পর্ব-৮

778 4 0
                                    

আগের পর্বের পর...

নিজের সমস্ত কাজ কমপ্লিট করে কম্পিউটারটা শাটডাউন করলো কথা।
অরণ্য ছটার সময় ডিসাইনিং টিমকে নিয়ে বাড়ি চলে গেছে কালকের এড শুটের ব্যাপারে মিটিংয়ের জন্য কিন্তু যাওয়ার আগে একগাদা ফাইল কথার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছে ডেটা এন্ট্রির জন্য।
নিজের ক্লান্ত শরীরটাকে চেয়ারে এলিয়ে দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাতেই চমকে গেলো কথা। এখনই সাড়ে আটটা বাজে মানে কমসে কম সাড়ে দশটার আগে আজকে বাড়ি পৌঁছাতে পারবেনা।
চেয়ার ছেড়ে উঠে তাড়াতাড়ি ডেস্কে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত জিনিসগুলোকে ব্যাগে ভরছিলো কথা এইসময় ওর ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখলো রোশনিদি কলিং।
-হ্যাঁ রোশনিদি বলো ।
-হ্যালো কথা তুই কী এখনো অফিসেই আছিস?
-হ্যাঁ এই বেরোবো।
-আচ্ছা শোননা আমার একটা হেল্প করবি প্লিজ।
ফোর্থ ফ্লোরে সিকিউরিটি গার্ডের কাছে একটা ফাইল আছে ওটা নিয়ে প্লিজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অরণ্য স্যারের বাড়িতে চলে আয়।
-আচ্ছা আমি নিয়ে যাচ্ছি।
রোশনির বলা ফাইলটা কালেক্ট করে অফিসের বাইরে এলো কথা। তারপর ট্যাক্সি ধরবে ঠিক করে অফিসের কাছে বাসস্ট্যান্ডটার দিকে এগোতে যাবে এইসময় অরণ্যের রেড কালারের হিউন্ডে টাশনটা ওর পাশে এসে থামলো।
-তাড়াতাড়ি উঠে আসো কথাদি।
অরণ্যের ড্রাইভার মহেশ বললো।
গাড়ির ব্যাক ডোরটা খুলে পিছনের সিটে উঠে বসলো কথা। 
.
.
.
শহর কলকাতার কিছুটা বাইরে অরণ্যর বিশাল বাংলো বাড়িটর সামনে প্রায় সাড়ে নটার সময় গাড়িটা এসে থামলো। এমনি সময় যদিও পয়টতাল্লিশ মিনিট লাগে কিন্তু আজ জ্যামের কারণে পনেরো মিনিট এক্সট্রা লাগলো।
দরজা দিয়ে ঢুকে কথা দেখলো লনের মধ্যে একটা বড়ো টেবিলের পাশে অরণ্য সহ ডিসাইন টিমের বাকি সবাই বসেছে।

কথাকে দেখে রোশনি ওর দিকে এগিয়ে গেল।
-থ্যাংক ইউ কথা। ইউ হ্যাভ সেভড মি টুডে।
ফাইলটা কথার থেকে নিয়ে অরণ্যর দিকে এগিয়ে দিলো রোশনি। ফাইলটা নিয়ে একবার কথার দিকে তাকিয়ে ওকে কিছু না বলেই আবার ফাইলে মনোনিবেশ করলো অরণ্য। অরণ্যের সাথে অন্য সবাইও আবার নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো

