি তো সেটার সুযোগ নিয়েছে মাত্র।
-তোরা প্লিজ আমাকে ভুল বোঝাটা বন্ধ করবি।
-তাহলে তুইই ঠিকটা আমাদের বুঝিয়ে বল। সত্যি করে বলতো তন্ময় মেহেতার সাথে কথার ছবিগুলো দেখে তুই এটা ভাবিসনিস যে কথা আর মেহতা প্ল্যান করে তোর ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।
- এটা জেনে রাখ যে তোদের থেকে আমি কথাকে আরো ভালোভাবে চিনি ওই দুটো ছবি দেখিয়ে কেউ আমাকে বলবে যে কথা আমার বিরুদ্ধে অপনেন্ট পার্টির সাথে মিলে ষড়যন্ত্র রচনা করছে সেটা আমি কোনোদিনও বিশ্বাস করবোনা। কারণ আমার ওর ওপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে ও সজ্ঞানে কখনো আমার ক্ষতি করবে না।
- এতই যখন বিশ্বাস তাহলে তখন কথার গায়ে হাত তুলেছিলিস কেন?
-আসলে তখন নিজের স্বপ্নটাকে ঐভাবে ডুবতে যাচ্ছিলো দেখে এমনিতেই চিন্তায় মাথাটা হ্যাং হয়েছিল তাই তখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। সরি কথা আই এম ভেরি সরি আসলে তুমি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছো এটা মেনে না নিলেও একমুহূর্তের জন্য এটা মনে হয়েছিল যে তোমার গাফিলতির জন্যই বোধহয় এটা হয়েছে তাই রাগ আর চিন্তার আউটরেজটা এইভাবে তোমার ওপর দেখিয়েছি। ওয়ানস এগেইন সরি কথা ফর হার্টিং ইউ।
-আমার মতো সাধারণ এমপ্লয়ীকে আপনি কেন সরি বলছেন স্যার। আপনার তো এটা অধিকার আছে তাইতো যখন ইচ্ছা হলো দূরে ঠেলে দেবেন আবার যখন ইচ্ছা কাছে টেনে নেবেন।
কথাগুলো বলে রূপকথা নিজেকে অরণ্যের থেকে ছাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধকার বিচের দিকে ছুটে গেলো।
-কথা প্লিজ দাঁড়াও..
অরণ্য কথার পিছনে যেতে গেলে রোশনি বলে
-মেয়েটা খুব অভিমানী অরণ্য। ও তো তোর রাগের মাথায় বলা কথাগুলো ধরে কোম্পানি থেকে রিসাইন করতে চেয়েছিল। আমি আর সুমিত অনেক কষ্ট করে তখন ওকে সামলেছি। এবার তোর প্রেমিকাকে তুই সামলা বাবা। আমি আর সুমিত তো আপাতত বেড়িয়ে পড়ছি নাহলে দেরি হয়ে যাবে বাড়ি ফিরতে।
অরণ্যকে কথাগুলো বলে রোশনি।
-হুম তোরা বেড়িয়ে পর।
কথাগুলো বলে অরণ্য রূপকথা যেদিকে গেছে সেইদিকে এগোলো।
অরণ্য চলে যেতে সুমিত রমেশকে সাবধান করে বললো
-যদি শালীনির কানে এই কথাটা গেছে যে আমরা ওর ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সব জেনে গেছি তাহলে কিন্তু তোমাকে ছাড়বোনা।
-স্যার বিশ্বাস করুন আমি ওনাকে কিচ্ছুটি বলবোনা।
রমেশ কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো।
-সেটাই তোমার জন্য ভালো হবে।
চলো রোশনিদি আমরা বেড়িয়ে পরি।
সুমিত বললো।
-হ্যাঁ চল।
দুজনে গাড়ির দিকে এগোলো।
.
.
.
অরণ্য কথাকে খুঁজতে খুঁজতে রিসর্টের পাশের ঝাউবাগানটার কাছে এসে দেখলো কথা একটা ঝাউগাছের কাটা গুঁড়ির ওপর বসে দূরের গর্জন করে তটের দিকে ধেয়ে আসা সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। অরণ্য কথাকে দেখতে পেয়ে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো
-এখনো আমার ওপর রাগ করে আছো কথা?
-আমি আপনার ওপর রাগ করে থাকার কে? কোথায় আপনি এ. বি ইন্ডাস্ট্রিসের সিইও দি অরণ্য বিশ্বাস আর কোথায় আমি একজন সাধারণ এমপ্লয়ী, আপনার ওপর রাগ করে থাকা আমাকে সাজে নাকি!?
-আচ্ছা বুঝেছি নিজের বস অরণ্য বিশ্বাসের ওপর তোমার রাগ হয়েছে তো কিন্তু নিজের রণদা তার ওপরেও কী তুমি রাগ করে থাকবে রূপ।
অরণ্যর কথায় রূপকথা অবাক চোখে অরণ্যের দিকে তাকালো। রূপকথাকে ওইভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরণ্য ওর কাছে এগিয়ে এসে ওর পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে বললো
-কী ভেবেছিলে রূপ ইন্টারভিউয়ের দিন তুমিই একা আমাকে চিনেছিলে, আমিও সেদিন তোমাকে চিনেছিলাম। কিন্তু কী অদ্ভুত দেখো আমরা একে অপরকে চিনতে পারলেও সেই মুহূর্তে আমরা কেউই একে অপরের কাছে ধরা দিতে চাইনি। অথচ তার আগের দশটা বছর ধরে আমরা প্রতিদিন প্রতিটাক্ষণ একে অপরকে চেয়েছিলাম।
-তুমিতো বলেছিলে রণদা আমাকে খুঁজে নেবে তাহলে দশটা বছর ধরে আমাকে অপেক্ষা করালে কেন?
-সব বলবো রূপ আজকে সবটাই বলবো বাট তার আগে বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো।
কথা কাঁদতে কাঁদতে অরণ্যের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বললো
-ক্ষমা করবোনা কখনো ক্ষমা করবোনা বাজে লোক একটা।
কাঁদতে কাঁদতে অরণ্যের বুকে মুখ গুঁজলো কথা। অরণ্যও কথাকে নিজের সাথে আরও খানিকটা মিশিয়ে নিয়ে ওর চুলে নাক ডোবালো।
.
.
.
❤️ক্রমশ❤️

লাভ মি লাইক ইউ ডু 🔞Where stories live. Discover now