পর্ব-১৮

491 5 1
                                    

আগের পর্বের পর...

সমুদ্রতটের ধার ঘেঁষে রিসর্টের দিকে হাঁটছে অরণ্য আর কথা। মাঝসমুদ্রের অনন্ত জলরাশি থেকে আসা ছোটো বড়ো ঢেউগুলো ওদের পা ভিজিয়ে দিয়ে আবার নিজেদের উৎপত্তিস্থলে ফিরে যাচ্ছে। এদের মধ্যে ছোট ঢেউগুলোকে কথা সামলে নিলেও মাঝে মাঝে আসা বড়ো ঢেউয়ের ধাক্কায় কথা ডিসব্যালেন্স হয়ে অরণ্যর দিকে হেলে পড়ছে। এরকমই একটা বড়ো ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রায় মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছিল কথা এইসময় অরণ্যর বলিষ্ঠ হাতদুটো ওকে নিজের দিকে টেনে নিলো।
.
.
.
পড়ার ভয়ে নিজের চোখদুটো বন্ধ করে নিয়েছিল কথা। আচমকা মাটি থেকে তার পাদুটোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতেই মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়ায় তার হাতদুটো নিজে থেকেই জড়িয়ে ধরলো পরিচিত চওড়া পুরুষালি কাঁধদুটো। সে অনুভব করলো পিঠ আর দুই উরুর নিচে অরণ্যের দুই হাতের শক্ত বাঁধনে সে ঝুলে রয়েছে। ধীরে ধীরে চোখদুটো খুলে অরণ্যের মুখের দিকে তাকালো সে। অরণ্যও মুখে মৃদু হাসি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর ইসৎ নীল সমুদ্রের ন্যায় গভীর চোখগুলো কথাকে বলে যাচ্ছে
"চিন্তা করোনা এইভাবেই সব বিপদ থেকে আগলে নেবো।"
.
.
.
রিসর্টে ফিরে নিজের রুমে ঢুকে কথা দেখলো ওর বেডের ওপর পিঙ্ক কালারের গিফ্ট পেপার দিয়ে মোড়া একটা একটা বেশ বড়ো সাইজের বক্স রাখা আছে। পার্সেলটা কে পাঠিয়েছে সেটা জানার জন্য রিসেপশনে ফোন করতে যাচ্ছিল কথা এইসময় একটি নির্দিষ্ট নম্বর থেকে আসা মেসেজ ওর ফোনের স্ক্রিনে পপআপ করায় কথার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

অরণ্য মেসেজে লিখেছে "আমার রূপকথার রানীকে নিজের পছন্দের রঙে দেখতে চাই। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিজের লাগেজ নিয়ে পার্কিংয়ে চলে আসো। আই এম ইগারলি ওয়েটিং ফর ইউ।"

অরণ্যর মেসেজটা পেয়ে কথা গিফ্ট বক্সটা খুলে দেখলো তার মধ্যে একটা সিগ্রীন কালারের ডিসাইননার ওয়ান স্লিট গাউন আর সাথে কিছু প্রয়োজনীয় এক্সেসরিস রাখা আছে।
আর বেশি দেরি নাকরে রেডি হতে শুরু করলো কথা।

ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই খুশি হয়ে গেলো কথা...বডিকন গাউনটা চেপে বসেছে ওর শরীরের সাথে যার ফলে শরীরের সমস্ত চড়াই উৎরাই খুব ভালোভাবেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে..গাউনের সাথে পাঠানো এক্সেসরিসগুলো ওর লুকটাকে আরও এনহান্স করেছে বিশেষ করে কোমরে থাকা সাদা রঙের পাথর দিয়ে তৈরি বেল্টটা.. যেটা ওর কোমরের কার্ভসগুলোকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
মেকাপের ফিনিশিং টাচটা দিয়ে নিজের পার্সটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রুম লক করে চাবিটা রিসেপশনে থাকা মেয়েটার কাছে জমা দিয়ে পার্কিংয়ের দিকে এগোলো ও।
পার্কিংয়ের দিকে কিছুটা এগিয়ে দেখতে পেলো অরণ্য নিজের গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেও সিগ্রীন কালারেরই একটা সুট পড়েছে। নিজের গাউনটা সামলে সেদিকে পা চালালো কথা।
.
.
.
"উফফ কুড়ি মিনিট ধরে ম্যাডামের জন্য অপেক্ষা করছি তাও এখনো আসার সময় হলোনা। ওর লাগেজটা দশমিনিট আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে তাও নিজে এখনো আসছেনা।"
কথার আসার পথের দিকে চেয়ে থেকে নিজের মনে কথাগুলো ভাবছিলো অরণ্য।
এইসময় কথাকে পার্কিংয়ের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে হেলান দেওয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো অরণ্য। এই ড্রেসটা যখন কথার জন্য কিনেছিলো তখনও ও ভাবতে পারেনি যে মেয়েটাকে এতোটা মোহোময়ী লাগতে পারে। সেদিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো অরণ্য। মেয়েটাকে মনে হচ্ছে আজ নিজের রূপ দিয়ে তাকে খুন করে ছাড়বে।
নিজের সুটটা একটু ঠীক করে কথার দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের একহাত বাড়িয়ে দিলো অরণ্য। কথাও হেসে অরণ্যর বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা জড়িয়ে ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
দরজাখুলে কথাকে ড্রাইভিং সিটের পাশে প্যাসেঞ্জার সিটে বসিয়ে নিজে গিয়ে চালকের আসনে বসলো অরণ্য।
-হোয়ার আর উই গোয়িং?
অরণ্য গাড়িতে উঠতেই প্রশ্ন করলো কথা।
-উমম সেটা আপাতত সিক্রেট থাক। আর আন্টিকে বলে দাও তুমি কাল ইভিনিংয়ে কলকাতায় ফিরছ।
অরণ্যর উত্তর শুনে কথা আর কিছু বললোনা। ও খুব ভালো করেই জানে যে অরণ্য যখন একবার বলেছে ও ওদের গন্তব্যস্থলটা কথার কাছে গোপন রাখতে চায় তখন কথা হাজার প্রশ্ন করলেও আর অরণ্যের মুখ খুলবেনা। তাই অরণ্যের কথামতো ওর মাকে জানিয়ে দিলো আজ ফিরতে পারছেনা একেবারে কাল সন্ধ্যাবেলায় ফিরবে।
.
.
.
আধঘন্টা ড্রাইভিংয়ের পর ঝাউবাগানে ঘেরা একটি একতলা ছোট্ট ভিলার সামনে এসে অরণ্যের গাড়িটা থামালো। দুবার হর্ন দিতে একজন লোক এসে সেলাম ঠুকে ভিলার বউন্ডারী ওয়ালের বড়ো লোহার গেটটা খুলে দিলো। গাড়িটা পার্কিং করে অরণ্য কথাকে বাড়ির ভিতরে গিয়ে বসতে বললো। কথা ভিতরে চলে গেলে অরণ্য লোকটার সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলো।
-বিমল ওরা সমস্ত ব্যবস্থা ঠীকভাবে করে দিয়ে গেছে তো।
-হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার সব ঠীক আছে আমি নিজে চেক করে নিয়েছি।
-গুড।
তারপর নিজের পকেট থেকে হাজার টাকা বার করে লোকটার হাতে দিয়ে বললো
-আচ্ছা আজকে তুমি যেতে পারো। আর কাল আমরা পাঁচটার সময় করে বেরোবো তো তার আগে চলে আসবে। আর এই টাকাটা রাখো আজকে তো আর হবেনা কালকে বরঞ্চ তোমার বাচ্চাগুলোকে জন্য কিছু কিনে দিও।
বিমল খুশি হয়ে বললো
-আচ্ছা স্যার আমি আসছি তাহলে। শুভরাত্রি।
বিমল চলে গেলে মেনগেটে তালা দিয়ে ভিতরে এলো অরণ্য।
.
.
.
ভিতরে গিয়ে অরণ্য দেখলো কথা লিভিং রুমের পাশে সিফেসিং বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে চন্দ্রালোকিত সমুদ্রতটের দিকে দাঁড়িয়ে আছে। অরণ্যও সেদিকে এগিয়ে গিয়ে কথার কোমরটাকে দুইহাতে পেঁচিয়ে ওর কাঁধে নিজের থুতনিটা ঠেকালো।
অরণ্যর শরীরের সাথে নিজের শরীরের এতোটা নৈকট্যে শিহরিত হোলো কথা। সেই শিহরণ কথাকে পেরিয়ে অরণ্যের কাছে এসে পৌঁছালো... কথার কানে হালকা কামড় বসিয়ে অরণ্য জিজ্ঞাসা করলো
-কেমন লাগলো ভিলাটা? পছন্দ হয়েছে?
-হুম।
আবেশে ডুবে উত্তর দিলো কথা
-তাহলে কাজের ফাঁকে যখন সময় পাবো আমরা একসাথে এখানে টাইম স্পেন্ড করে যাবো ঠীকআছে।
কথাগুলো বলে অরণ্য নিজের রুমাল দিয়ে কথার চোখদুটো বেঁধে দিলো।
-আরে কী করছো?
অরণ্যের হাতের বাঁধনের মধ্যে ছটপট করতে করতে কথা বললো।
-একটু ধৈর্য ধরো রূপ। তাহলেই বুঝতে পারবে।
কথাগুলো বলে অরণ্য কথাকে নিজের দুই হাতের মধ্যে তুলে নিয়ে ছাদের সিঁড়ির দিকে এগোলো।
ছাদে উঠে কথাকে নিজের কোল থেকে নামিয়ে ওকে চোখের বাঁধনটা খুলতে বলে সামনের দিকে এগোলো  অরণ্য।
.
.
.
অরণ্যের কথামতো চোখের বাঁধন খুলে সামনে তাকাতে অবাক হয়ে গেলো কথা।
গোটা রুফটপ গার্ডেনটা ফেরিলাইট দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। যার মাঝে একটা একটা জায়গায় ছোট্ট তাঁবু মতো বানানো হয়েছে যেখানে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে অরণ্য। আর তার পাশেই বিভিন্ন লেটারের শেপের বড়ো বড়ো লাইট  সাজিয়ে লেখা হয়েছে 'MARRY ME' শব্দদুটো।
কথার পায়ের কাছ থেকে একটা লাল কার্পেট বিছানো  যার ওপর গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো আছে। সেটার ওপর দিয়ে হেঁটে মন্ত্রমুগ্ধর মতো অরণ্যের দিকে এগোলো কথা।
অরণ্য এগিয়ে গিয়ে কথার হাত ধরে টেন্টের মধ্যে রাখা টেবিলটার সামনে আনলো। টেবিলের ওপর একটা পিঙ্ক কালারের পিনাটা কেক রাখা যার মধ্যে গোল্ডেন ফোন্ডেন্ট দিয়ে "ম্যারি মি" শব্দদুটো লেখা আছে।
একটা স্মল উডেন হ্যামার কথার হাতে দিয়ে অরণ্য ওকে পিনাটা কেকের বাইরের চকলেট লেয়ারটা ভাঙার ইশারা করলো। কথা সেটা ভাঙলে তার মধ্যে থেকে কথার ফেভারিট স্ট্রবেরি ফ্লেভারের ছোট্ট হার্টশেপ কেকটা বেরিয়ে এলো যার ওপর একটা ডায়মন্ড রিং রাখা।
রিংটা হাতে নিয়ে অরণ্য সেটা কথার বামহাতের অনামিকায় পরিয়ে ওর হাতে একটা চুম্বন করে জিজ্ঞাসা করলো
-উইল ইউ ম্যারি মি?
এতক্ষন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল কথা। অরণ্যর কথায় সম্বিৎ ফিরে পেয়ে হালকা হেসে মাথাটা হ্যাঁসূচক হেলিয়ে নিজের সম্মতি জানালো। তারপর অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখলো।

-লেটস ডান্স।
কথাগুলো বলে অরণ্য সাউন্ড সিস্টেমে একটা রোমান্টিক সং চালু করে কথার কোমরকে নিজের দুইহাতে জড়িয়ে ধরলো। কোথাও নিজের দুইহাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর গানের সুরের সাথে পা মিলিয়ে একে অপরের চোখের মধ্যে ডুবে গেলো ওরা।


.
.
.
❤️ক্রমশ❤️
গল্প ভালো লাগলে রিভিউয়ের মাধ্যমে উৎসাহিত করার আবেদন থাকলো।

লাভ মি লাইক ইউ ডু 🔞Where stories live. Discover now