কথার বেশ রাগ হলো অরণ্যের এরকম ইগনোরিং বিহেভিয়ার দেখে। একবার ভাবলো বাড়ি চলে যাবে। কিন্তু কাউকে কিছু না বলে চলে যাওয়াটা খারাপ দেখাবে বলে ও নিজেও একটা চেয়ার টেনে সবার সাথে বসে পড়লো।
.
.
.
কথাকে দেখতে পেয়ে এতক্ষনে শান্ত হলো অরণ্যের মনটা।
নিজের রূপকে কাছে পেয়েও অরণ্য দুবছর ধরে নিজের মধ্যেকার প্রেমিক সত্ত্বাকে কঠোর সংযমের মাধ্যমে বেঁধে রেখেছিলো। কিন্তু কাল সেই প্রেমিক সত্ত্বাটিকে কথার সামনে প্রকাশ করার পর থেকেই সে লাগামছাড়া হয়ে সবসময় প্রেয়সীকে নিজের কাছে পেতে চাইছে।কিন্তু অফিসে বসে কথা বলার সময় কোথায়। আবার অফিসের দুটো ইম্পরট্যান্ট প্রজেক্ট চলছে এই মুহূর্তে তাই প্রেমিকাকে নিয়ে যে একটু আউটিং-এ যাবে তারও উপায় নেই। তাই আজকের রাতটা প্রেমিকার সাথে প্রেমালাপ করে কাটানোর জন্য একটু কূটনীতির আশ্রয় নিতে হয়েছে অরণ্য। ওই যে কথায় আছেনা "Everything is fair in love and war."
তাই আসার সময় ইচ্ছা করেই কথাকে অনেকগুলো ফাইল ধরিয়ে এসেছিলো ডেটা এন্ট্রি করে রাখার জন্য যাতে ওকে বেশ কিছুক্ষন অফিসে আটকে রাখা যায়। কথার কাজের স্পিড সম্বন্ধে খুব ভালো করেই ধারণা আছে অরণ্যর। আর সেটাকেই কাজে লাগিয়েছে অরণ্য। সঠিক সময় ডিসাইন টিমের হেড রোশনিকে একটা পুরানো ফাইল চায় এবং সাথে এটাও বলে দেয় যে কথা এখনো অফিসেই থাকতে পারে। ব্যাস বাকি প্ল্যানটা ওর এক্সট্রা এফোর্ট ছাড়াই সাকসেসফুল হয়ে যায়।
অবশ্য কথার যাতে আসতে কোনো অসুবিধা না হয় তাই রোশনিকে ফাইল চাওয়ার একঘন্টা আগেই ও মহেশকে বলে দিয়েছিলো কথা অফিস থেকে বেরোলে ও যেন কথাকে পিকআপ করে নেয়।
.
.
.
ফাইল দেখা কমপ্লিট হয়ে গেলে অরণ্য সবাইকে বলে
-ইটস অলরেডি নাইন ফিফটি সো ইউ গাইস ক্যান লিভ নাউ। এন্ড রোশনি কিছুক্ষন থেকে গেলে তোমার অসুবিধা হবেনা তো আই ওয়ান্ট টু ডিসকাস সাম ম্যাটার উইথ ইউ।
-নো প্রব্লেম স্যার।
অরণ্যর এরকম ইগনোরেন্স বিহেভিয়ারে কথার এতক্ষন এমনিতেই নিজেকে অবাঞ্চিত মনে হচ্ছিলো। তাই  অরণ্য রোশনি বাদে সবাইকে চলে যেতে বললে কথাও বাকিদের সাথে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। তাই ও অরণ্যর কাছে গিয়ে বললো
-স্যার লুক লাইক দেয়ার ইস নাথিং লেফ্ট ফর মি। সো ক্যান আই গো নাউ?
-হোয়াই? ডু ইউ হ্যাভ এনি এপয়েন্টমেন্ট ফর কফি ডেট এট দিস হাওয়ার?
অরণ্য চাপা গলায় বললো।
অরণ্যর এমন কথায় বেশ অবাক হলো কথা।
কথার অবাক হওয়া মুখটা দেখে নিয়ে সবাইকে শুনিয়েই অরণ্য বললো
-কথা ইউ হ্যাভ টু অ্যাসিস্ট মি ওভার সাম ম্যাটার সো আমি যতক্ষণ রোশনির সাথে কথা বলছি তুমি স্টাডি রুমে গিয়ে বসো।

অরণ্যর কথা শুনে লন পেরিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো কথা।
অরণ্যর বাড়ির নীচের তলাটায় একদিকে মডিউলার কিচেন এন্ড ডাইনিং অন্যদিকে লিভিং রুম আর তার পাশে অরণ্যর স্টাডি রুম এন্ড লাইব্রেরি।
অরণ্যকে কোনো কাজে অ্যাসিস্ট করার অর্থ হলো আজ সারারাত্রি জেগে কাজ করে যাওয়া। এই অভিজ্ঞতা কথার আগেও আছে। তাই বাড়িতে ঢুকেই কথা আগে ওর ভাইকে ফোন করে জানিয়ে দিলো ও আজ বাড়ি যেতে পারবেনা নাইট শিফ্ট করতে হবে। তারপর কিচেনে গিয়ে একটু জল খেয়ে স্টাডি রুমের কাউচে গিয়ে বসলো।
.
.
.
রোশনির সাথে কথা বলে অরণ্য স্টাডি রুমে এসে দেখলো কথা নিষ্পাপ শিশুর মতো ঠোঁট দুটো ফুলিয়ে কাউচে গুটিশুটি মেরে ঘোমাচ্ছে।
"ওহঃ গড রূপের সাথে সময় কাটাবো বলে এতো প্ল্যান করলাম অথচ এই ম্যাডামকে দেখো আমার ঘুম উড়িয়ে নিজের আরামসে ঘোমাচ্ছেন। ডিনারটাও তো করেনে।"
অরণ্য একবার ভাবলো কথাকে ডেকে তুলবে কিন্তু ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখে সেই ইচ্ছাটা বাদ দিলো। আজকে মেয়েটার ওপর দিয়ে সত্যিই অনেক চাপ গেছে।
অরণ্য একটা বালিশ আজ চাদর নিয়ে এসে কথার মাথাটা হালকা করে তুলে ওর মাথাটা বালিশে রাখলো। তারপর এ. সি-র টেম্পারেচারটা এডজাস্ট করে চাদরটা ওর গায়ে দিয়ে দিল।
"গুডনাইট রূপ হ্যাভ এ সুইট ড্রীম।"
নিজের ঠোঁটটা আলতো করে কথার ঠোঁটে ছুঁইয়ে ফাস্ট ফ্লোরে নিজের বেডরুমের দিকে চলে গেলো অরণ্য।
.
.
.
❤️ক্রমশ❤️

লাভ মি লাইক ইউ ডু 🔞Where stories live. Discover now