ফিনিশিং লাইন !!

561 19 1
                                    

  আমিনুল ইসলাম জুতার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে তার সহকারী জাবেদকে ডাক দিলেন । জাবেক একটু দুরে ক্লাবের কয়েকটা ছেলেকে কি যেন বলছিল । ডাক শুনে আমিনুল ইসলামের দিকে এগিয়ে এল ।
-বলুন স্যার ।
-সবাই চলে এসেছে ?
-মোটামুটি স্যার । আর দশ মিনিটের ভিতরেই অনুশীলোন আরাম্ভ হবে ।
-আচ্ছা ।

আমিনুল ইসলাম আবাহনী স্পোটিং ক্লাবের জুনিয়র সেকশনের একজন কোচ । প্রতিদিন সকালবেলা জুনিয়র খেলোয়ারদের প্রশিক্ষনের দায়িত্ব তার উপর থাকে । আমিনুল ইসলাম জাবেদকে বলল জাবেদ
-এই ছেলেটা কি আমাদের ক্লাবের কেউ ?
-কোন ছেলেটা ?
-ঐ যে দৌড়াচ্ছে ।

জাবেদ আমিনুল ইসলামের নির্দশিত দিকে তাকাল । আমিনুল সাহেব বলল
-এখন তো জুনিয়রদের সময় । এই ছেলেটা এখানে কি করছে ? আর আমাদের কি এভাবে মাঠের চারপাশে দৌড়ানোর কোন অনুশীলোন আছে নাকি ?
-আসলে স্যার ছেলেটা আমাদের ক্লাবের কেউ না । কদিন থেকেই দেখছি ছেলেটা এখানে এসে দৌড়ায় । সেই ভোর বেলা থেকে । স্যার আসতে মানা করে দেবো নাকি কাল থেকে ?
-না থাক, দরকার নাই ।

জাবেদ চলে গেল ছেলে গুলোর কাছে । আমিনুল ইসলাম ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলেন ।
বয়স কত হবে ?
তেইস চব্বিসের বেশি হবে না । আর ছেলেটাকে দেখে পেশাদার দৌড়বিদের মত মনে হচ্ছে না । কেমন দুর্বল আর এলোমেলো ভাবে পা ফেলছে ।

আমিনুল ইসলাম খানিকটা কৌতুহলী হলেন ছেলেটার দিকে । ছেলেটার চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে দৌড়ানোর খুব বেশি অভ্যাস নেই । তাহলে ছেলেটা দৌড়াচ্ছে কেন ?

জগিংয়ের জন্য মানুষ সকালে দৌড়ায় সেটা এক জিনিস ! কিন্তু এটা ঠিক সেই রকম মনে হচ্ছে না । জগিং করতে এসে মানুষ নিশ্চই আবাহনী মাঠের বিশটা চক্কর মারবে না ! ছেলেটার দৌড়ানোর অবস্থা দেখে তিনি ভাবছিলেন ছেলেটা আর খুব বেশিক্ষন দৌড়াতে পারবে না । তার মনের কথা মনেই মনেই রয়ে গেল, ছেলেটা মাঠে ভিতর পরে গেল ।

কেউ ছেলেটাকে খুব বেশি লক্ষ্য করছিল না, তাই কেউ দৌড়েও এল না । আমিনুল ইসলামের মনে হল তিনি ছেলেটার কাছে একবার যান। জানতে চান যে সে কে এবং কেন এরকম ভাবে এখানে দৌড়াচ্ছে । কিন্তু কি মনে হল আর গেল না । ছেলেটা ততক্ষনে উঠে বসেছে । দুর থেকেই আমিনুল ইসলাম দেখতে পেলেন যে ছেলেটা এখনও মুখ হা করে দম নিচ্ছে ।



