শুভ জন্মদিন টিয়াপাখি !!

891 24 0
                                    

  টিয়ার চোখে রাজ্যের ঘুম । কিন্তু ওর ঘুমুবার উপায় নাই । অপু একদম পরিষ্কার ভাবে বলে দিয়েছে যে রাত ১২ টার সময় অপুকে ফোন দিতে হতে । দিতে হবে মানে দিতেই হবে ।
অন্য কোন দিন হলে হয়তো টিয়া অপু একটা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিতে কিন্তু আজ পারল না । কারন রাত ১২টার পর যে দিনটা শুরু হবে সেটা তো আর আট দশটা সাধারন দিনের মত না । অন্তত অপুর কাছে তো নয়ই । তাই টিয়া আর মানা করে নি । অল্প একটু সময়ই তো জেগে থাকতে হবে , ব্যাপার না ।
একটু আগে টিয়ার মা এসে ধমক দিয়ে গেছে এতো রাত পর্যন্ত জেগে থাকার জন্য । জোর করে লাইট বন্ধ করতে গিয়েছিল টিয়া অনেক টালবাহানা করে করতে দেয় নি । বলেছে কাল অফিসে একটা খুব জরুরী কাজ আছে । জরুরী একটা রিপোর্ট জমা দিতে হবে । সে টাই তৈরি করছে । মাকে দেখানোর জন্য কিছুক্ষন কাগজে কি লেখালেখিও করল । টিয়ার মা যদিও খুব বেশি খুশি হল না তবে আর কিছু বলল না ।
টিয়া ঘর ছেড়ে বান্দায় এসে দাড়াল । রাত ১২টা বাজার এখনও খানিকটা বাকি । বিছানার উপর থাকলে জেগে থাকা কষ্টকর হবে । একটু হাটাহাটি করলে ঘুম কেটে যাবে । বাইরে কি চমত্কার নিরবতা !
জোছনা না হলেও কেমন একটা আবছা আলো চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে । টিয়ার যতদুর চোখ গেল কোন আর্টিফিশিয়াল আলো চোখে পড়ল না । ইদানিং বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় কেউই আর রাতের বেলা লাইট জ্বালিয়ে রাখে না । এমন কি ওদের বাড়িটাও পুরোপুরি অন্ধকার । এমন অন্ধকার রাত অপুর খুব পছন্দ ! অপু প্রায়ই বলে
-এমন রাতে আমরা প্রতিদিন হাটতে বের হব ! দুজন হাত ধরে !!
টিয়ার ভালই লাগে পাগল ছেলেটা রকথা শুনতে ! কত কথা যে অপুর মনে আসে ! কত রকম স্বপ্ন যে অপু দেখে রেখেছে !! আল্লাহ জানে ওর স্বপ্ন গুলো পুরন হবে কি না !১
এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠল । অপুর ফোন । টিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ১২টা বাজতে এখনও ঘন্টা খানেক বাকি আছে । এতো জলদি ফোন !
-জেগে আছো পাখি ?
-হুম ।
-ঘুম আসছে খুব ?
-হুম ।
-এইতো আর একটু পাখি ।
টিয়া বলল
-আচ্ছা তুমি এমন পাগলমী কেন কর ? এটার কি দরকার আছে ?
-আছে মানে অবশ্যই আছে ।
-ঘোড়ার ডিম দরকার আছে । আচ্ছা কাল সকালে যদি তুমি আমাকে উইস কর তাহলে কি ক্ষতি আছে !
-আছে মানে অবশ্যই আছে । আমার টিয়ার পাখির জন্মদিন, বছরে মাত্র একবার আসে তাও যদি আমার আগে কেউ উইস করে ফেলে তাহলে কিভাবে হবে বল ?
-হ্যা বলেছে তোমাকে ? কার এতো খেয়ে দেয়ে কাজ আছে যে আমাকে উইস করার জন্য বসে আছে ?
-আমি আছি না ?
-হুম তুমি তো আছো । তুমি পাগল বলেই আছো !
অপু বলল
-আমি আমার টিয়াপাখির জন্য পাগল ।
টিয়ার মনটা খুশি হয় । আসলেই অপু ওর সব বিষয় নিয়ে এমন পাগলামো করে !
-তবে আমার মন একটু খারাপ হব আজ । আজ রাতে হয়তো ঘুমই আসবে না ।
টিয়া অবাক হল ওর কথা শুনে । বলল
-কেন ? মন খারাপ কেন হবে । এই তো আমি জেগে আছি তো ! তুমি আমাকে সবার আগে বার্থডে উইশ করবে ! মন কেন খারাপ হবে ?
-না মানে তোমার সাথে দেখা হবে না তো ! দেখা হবে না তো কি হয়েছে ? প্রতিবারই তো দেখা হয় তাই না ? একটা বার না হয় নাই হল ।
-আচ্ছা পাখি এখন রাখি । আমি ঠিক ১২টার সময় আবার ফোন দিবো , ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
ফোনটা রাখার পর টিয়ার মনটা একটু খারাপই হল । প্রতিবার জন্মদিনের ওর সাথে দেখা করা চাই ই চাই । কিন্তু এই বার বুঝি আর হল না । অপুর ফাইনাল এক্সাম চলছে । ও কিছুতেই আসতে পারবে না । টিয়ার যতটা না মন খারাপ হবে অপুর তার থেকে বেশি মন খারাপ হবে এটা টিয়া খুব ভাল করে জানে । কিন্তু কি আর করা ! টিয়া হাটতে হাটতে আবার ঘরের ভিতর গেল !

ঠিক ১২টার সময় অপুর ফোন এসে হাজির । টিয়া ফোনটা রিসিভ করে কিছু কাঙ্খিত কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করে রইল ।
-তোমাদের এলাকার সব লোক গুলো এমন কিপটা কেন বল তো ?
-মানে ?
-না মানে পুরো এলাকা যেন ভুতুরে বাড়ি হয়ে রয়েছে । একটা বাড়িতেও আলো জ্বলছে না । আরে তোমাদের বাসাতেও তো আলো জ্বলছে না ।
টিয়া ওর বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা কাঁপুনি অনুভব করলো ।
-তুমি কোথায় ?
-আরে তোমাদের বাড়িতে কোন আলো জ্বলছে না একথা আমি কোথায় দাড়িয়ে বলতে পারি ?
-বাড়ির সামনে ?
-হুম ।
টিয়া নিজের কানকে ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছে না । কি বলছে এই পাগল ছেলে ? এখন বাজে রাত ১২টা । আর এখন ও টিয়ার বাড়ির সামনে এসে বলছে যে বাড়িতে আলো জ্বলছে না কেন ? টিয়া আসতে করে আবার বারান্দায় ফিরে এল ।
-কোথায় তুমি ?
-এই তো তোমার বারান্দা সোজাসুজি । এই তো তো তাকাও বাঁ দিকে !
টিয়া বাঁ দিকে তাকাল । যদিও অন্ধকার তবে অপুর আয়োবয়টা ঠিক বোঝা যাচ্ছে ।
-তুমি কি পাগল নাকি ? এতো রাতে কেউ আসে ?
-কি করবো পাখি ? আমার টিয়াপাখিটার জন্মদিন । আমি যদি তোমাকে না দেখি তাহলে ....
অপু খানিকটা চুপ করে থাকে । টিয়া কি বলবে ঠিক বুঝতে পারে না । এই পাগল ছেলেটা কে নিয়ে কি করবে ?
-তোমার না কাল পরীক্ষা ? তুমি কেন আসলে ?
-আমি জানি না পাখি । আমার কেবল মনে হয়েছে আজ যদি তোমাকে একনজর আমি না দেখি তাহলে তাহলে আমি ....!
টিয়া বলল
-তোমার কাল পরীক্ষা ?
-সমস্যা নাই । পরীক্ষার ডেট চেঞ্জ হয়েছে ।
-তুমি আসলেই একটা পাগল । পাগল নাম্বার ওয়ান ।
-হুম বুঝলাম । এখন একটু বাইরে আসো ।
-বাইরে ?
টিয়া যেন আকাশ থেকে পড়ল ।
-আমি কেমন করে আসবো ?
-আচ্ছা আমি ঢাকা থেকে চলে আসতে পারলাম আর তুমি কেবল দুইতলা থেকে নিচে নামতে পারবে না ? কিন্তু আসো না প্লিজ ....
টিয়া খানিকটা শঙ্কিত বোধ করলো । টিয়ার মার ঘুম বেশ পাতলা । গেট খোলার আওয়াজে নিশ্চই ঘুম ভেঙ্গে যাবে । আর ঘুম ভেঙ্গে গেলে উপায় আছে ?
কিন্তু অপুকে না বলবে কিভাবে ?

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora