সকালের নাস্তা

904 36 0
                                    

  পিয়নকে ডেকে নাস্তার প্লেট সরিয়ে নিতে বললাম । পিয়ন আমার নাস্তা খাওয়া দেখে বেশ অবাকই হল । কিছুই খাই নি । পিয়ন যেমনটা এনেছিল ঠিক তেমনটাই রয়ে গেছে সব। পিয়নটি বলল
-স্যার কি পরোটা খান না ? অন্য কিছু আনবো ?
-না থাক আনতে হবে না । এগুলো নিয়ে যাও । খেতে ভাল লাগছে না ।
আসলেই খেতে ইচ্ছা করছে না । অনেকক্ষন পরোটার একটা টুকরো হাতে নিয়ে বসে ছিলাম । কিন্তু মুখে দিতে ইচ্ছাই হল না ।
আসলে নিশিকে ছাড়া কিছুতেই কিছু পেটে যেতে চায় না ।
কি অদ্ভুদ এক সমস্যার মধ্যে পরেছি !
আশ্চর্য !
আমি অনেকক্ষন বসে বসে ভাবলাম বিষয়টা । এমনটা কেন হবে ? এর তো কোন লজিক্যাল ব্যাখ্যা আমার জানা নাই ।
আমি মনে করার চেষ্টা করলাম আসলেই বিয়ের পর ওকে ছাড়া কোন দিন কিছু খেয়েছি কিনা ?
নাহ !
মনে পরছে না ।
তাহলে এই জিনিসটা কি নিশির মনে রাখা উচিত্‍ না ?
যতই রাগ হোক এইটুক তো মনে রাখা উচিৎ‍ যে তাকে ছাড়া যখন একটা মানুষ কিছুই খায় না তখন খাওয়ার সময় তার সামনে গিয়ে বসি । কথা না বলি একটু বসি !
নিশি গত রাত থেকে আমার সাথে কথা বলছে না । রাগ করে আছে । অবশ্য এর পেছনে আমার নিজেরও একটু দোষ আছে ।
গতকাল নিশির ভাইজির জন্মদিনের পার্টি ছিল । আমি ও বাড়ীর জামাই আমাকে তো দাওয়াত দেবেই । কিন্তু আমার কেন জানি নিশির ভাইয়ের বাড়িতে একদম যেতে ইচ্ছা করে না ।
আমার মনে হয় ভদ্রলোক আমাকে একদম পছন্দ করেন না । আমার আর নিশির বিয়েতেও নিশির বড় ভাইয়ের একদম মত ছিল না । বিয়েটা হয়েছে নিশির একান্ত ইচ্ছায় ! বলতে গেলে তার অমতেই । কেবল নিশির বাবা রাজি ছিল বিধায় ওর ভাই খুব বেশি উচ্চবাচ্চ করতে পারে নি ।
আমার এখনও মনে হয় যে ভদ্রলোক আমাকে এখনও ঠিক মন থেকে মেনে নিতে পারে নি । আমি চাচ্ছিলাম না যেতে ঐ বাড়ি ।
নিশিও এই ব্যাপারটা খুব ভাল করে জানতো কিন্তু আমাকে সে নিয়ে যাবেই । তবে আল্লাহর রহমত যে কিবরিয়া স্যার আমাকে সাইট পরিদর্শনে নিয়ে গেল । বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা ।
আমি ঘরে ঢুকে দেখি নিশি হপ করে বসে আছে । একটু আগে সেজেছিল বোঝা যাচ্ছে ।
তবে মুখ খুবই গম্ভীর ।
আমি নিশির দিকে এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা দিয়ে বললাম
-তোমার জন্য !
নিশি ফুল গুলো নিল তারপর ছুরে ফেলে দিল খাটের ওপাশটাতে ।
মাই গড !
অবস্থা তো দেখি খুবই সঙ্গীন । আমি ফুল গুলো মেঝে থেকে নিয়ে তুলে নিতে নিতে বললাম
-দোষ তো করেছি আমি । ফুল তো আর কোন দোষ করে নি ।
নিশি তবুও কোন কথা বলল না ।
-পার্টি কেমন ছিল ?
তবুও কোন কথা নাই । আরে এই মেয়েটা কি বোবা হয়ে গেল নাকি ? আমি নিশির আর একটু কাছে গিয়ে বসলাম ।
-দেখো ! আমি সত্যিই আসতে চেয়েছিলাম । বিশ্বাস কর । আচ্ছা তুমিই বল তুমি একটা কাজ আমাকে করতে বলেছ আর আমি সেটা করি নি এমন কখনও হয়েছে বল ? কিবরিয়া স্যার .......
কথার মাঝখানে নিশি উঠে চলে গেল
-আহা শোন না ! প্লিজ যেও না ।
নিশি কোন কথাই শুনলো না । পাশের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো । কত বার দরজা ধাক্কা দিলাম দরজা আর খুললই না ।
রাতের খাবার আর খাওয়া হল না । কাজের মেয়েটা এসে খাবার সাধলেও খেতে গেলাম না । তাকে বলে দিলাম যে তোর আপা যদি খেতে ডাকে তবেই খেতে যাবো ।
তা না হলে খাবো না ।
আমার একটা বিশ্বাস ছিল যে এই কথা শুনে নিশি নিশ্চই আসবে । কিন্তু এল না ।
সত্যি সত্যিই এল না ।
না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম । সকাল বেলা রেডি হয়ে যখন নাস্তার টেবিলে বসলাম দেখি একই কাহিনী । কাজের মেয়েটা নাস্তা দিয়ে গেল । আমি তাকে বলল
-তোর আপা কই ?
-শুইয়া আছে ।
-যা ওকে গিয়ে বল যে আমি ডাকছি । না আসলে কিন্তু খাবো না ।
কাজের মেয়ে ফিরে আসলো একটু পরেই ।
-বলেছিস ?
-হুম ।
-কি বলল ?
-বলল যে না খেলে না খাবে ।
আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল । নাস্তা না করেই চলে এলাম অফিসে !
একটু অভিমানও হল নিশির উপর ।
ও কেন এমনটা এমনটা করল !
আমার কথা কি ওর একটুও মনে পড়ল না ? ও খুব ভাল করেই জানে কাল রাতে আমি না খেয়েই ঘুমিয়েছি । ঘুমিয়েছি আর কই এপাশ ওপাশ করেছি । ঘুমতো আসে নি । আর নিশিও যে ঘুমাই নি এটা আমি খুব ভাল করে জানি । ওর কি একবারও কথাটা মনে হল না যে আমি রাতেও খাই নি এখনও খাবো না যদি ও না আসে !
নিশির উপর অভিমান হল । খুব বেশি অভিমন হল ।
ঠিক আছে আমার একটু দোষ তো ছিল আমি তো অস্বীকার করছি না তাই বলে এতো রাগ করে থাকতে হবে ।
এমন ভাবে কথা না বলে থাকতে হবে ।
-স্যার চা দিয়ে যাবো ?
-চা ? আচ্ছা আনো ।
চা টা কি খাবো ?
না খাবো না ।
কিচ্ছু খাবো না ।
নিশি যখন শুনবে আমি কিছুই খাইনি দেখবো ওর মনের অবস্থা কেমন হয় ।
ও কি অস্থির হবে ?
এখন কি অস্থিরতা বোধ করছে যেমনটা আগে করতো ?