অপু মনে হল ও আর এই পৃথিবীতে নেই ! কিছুক্ষন যেন দম নিতেই পারছে না । মুখ হা করে কিছুক্ষন মাঠে ভিতর শুয়ে রইলো উপুর হয়ে ! দম নেওয়ার চেষ্টা করছে । কিন্তু ফুসফুসটা এতো জোরে লাফাচ্ছে যে যে ঠিক মত বাতাস যেন ঢুকতে পারছে না ।
আরো পাঁচ মিনিট পরে অপু উঠে বসলো । এখন একটু ভাল করে দম নিতে পারছে । মনে মনে ভালবো আজকেও হল না ।
আজ প্রায় মাস খানেক ধরে অপু চেষ্টাটা করে যাচ্ছে। অপু জানে ওর মত মানুষের পক্ষে এটা করা খুব বেশি সহজ না কিন্তু আবার একবারে খুব অসম্ভবও না ।
প্রথম যেদিন অপু আবাহনী মাঠটা চক্কর মারা শুরু করেছিল অপু খুব ভাল করেই মনে আছে কেবল ৭ টা চক্কর মারার পরই অপু থমকে গিয়েছিল ।
আর আজ ? প্রায় মাস খানেক পর আপু আজ একবারে ৪১ বার চক্কর মেরেছে । প্রতিবারই অপু যখন থেমে যায় বা পড়ে যায় ওর মনে হয় যেন পুরো পৃথিবীতে আর কিছু নেই । ওর পা দুটো যেন আর কোনদিন চলবে না । কিন্তু তবুও সে কোথা থেকে শক্তি পায় কে জানে ?

যতবারই অপু তার শক্তি হারিয়ে ফেলতে যায় ততবারই কেবল নিশির চেহারাটা ভেসে উঠে । অপুর মনে হয় নিশিকে ওর বোঝাতে হবে যে অন্য সবার মত সে ওকে ছেড়ে যাবে না । ওর জন্য অপু সম্ভব সব কিছু করতে পারে !
আসলেই তো সব কিছু করতে পারে । তা না হলে নিশির মাত্র একটা মুখের কথা শুনে ও কেন এভাবে প্রতিদিন এভাবে দৌড়াদৌড়ি করবে !
খানিকটা হাস্যকর শোনাবে !
পাগলামোও বটে !
কিন্তু ভালবাসায় পাগলামো না থাকলে কি চলে ?

অপুর এখনও মনে আছে সে দিনটা ! পরপর তিনবার নিশি অপুর প্রোপোজ ফিরিয়ে দিয়েছিল ! তবুও অপু বারবারই নিশির দুয়ারে গিয়ে হাজির হয় ! একবার কি করলো নিজের হাত কেটে বড় করে লিখল আই লাভ ইউ !!
এটা দেখে নিশি যেন আরো খেপে গেল ।
ওর সাথে সে কি রাগারাগি !
নিশির ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
-তুই কেন করছিস এটা ? এমন পাগলামো কেন করছিস ?
-তোকে ভালবাসি ! তাই !
-শোন অপু কারো ভালবাসা গ্রহন করার মানষিকতা এখন আমার নাই !
অপু কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-তুই আমাকে কত দিন ধরে চিনিস ?
-অনেক দিন ধরে !
-তাহলে তোর কেন মনে হল রিয়াদের মত আমিও তোকে ছেড়ে চলে যাবো ?
নিশি কিছুক্ষন অপু দিকে তাকিয়ে রইলো ! তারপর বলল
-শোন অপু স্বার্থে আঘাত লাগলে ভালবাসা পালানোর পথ খুজে পায় না ! বুঝেছিস ?
অপু এবার নিশির হাতটা একু জোরে ধরে বলল
-তুই কি প্রমান চাস বল ?
-প্রমান ? তুই কি মনে করিস এই ভাবে হাত কেটে নিজের রক্ত দিয়ে নাম লিখলেই আমার প্রতি ভালবাসা প্রমান হয়ে গেল ?
-তুই আমাকে কি করতে বলিস ? কি করলে তোর মনে হবে যে আমি তোকে ভালবাসি !!
নিশি ওকে বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে । আমার জন্য একটা কাজ কর ! আমি জানি তুই খুব অলস টাইপের ছেলে ! ঘুমাতে তোর খুব ভাল লাগে ! আমার জন্য প্রতিদিন তুই তোর এই আলসামী ছেড়ে দে ! আমাদের বাড়ির সামনে যে আবাহনী মাঠটা আছে না তুই যেদিন ঐ মাঠে একবারে ১০০ চক্কর মারতে পারবি সে দিন বুঝবো তুই আমার জন্য সব করতে পারবি !
-নিশি এটা আবার কি ধরনের কথা হল ? তুই খুব ভাল কর জানিস আমি এটা করতে পারবো না । ১০০ চক্কর মারা সম্ভব না বল ?
-এই তো , লাইনে এসেছিস !! তাহলে এর পর থেকে আমাকে ভালবাসিস এই কথাটা আর মুখে আনিস না ! যেদিন ১০০ চক্কর মারতে পারবি সেদিন দেখবি আমি ফিনিশিং লাইনে তোর জন্য দাড়িয়ে আছে ! এর আগে না ।

অপুর জন্য একটু কষ্টেরই ছিল ! যে অপু কোনদিন সকাল ১০ আগে ঘুম থেকেই উঠে নাই সে এখন প্রতিদিন আযানের সময় ঘুম থেকে উঠে. এখানে এসে দৌড়ানো শুরু করে । অপুর বিশ্বাস একদিন ও ঠিকই পারবে । নিশির মনে বিশ্বাস জাগাতে পারবে ।


আমিনুল ইসলমের মনে হয়েছিল ছেলেটার দৌড়ানোর কারোরিই চোখে পড়ছে না । পড়লেও হওতো কেউ লক্ষ্য করছে না । স্পোর্টিস মাঠ ! যে কেউ প্রাক্যটিস করতেই পারে এখানে এতো লক্ষ্য দেওয়ার কি আছে । কিন্তু মাঠে পশ্চিম পাসের বড় বিল্ডিং থেকে একটা মেয়ে প্রতিদিন ভোর বেলা থেকেই ছেলেটির দৌড়ানোর দেখে আর চোখ মোছে । নিশি কোনদিন ভাবতেও পারে নি অপু ওর মুখে কথাটা এতো সিরিয়াসলি নেবে । নিশি কেবল অপুকে কাটানোর জন্যই এমন কথা গুলো বলেছিল।
কিন্তু পাগল ছেলেটা এমন কিছু করে ফেলবে সেটা ও কিভাবে জানতো !

প্রতিদিন অনু যখন ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায় সব থেকে বেশি কষ্ট লাগে নিশির । বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে অনেকক্ষন কাঁদে ।
অপু এই পাগলামো দেখে নিশি নিজেই অপু কাছে গিয়েছিল এসব বন্ধ করতে । অপু ভালবাসা গ্রহনও করেছিল । কিন্তু অপু তবুও থামেনি । কেবল নিশিকে বলেছিল যে আজ যদি আমি এটা না করতে পারি আমি নিজের কাছেই পরাজিত হয়ে যাবো ! আমার সারা জীবন কেবল একটা কথাই মনে হবে আমি মনে হয় আমার ভলবাসার মানুষটিকে ঠিক মত ভালবাসতে পার নি । তার জন্য এই সামান্য কাজটুকু করতে পারি নি !
নিশি প্রতিদিন ভোর হলেই ওদর বারান্দায় চলে আছে । অপেক্ষা করতে থাকে অপু জন্য !
এক ভাবে তাকিয়ে থাকে অপুর দিকে !!


আজ আমিনুল সাহেব একটু তাড়াতাড়িই মাঠে দিকে রওনা দেন ! এখনও সূর্য ঠিক উঠে নাই ! গত কাল অপু ছেলেটা ৮৯ বার আবাহনী মাঠটা চক্কর মেরেছে । এটা তিনি নিজে গুনেছেন । প্রথম থেকে আস্তে আস্তে এভাবে এগিয়ে কালকে ছেলেটা ৮৯ এসে ঠেকেছে । আজ তাও চার মাস ধরে ছেলেটা এই চেষ্টাটা করে যাচ্ছে ! যেদিন জাবেদের মুখে ছেলেটার কথা শুনেছেন সেদিন থেকেই ছেলেটার প্রতি একটা আগ্রহ বোধ করেছেন । তারপর ছেলেটার এই দৌড়ানোর পেছনে আসলে কারন যেদিন জানতে পারলাম বেশ অবাক হয়েছিলেন । মনে মনে ভেবেছিলেন মানুষ এমন পাগলও হয় ! মেয়েটিকেও দেখেছেন প্রতিদিন । মাঠের পাশেই মেয়েটির বাসা ! সেই সকাল থেকে বাসার বারান্দায় দাড়িয়ে ছেলেটির দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে ।

আশ্চর্য মানুষের মন ! নিজের ভালবাসা কথা জানান দিতে মানুষ কত কিছুই না করে !
আমিনুল সাহেব মাঠে পৌছে দেখেন অপু দৌড় শুরু করে দিয়েছে ! স্কোর বোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখেন ইতিমধ্যে ৯ বার হয়েও গেছে । মাস খানেক আগে থেকেই এই স্কোর বোর্ডটা ব্যবহৃত হচ্ছে । অনুমুতি তিনি নিজেই দিয়েছেন ।
জাবেকে দেখলেন একটা চেয়ার নিয়ে এগিয়ে আসতে ! আমিনুল ইসলাম দেখলেন উনার মত আরো অনেকই এসেছে আজকে । অবশ্য প্রতিদিনই বেশ কিছু লিক আসে ছেলেটার দৌড় দেখতে ! ছেলেটার কিছু বন্ধু বান্ধবও আছে । ছেলেটাকে উৎসাহ দেয় । তিনি নিজেও দেন !

স্কোর বোর্ডে যখন ৮৫ তখন তিনি চার পাশে তাকিয়ে দেখেন মাঠের চারপাশে অনেক লোকের সমাগম হয়ে গেছে । এতো লোক এর আগে আসে নি ! কেউ কেউ আবার অপু নাম ধরে স্লোগানও দিচ্ছে !
আমিনুল সাহেবের মনে হচ্ছে আজকে ছেলেটা করে ফেলবে !
কিন্তু কালকে ছিল ৮৯ আজ কি পারবে একবারে ১১ বার টপকে যেতে ?
প্রতিদিন ছেলে একটা কি দুটো করে এগিয়ে যেত ।
প্রথম দিকে ২/৩ বার বেশি করে চক্কর মারত আগের দিনের থেকে ! কিন্তু দিন যত সামনে যাচ্ছে সেই ৩/২ কমে যেতে থাকে । কদিন থেকে কেবল একটা চক্কর বেশি মেরেই ছেলেটা বসে পরে ! আর পারে না !
তাহলে আজ কি কেবল ৯০ এসেই থেমে যাবে ছেলেটা !

৮৮ এসেই অপু অবস্থা একটু খারাপ হয়ে গেল ! একটু যেন এলোমেলো ! আমিনুল ইসলামের মনে হল ছেলেটা আজকে আর পারবে না !
৮৯ চক্কটা শেষও হল না তার আগেই অপু পরে গেল ! আমিনুল ইসলাম খানিকটা কষ্ট নিয়েই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আর কয়দিন লাগে কে জানে ? তিনি উঠতে যাবেন ঠিক তখনই দেখলেন অপু আবার উঠে পড়েছে টলতে টলতে !
পাশে থেকে কত গুলো ছেলে আবারও চিৎকার দিয়ে উঠল !!

অপু মনে হল ওর হৃদ-পিন্ডটা এখনই ফেটে যাবে !! দম নিতে কষ্ট হচ্ছে ! আর পা দুটো যেন আসড় হয়ে গেছে ! আর একটা পাও যেন ফেলতে পারবে না । এখনও ৮৯ কম্পিলিট হয় নি !
তাহলে কি আজ এখানেই ! ভবেতে ভাবতেই অপু সমস্ত শক্তি শেষ হয়ে গেল !
কিসে যেন আটকে আপু মাঠের মধ্যে উপুর হয়ে পরলো ।
আজ অনেক মানুষ এসেছে । বন্ধুরা এসেছে ওকে উৎসাহ দিতে ! অপু জানে নিশিও ওকে দেখছে ওদের বারান্দা থেকে !! আজও কি মেয়েটা হতাশ হয়ে ফিরে যাবে ?
না ! আজ কে না !!
নট টু ডে !

অপু হঠাৎ কেন আবার শক্তি ফিরে পেল । বুকটা এখনও লাফাচ্ছে ! এখনও ঠিক মত বাতাস নিতে পারছে না । তবুও অপু উঠে দাড়াল !আজ তাকে পারতেই হবে .....!
আজ তাকে পরতেই হবে !
অপু আবার উঠে পড়লো !

৯০....৯১......৯৭....৯৮....৯৯......

আর একবার ! আর মাত্রটা একটা বার !! কিন্তু অপুর যেন আর কিছুতেই একটা পা এগোতে পারছে না !! হাটুর নিচ থেকে কোন সারা শব্দ সে পাচ্ছে না ! কেবলই মনে হচ্ছে কিছু একটা একটু যেন নড়ছে ! সব থকে কষ্ট হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে । অপু ফুসফুস টা ঠিক মত মত বাতাস টানতে পারছে না ! তবুও অপু এগিয়ে চলছে .....
আজ তাকে পারতেই হবে !!
আজ তাকে .......


আমিনুল ইসলাম খানিকটা চিন্তা নিয়েই ছেলেটার দিকে তাকাল ! সকাল বেলাতেই তার মনে হয়েছিল ছেলেটা আজ কিছু করবে ! চারপাশে ততক্ষনে অনেক লোক জড় হয়ে গেছে ! সবাই একসাথে চিৎকার করছে । ছেলেটাকে উৎসাহ দিচ্ছে ! কিন্তু তিনি ভাবছেন অন্য কথা !
ছেলেটা কি একবারে এতো পরিশ্রম সহ্য করতে পারবে ? প্রতিদিন একটু একটু করে এগুচ্ছিল ঠিক ছিল । কিন্তু আজকে একেবারে ১১ ধাপ এগোনো !! ছেলেটার হার্টের জন্য সহ্য করা কষ্টকর হয়ে যাবে ! আর ছেলেটার অবস্থাও খুব বেশি ভাল না । মুখ দিয়ে লালা পড়ছে ইতি মধ্যে !
ছেলেটা আটকানো দরকার !
কিন্তু আর মাত্র একটা চক্কর !! এই সময়ে ছেলেটাকে থামানোও তো উচিৎ হবে না !
কিন্তু যদি কিছু হয়ে যায় ?
ঐ তো ছেলের বন্ধুরা ফিনিশিং লাইনের জন্য ফিতা ধরেছে ! সবাই একসাথে চিৎকার করছে !!

নিশির প্রথমে ঠিক বিশ্বাস হল না যে অপু আজকেই করে ফেলবে !! যখন ৮৯ এসে অপু পড়ে গিয়েছিল তখনই নিশির বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠেছিল । প্রতিদিন যখন ও শেষ চক্কর টা মেরে পরে যেত বেশ কিছুক্ষন চুপ করে শুয়েই থাকতো ! উঠতো না ! কিন্তু আজকে তেমন কিছু হল না ।
অপু আবার উঠে দাড়াল ! আবার শুরু করলো দৌড় !! দেখতে দেখতে ৯৯ হয়ে গেল ।
এই তো এর বন্ধুরা ফিনিশিং লাইন ধরেছে !
নিশির মনে হলে ফিনিশিং লাইনে ওর থাকা উচিৎ !! ও আর কিছু ভাবতে পারলো না । কেবল বারান্দা থেকে দৌড় শুরু করলো ! যে করেই হোক অপু আগে ওকে পৌছাতেই হবে !! অপু যেন ফিনিশিং লাইনে এসে ওকেই দেহতে পায় ! প্রথমে যেন ওকেই জড়িয়ে ধরতে পারে !!

অপুর দম অনেক আগেই শেষ হয়ে এসেছিল ! এতোটা পথ ও কিসের জোরে আসলো ও বলতে পারবে না !
বার বার মনকে বলল এই তো আর বেশি দুর না ।
এই ফিনিশং লাইনটা দেখা যাচ্ছে !!
ঐ যে শুভ আর নাসিম লাল ফিতা ধরে আছে !!
ঐ যে ওরা লাফাচ্ছে !
অপু আর একটু আর একটু খানি পথ !!
নিজেকে বোঝালো !
কিন্তু ফিনিংলাইনটা যেন ওর কাছে আরো দুর মনে হল !
এতো দৌচ্ছে তবুও কেন জানি ঠিক মত পৌছাতেই পারছে না ! আস্তে আস্তে যেন সেটা দুরেই চলে যাচ্ছে !!

ঠিক তখনিও অপু নিশিকে দেখতে পেল !! একদম ফিনিংলাইনে নিশি দাড়িয়ে আছে !
ওকে যেতে হবে !! নিশির কাছে যেতে হবে !! ফিনিংলাইনটা ক্রস করতেই হবে !!!!
আর মাত্র কয়েক পা ! আর মাত্র কয়েক কদম দুরত্ব !!





পরিশিষ্ট: অপু ঠিক লাল ফিতাটার কাছে গিয়ে পড়ে যায় ! অপুর হাতটা কোন মতে একবার ফিনিংলাইনের ফিতাটা স্পর্শ করে । যেটা অপু মনে করেছিল নিশির হাত । কিন্তু নিশি তখনও ফিনিশিং লাইনের কাছে পৌছাতে পারে নি !
তারপর অপু আর উঠতে পারে নি ! নিশি যখন পৌছালো তখন অবাক হয়ে দেখল কয়েকজন মানুষ অপুকে নিয়ে মাঠে দরজার দিকে দৌড়াচ্ছে !!

কাছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল নিয়ে গেলে ডাক্তার অপুর নার্ভস চেক করে অপুকে মৃত ঘোষনা করে ! কারন হিসাবে বলা হয় অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারনে অপু হার্ট প্রেশার সহ্য করতে পারে নি ! হার্ট ফেইল করেছে !!  

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora