পর্ব-৪

984 8 0
                                    

২ বছর পর..

নিজের হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে ছুটতে ছুটতে অফিসে ঢুকলো কথা।
অফিস টাইম শুরু হয়ে অলরেডি কুড়িটা মিনিট পেরিয়ে গেছে। তারওপর আগের দিন অরণ্য স্যার ওকে বলেছিলো অফিস শুরু হওয়ার ত্রিশ মিনিট আগে আসতে। একে অফিসে জয়েন টাইমিংয়ের ওপর কুড়ি মিনিট লেট, তার সাথে অরণ্যর দেওয়া এপয়েন্টমেন্ট টাইম মিলিয়ে দেখতে গেলে আজ এক ঘন্টা লেট্ করেছে ও অফিস আসতে।
আজ অরণ্য যে ওকে কথা শোনাতে একটুও কার্পণ্য করবেনা তা কথা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। অবশ্য কোম্পানি জয়েন করার পর থেকে হাতে গোনা কয়েকটা দিনই এমন আছে যেদিন অরণ্য ওর সাথে একটু ভালোভাবে কথা বলেছে। নাহলে তো এই দুইবছর ধরে প্রায় রোজই কোননা কোনো উপায়ে অরণ্য ওকে হেনস্থা করেছে।

অরণ্যের কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একটা শ্বাস নিয়ে নিজের মধ্যে থাকা ভয়টাকে কিছুটা দমন করে  দরজায় দুবার নক করলো কথা।
-হু ইস দেয়ার?
-রূ.. রূপকথা।
কাঁপা কাঁপা স্বরে নিজের নামটা উচ্চারণ করলো কথা।
কিছুটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ না আসায় নিজেই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।
-স্যার আসলে আজকে আমার ভাইয়ের শরীরটা একটু খারাপ হয়েছিল তো..
কেবিনে ঢুকেই কথা নিজের দেরি করে আসার কারণটা জানাতে চাইলেও, অরণ্যর ধমকে ওকে চুপ করে যেতে হয়।
-শাটআপ মিস রূপকথা। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হিয়ার এনি এক্সকিউজ। তুমি আজকে কী করেছো জানো!! চুপ করে আছো কেন? স্পিক আপ। ইউ আর ফাকিং ওয়ান আওয়ার লেট...
অরণ্য আর কী কী বলে চলেছে কানে গেলোনা কথার। চোখদুটো ছলছল করে উঠলো আর। রোজ রোজ এইভাবে ছোট হওয়া ভালো লাগেনা আর। মাঝে মাঝে ভাবে চাকরিটা ছেড়ে দেবে ও কিন্তু মা আর ভাইয়ের হাসি মুখটা মনে পড়াতে বারবার ওকে পিছিয়ে যেতে হয়।
-ও হ্যালো এবার কী তোমাকে বাইরে বেরোনোর জন্য ইনভিটেশন দিতে হবে!! হোয়াই ইউ আর সো ডিসওবিডিয়েন্ট কথা।
আর কিছু নাবলে বেরিয়ে এলো কথা ভেতরে থাকলে নাজানি আর কী কী শুনতে হতো ভগবান জানে। 'স্যারের শরীরটা আজ খারাপ মনে হলো মুখটাও কেমন ফ্যাকাসে লাগছিলো। কালকের ড্রিংকের হ্যাংওভার এখনো কাটেনি মনে হচ্ছে।' নিজের মনে ভাবলো কথা। তারপর দুবার নক করে পারমিশন না নিয়েই ভিতরে ঢুকে এলো। টেবিলে মাথাটা রেখে শুয়ে আছে অরণ্য।
-স্যার আর ইউ আলরাইট।
-গেট লস্ট।
-কী!!
-আই সেইড জাস্ট গেট লস্ট। ডোন্ট ট্রাই টু এন্টার ইনটু মাই পার্সোনাল স্পেস।
চুপচাপ বেরিয়ে কথা নিজের কেবিনে এসে দাঁড়ালো। প্রচন্ড কষ্ট হয় ওর রণদার এই অ্যারোগেন্ট রূপটা মেনে নিতে। গলার কাছে দলাপাকানো কষ্টগুলো ওর দম বন্ধ করে দিচ্ছে। কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে ঠিক করে কিচেনে এসে কফি আর স্যান্ডউইচ তৈরি করলো। তারপর সেগুলো আর একটা পেন রিলিফের ট্যাবলেট ইন্টারকমে থাকা রাহুলের হাতে দিয়ে রণর কেবিনে পাঠিয়ে দিলো।
.
.
.
-স্যার এই কফি আর স্যান্ডউইচটা খেয়ে ওষুধটা খেয়ে নিন আরাম পাবেন।
কফিতে চুমুক দিয়ে আরামে চোখটা বুজে এলো অরণ্যের। এটাই তো এতক্ষন চাইছিলো ও।
- আচ্ছা শোনো রূপকথা..
-না না কথা কী করবে ও কিছু করেনি স্যার।
-উফফ ফালতু কথা বলা বন্ধ করো। মিস রূপকথাকে বলবে আধঘন্টা পর আমার সাথে দেখা করতে। ইউ ক্যান গো নাউ।
এতক্ষন এটারই অপেক্ষা করছিলো রাহুল অরণ্যর মুখ থেকে গো নাউ কথাটা উচ্চারণ হওয়ার সাথে সাথেই ও কেবিনের বাইরে বেরিয়ে এলো।
.
.
রাহুল চলে যেতেই অরণ্যর এতক্ষণের গম্ভীর মুখটায় একঝলক হাসি খেলে গেল। রাহুলকে দিয়ে ব্রেকফাস্ট আর ওষুধ পাঠানোর কাজটা যে কথাই করেছে তা খুব ভালো করেই জানে ও। সত্যি বলতে একমাত্র এই মেয়েটাই পারে অরণ্যকে ভালোভাবে বুঝতে, ওর রাগগুলোকে সামলাতে।
অরণ্য নিজের গম্ভীর্যের দেওয়াল ভেঙে কখনো সরাসরি এমপ্লয়ীদের সাথে মিশতে পারেনি। কিন্তু কথা অরণ্যের সেক্রেটারি হয়ে আসার পর ওর আর বাকি এমপ্লয়িজদের মাঝে বন্ডিংটা বেড়েছে ওর কোনো এক্সট্রা এফোর্ট ছাড়াই। একটা হায়েস্ট পোস্টে থাকার সত্ত্বেও কোম্পানির ফার্স্ট লেভেল স্টাফ থেকে ফোর্থ লেভেল স্টাফ সবার সাথেই ওর বন্ধুসুলভ ব্যবহার আছে। যার ফলে তাদের ছোট বড়ো সমস্যা যেগুলো ওরা কখনো অরণ্যকে জানাতে পারেনি সেগুলো খুব সহজেই কথাকে বলতে পেরেছে। আর কথাও অরণ্যের পরামর্শ নিয়ে সেগুলোর সমাধান করেছে। যার ফলে এমপ্লয়ীদের থেকে কাজের রেসপন্স আরও ভালোভাবে পাওয়া গেছে।
যদিও এর জন্য ও কখনো সরাসরি কথাকে থ্যাংকস জানায়নি। ওর মতে এটাই কথার কাজ যার জন্য ওকে মাইনে দেওয়া হয়।
.
.
❤️ক্রমশ❤️

লাভ মি লাইক ইউ ডু 🔞Where stories live. Discover now