মাস দুয়েক আগের কথা । নিশি ওর বাবার বাসায় গেছে । আমি বাসায় । রাতের বেলা খেতে বসেছি দেখি খেতে ইচ্ছা করছে না ।
এমন না যে ক্ষুদা নেই কিন্তু খেতে ইচ্ছা করছে না । ভাত নিয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষন কিন্তু কোন লাভ হল না । টেবিলে বসে থাকতেই নিশির ফোন এসে হাজির ।
-খেতে ইচ্ছা করছে না । তাই না ?
-হুম !
-কি করবা ?
-জানি না ।
-এরকম করলে কি ভাবে হবে ? ছেলেমানুষী না করে খেয়ে নাও ।
-না খাবো না । তুমি কেন গেল ? তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমি কিছু খেতে পারি না ।
নিশি কোন কথা না বলে চুপ করে রইল । এমন সময় বেল বেজে উঠল ।
-দাড়াও । কে যেন এসেছে ?
নিশি বলল
-খেতে খেতে উঠতে নেই । খাওয়া শেষ করে উঠ ।
-তাহলেই হয়েছে । দাড়াও আগে দেখি কে এসেছে ?
দরজা খুলে দেখি নিশি দাড়িয়ে !
আমি কোন কথা না বলে টেবিলে খেতে বসলাম । নিশি বসলো আমার সামনে ।
আহ ! কি চমৎ‍কার কি দিনই ছিল !
আর আজ ?
কিন্তু একটু খিদে তো লেগেছে ! তো কি হয়েছে ?
খাবো না খাবো না ।

-স্যার !
পিয়ন দরজা দিয়ে উকি দিলো ।
-কি ?
-ম্যাডাম এসেছে ।
-ম্যাডাম ? কোন ম্যাডাম ?
-নিশি ম্যাডাম ।
যাক ! ম্যাডাম এসেছে তাহলে ?
-কোথায় ?
-ওয়েটিং রুমে বসে আছে ।
-আচ্ছা যাও । আমি আসছি ।
আচ্ছা এখনই যাবো নাকি একটু পর যাবো ?
একটু পরে যাই । তাহলে বুঝতে পারবে যে আমিও রাগ করেছি ।
৩০ মিনিট পরে যাই । সাড়ে দশটা বাজে । এগারটার দিকে যাই । তাহলে .
আচ্ছা নিশি এখন কি ভাবছে ?
আমি যখন ওর সামনে যখন যাবো তখন কি বলবে ?
আমি তো কোন কথা বলবো না আগে ? ও ই আগে বলবে ? ঘড়ির দিকে তাকালাম !
১০ টা ৩১ ।
আরে এই ঘড়িকি বন্ধ নাকি ?
সময় যায় না কেন ?
দুর .....!
আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না । ওয়েটিং রুমে গিয়ে দেখি মহারানী মাথা নিচ করে বসে আসে । টেবিলের উপর একটা টিফিন ক্যারিয়ার ।
আমি সামনে গিয়ে দাড়ালাম । নিশি আমাকে দেখে টিফিন বাটি খুলতে আরাম্ভ করলো । আমি দাড়িয়েই রইলাম ।
-দাড়িয়ে কেন আছো ?
বাবারে এখনও রাগ আছে । আমি বসলাম চুপচাপ । নিশি নাস্তা গুছিয়ে আমার সামনে এগিয়ে দিল । পরোটা সাথে মংশের লটপটি । আলু ভাজিও আছে !!
-এভাবে রাগ করে দিলে খাবো না ।
নিশি এবার আমার দিকে তাকাল । কেমন গভীর চোখে ! তারপর নিজ হাতে মুখে তুলে দিতে লাগল । বলল
-তোমার উপর আমি একটু রাগও করতে পারবো না শান্তি মত !!
আমার কেবল মনে হল যে
আহা ! এমন সাধের নাস্তা আমি আগে কখনও খাই নি !!  

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora