পর্ব-১২

570 3 0
                                    

আগের পর্বের পর...

-রূপকথা ইস দিস ইউ?
সমস্ত সেটটা ঘুরে লাস্ট মোমেন্টসের এরেঞ্জমেন্ট দেখে নিচ্ছিলো কথা। কিছুক্ষন পরই শুটিং শুরু হবে তাই লাস্ট মোমেন্টে সব কিছু একবার রিচেক করে নিচ্ছিলো যাতে শুটিং শুরুর পর কোনো প্রবলেম না হয়। এইসময় এক ব্যাক্তির গলায় নিজের নাম শুনে পিছনে ফিরলো কথা। বহুদিন পর একটি পরিচিত মুখকে নিজের সামনে দেখে বেশ অবাক হলো ও।
-ও মাই গড সুমিত!! তুই এখানে?
উচ্ছসিত স্বরে বললো কথা।
-ইয়েস ডার্লিং আমি স্বয়ং তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এ. বি ইন্ডাস্ট্রিস আমাকে হায়ার করেছে ফর আ অ্যাড শুট। শুটিংটা আমিই ডাইরেক্ট করতে চলেছি। বাট তুমি এখানে কী করছো? এন্ড এটা জেনে খুব ভালো লাগলো যে তুমি আমাকে মনে রেখেছো।
-আমি লাস্ট টু ইয়ার্স হলো এ. বি ইন্ডাস্ট্রিস জয়েন করেছি এস এক্সেকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট।
তোকে মনে রাখবোনা আবার! কলেজের লাস্ট দুটো ইয়ার তুই যে পরিমাণে মাথা ব্যাথা দিয়েছিস , স্বাভাবিকভাবেই কলেজ লাইফের কথা মনে করলে তোর কথাও মনে পড়ে।
-এটা ঠিক নয় ডার্লিং আমার ভালোবাসাকে এভাবে তুমি মাথা ব্যথা বলতে পারোনা। আমি তোমার কলেজ লাইফের এক এবং অদ্বিতীয় প্রাক্তন বলে কথা।
-থাক, তোর ভালোবাসার গপ্পো তোর কাছে রাখ
পুরানো বন্ধুর সাথে গল্পে মশগুল ছিল কথা, এইসময় অরণ্যর গম্ভীর স্বর কানে আসায় ঢোক গিললো ও।
-কার ভালোবাসার কথা হচ্ছে মিস রূপকথা?
-না না স্যার কোনো ভালোবাসার কথা হচ্ছেনা।
কথা তাড়াতাড়ি করে বললো। তারপর কথা ঘোরাতে বললো
-আচ্ছা পরিচয় করিয়ে দি ইনি আমার বস তথা এ. বি ইন্ডাস্ট্রিসের সিইও মিস্টার অরণ্য বিশ্বাস এন্ড ইনি হচ্ছেন আমাদের ডিসাইন টিমের লিডার রোশনি গুপ্তা। আর স্যার এন্ড রোশনিদি ও হলো সুমিত রায়। আজকের শুটিংটা ওই ডাইরেক্ট করবে।
কথা অরণ্যের কাছে সুমিতের পরিচয় দিলে ও এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেকের জন্য অরণ্যের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো
-হ্যালো স্যার নাইস টু মিট ইউ। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল আপনার সাথে মিট করার।
অরণ্য একবার সুমিতের হাতের দিকে তাকিয়ে ওর বেশ জোড়ের সাথে ওর হাতটা ধরে নিজের চিরচারিত গম্ভীর স্বরে বললো
-সেম টু ইউ।
অরণ্যর হাতের চাপে সুমিতের অবস্থা ইতিমধ্যেই খারাপ হয়ে গেছে ও আর সহ্য না করতে পেরে চেঁচিয়ে উঠলো
-আহঃ অরিদা ছেড়েদে প্লিজ লাগছে তো। আমি কিন্তু মেসোর কাছে তোর নামে কমপ্লেন করবো।
-তাহলে তোর নটাঙ্কি শেষ হয়েছে নাকি আরও কিছুটা ডোস দেবো। এবার চিনতে পেরেছিস তো আমাকে।
-না না চিনতে পেরেছি তোকে এবার প্লিজ আমার হাতটা ছেড়ে দে মাই বাপ।
সুমিত বললো। অরণ্য শেষবারের মত একটু চাপ দিয়ে ওর হাতটা ছেড়ে দিলো।
অরণ্য আর সুমিতের মধ্যে এতক্ষন কী হচ্ছিলো বুঝতে না পেরে কথা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। এবার অরণ্য সুমিতকে ছেড়ে দিলে কথা ওকে ধরলো।
-তুই স্যারকে দাদা বলছিস মানে তোরা কী আগে থেকে একে অপরকে চিনিস।
-হ্যাঁরে অরিদা আমার বড়মাসির ছেলে।
-ও আচ্ছা। তাহলে আমি যখন স্যারের সাথে তোকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলাম তখন তুই বললিনা কেন তুই স্যারকে আগে থেকে চিনতিস। এই জন্য তোকে সহ্য হয়না বুঝলি তো সুযোগ পেলেই আমার মজাক ওড়াস। ভেবেছিলাম ইউএসে পড়তে গিয়ে শুধরে গেছিস কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম বাঁদর পৃথিবীর যে প্রান্তেই চলে যাকনা কেন সে বাঁদরই থাকবে।
কথাটা বলে কথা সুমিতের পিঠে চাপড় মারলো।
-ধুরর সকাল সকাল সবাই চাঁদা তুলে পিটিয়ে যাচ্ছে।
সুমিত কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো।
ওর অবস্থা দেখে রোশনি হাসতে হাসতে বললো
-বেশ হয়েছে খালি সারাক্ষন সবার সাথে মজা করার ধান্দা।
রোশনির কথায় কিছু একটা ভেবে সুমিত একবার নিজের মাথা চুলকিয়ে বললো
-একটা ব্যাপার বুঝতে পারছিনা যে অরিদা সবসময় আমার এই মজাগুলোতে পার্টিসিপেট করে সে আজকে আমার প্ল্যানটা ভেস্তে দিলো কেন!!
সুমিতের দিকে তাকিয়ে রোশনি মুচকি হেসে বললো
-তুই ভাবলি কী করে এ. বি তার প্রেয়সীকে কারও মজার পাত্রী হতে দেবে।
-ওহ মাই গড রোশনিদি তার মানে কথাই আমার হবু বৌদি।
সুমিতের মুখে বৌদি কথাটা শুনে কথা লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিলো। সুমিত কথার লজ্জামাখা মুখটা দেখে ওর সাথে মজা করার জন্য বললো
-দিস ইস নট ফেয়ার দাভাই আমি কথা ডার্লিংকে ছেড়ে কয়েক বছরের জন্য ইউএসে কী গেলাম, তুমি তো ওকে নিজের ঘরণী বানানোর প্রস্তুতি নিয়ে নিলে। ইস এবার এক্সকে বৌদি বলে ডাকতে হবে।
সুমিতের কথায় অরণ্য চোখ কুঁচকে কথার দিকে তাকিয়ে বললো
-সুমিত তুই আপাতত এইসব মজা করা ছেড়ে নিজের কাজে ফোকাস করে। আর রূপকথা তুমি আমার সাথে আসো একটু দরকার আছে।
এই বলে অরণ্য কথার হাত ধরে প্রায় টানতে টানতে ওকে স্টুডিওর আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ের দিকে নিয়ে গেলো।
ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সুমিত বললো
-ধুরর এই অরিদাটা কাজ ছাড়া কিছুই বোঝেনা। একটু পুরানো বন্ধুর সাথে গল্প করছিলাম সহ্য হলোনা কাজ আছে বলে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেলো।
ওর দিকে তাকিয়ে রোশনি মুচকি হেসে বললো
-হুম অরণ্য কাজ তো করবেই তবে অফিস ওয়ার্ক নয় ইনভেস্টিগেশনের কাজ করবে।
-মানে!!
-আরে তুই বললিনা যে কথা তোর এক্স। ওই জন্য অরি এখন কথাকে ইন্টারোগেশন করে জানবে ও তোর ঠিক কত পার্সেন্টেজ এক্স ছিল। মানে কতোটা গভীর প্রেম ছিল আরকি।
সুমিত রোশনির কথাটা বুঝতে কিছুটা সময় নিলো তারপর হো হো করে হাসতে হাসতে বললো
-ভাবা যায় যে অরণ্য বিশ্বাস কিনা আগে মেয়েদের দিকে ঘুরেও তাকাতো না সে কথাকে নিয়ে এই পরিমাণ পসেসিভ!!
.
.
.
অরণ্য কথাকে পার্কিং লটে নিজের গাড়ির কাছে টেনে নিয়ে এলো অরণ্য। তারপর গাড়ির দরজায় কথার পিঠ ঠেকিয়ে নিজের দুই হাত কথার দুই পাশে দিয়ে ওর মুখের কাছে ঝুঁকে হিসহিসে গলায় বললো
-তুমি আর সুমিত কী সত্যিই কলেজ লাইফে রিলেশনশিপে ছিলে?
সুমিতের মজাটাকে অরণ্য যে এতটা সিরিয়াসভাবে নেবে সেটা কথা ভাবতে পারেনি। অরণ্যকে এরকম জেদি বাচ্চার মতো রাগারাগি করতে দেখে ও অরণ্যকে আরও কিছুটা রাগিয়ে দেওয়ার লোভটা সামলাতে পারলোনা।
-উমম কেমন যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। কী পুড়ছে বলুনতো স্যার??
কথার গলায় মজার আভাস টের পেয়ে অরণ্য চাপা স্বরে বললো
-ওঃ তো মেরি বিল্লি মুঝিসে মিঁয়াও। আমার সাথে মজা করার পানিশমেন্ট তো পেতেই হবে ডার্লিং।
কথাটা বলে অরণ্য নিজের দুইহাত দিয়ে কথার উন্মুক্ত কোমর শক্ত করে চেপে ধরলো।
-লাগছে তো প্লিজ ছাড়ুন না।
-লাগুক আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
জেদি স্বরে বললো অরণ্য।
-আচ্ছা আচ্ছা বলছি। আমার আর সুমিতের মধ্যে কোনো রিলেশন ছিলোনা। ইভেন ও তো আমার থেকে ওয়ান ইয়ার জুনিয়র ছিল। কিন্তু সুমিত জুনিয়র হলেও ক্লাসেস বাদে বাকিসময় আমাদের গ্রুপের সাথেই ঘুরতো এন্ড কলেজের একটা ড্রামায় আমরা দুজনে স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলাম, তো নাটকে আমাদের কেমিস্ট্রি এতটাই ভালো ছিল যে সবাই ধরে নিয়েছিল আমরা রিয়েল লাইফ লাভার। আর সেই কথাটাকে ধরেয় ও আজকে ওরকম বলছিলো যে আমি ওর এক্স।
-সত্যি বলছো তো।
-সত্যি বলছি।
কথা বাচ্ছাদের মতো কিউট ফেস বানিয়ে বললো।
অরণ্য এবার কথার কোমর ছেড়ে দিয়ে হালকা স্বরে বললো
- ভালো মেয়ের মতো সবকিছু আগেই বলে দিলে হতো। তাহলে আমাকে এতোটা রাফ হতে হতোনা।
-আপনিনা একটা ডেভিল।
কথা রাগী স্বরে বললো। তারপর অরণ্যকে পাশ কাটিয়ে হনহন করে সেটের দিকে এগিয়ে গেলো।

অরণ্যও সেটের দিকে এগোচ্ছিলো এইসময় একটা থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে শালিনী ওর সামনে দাঁড়ালো।
- তো তুমি ওই দুটাকার অ্যাসিস্ট্যান্টটার জন্য তুমি আমাকে অস্বীকার করছো। ওর কোনো যোগ্যতা আছে তোমার লাভার হওয়ার। না আছে রূপ না আছে  ফেম এন্ড মানি। ওকে লেট মি গেস নিশ্চই ও তোমার সাথে বেড শেয়ার করেছে। বেবি ইফ ইউ নিড এনি প্লেসার তাহলে আমাকে বললেনা কেন।
-জাস্ট শাট আপ শালিনী আর একটাও খারাপ কথা যদি তুমি আমার রূপের নামে বলেছো দেন তোমার গায়ে হাত তোলার আগে একবারও ভাববোনা যে তুমি একজন মহিলা। সবাইকে নিজের সাথে গুলিয়ে ফেলার চেষ্টা করোনা। যে কাজের জন্য এসেছো ব্যাস সেটা চুপচাপ করে নিজের টাকাটা বুঝে নিয়ে চলে যাবে। বেশি ওড়ার চেষ্টা করলে তোমার ক্যারিয়ার আমি একমুহূর্তে শেষ করে দেবো।
কথাগুলো বলে অরণ্য শালিনীর দিকে না তাকিয়ে নিজের অভিযাত্যপূর্ণ ভঙ্গিতে সেটের দিকে এগিয়ে গেলো।

অরণ্যর যাওয়ার দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের মনেমনে বললো
"যদি আমি তোমাকে না পাই তাহলে ওই রূপকোথাকেও তোমাকে পেতে দেবোনা। আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তুমি ঠিক করলেনা অরণ্য বিশ্বাস। "লাজবন্তিস" ফ্যাশন হাউসকে ন্যাশনাল লেভেলের ব্র্যান্ডে পরিণত করা তোমার ড্রিম প্রজেক্ট তাইতো বাট সেটা আমি কিছুতেই সফল হতে দেবোনা। আজ তো কিছু করবোনা কিন্তু ফ্যাশন শোয়ের দিন এক ঢিলে দুই পাখি মারবো। এমন চাল চলবো যে তোমার অর্গানাইজ করা ফ্যাশন শোতো ফ্লপ হবেই সাথে ওই দুটাকার অ্যাসিস্ট্যান্টটাও তোমার জীবন থেকে আউট হবে আর সেই কাজটা করবে তুমি নিজে।"
শালিনীর ঠোঁটের কোনায় একটা শয়তানি হাসি খেলে গেলো।
.
.
.
❤️ক্রমশ❤️

কী করতে চলেছে শাখচুন্নি থুড়ি শালিনী 😬😬।

লাভ মি লাইক ইউ ডু 🔞Where stories live. Discover now