আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি

1K 35 1
                                    

দুবার কলিংবেল বাজানোর পরও ভাবছি তিন বার কলিংবেল বাজাবো কিনা । বেশি রাত তো হয় নি । তবুও একটু রাত তো হয়েছেই বলতে গেলে । আর একবার বাজাবো কিনা ভাবছি ঠিক এমন সময় দরজা খুলে গেল ।

নীলু দাড়িয়ে কঠিন মুখে । খানিকটা অবাক হলাম । নীলু সাধারনত দরজা খুলে না । ওর মা ই দরজা খুলে ।

আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । কিন্তু নীলুর মুখের কোন ভাবান্তর হল না । আমি বললাম

-ফুপু জেগে নেই ?

-মার শরীর ভাল নাই । ঘুমাচ্ছে ।

-ও । আমি আসলে রাতের খাবার খেতে এসেছিলাম । আজ রাতে কেন জানি আলু ভর্তা আর গরম ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছা করছে । একটু ব্যবস্থা করা যায় ?

নীলুর কঠিন মুখটা আরো কঠিন হল । বলল

-দেখেন এসব ঢং আমার সাথে করবেন না । আর এটা ধর্মশালা না যে আসবেন খেতে চাইবেন আর হয়ে যাবে ।

-আচ্ছা ঠিক আছে । ফুপুকে কিছু বলার দরকার নাই । আমি চলে যাই বরং !

আমি দরজা থেকেই বেরিয়ে এলাম । মনটা একটু খারাপ হল । আসলেই আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেতে খুব ইচ্ছা করছে । ফুপু জেগে থাকলে ব্যবস্থা ঠিকই করতেন ।

এই শহরে আমার আপন বলতে এই ফুপুটাই আছে । প্রথম যখন গ্রাম থেকে এই শহরে হাজির হলাম এই ফুপুর বাসাতেই আমার জায়গা হল । ফুপুর কোন ছেলে ছিল নাতো আমাকে খুব আদর করতেন ।

ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরেও তাই ফুপু আমাকে ছাড়তে চাইলেন না । প্রথম প্রথম আমারও খুব ভাল লাগতো কিন্তু বেশি দিন থাকা গেল না । ফুপুর বাসা ছেড়ে হলে উঠে গেলাম । ফুপু কে অন্য কারন বললেও আসলে প্রধান কারন ছিল নীলু ।

নীলুর আচরন কেমন যেন অস্বাভাবিক ঠেকল আমার কাছে । খুব শীঘ্রই বুঝতে পারলাম যে নীলু আমার উপর দুর্বল হতে শুরু করেছে । ওর সাথে কথা বললাম । পরিষ্কার ভাবে বললাম যে ওর প্রতি আমার অনুভুতিতা ঐ রকম না । নীলুকে আমি ঐ চোখে দেখি না ।

ঐ দিন থেকে নীলুর আচরন কেমন গম্ভীর হয়ে গেল । সব কিছুই ঠিক ছিল তবে আমার সামনে আসলেই নীলু কেমন গম্ভীর হয়ে যেত । আমার কাছে কেমন যেন অস্বস্তি লাগত । তাই আর এ বাড়িতে আর থাকতে ভাল লাগত না ।

হলের ওঠার পরও প্রায়ই আসতাম এ বাড়িতে । কিন্তু নীলু আর কখনই আমার সামনে আসে নি । কিন্তু আজ নীলুর আচরনটা একটু কঠিনই মনে হল । আর একটু নমনীয় হলে ভাল লাগত !



অন্ধকার পথে হাটছি । একটু ক্ষুদা লেগেছে । কোন হোটেলে কি যাবো ?

আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি পাওয়া যাবে ?

ঠিক এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল ।

-আপনি কত দুরে গেছেন ?

নীলু ?

কন্ঠে খানিক উত্‍কন্ঠা !

-এই তো বেশি দুরে না ।

-আপনি এখনই বাসায় আসেন । আমি কোন কথা শুনবো না । এখনই আসেন ।

আমি ঐ বাড়ির পথ ধরলাম । দ্বিতীয় বার যখন নীলু দরজা খুলে দিল তখন আগের কাঠিন্য একদম নাই । অবাক হয়ে দেখলাম নীলুর চোখ কেমন যেন ফোলা ফোলা । কেঁদেছে নাকি ?

খাবার টেবিলে আমাকে সত্যিই অবাক হতে হল । গরম ধোয়া ওঠা ভাত সাথে গরম ডিম ভাজি । পাশে আলু ভর্তা । এই টুকু সময়ের মধ্যে নীলু এসব কিছু করেছে ।

আশ্চর্য !

অথচ প্রথম এমন একটা ভাব করল । এই মেয়েগুলোর মন এমন অদ্ভুদ ! কখন কি যে হয় ? আর কখন কি করে কোন ঠিক নাই ।

নীলু বলল

-মাংশ আনবো ?

-আরে এরই মধ্যে মাংশও রান্না করেছ নাকি এরই মধ্যে ?

-না আজ রান্না হয়েছে !

-ও । কি মাংশ ?

-আপনার পছন্দের মাংশই রান্না হয়েছে ।

নীলু খাসির মাংশের বাটি নিয়ে এল ।

-পোলাও নিয়ে আসবো ?

-আরে এতো আয়োজন কিসের ? আজ বিশেষ কোন দিন নাকি ?

নীলু চুপ করে থাকলো ! আমি গরম ভাত মুখে দিতে দিতে বললাম

-কি চুপ করে গেল ? নীলু ইতস্তত করে বলল

-আজ আমার জন্মদিন । তাই !

-আরে তাই নাকি ! আগে জানলে তো আরো আগে আসতাম । বিশাল একটা খাওয়া মিস হয়ে গেল । তবুও এই রাতের বেলা খাওয়াটা বেশ ভাল হল ।

খাওয়া দাওয়া শেষে আমি যখন চলে যেতে চাইলাম নীলু বলল

-এতো রাতে না গেলে হয় না ? নাহ যাই । আবার আসবো নে । আলু ভর্তাটা ভাল হয়েছে । আবার এসে খেয়ে যাবো ।

আমি দরজা দিয়ে বের হত ঠিক এমন সময় নীলু বলল

-অপু ভাই ।

-হুম ।

-আমার গিফট কোথায় ?

আমি খানিকটা হাসলাম । নীলু বলল

-আমি জানি আপনার মনে আছে । এই জন্যই আপনি এসেছেন এই রাতের বেলা ।

আমি পকেট থেকে একটা ছোট্ট একটা ছোট্ট উপহারের বক্স বের করে ওর হাতে দিলাম । নীলু কেমন চোখ ছলছল চোখে আমার হাত থেকে উপহার টা নিল ।

আমি রাস্তায় নেমে এলাম ! আমি জানি নীলু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ! এই মেয়ে গুলাই এমনই ! সামান্য বিষয় নিয়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদা শুরু করে !

আজ সারা রাত হ্যতো কাঁন্না থামবেই না !

একবার কি পেছন ফিরে তাকাবো !

নীলুর কান্না ভেজা চোখটা কেন জানি দেখতে ইচ্ছা করছে !

না থাক ! নীলু আবার কি ভেবে বসবে !!

আমি হাটতেই থাকি !!

তাড়াতাড়ি এখান থেকে দুরে যেতে হবে ! কান্না বড় সংক্রমক জিনিস !!

আমি হাটতেই থাকি !!







আমার কথা:

যারা হুমায়ূন স্যারের লেখা পড়েন তাদের কাছে লেখাটা খানিকটা পরিচিত মনে হতে পারে । স্যারের একটা গল্পের একটা অংশের খানিকটা প্রভাব আছে গল্পটাতে !

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Where stories live. Discover now